বাংলাদেশ
প্রকৌশল
বিশ্ববিদ্যালয়ে
আমাদের
স্থাপত্য
পাঠ্যক্রমে
পশ্চিম
ইউরোপ
ও
উত্তর
আমেরিকার
আধুনিক
স্থাপত্য
পড়ানো
হতো
খুব
সিরিয়াসলি।
ভারতের
প্রাচীন
আর
মধ্যযুগের
স্থাপত্য
এবং
মিসর,
গ্রিক
ও
রোমান
স্থাপত্যও
পড়ানো
হতো।
ডরিক,
আয়োনিক,
করেন্থিয়ান
অর্ডারের
কলাম
আমরা
অনায়াসে
আঁকতে
পারতাম,
পার্থেনন
মন্দিরের
কোনাকাঞ্চি
আমাদের
মুখস্থ
ছিল,
এমনকি
ফরাসি
বা
ইংলিশ
বাগানের
ইতিহাসও
আমরা
পড়তাম।
কিন্তু
আমাদের
পদ্মা,
যমুনা,
মেঘনাবিধৌত
এ
গাঙ্গেয়
বদ্বীপ
বা
গৌড়-বরেন্দ্র
অঞ্চলের
স্থাপত্যের
ইতিহাস
কখনো
পড়ানো
হতো
না।
গ্রামবাংলার
বাড়িঘরের
কোনো
আলোচনা
কখনই
হতো
না।
এ
পাঠ্যক্রমই
প্রমাণ
করে,
আমাদের
শহুরে
অধিপতি
শ্রেণী
এ
দেশের
প্রায়
৯০
শতাংশ
মানুষের
আবাসন
ব্যবস্থা
ও
এর
স্থাপত্য
নিয়ে
কী
সীমাহীন
অবজ্ঞা
ও
অসচেতনতা
নিজেদের
মননে
লালন
ও
চর্চা
করে
চলেছে,
অথচ
একটি
গণতান্ত্রিক
সমাজে
বিশ্ববিদ্যালয়ের
প্রধান
কাজই
হওয়া
উচিত
ছিল
এ
সংখ্যাগরিষ্ঠ
মানুষের
আবাসন
উন্নয়নে
নিরন্তর
গবেষণা
ও
পাঠদান।
এটা
শুধু
যে
একাডেমিয়ার
মধ্যেই
সীমাবদ্ধ
তা
নয়,
আমাদের
রাজনৈতিক
ও
আমলা
নিয়ন্ত্রিত
প্রাতিষ্ঠানিক
নীতিমালার
মধ্যেও
এ
একই
অবজ্ঞা
ও
অসচেতনতার
উপস্থিতি
সুস্পষ্ট।
শহরের
১০
শতাংশেরও
কম
জনসংখ্যার
জন্য
আছে
রাজউক,
সিডিএ,
কেডিএ,
সিটি
করপোরেশন,
জাতীয়
গৃহায়ন
কর্তৃপক্ষ,
পিডব্লিউডি,
হাউস
বিল্ডিং
ফাইন্যান্স
করপোরেশনসহ
অগণিত
সরকারি-বেসরকারি
ব্যাংক
ও
বিশেষায়িত
গৃহঋণ
বিতরণ
প্রতিষ্ঠান।
এদের
কোনো
কোনো
প্রতিষ্ঠান
এক
সপ্তাহেরও
কম
সময়ে
গৃহ
নির্মাণ
বা
ফ্ল্যাট
ক্রয়
বাবদ
কোটি
টাকার
ওপরে
ঋণ
জোগাড়
করে
দেয়ার
স্মার্ট
প্রতিযোগিতায়
নিয়োজিত।
অন্যদিকে
৯০
শতাংশ
গ্রামীণ
মানুষের
আবাসনের
জন্য
আর্থিক
সহযোগিতা
বা
নীতিমালাভিত্তিক
তেমন
কোনো
জাতীয়
প্রতিষ্ঠান
নেই
বললেই
চলে।
যেখানে
মাত্র
দেড়-দুই
লাখ
টাকার
মধ্যে
একটি
সাধারণ
মানের
গ্রামীণ
ঘর
বানানো
সম্ভব,
কিন্তু
এ
সামান্য
আর্থিক
সহযোগিতা
করার
জন্য
তেমন
কোনো
রাষ্ট্রীয়
সর্বজনীন
নীতিমালা
নেই।
এ
বিশাল
খাতকে
ছেড়ে
দেয়া
হয়েছে
