রমজান—সিয়াম সাধনা, নামাজ ও আত্মোপলব্ধির এক মহিমান্বিত অধ্যায়, যা সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য এক গভীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য বহন করে। এ মাস শুধু সংযম ও উপাসনার নয়, বরং এটি এক নবজাগরণের সময়, যেখানে মানসিক পরিশুদ্ধি, আত্মার প্রশান্তি ও সমাজের মেলবন্ধন এক সুরে বাঁধা পড়ে। পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব সবাই একত্রিত হয়ে ইফতারের টেবিলে মিলিত হয়, যেখানে শুধু আহার গ্রহণ হয় না, বরং ভালোবাসা ও সংযোগের পরম্পরাও নবজীবন লাভ করে।
সোশ্যাল ক্যাপিটাল বা সামাজিক মূলধন ধারণার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় দক্ষিণ কোরিয়ার কেডিআই স্কুল অব পাবলিক পলিসি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টে পিএইচডি অধ্যয়নের সময়, ২০১৬ সালে। এখানে অধ্যয়নকালীন আমার অধ্যাপক এক অনন্য প্রশ্ন রেখেছিলেন: ‘কোন মূলধন ব্যবহার করলে কমে না, বরং বেড়ে যায়?’ আমরা নানা উত্তর খুঁজে ফিরলেও সঠিকটি অনুমান করতে পারিনি। তখন তিনি বললেন, ‘এটি সোশ্যাল ক্যাপিটাল—যত বেশি ব্যবহার করা হয়, ততই এটি সম্প্রসারিত ও শক্তিশালী হয়।’
সোশ্যাল ক্যাপিটালের এ দর্শন পিয়েরে বুর্দিয়ে, জেমস কোলম্যান ও রবার্ট পাটনামের মতো সমাজবিজ্ঞানীদের গবেষণায় সমৃদ্ধ হয়েছে, যারা বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছেন কীভাবে সম্পর্ক, বিশ্বাস ও সাম্প্রদায়িক বন্ধন একটি সমাজকে গঠন ও বিকশিত করে। সোশ্যাল ক্যাপিটাল নিছক একটি ধারণা নয়, বরং এটি আমাদের বাস্তব জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ—একটি শক্তি, যা মানব সম্পর্কের সেতুবন্ধ গড়ে তোলে, পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধি করে এবং সহমর্মিতার বুননকে মজবুত করে। এ প্রেক্ষাপটে মাহে রমজানকে শুধু ধর্মীয় পবিত্রতা বা আত্মশুদ্ধির পর্ব বলেই ভাবা যথেষ্ট নয়; এটি সামাজিক মূলধনের এক অনন্য ক্ষেত্র। এ মাসে মানুষের হৃদয় দানশীলতায় উজ্জীবিত হয়, আত্মীয়তা ও ভ্রাতৃত্ববোধ নতুন করে সঞ্জীবিত হয়। মসজিদে একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাজ আদায় করা বা অভাবী মানুষের মুখে আহার তুলে দেয়ার মাঝে যে সংহতি ও একাত্মতার প্রকাশ ঘটে, তা সোশ্যাল ক্যাপিটালকে শক্তিশালী করে। রমজানের এ ইতিবাচক চর্চা সমাজের মূল বন্ধনকে আরো দৃঢ় ও মানবিক করে তোলে, আর তা সমাজে দীর্ঘস্থায়ী সংহতি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা রাখে।
সোশ্যাল ক্যাপিটাল কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ
‘সোশ্যাল ক্যাপিটাল’ বলতে বোঝায় মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক, আস্থা, মূল্যবোধ ও নেটওয়ার্কের সমন্বয়, যা সমাজে সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ডকে সহজতর করে। এটি এমন এক মূল্যবান সম্পদ যা ভৌত সম্পদ বা আর্থিক পুঁজির মতো দৃশ্যমান নয়, তবে সমাজকে সুসংহত রাখতে অনবদ্য ভূমিকা রাখে। সোশ্যাল ক্যাপিটাল কেবল ব্যক্তিস্বার্থের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি পারস্পরিক কল্যাণ ও মানবিকতার দীপ্তির সম্মিলন, যেখানে পারস্পরিক আস্থা ও সম্পর্কের মূল্যই সবার আগে। স্বার্থের চেয়েও দায়িত্ববোধ ও প্রত্যাশার শক্তিতে মানুষের মাঝে প্রকৃত সংযোগ গড়ে ওঠে, যা সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
