কুতুবউদ্দিন আহমেদ, চেয়ারম্যান, এনভয় লিগ্যাসি ও শেলটেক গ্রুপ। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সুদীর্ঘ বছর ধরে নিরলসভাবে অবদান রেখে যাচ্ছেন তিনি। বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। সম্প্রতি দেশের রফতানি খাত, প্রবাসী কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধিসহ নিজ অভিজ্ঞতার আলোকে সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তায়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাবিদিন ইব্রাহিম
আমাদের রফতানি আয়ের বড় অংশ আসছে তৈরি পোশাক খাত (আরএমজি) থেকে। রফতানি খাত বৈচিত্র্যময় করতে করণীয় কী?
আমরা এখন পর্যন্ত গার্মেন্ট শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের রফতানির প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে পোশাক খাত থেকে। এ জায়গায় যদি আমরা ভ্যালু অ্যাডিশন বাড়াতে চাই তাহলে বস্ত্র খাতকে আরো জোরদার করতে হবে; তাহলে আমরা আরো বেশি ভ্যালু অ্যাড করতে পারব, যা আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা মেটাতে সাহায্য করবে।
বাংলাদেশ থেকে যেসব পণ্য রফতানি হয়ে থাকে সেগুলো সাধারণত নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে। তবে এক্ষেত্রে কিছু কারখানা উচ্চ-মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের চাহিদা মেটাতে পোশাক রফতানি করে থাকে, এর পরিমাণ অতি নগণ্য। আমাদের পোশাক কারখানাগুলো ৭০-৮০ শতাংশই ক্যাজুয়াল প্যান্ট, শার্ট, সোয়েটার, টি-শার্ট, পোলো শার্ট ইত্যাদি তৈরি করে থাকে। সেক্ষেত্রে আমরা যদি পণ্যের ভিন্নতা আনতে পারি, যেমন ফরমাল প্যান্ট, স্যুট, জ্যাকেট, আন্ডারগার্মেন্টস, ব্র্যান্ডেড স্পোর্টসওয়্যার ইত্যাদি পণ্য যদি উচ্চ-মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের জন্য রফতানি করি, তাহলে আমরা আমাদের ভ্যালু অ্যাডিশনও বাড়াতে সক্ষম হব, সেই সঙ্গে বাড়বে রফতানির পরিমাণ। এক্ষেত্রে ভিয়েতনাম হতে পারে একটি বড় উদাহরণ। তারা শুরু করেছিল আমাদের মতো করেই, কিন্তু তারা পরবর্তী সময়ে উত্তরণ ঘটায় হাই ভ্যালু আইটেমে।
আমাদের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এক্ষেত্রে কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে?
বিইউএফটি (BGMEA University of Fashion & Technology), বুটেক্স (Bangladesh University of Textiles) এবং এ ধরনের যেসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে রয়েছে তাদের সবাইকে কাজে লাগিয়ে গবেষণা করে একটি টেকনিক্যাল ফিজিবিলিটি তৈরি করা যেতে পারে। এতে বর্তমান পোশাক রফতানিকারকরা ছাড়াও নতুন উদ্যোক্তারা পোশাক কারখানা স্থাপনের ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবেন।
গার্মেন্টসের বাইরে আর কোন কোন পণ্য সম্ভাবনাময় বলে মনে করেন?