বেসরকারি
এনজিওর
হাতে,
যাদের
অতিউচ্চ
চক্রবৃদ্ধি
হারের
সুদ
পরিশোধ
করা
প্রায়
অসম্ভব।
আমার এ
লেখা
একপক্ষীয়
ও
একাডেমিক
মনে
হতে
পারে।
সেটা
যেন
না
হয়,
সে
কারণে
আমি
দক্ষিণবঙ্গের
কালিগঙ্গা
নদী-তীরবর্তী
পিরোজপুর
জেলার
কলাখালী
ইউনিয়নের
দুটি
বাস্তব
কেস
স্টাডি
এখানে
তুলে
ধরছি।
কেস স্টাডি ১: কামাল হাওলাদারের ঘর, চরেরবাড়ি, কৈবর্তখালী, কলাখালী, পিরোজপুর সদর
কয়েক বছর
আগের
গল্প,
কামাল
হাওলাদারের
বয়স
আনুমানিক
৪০।
তিনি
কালিগঙ্গা
নদীর
জেলে।
মাছ
ধরে
ওস্তাপাড়ার
ঘাটে
অথবা
দাউদপুর,
চলিশা
কিংবা
পথেরহাটে
বিক্রি
করেন।
তার
নিজস্ব
ছোট
একটা
নৌকা
আছে।
জেলেপাড়ার
অনেকের
মতো
একত্রে
গভীর
রাতে
বেআইনি
কারেন্ট
জালে
মাছ
ধরতে
গিয়ে
ধরা
পড়েন।
রক্ত
পানি
করা
টাকায়
কেনা
তাদের
কারেন্ট
জাল
স্বাভাবিকভাবেই
আইনানুযায়ী
পুড়িয়ে
দেয়া
হয়।
কোস্টগার্ড,
নৌ
পুলিশ,
ফিশারিজ
ডিপার্টমেন্ট—তিন
বাহিনীর
টহলের
মধ্যে
বৈধ
ও
অবৈধ,
দুই
পথেই
তারা
কালিগঙ্গায়
মাছ
ধরেন।
এটা
ওপেন
সিক্রেট।
পুরো
কালিগঙ্গার
প্রশস্ততা
২
হাজার
৪০০
ফুট
আর
কামালদের
পুড়িয়ে
ফেলা
জাল
ছিল
১
হাজার
২০০
ফুট
লম্বা।
শত
শত
বছরের
অভিজ্ঞতা
আর
জোয়ার-ভাটার
গতির
হিসাব
মিলিয়ে
মাছ
ধরার
কিছু
বিশেষ
জুতসই
সময়
প্রকৃতি
এ
জনপদের
মানুষকে
শিখিয়ে
দিয়েছে।
এ
সময়গুলোকে
বলে
‘গোন’
বা
‘খেও’।
কোন
গোনে
বেশি
মাছ
পাওয়া
যাবে
তা
নির্ভর
করবে
পূর্ণিমা
আর
অমাবস্যার
ওপর।
সেই
কোথায়
ভারত
মহাসাগর
আর
বঙ্গোপসাগরের
জোয়ার-ভাটার
টান
আর
কোথায়
২
লাখ
৪০
হাজার
মাইল
দূরের
চাঁদের
মহাকর্ষীয়
বল,
এসবই
প্রত্যক্ষভাবে
নিয়ন্ত্রণ
করছে
কামাল
হাওলাদারের
জীবন
ও
জীবিকা।
তার
ঘরের
চেহারা
দেখেই
কামালের
আর্থিক
অবস্থার
আন্দাজ
পাওয়া
যায়।
ঘরের
ফ্লোর
নির্ভেজাল
মাটির।
এরা
ঘরের
মেঝেতে
ঘুমায়।
জীবনে
কোনোদিন
খাট
বা
চৌকিতে
ঘুমায়নি।
কামালের
এক
মেয়ে
ও
এক
ছেলে।
মেয়ে
হনুফার
বয়স
২৮।
এ
বয়সেই
তাকে
যৌতুকের
কারণে
পাঁচ
স্বামীর
কাছ
থেকে
তালাক
পাওয়ার
অপমানজনক
অভিজ্ঞতার
ভেতর
দিয়ে
যেতে
হয়েছে।
যার
বাবার
ঘরের
চেহারা
এমন,
সে
যৌতুক
দেবে
কী
করে?