রবার্ট পাটনাম সোশ্যাল ক্যাপিটালকে ‘সর্বজনীন সম্পদ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কারণ এর আলো ছড়িয়ে পড়ে সবার মাঝে—একজনের লাভ এখানে সবার অংশীদারত্বে পরিণত হয়। সম্পর্ক, নীতি ও মূল্যবোধের এ আদান-প্রদানের মাধ্যমে কেবল ব্যক্তি নয়, গোটা সমাজই সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। যদিও অনেকের কাছে সম্পর্কগুলো কেবল বাহ্যিক প্রয়োজন মেটানোর উপায় বলে মনে হতে পারে, কিন্তু শেষাবধি এটি পারস্পরিক সহযোগিতা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে ঐক্যের শক্তিকে সুদৃঢ় করে।
বিশ্বাস, সামাজিক যোগাযোগ ও সাধারণ মূল্যবোধ—এ তিন স্তম্ভ মিলে সোশ্যাল ক্যাপিটালের ভিত্তি তৈরি করে। এর মিথস্ক্রিয়ায় গড়ে ওঠা সহযোগিতা ও সহমর্মিতার পরিসর সমাজকে স্থিতিশীল রাখে, একই সঙ্গে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে। আর মাহে রমজান হঠাৎ করেই এ বন্ধনকে আরো দৃঢ় করে তোলে—এ সময় মানুষ হয়ে ওঠে আরো সংবেদনশীল ও উদার, পরস্পরের কল্যাণে নিয়োজিত। রমজান সামাজিক সম্পর্কের সত্যিকারের আলোকবর্তিকা, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ব্যক্তি নয়, সম্পর্কই মানুষের প্রকৃত সম্পদ, এবং বিচ্ছিন্নতার চেয়ে সম্মিলিত উদ্যোগেই সমাজের টেকসই সমৃদ্ধি নিশ্চিত হয়।
একতার সুরে বন্ধনের দীপশিখায় প্রজ্বলিত রমজান ও সামাজিক সংহতি
রমজান শুধু সংযম ও ইবাদতের মাস নয়; এটি হৃদয়ের সংযোগ, সম্পর্কের পুনর্জাগরণ ও সামাজিক সংহতির অনন্য উৎসব। এ মাসের প্রতিটি আচার-অনুষ্ঠান যেন এক মোহনায় এসে মিলে যায়, যেখানে আধ্যাত্মিক অনুপ্রেরণা ও পারস্পরিক সম্প্রীতির ধারা প্রবাহিত হয়।
তারাবিহ নামাজ রমজানের এক মহিমান্বিত আয়োজন, যা কেবল প্রার্থনা নয়; বরং সম্মিলিতভাবে আত্মশুদ্ধি অর্জনের পথ। প্রতি রাতের এশার নামাজের পর, যখন মুসল্লিরা কাতারে কাতারে দাঁড়িয়ে কোরআনের পবিত্র বাণী পাঠ করে, তখন তাদের মন-প্রাণজুড়ে জাগে নিবিড় আধ্যাত্মিকতা। এ সম্মিলিত উপাসনা ব্যক্তিগত ইবাদতকে এক নতুন মাত্রায় পৌঁছে দেয় এবং একই সঙ্গে সমাজের মানুষের মধ্যে বিশ্বাস ও ভ্রাতৃত্ববোধের ভিত্তি দৃঢ় করে।
রমজানের আরেক অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো ইফতার। এটি কেবল সূর্যাস্তের পর উপবাস ভঙ্গের আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং একটি মহামিলনের উৎস। ইফতারের টেবিলে পরিবারের সদস্য, বন্ধু ও প্রতিবেশীদের পাশাপাশি নিম্নবিত্ত ও অসহায় মানুষও স্থান পায় এবং সবার মাঝে খাবার ভাগ করে নেয়ার মাধ্যমে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত হয়। মসজিদ ও কমিউনিটি সেন্টারগুলোর বড় পরিসরের ইফতার আয়োজন ধর্ম, জাতি ও শ্রেণীর ব্যবধান ঘুচিয়ে মানুষকে একাত্ম করে তোলে। এক টুকরো খেজুর বা এক গ্লাস পানি ভাগাভাগি করার মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে গভীর সংযোগ, যা দানশীলতা, সহানুভূতি ও সামাজিক সংহতির প্রতিচ্ছবি।
এভাবে রমজান মাসে আত্মশুদ্ধি ও সামাজিক সংহতি মিলেমিশে এক সুরে ঐক্যতান করে, মানবতার পরিশুদ্ধ ও উজ্জ্বল রূপকে সামনে এনে দীপশিখার মতো প্রোজ্জ্বল করে তোলে।
মানবতার অমিয় সুধা ধারায় রমজান ও দানশীলতা