গার্মেন্টস ছাড়াও বাংলাদেশে যেসব রফতানিযোগ্য শিল্প রয়েছে সেগুলোকেও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা প্রয়োজন, যার মধ্যে রয়েছে টেবিলওয়্যার, টাইলস, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, চা, চিংড়ি ইত্যাদি। এ শিল্পগুলোর রফতানি প্রসারের জন্য ইপিবি (এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো) ও বিভিন্ন দেশে আমাদের দূতাবাসগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। সরকারও পলিসি সাপোর্ট দিয়ে এ খাতে সহায়তা করতে পারে।
নিত্যব্যবহার্য ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক পণ্য এবং সফটওয়্যার হলো আরেকটি সম্ভাবনাময় রফতানি খাত। এক্ষেত্রেও সরকারের বিশেষ নজর দেয়া জরুরি বলে আমি মনে করি।
আমরা কনস্ট্রাকশন ম্যাটেরিয়াল যেমন সিমেন্ট, রড ইত্যাদি তৈরি করি এবং দেশের চাহিদা মোটামুটি সম্পূর্ণভাবে মেটাতে পারি। এ দুটি পণ্যও আমাদের রফতানিতে আসতে পারে। হয়তো এ শিল্পের ক্ষেত্রেও কিছু পলিসি সাপোর্ট প্রয়োজন হবে।
আমরা কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করছি, এতে আমাদের বড় অংকের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে। আমদানি বিকল্প (ইম্পোর্ট সাবস্টিটিউট) শিল্প গড়ার ক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ কী হবে?
এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে যেসব পণ্য আমরা আমদানি করি, সেসব শিল্প যদি দেশে স্থাপন করা যায়, তাহলে আমরা একদিক থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করতে পারব, অন্যদিকে বিপুল পরিমাণে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারব, যা দেশের জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবে। এছাড়া এর মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা (এসএমই) তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে করে যেমন নতুন উদ্যোক্তাদের উঠে আসার সুযোগ সৃষ্টি হবে, সেই সঙ্গে বিদ্যমান ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারাও তাদের ব্যবসা বাড়ানোর সুযোগ পাবেন।
আমদানি বিকল্প শিল্প বা ইম্পোর্ট সাবস্টিউট ইন্ডাস্ট্রি প্রতিষ্ঠা করলে আমাদের ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ বৃদ্ধি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে আমরা কোন কোন পণ্য আমদানি করি তার তালিকা তৈরি করতে পারি। পাশাপাশি সেগুলোর বার্ষিক মূল্যের পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে পারি যে কোন কোন পণ্যকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততার সঙ্গে শুরু করা যায়।
উদাহরণস্বরূপ আমরা বলতে পারি, স্পেয়ার পার্টস আমদানিতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হয়। একটু উদ্যোগ নিলে দেশেই অনেক স্পেয়ার পার্টস বানানো যাবে। গাজীপুরের ‘বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি’-কে যদি আপগ্রেড করা যায় তাহলে নতুন নতুন যন্ত্রাংশ বানানো সম্ভব এবং এটি করার জন্য অবকাঠামো তৈরি আছে। এছাড়া যদি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বিশেষ সহায়তা দেয়া সম্ভব হয়, তাহলে তারাও সেক্ষেত্রে যন্ত্রাংশ তৈরিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবে।
কৃষিকে শিল্পে রূপান্তর ও রফতানিমুখী খাতে পরিণত করা যায় কি?
বাংলাদেশের মাটি সারা বিশ্বের অন্যতম সেরা মাটি। আমাদের উর্বর মাটি ও জলবায়ুর কারণে বছরে তিনবারও ফসল হয়। আমাদের এ ফসলগুলো আমরা যদি রফতানি করতে পারি তাহলে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আয় বৃদ্ধি করা সম্ভব।
উল্লেখ্য আমরা সবজি রফতানি করে থাকি, তবে সেটা খুবই সামান্য এবং এ সবজি মূলত বাংলাদেশী প্রবাসীরাই ক্রয় করে থাকেন। আন্তর্জাতিক বাজার ধরার জন্য উদ্যোগ প্রায় নেই বললেই চলে। পশ্চিমা বিশ্বে যেসব সবজির চাহিদা বেশি, আমরা সেগুলো আন্তর্জাতিক মানসম্পন্নভাবে প্রক্রিয়াজাত করে রফতানি করতে পারি। প্রক্রিয়াজাত শিল্পটি তেমন ব্যয়বহুলও নয়।
আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম প্রধান খাত রেমিট্যান্স। রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে করণীয় কী?
রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে আমরা তিন রকমের রেট দেখতে পাই—১. সরকারি রেট ২. প্রণোদনাসহ সরকারি রেট—শুধু প্রবাসীদের জন্য এবং ৩. কার্ব মার্কেটের রেট। তিনটি রেটই প্রচলিত।
ইনসেনটিভ দেয়ার পর যে রেটটি পাওয়া যায় তার থেকে কার্ব মার্কেটের রেট যদি বেশি হয় তাহলে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোর প্রবণতা থাকবেই। হুন্ডিতে সবসময়ই ঝুঁকি থাকে। তাই এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক বা এনবিআরের একটা সুচিন্তিত পলিসি ঠিক করতে হবে। যেই ব্যাংকগুলোয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমাদের ফান্ড আসে, ওই জায়গাগুলোয় ব্যাংকগুলোর মানি এক্সচেঞ্জ রয়েছে, তারা যদি সেখানে তাদের উপস্থিতি ও সম্পৃক্ততা বাড়ায় তাহলে রেমিট্যান্স যোদ্ধারা কোনো ঝুঁকি ছাড়াই অফিশিয়াল চ্যানেলে টাকা পাঠাতে উদ্বুদ্ধ হবেন।
প্রবাসী কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা কি এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে?
মধ্যপ্রাচ্যে আমরা যাদের পাঠাই তারা মূলত অড জব করেন। যেমন রাস্তা, টয়লেট বা এয়ারপোর্ট পরিষ্কার করা ইত্যাদি। তারা যে টাকা পান আর যে টাকা খরচ করে বিদেশে যান সেই টাকা ওঠাতে তাদের পাঁচ-সাত বছর লেগে যায়। আমরা তাদের কিছুটা স্কিলড করে পাঠাতে পারি ট্রেনিং দিয়ে, যেমনটি ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, ফিলিপাইনের সরকার করছে। দেখা যাচ্ছে যে বিদেশে হায়ার লেভেলের সুপারভাইজরি পোস্টগুলো সব উল্লিখিত দেশগুলোর মানুষের দখলে, আমাদের দখলে খুবই কম।
বিদেশের হাসপাতালগুলোয় ভালো নার্সের বেশ চাহিদা। সেক্ষেত্রে আমরা আন্তর্জাতিক মানের ট্রেনিং দিয়ে নার্সদের চাকরির সুযোগ করে দিতে পারি। বর্তমানে ভারত ও ফিলিপাইন থেকে আসা প্রশিক্ষিত নার্সরা এ চাহিদা পূরণ করছে। এক্ষেত্রে আমরা জরুরি ভিত্তিতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ নিতে পারি। তাদেরকে ইংরেজিতে কথা বলা শেখানো বা ট্রেনিং দেয়া, বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সঙ্গে ট্যাগ করে দেয়া যেতে পারে, যেন তারা একটা মানসম্মত ট্রেনিং পায়। ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে দক্ষতা বাড়ানো গেলে তারা হায়ার লেভেলের সুপারভাইজরি অর্থাৎ উচ্চ বেতনসম্পন্ন চাকরিতে প্রবেশ করতে পারবে। এতে তাদের আয় বাড়বে এবং এর ফলে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে বলে আশা করা যায়।
আমাদের বন্দর ব্যবস্থাপনা বেশ ত্রুটিপূর্ণ। দক্ষ বন্দর ব্যবস্থাপনায় কী পদক্ষেপ নেয়া যায়?