হনুফারের
ছয়
বছরের
কন্যাসন্তান
মিনুকে
তার
মায়ের
কাছে
রেখে
সে
ঢাকায়
গেছে
কাজ
করতে।
বছরে
দু-একবার
সে
বাড়িতে
আসে
শুধু
তার
মেয়েকে
আদর
করার
জন্য।
সামান্য
যে
ক’দিন
থাকে,
এক
মুহূর্তের
জন্যও
মেয়েকে
চোখের
আড়াল
করে
না।
তারপর
হঠাৎ
একদিন
মেয়েকে
মায়ের
বুকে
পাগলির
মতো
ঠেলে
দিয়ে
ঢাকায়
তার
কাজে
চলে
যায়।
মিনুর
শত
করুণ
কান্নায়ও
তখন
সে
আর
পেছন
ফিরে
তাকায়
না।
সে
জানে
তার
এ
জীবনে
আর
ফিরে
তাকানোর
কোনো
সুযোগ
নেই।
কামালের
পরিবারের
মোট
ছয়জন
ছবির
ওই
ছাপড়ার
মধ্যে
পশুর
মতো
গাদাগাদি
করে
থাকে।
ওদের
ঘরটির
পোতা
প্রায়
তিন
ফুট
উঁচু।
তার
পরও
জোগার
(পূর্ণিমা-অমাবস্যার
জোয়ারে)
সময়
পানি
প্রায়
পোতা
ছুঁই
ছুঁই
করে।
কেননা
নদীর
কাছের
এ
এলাকাটা
বেশ
নিচু।
বারবার
জোয়ারের
পানির
সংস্পর্শে
এসে
ঘরের
পোতা
এখন
ভাঙনমুখর
কালিগঙ্গার
পাড়ের
মতো
ভেঙে
ভেঙে
পড়ছে।
জামালের
ঘরের
চালের
নাড়া
পচে
গেছে
বহুদিন
আগেই।
এখন
নাড়ার
ওপর
পলিথিন
দিয়ে
কোনো
রকমে
বাঁচতে
চাচ্ছে
সে।
সাধারণত
নাড়ার
চাল
এক
বছরের
বেশি
টেকে
না।
পৌষ-মাঘ
মাসে
ধান
কাটার
পর
সাধারণত
নাড়ার
চাল
ছাওয়া
হয়।
পরের
বছর
অগ্রহায়ণ
মাস
আসতে
আসতেই
নাড়ার
অবস্থা
খারাপ
হয়ে
যায়।
নাড়া
বিক্রির
পরিমাণের
একক
হলো
আঁটি
(স্থানীয় ভাষায়
বলে
আডা)।
এক
আঁটি
নাড়া
বলতে
বুঝায়
তিন
ফুট
লম্বা
অনেকগুলো
নাড়া
যা
ছয়
ফুট
লম্বা
দড়ি
দিয়ে
পেঁচিয়ে
একটা
আঁটি
বানানো
যাবে।
এ
রকম
২০
আঁটি
নাড়ার
দাম
২
হাজার
১০০
টাকা।
একটা
১৭
বন্দের
ঘরের
চাল
ছাইতে
৩০-৪০
আঁটি
নাড়া
দরকার।
তার
চালের
প্রায়
সব
জায়গা
দিয়েই
পানি
পড়ে।
নীল
পলিথিনের
তালি
তেমন
কাজে
আসে
না।
তাই
বর্ষাকালে
প্রায়
প্রতি
রাতই
তাদের
জন্য
যেন
একেকটা
বেঁচে
থাকার
অভিযানের
অভিজ্ঞতার
রাত।
পুবমুখী
ঘরটির
বেড়া
সব
হোগলা
পাতার
শক্ত
নিচের
অংশ
দিয়ে
বানানো।
ফ্রেম
হিসেবে
ব্যবহূত
হয়েছে
বাঁশের
বা
সুপারি
গাছের
কাণ্ডের
চটা।
উত্তর
দিকে
দুটো
জানালার
মতো
চৌকোনা
ফুটো
আছে।
এছাড়া
ঘরে
আর
কোনো
জানালা
নেই।
উত্তরে
পাকের
ঘরে
আর
শৌচাগারে
যাওয়ার
জন্য
একটা
হোগলার
বেড়ার
দরোজা
আছে।
গোসলখানা
বলতে
কিছু
নেই,
সবাই
নদীতে
গোসল
করে।
তবে
নারীদের
জন্য
সেটা
বিশেষ
কষ্টকর
ও
বিব্রতকর।
কামালের অনেক
দিনের
স্বপ্ন
কিছু
টাকা
জমাতে
পারলে
বাকি
টাকা
সে
এনজিও
থেকে
একটা
বড়
লোন
নিয়ে
বিরাট
একটা
মুদির
দোকান
দেবে।
কত
শত
এনজিওর
চালাক
স্যাররা
সবসময়
নানা
ম্যাজিক
বুদ্ধি
নিয়ে
ঘুরঘুর
করে
তাদের
পাড়ায়,
ঋণ
জোগাড়
করা
কোনো
সমস্যাই
না।
মুদির
দোকানের
ব্যবসা
করে
তার
তখন
অনেক
টাকা
হবে।
টাকা
হলে
দোতলা
পুবমুখী
একটা
বিরাট
২৯
বন্দের
পাকা
কাঠের
রঙিন
পুরু
টিনের
নকশাকাটা
ঘর
ওঠাবে
(ঢাকা শহরের
বনেদি
এলাকার
একটি
টয়লেট
নির্মাণের
টাকায়
এমন
কয়েকটি
স্বপ্নের
ঘর
বানানো
সম্ভব)।
আর
তখন
হনুফাকে
শহর
থেকে
নিয়ে
আসবে।
জীবন
তার
প্রতি
অনেক
অবিচার
করেছে।
এ
নিষ্ঠুর
সমাজের
কোনো
কষ্ট
যেন
তার
মেয়েকে
আর
ছুঁতে
না
পারে
তার
সব
ব্যবস্থা
সে
নেবে
তখন।
এর
চেয়ে
বড়
কোনো
সুখের
স্বপ্ন
কামালের
সর্বোচ্চ
কল্পনায়ও
আসে
না।
তবে
এ
সুখময়
কল্পনার
মাঝেও
কামালের
মনটা
কেমন
যেন
খচখচ
করে।
এ
এনজিওর
ঋণের
জটিল
কিস্তি
দিতে
না
পেরে
পাশের
ওস্তাপাড়া
আর
চরেরবাড়ি
মিলিয়ে
মোট
প্রায়
২১
জনের
নামে
এখন
হুলিয়া,
সুন্দরবনের
হিংস্র
বাঘের
থাবা
থেকে
হয়তো
ভাগ্যগুণে
বেঁচে
যেতে
পারবে,
কিন্তু
এনজিওর
কিস্তিওয়ালা
স্যারদের
থাবা
থেকে
বাঁচার
উপায়
নেই।
গভীর
রাতে
নক্ষত্রের
আলোয়
নীরব
কালিগঙ্গায়
জাল
পেতে
নৌকায়
দোল
খেতে
খেতে
ক্লান্ত
কামালের
মনের
গভীরে
চলতে
থাকে
নকশাকাটা
রঙিন
ঘরের
সুখস্বপ্ন
বনাম
এনজিওর
সম্ভাব্য
হুলিয়ার
দ্বিধা-দ্বন্দ্বের
দোলাচল।
কেস স্টাডি ২: সাদ্দাম—সম্ভাব্য এক ঋণ ফেরারির ভাঙা ঘর থেকে রাঙা ঘরের গল্প। গ্রাম, কৈবর্তখালী, ওস্তাপাড়া, কলাখালী, পিরোজপুর সদর
১৯৯১ সালে
আমেরিকা
ইরাক
আক্রমণ
করে।
একই
সময়
হাজার
মাইল
দূরের
দক্ষিণবঙ্গের
কালিগঙ্গা
পাড়ের
এক
দরিদ্র
জেলে
হালিম
হাওলাদারের
ঘরে
প্রথম
পুত্রসন্তান
জন্ম
নেয়।
হারিকেনের
আবছা
আলোয়
সন্তানের
মুখ
দেখে
হালিম
তার
নাম
রাখে
সাদ্দাম।
যুবক
সাদ্দাম
এখন
রিকশা
চালায়
ছোট্ট
শহর
পিরোজপুরে।
হালিম
হাওলাদারের
ছোট্ট
একটা
ছইহীন
নৌকা
আছে।
তা
দিয়ে
কখনো
নদীর
ওপারে
মেঘপালের
মধ্যে
খেয়া
বায়।
কিন্তু
নৌকায়
ইঞ্জিন
না
থাকায়
কেউ
তার
নৌকায়
তেমন
ওঠে
না।
তবে
আপদে-বিপদে
বা
রাতবিরাতে
যখন
কেউ
নৌকা
খুঁজে
পায়
না
তখন
সবাই
হালিমকে
খোঁজে।
তখন
সে
এক
ডাকে
সাড়া
দেয়।
তার
অবচেতন
মন
মোটামুটি
মানুষের
আপদ-বিপদের
অপেক্ষায়
থাকে।
মানুষের
আপদ-বিপদ
তার
ঘরে
ধোঁয়া
ওঠা
গরম
ভাতের
নিশ্চয়তা
দেয়।
খুব
ভোরে
কাঁচামরিচ-পান্তা
ভাত
খেয়ে
দুই
মাইল
হেঁটে
টোনা
গাঙের
পাড়ে
আকাব্বর
শেখের
গ্যারেজে
যায়
সাদ্দাম,
যেখানে
রাতে
তার
রিকশার
ব্যাটারি
চার্জ
হয়।
সাদ্দামের
অর্থনৈতিক
অবস্থার
একটা
ফিরিস্তি
দিচ্ছি:
এক এনজিও
থেকে
৩০
হাজার
টাকা
ঋণ
নিয়েছে
সে,
যার
সাপ্তাহিক
কিস্তি
৭৫০
টাকা
আর
বাধ্যতামূলক
সঞ্চয়
৫০
টাকা।
সেই
হিসেবে
প্রতি
সপ্তাহে
তাকে
৮০০
টাকা
শোধ
করতে
হয়।
করোনাকালের
‘GOOD
LOAN PROGRAMME’
থেকে
সে
নিয়েছে
১০
হাজার
টাকা,
যা
তাকে
প্রতি
মাসে
১
হাজার
টাকা
কিস্তি
হিসেবে
মোট
১১টি
কিস্তিতে
পরিশোধ
করতে
হবে।
এছাড়া
সে
একটা
পুরনো
রিকশার
ফ্রেম
কিনেছে
১০
হাজার
টাকায়।
এ
পুরনো
রিকশাকে
সাজিয়ে-গুছিয়ে
নতুন
ব্যাটারিসহ
খরচ
করেছে
৪০
হাজার
টাকা,
যা
সে
একজন
সম্ভ্রান্ত
ব্যক্তির
কাছ
থেকে
ধার
হিসেবে
নিয়েছে,
যার
জন্য
তাকে
১২
মাসে
দিতে
হবে
৬০
হাজার
টাকা
(সুদহার ৫০%)।
অন্যদিকে
ব্যাটারি
চার্জের
জন্য
মাসিক
খরচ
১
হাজার
৫০০
টাকা।
দৈনিক
৫০
টাকা
দুপুরের
খাবার
(তিনটা রুটি
আর
আখের
গুড়)
হিসেবে
মাসিক
খরচ
১
হাজার
৫০০
টাকা।
অবশেষে
প্রতি
মাসে
তার
হাতে
থাকে
মাত্র
৩
হাজার
৭০০
টাকা।
অর্থাৎ
মাথাপিছু
২
হাজার
২২৭
মার্কিন
ডলার
(১ লাখ
৯০
হাজার
টাকা)
বার্ষিক
আয়ের
দেশে
সাদ্দামের
প্রকৃত
বার্ষিক
আয়
আসলে
মাত্র
৪৫
হাজার
টাকা।
এ
টাকায়
তাদের
তিনজনের
সংসার
আর
তার
সঙ্গে
যথাসাধ্য
মা-বাবাকে
সাহায্য
করা,
এটা
কীভাবে
সম্ভব?
সে
কারণে
সাদ্দামের
ঘরটি
ছিল
গবাদিপশুরও
বসবাসের
অযোগ্য।
তাকে
এ
প্রশ্ন
করায়
সে
দাঁত
কেলিয়ে
হাসে
আর
জ্ঞানীর
মতো
উত্তর
দেয়
যে
কয়েক
মাসের
মধ্যেই
সে
অন্য
এনজিও
থেকে
গোপনে
নতুন
দুটো
লোন
নিয়ে
বর্তমান
কিস্তিগুলো
শোধ
করে
দেবে।
তার
কথায়
বোঝা
যায়,
জীবন
নিয়ে
ছয়
মাসের
বেশি
তারা
চিন্তা
করতে
শেখেনি।
তার
মানে
সে
আবার
নতুন
ঋণের
কিস্তির
চক্রে
ক্রমাগতভাবে
জড়াতে
থাকবে।
হয়তো
বছর
না
ঘুরতেই
গ্রামের
ঋণ
ফেরারিদের
দলে
তার
নাম
উঠবে।
প্রথমদিকে
দিনের
বেলা
এলাকা
থেকে
পালিয়ে
থাকবে।
গভীর
রাতে
চুপি
চুপি
ঘরে
ফিরবে
আর
খুব
ভোরে
পালিয়ে
নদীর
ওপারে
মেঘপাল,
রঘুনাথপুর
বা
অন্য
সব
গ্রামে
চলে
যাবে।
তারপর
ঠিক
আগের
দিনের
জমিদারের
পেয়াদাদের
মতো
আধুনিক
ঋণ
পেয়াদাদের
চাপ
যখন
চক্রবৃদ্ধি
হারে
বাড়বে,
তখন
সীমাহীন
মানসিক
অশান্তি
আর
নিরাপত্তাহীনতা
সহ্য
করতে
না
পেরে
একদিন
হয়তো
সে
নিঃসম্বল
স্ত্রী
আর
জগতের
নির্মমতা
সম্বন্ধে
সম্পূর্ণ
অবুঝ
ছোট্ট
ফুটফুটে
কন্যাটিকে
চরম
অনিশ্চয়তার
মধ্যে
ফেলে
রেখে
স্বরূপকাঠির
বাওয়ালিদের
নৌকাবহরে
মাছ
ধরতে
অথবা
মৌয়ালদের
সঙ্গে
মধু
সংগ্রহের
কাজে
পালিয়ে
যাবে
সুদূর
সুন্দরবনের
দুবলারচর,
টেকদিয়া,
মেরালি,
আলোরকুল
বা
বুড়িগোয়ালিনী।
আগের
দিনের
জমিদারের
পেয়াদাদের
হাতে
থাকত
চকচকে
চোখা
বল্লম
আর
এখনকার
আধুনিক
ঋণ
পেয়াদাদের
হাতে
থাকে
কাগজ-কলম।
সাদ্দামের ঘরের
দৈন্যদশা
দেখে
কয়েকজন
সহূদয়
মানুষ
এগিয়ে
এসে
ছবির
রঙিন
নকশাকাটা
ঘরটি
বানিয়ে
দিতে
অর্থ
সাহায্য
করেছে।
এ
হলো
ভাঙা
ঘর
থেকে
রাঙা
ঘরের
গল্প।
প্রশ্ন
হচ্ছে,
সাদ্দাম
বা
কামালদের
কেন
আবাসনের
জন্য
মানুষের
দয়া-দাক্ষিণ্যের
ওপর
নির্ভর
করতে
হবে?
রাষ্ট্র
কেন
এর
জন্য
একটা
স্থায়ী
ব্যবস্থা
উদ্ভাবন
করবে
না?
কেন
সংখ্যাগরিষ্ঠ
গ্রামীণ
মানুষের
জন্য
ব্যাপক
কোনো
জাতীয়ভিত্তিক
নীতিমালা
থাকবে
না?