রমজান শুধু সংযমের মাস নয়; এটি দানশীলতার এক মহিমান্বিত অধ্যায়, যেখানে মানবতার অমিয় সুধাধারা প্রবাহিত হয়। এ পবিত্র মাসে হৃদয়ের দরজা খুলে যায়, সম্পদের দ্বার উন্মুক্ত হয়, আর সমাজে ছড়িয়ে পড়ে উদারতার সৌরভ। জাকাত ও সদকার মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করার যে সুমহান আদর্শ, রমজানে তার প্রকাশ ঘটে পরিপূর্ণতায়। জাকাত কোনো সাধারণ দান নয়; এটি ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ, যা সম্পদের শুদ্ধি ও সমাজের সাম্য নিশ্চিত করে। এটি কেবল ব্যক্তিগত দায়িত্ব নয়, বরং এটি এক সামাজিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে সম্পদের প্রবাহ দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিতদের দিকে ধাবিত হয়। যখন কেউ তার সম্পদের একটি অংশ জাকাত হিসেবে প্রদান করে, তখন তা শুধু অভাবীদের সাহায্যই করে না; বরং সমাজে আর্থিক ভারসাম্য রক্ষা করে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ায় এবং সামাজিক সংহতি সুদৃঢ় করে।
জাকাতের পাশাপাশি সদকা—স্বেচ্ছামূলক দান—রমজানে এক নতুন মাত্রা লাভ করে। ধনী-গরিব নির্বিশেষে প্রতিটি হৃদয় দানের আনন্দে উদ্বেলিত হয়। রমজানে পথচারীদের হাতে এক বোতল পানি তুলে দেয়া, অসহায়কে এক মুঠো খাবার খাওয়ানো কিংবা একজন শীতার্তের হাতে একটি গরম কাপড় তুলে দেয়াই সদকার প্রকৃত সৌন্দর্য। অর্থনীতির কেইনেসিয়ান তত্ত্ব অনুসারে, জাকাত ও সদকা এক ধরনের ট্রান্সফার পেমেন্ট, যা নিম্ন ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল করে এবং সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে। কল্যাণমূলক অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে এ আর্থিক স্থানান্তর সামাজিক বৈষম্য হ্রাস করে ও সম্মিলিত সুস্থতা বৃদ্ধি করে।
মাহে রমজান অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশের প্রকৃত প্রতিচ্ছবি
রমজান মাস এক অনন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ সৃষ্টি করে, যেখানে ধনী-গরিব, শক্তিমান-দুর্বল সবাই একই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যায়। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষ ক্ষুধার কষ্ট অনুভব করে, যা দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিতদের দৈনন্দিন সংগ্রামের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এ অভিজ্ঞতা সহানুভূতি জাগিয়ে তোলে, হৃদয়কে নমনীয় করে এবং দানশীলতায় উদ্বুদ্ধ করে। রমজান শুধু ব্যক্তি পর্যায়ের আত্মশুদ্ধির জন্য নয়; এটি সমাজের বৃহত্তর কল্যাণেরও এক অনন্য উপলক্ষ। এ মাসে দয়ালু ও সহানুভূতিশীল আচরণ বেড়ে যায়, যা ধর্মীয় গণ্ডির বাইরে গিয়েও সামাজিক ন্যায়বিচার ও সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে। মানুষ একে অন্যের প্রতি আরো সহানুভূতিশীল হয়, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, এবং সমাজের দুর্বল শ্রেণীর প্রতি দায়িত্ববোধ জাগ্রত করে।
কিন্তু তাহলে অনৈতিকতার ঝড় কেন থামে না?
অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন—রমজান যখন নৈতিকতা, সংযম ও সহমর্মিতার শিক্ষা দেয় তখন কেন এ মাসেও মুনাফাখোরি, ভেজাল, দুর্নীতি ও ঘুসের মতো অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলতে থাকে?