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বন্দরগুলোর কার্যকারিতা বাড়ানো এবং এগুলোকে সিঙ্গাপুর ও হংকং বন্দরের মতো অর্থনৈতিকভাবে প্রতিযোগিতামূলক করার জন্য বেশকিছু উন্নয়নমূলক নীতিমালা বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। বড় জাহাজ পরিচালনার জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি, যা বে-টার্মিনালের মতো প্রকল্পের মাধ্যমে করা সম্ভব। বে-টার্মিনাল চট্টগ্রাম বন্দরের সম্প্রসারণ বিশ্বব্যাংকের অনুদানে চলমান একটি মেগা প্রজেক্ট। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে সরঞ্জামগুলো আধুনিক হবে এবং সেগুলোর ক্ষমতাও বাড়বে। এতে জাহাজের টার্ন অ্যারাউন্ড টাইম যথেষ্ট পরিমাণে কমে আসবে। প্রশাসনিক প্রক্রিয়াগুলো সহজীকরণ ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা দরকার, এতে করে কনটেইনারের ডুয়েল টাইম (Dwell Time) হ্রাস পাবে; এ মুহূর্তে চট্টগ্রাম বন্দরে ডুয়েল টাইম নয়দিনের বেশি। ই-গভর্ন্যান্স সিস্টেম ব্যবহার করে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স দ্রুত করা হলে অপারেশনাল স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে, যা বিশ্বব্যাংকের লজিস্টিকস পারফরম্যান্স ইনডেক্সে বাংলাদেশের র্যাংকিংকে উন্নত করবে। নতুন প্রযুক্তি ও প্রক্রিয়াগুলো দক্ষভাবে পরিচালনার জন্য বন্দরকর্মীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান করা গুরুত্বপূর্ণ। এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বে-টার্মিনাল চালু হওয়ার পর শুধু চট্টগ্রাম বন্দরেই দৈনিক প্রায় ১ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করা সম্ভব।
ব্যবসা-বাণিজ্যে বৈদেশিক বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যদিও বর্তমানে এর প্রবাহ কম। বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধিকল্পে সরকারের প্রতি কোনো সুপারিশ রয়েছে?
দেশের বিনিয়োগ নীতিতে বারবার পরিবর্তনের কারণে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা যেন অনিশ্চয়তার মুখোমুখি না হন, সে ব্যাপারে সরকারের উচিত প্রাথমিকভাবে প্রদত্ত প্রণোদনাগুলোর সহজ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যেটি প্রয়োজন সেটি হলো বিদেশী যারা এরই মধ্যে বিনিয়োগ করছেন আমাদের দেশীয় খাতগুলোয়, তাদের সঙ্গেই বিস্তারিত সংলাপে অংশ নিয়ে তাদের চাহিদাগুলো শোনা, যেন নীতিমালার যথাযথ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে তাদের বিনিয়োগের রাস্তাকে আরো সহজ করে তোলা যায়। এক্ষেত্রে ভারত, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশের উদাহরণ পর্যালোচনা করা যেতে পারে। সেসব দেশে বিদেশী বিনিয়োগ করা সহজতর। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের একটি দীর্ঘদিনের দাবি হলো নিয়ন্ত্রক কাঠামোকে সহজীকরণ, প্রশাসনিক প্রক্রিয়াগুলো সরলীকরণ এবং একক সেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা। সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগ সমর্থনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোয় ই-গভর্ন্যান্স সিস্টেম দক্ষ ও দ্রুত হওয়া জরুরি। বাংলাদেশের উচিত উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের ব্যবসায়িক সহযোগীদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে (এফটিএ) অংশ নেয়া, যা পরবর্তী সময়ে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের (এফডিআই) প্রবাহ বাড়াবে। পাশাপাশি দেশীয় এবং বহির্মুখী টেক্সটাইল-পোশাক শিল্পের প্রসারের জন্য গৃহীত উদ্যোগগুলোকে আর্থিক প্রণোদনার মাধ্যমে উৎসাহিত করা দরকার।
দেশের বর্তমান সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারের কোন দিকগুলোয় নজর দেয়া প্রয়োজন?
দেশে এমন অনেক প্রপার্টি আছে যেগুলো সরকারের পরিত্যক্ত সম্পত্তি। গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় এগুলো বিক্রি করে বিশাল পরিমাণ অর্থ পাওয়া সম্ভব যা এ মুহূর্তে সরকারের জন্য অত্যন্ত জরুরি। যেহেতু রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকমতো হয় না—এগুলো বেদখল হয়ে যায়, আর সবাই এটির সুযোগ নেয়। হয় সরকার ব্যবহার করবে আর নাহলে নিলামে বিক্রি করে দেয়া যেতে পারে। রেলওয়ের একটা বিশাল সম্পদ আছে যেটি বেহাত হয়ে আছে, এগুলো নিলামে বিক্রি করে দেয়া যেতে পারে, আর যদি কোনো কাজে লাগানো যায় তাহলে উদ্ধার করা যেতে পারে। এতে অর্থ সংকট কিছুটা লাঘব হতে পারে।
আবার বর্তমানে বাজারে অস্থিরতা বিরাজমান। চাঁদাবাজি যদি আমরা বন্ধ করতে পারি তাহলে জিনিসপত্রের দাম এমনিতেই কমে যাবে। এক্ষেত্রে যদি রাজনীতিবিদদের সম্পৃক্ত করা যায় এবং পুলিশকে যদি দায়বদ্ধতার ভেতর আনা যায় তাহলে এটা দূর করা সম্ভব। চাঁদাবাজির দুটি স্থান হলো ট্র্যাফিক জ্যাম এবং ফুটপাত দখল করে থাকা দোকানপাট। এতে পণ্যের দাম বাড়ে। প্রত্যেক এলাকার থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার নিজ এলাকার ফুটপাতকে দখলদারত্ব থেকে মুক্ত রাখতে পারেন, তাহলে চাঁদাবাজি বিশালাকারে কমে যাবে। চাঁদাবাজির মহামারী একটি উৎস হলো পোশাক শিল্প। কাটিং ওয়েস্টেজের ক্রয় নিয়ে সন্ত্রাসীদের মাঝেই প্রতিযোগিতা চলে। কোনো পোশাক কারখানাই সঠিক দামে সেই ওয়েস্টেজ নিজ থেকে বিক্রয় করতে পারে না, এক্ষেত্রে তারা বন্দি সেই চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের কাছেই। তাদের কাছে বিক্রয় করে দিতে হয় প্রায় অর্ধেক দামে, কোনো দরদামের সুযোগও নেই সেখানে। তাদের দাবি না মানলে কারখানার সংশ্লিষ্টদের রাখা হয় হুমকির ওপর। দেশের নানা কারখানাকে হিসেবে আনলে আনুমানিক দৈনিক ৫ থেকে ১০ কোটি টাকার ওয়েস্টেজ বিক্রি হচ্ছে এ সন্ত্রাসীদের কাছে, এমনটিই শোনা যায়। যদি পোশাক কারখানাগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো দরদাম করে যথাযথ জায়গায় ওয়েস্টেজ বিক্রি করতে পারে, তাহলেই নিশ্চিতভাবে বোঝা যাবে যে দেশে আইন-শৃঙ্খলা সুসংহত অবস্থায় রয়েছে। চাঁদাবাজি বন্ধে দরকার সরকার ও রাজনীতিবিদদের অঙ্গীকার ও প্রচণ্ড সদিচ্ছা।
৫ আগস্ট-পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে অর্থনৈতিক গতিশীলতা আনতে সবচেয়ে বেশি জরুরি হলো সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে প্রাধান্য দেয়া। বিশেষ করে যেসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সততার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে, তাদেরকে কীভাবে আরো চাঙ্গা করা যায় সেদিকে নজর দিতে হবে। কেননা সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের উন্নয়ন ঘটলে কর্মসংস্থান বাড়বে। এতে অর্থনীতির আকার বাড়বে, সংকটে থাকা অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা সহজ হবে।