তাদের
জন্য
বিনা
সুদে
বা
নামমাত্র
সুদে
জাতীয়ভাবে
ব্যাপকভিত্তিক
ও
সর্বজনীন
গৃহ
নির্মাণ
ঋণ
নীতিমালা
থাকতে
হবে।
মধ্যম
আয়ের
দেশ
হয়ে
ওঠা
একটি
দেশের
সিংহভাগ
মানুষ
বাসস্থানের
জন্য
কোনো
ব্যক্তি
বা
কোনো
রাষ্ট্রীয়
পদাধিকারীর
মর্জিমাফিক
দয়া-দাক্ষিণ্যের
ওপর
নির্ভর
করবে
এটা
মোটেই
কাঙ্ক্ষিত
নয়।
মনে
রাখতে
হবে,
গ্রামকে
শহর
বানানোর
কোনো
প্রয়োজন
নেই।
গ্রামকে
গ্রামই
থাকতে
দিতে
হবে।
তবে
গ্রামে
প্রয়োজনীয়
সড়ক
নেটওয়ার্ক,
বিদ্যুৎ,
সুপেয়
পানি
ও
পয়োনিষ্কাশন
ব্যবস্থা,
উন্নত
স্বাস্থ্য
ও
চিকিৎসা
কাঠামো,
শিক্ষা
ব্যবস্থা
ও
ইন্টারনেটসহ
সব
ধরনের
আধুনিক
সুযোগ-সুবিধা
সন্নিবেশ
করতে
হবে।
এতে
গ্রামের
জীবন
ব্যবস্থা
আধুনিকায়ন
হবে।
তবে
গ্রাম
গ্রামই
থাকবে,
একে
শহর
বানিয়ে
নষ্ট
ও
অবসবাসযোগ্য
করার
পরিকল্পনা
সঠিক
চিন্তা
নয়।
এছাড়া যেখানে
সেখানে
খণ্ড
খণ্ড
গুচ্ছগ্রাম
বা
ব্যারাকের
মতো
Row
Housing বানানোর
পরিকল্পনা
থেকে
সরে
আসতে
হবে।
গ্রামীণ
মানুষের
নৃতাত্ত্বিক
মনস্তত্ত্ব
ও
সামাজিক
সম্পর্কের
রসায়ন
বুঝতে
হবে।
শহরে
ঘর
আর
বাড়ি
হয়তো
একই
অর্থ
বহন
করে,
কিন্তু
গ্রামে
ঘর
বলতে
বোঝায়
শুধু
একটি
ঘর
বা
ভবন,
কিন্তু
বাড়ি
বলতে
বোঝায়
ডজন
খানেক
বা
তার
চেয়েও
বেশি
ঘরের
একতাবদ্ধ
সমষ্টিগত
অবস্থানকে।
যারা
শত
শত
বছর
ধরে
একটি
সাধারণ
রক্তধারার
পরম্পরাকে
বহন
করে
একটি
সাধারণ
উঠানকে
কেন্দ্র
করে
অনেকটা
অর্গানিকভাবে
গড়ে
উঠেছে।
এ
বাড়ি
হয়ে
উঠেছে
তার
অস্তিত্বের
ঠিকানা,
তার
জীবন,
শরীর
ও
পরিচয়ের
অবিচ্ছেদ্য
অংশ।
এ
থেকে
তাকে
কখনো
আলাদা
করা
যাবে
না।
সে
কারণেই
শেকড়
থেকে
উপড়ে
এনে
তাকে
সরকারি
কোনো
অচেনা
গুচ্ছগ্রামে
তুলে
দিলেই
সে
সেটাকে
কখনো
আপন
করে
নেবে
না।
তাই
সরকারি
টাকায়
গড়ে
ওঠা
অনেক
গুচ্ছগ্রাম
বসবাসের
ঠিকানা
হিসেবে
ব্যর্থ
হয়েছে।
তবে
বাপ-দাদার
বসতভিটা
যদি
নদীতে
বিলীন
হয়ে
যায়
বা
কোনো
উন্নয়ন
অবকাঠামো
কর্তৃক
অধিগ্রহণ
হয়
সেটা
ভিন্ন
কথা।
এজন্য
দরকার
গ্রামীণ
দরিদ্র
জনগোষ্ঠীকে
সঠিক,
সর্বজনীন
ও
সহজলভ্য
আর্থিক
সহায়তা
কার্যক্রমের
মাধ্যমে
তার
আপন
চিরচেনা
পরিবেশের
মধ্যেই
তার
জন্য
বসবাসযোগ্য
আবাসন
ব্যবস্থা
গড়ে
তুলতে
এখনই
লাগসই
নীতিমালা
গড়ে
তোলা।
আমাদের
মুক্তিযুদ্ধের
চেতনার
অন্যতম
গুরুত্বপূর্ণ
উপাদান
সামাজিক
সমতা
অর্জনের
পথে
সেটা
হবে
অনেক
বড়
একটি
পদক্ষেপ।
মাহফুজুল হক জগলুল: স্থপতি; ফেলো, আইএবি