তত্ত্বগতভাবেও দেখা যায় যে মানুষ যখন ব্যক্তিগত সুবিধার চেয়ে সামাজিক কল্যাণকে প্রাধান্য দেয়, তখন অনৈতিক চর্চা কমে আসে। উদাহরণস্বরূপ সামাজিক বিনিময়ের তত্ত্ব অনুযায়ী, মানুষ তাদের আচরণ মূল্যায়ন করার সময় কেবল ব্যক্তি-লাভ নয়, বরং সামগ্রিক পারস্পরিক সম্পর্ক ও সামাজিক মূল্যবোধকেও গুরুত্ব দেয়। রমজানের সময় সিয়াম পালনের মাধ্যমে ব্যক্তি তার চাহিদা, কামনা-বাসনা ও ক্ষুদ্র স্বার্থকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে; আর এ আত্ম-সংযম ও ত্যাগের মানসিকতা যদি বাজার ও প্রশাসনিক কাঠামোয় কার্যকরভাবে প্রতিফলিত হতো, তবে মুনাফাখোরি ও দুর্নীতির মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসত।
তবে বাস্তবতা হলো, শুধু ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা যথেষ্ট নয়। বস্তুনিষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ কাঠামো, শক্তিশালী প্রশাসনিক কার্যকারিতা এবং নীতি পর্যবেক্ষণে সামাজিক জবাবদিহিতা প্রয়োজন। আচরণ পরিকল্পনা তত্ত্ব অনুযায়ী, মানুষের যুক্তিপূর্ণ আচরণ গড়ে ওঠে তিনটি মূল উপাদানের সমন্বয়ে—মানসিক মনোভাব, সামাজিক নিয়ম ও নিয়ন্ত্রণের বোধ। রমজানের নৈতিকতা ও সিয়ামের শিক্ষা ব্যক্তিগত মনোভাবকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করলেও যদি সামাজিক ও বাজার ব্যবস্থায় সবল নিয়ন্ত্রণ কাঠামো না থাকে, তবে সেই ইতিবাচক মনোভাব যথেষ্ট কার্যকরভাবে বাস্তবক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয় না। সিয়াম সাধনায় নৈতিক উন্নতির সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও মুনাফালোভী প্রতিযোগিতা, দুর্বল বাজার নিয়ন্ত্রণ, প্রশাসনিক শৈথিল্য ও সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাব মিলেই অনৈতিকতার বুদ্বুদ তৈরি করে। অর্থাৎ রমজানের শিক্ষা একদিকে ব্যক্তিকে সংযমী ও সহমর্মী হতে সহায়তা করে; অন্যদিকে শক্তিশালী ব্যবসায়িক ও সামাজিক কাঠামোর অভাবে এ সংযমরূপী নৈতিকতার আদর্শ প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থহীনতার মধ্যে হারিয়ে যায়।
রমজানের শিক্ষা ও আমাদের দায়িত্ব
সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মুসলমানরা নিজেদের ইন্দ্রিয় ও মানসিক প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করে নৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি গড়ে তোলেন। ইসলামী দর্শনে সিয়াম কেবল উপবাস নয়; এটি সংযম, নৈতিক প্রহরী জাগিয়ে রাখা এবং আল্লাহর প্রতি নির্ভরতার (তাওয়াক্কুল) শিক্ষা। এর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য হলো ইনসাফ (ন্যায়বিচার), ইহসান (উত্তম ব্যবহার) ও তাকওয়া (আল্লাহ-ভীরুতা) জোরদার করা, যাতে মানসিক ও আত্মিক পরিশুদ্ধি অর্জন করা যায়।
তারাবিহ ও ইফতারের মতো সম্মিলিত উপাসনা পারস্পরিক বিশ্বাস ও সহযোগিতার বন্ধন দৃঢ় করে। জাকাত ও সদকা আর্থিক ভারসাম্য রক্ষা করে এবং সমাজে কল্যাণ নিশ্চিত করে। ফলে ‘সোশ্যাল ক্যাপিটাল’ শক্তিশালী হয় ও মানুষ পারস্পরিক আস্থা, সম্মান ও দায়বদ্ধতায় সম্পৃক্ত হয়। তবে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র একযোগে সচেষ্ট না হলে রমজানের নৈতিক শিক্ষা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। রমজানের সত্যিকারের চেতনা ধারণ করে অন্যায় ও অসাম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলে একটি ন্যায়ভিত্তিক, মানবিক ও সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলা যায়। মাহে রমজান কেবল ইবাদতের আহ্বান জানায় না, বরং আমাদেরকে একে অন্যের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার দিকনির্দেশনাও দেয়। মাহে রমজান বিদায়ের প্রান্তে পৌঁছে, সিয়ামের দর্শন ও রমজানের ন্যায়নিষ্ঠ চেতনাকে বাস্তবায়ন করতে হলে ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক পর্যায়ে সম্মিলিত উদ্যোগ ও দায়বদ্ধতার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।
ড. মো. আবদুল লতিফ: গ্লোবাল অ্যাম্বাসেডর এবং এডিপি-জেএসপি স্কলার
অতিরিক্ত পরিচালক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিআইজিএম)