জাকির আহমেদ খান, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) অষ্টম চেয়ারম্যান। সাবেক অর্থ সচিব ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান। ২০০৯ সালে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালকের পদ থেকে অবসরে গিয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে বেলজিয়াম থেকে এমবিএ করেন। তারপর যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ‘হিউবার্ট হামফ্রে ফেলো’ হিসেবে উন্নয়ন অর্থনীতি ও উন্নয়ন প্রশাসন নিয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন। সরকারি চাকরিতে যোগদানের আগে তিনি অল্প সময়ের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিভাগে পড়িয়েছেন। আসন্ন বাজেটের অগ্রাধিকার ও বাংলাদেশের বাজেট দর্শন নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেন বণিক বার্তায়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাবিদিন ইব্রাহিম
আপনি অর্থ সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। সাধারণত বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে আপনাদের মাথায় কোন চিন্তাগুলো থাকত?
বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে দুটো জিনিস মাথায় রাখতে হয়। কতটুকু সম্পদ (রিসোর্স) আছে এবং কোথা থেকে অর্থ আসবে, সেটি ঠিক করা। এরপর কোথায় কোথায় ব্যয় হবে তা নির্ধারণ করা হয়। সরকারের একটি বাজেট ম্যানেজমেন্ট ও রিসোর্স কমিটি আছে, যার প্রধান অর্থমন্ত্রী। কী ধরনের রিসোর্স আমরা পেতে পারি, তার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) সংশ্লিষ্টদের নিয়ে রিসোর্স কমিটির সভা হয়। সেখানে রিসোর্স প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়, যার ভিত্তিতে ব্যয় নির্ধারণ হয়। রিসোর্সের ক্ষেত্র নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমাদের বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবসম্মত না হলে বা কল্পনাপ্রসূত হলে দেখা যায়, খরচ ঠিকই হয় কিন্তু তখন অর্থ থাকে না। বাজেট ঘাটতি বেড়ে যায়। এর প্রভাব তখন সব জায়গায় পড়ে। বাজেট ঘাটতি ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণে না থাকলে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা প্রভাবিত হয়, যার প্রভাব সব খাতে পড়ে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব হচ্ছে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ঠিক রাখা। কারণ সামষ্টিক অর্থনীতির কোথাও সামান্য অসংগতি হলে এর প্রভাব সব খাতে পড়ে।
বাজেটে ব্যয় সংকুলানের জন্য সবসময়ই কিছুটা বাজেট ঘাটতি হয়। এ ঘাটতি বৈদেশিক সহায়তা এবং সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণের মাধ্যমে মেটানো হয়। সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য এ ঘাটতি একটি যুক্তিসংগত পর্যায়ে সীমিত রাখতে হয়। আমরা বাজেট প্রণয়নে এ বিষয়টির প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি।
অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখা দরকার বলে মনে করেন?
আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতি দরকার। কীভাবে অর্থনৈতিক উন্নতি হবে সেটি নিয়ে সবাই ভাবে। খাতভিত্তিক বরাদ্দ কী হবে সেটি দরকার। বরাদ্দ সবাই চায়। প্রায় অনেকেই বলেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমবে কেন এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ কমবে কেন—এ রকম কম্পিটিং ডিমান্ড। যারা রিসোর্স বরাদ্দ করেন তাদের এ রকম কম্পিটিং ডিমান্ডের মধ্যে পড়তে হয়। যেহেতু সম্পদ সীমিত তাই এর সঠিক বণ্টন করা কঠিন কাজ। কল্পনাপ্রসূত রাজস্ব আসবে সেই হিসেবে বাজেট প্রণয়ন করলে হবে না। রিসোর্স আসার পর কাকে কত দেয়া হবে তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যে টাকা ব্যয় করা হচ্ছে, সেখান থেকে কী সুবিধা পাচ্ছি সেটিও বিবেচ্য বিষয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের বাজেট বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত। বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক চাপ আসবেই। তখন এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা কাগজপত্রে বাড়িয়ে দেয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় না। বিগত বছরগুলোয় অর্থনীতিতে বেশ বড় ধাক্কা গেছে। এ ধাক্কা থেকে তাৎক্ষণিক উত্তরণের সুযোগ নেই। এবারের বাজেটের যে আকারের কথা শুনেছি, তা খুবই যুক্তিসংগত। এবারের বাজেটে মেগা প্রজেক্ট কমিয়ে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। সেটি আমরাও সবাই চাই। আমরা সব জানি না, যতটুকু মনে হয়েছে এবারের বাজেটে অনেক কাটছাঁট করা হয়েছে। মেগা প্রকল্পগুলোর অনেক নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। আবার অপব্যয়ও হয়েছে। তাই বাজেটের সবকিছু সংস্কার করা এ মুহূর্তে সম্ভব নয়। ভবিষ্যতে ক্রমান্বয়ে সরকার কর্তৃক গঠিত বিভিন্ন কমিশন ও কমিটি কর্তৃক প্রদত্ত সুপারিশ বিচার-বিশ্লেষণ করে যথোপযুক্ত সংস্কার করা হবে বলে বিশ্বাস করি।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাজেটে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। পরিমাণের চেয়ে গুণগতমানের দিকে আমাদের বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত। যেকোনো খাত কিংবা প্রকল্পের ক্ষেত্রে দেখা যাবে, যেসব খাতে যতটুকু বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তার চেয়েও কম খরচে আরো ভালো কিছু করা যেত—এ ধরনের বিশ্লেষণের সময় এসেছে। তবে বর্তমানে নীতিনির্ধারকদের কথা শুনে মনে হচ্ছে তারা এ ধরনের বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে সার্বিক উন্নয়নের দিকে যেতে চান। আমরা বর্তমানে অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক কিছু অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে রয়েছি। এগুলো আরো কিছুদিন থাকবেই। তবে খুব বেশি আশাবাদী হলে চলবে না। আমাদের বাস্তবসম্মত হতে হবে। তবে বাজেট হয়ে গেলে আমরা আরো বিশ্লেষণ করতে পারব। এখন পর্যন্ত যা দেখেছি বাজেট নিয়ে তাতে আমি খুশি।
আপনি বাংলাদেশের অন্যতম সফল অর্থমন্ত্রীর (এম সাইফুর রহমান) সঙ্গে কাজ করেছেন। আমাদের বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা নিয়ে একটি প্রশ্ন আছে। সেটি হলো বাজেটের ৮০ শতাংশ বাস্তবায়ন হলেও প্রায় ২০ শতাংশ সিস্টেম লস হয়। আপনার সময়ে কতটুকু পর্যন্ত বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা নিশ্চিত করতে পেরেছেন? সক্ষমতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ কোথায়?
সিস্টেম লস সবসময় কিছু না কিছু হবে। উদাহরণস্বরূপ রাজস্ব আহরণের একটি প্রক্কলন করা হলো, কিন্তু সেটি অর্জিত হলো না। তখন ব্যয়কে কাটছাঁট করতে হয়। সেটিও একটি সমস্যা। কোনো প্রাক্কলনের ওপর ভিত্তি করে একটি বাজেট প্রণয়ন করা হলো, সেটি সংশোধিত বাজেট করতে গিয়েও একই কাজ করতে হলো। বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতার ক্ষেত্রে আমাদের কিছু ঘাটতি আছে। বাজেট বাস্তবায়ন কোনো বছর বেশি হয়, কোনো বছর কম হয়। কোনো বছর অভ্যন্তরীণ বা বৈশ্বিক কারণ থাকে কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থাকে। আমাদের সহজাত অক্ষমতা হচ্ছে আমলাতন্ত্রিক জটিলতা। আমাদের আমলাতন্ত্রের মধ্যে অনেক দুর্বলতা রয়েছে। এজন্যই সংস্কারের কথা এসেছে। এখন যেভাবে নীতিনির্ধারকরা অগ্রসর হচ্ছেন বাজেটের যে অপচয় হয় সেটি ভবিষ্যতে উত্তরণ সম্ভব হবে। তবে এটি একদিনে সম্ভব নয়। আবার একদিনেই সব নষ্ট হয়ে যাবে তাও না। ক্রমান্বয়ে সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং সিস্টেম লস কমাতে হবে। আমি আশাবাদী, ভবিষ্যতে বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা বাড়বে। এক্ষেত্রে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। আমি মনে করি, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে বেশি সক্ষমতা রয়েছে। বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনেক বিষয় আছে যদিও আগে সেগুলো এভাবে হতো না। যেমন সামষ্টিক অর্থনীতির বিশ্লেষণ, বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা নিরূপণ, দারিদ্র্য নিরসন, শিশু ও নারীদের উন্নয়নে ভিন্ন ভিন্নভাবে বিশ্লেষণ ও গবেষণা। এসব গবেষণা এখন প্রকাশিত হয়। যদিও আগে সেটি হতো না। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আরো উন্নতি হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় অনেক সংস্কারের মধ্য দিয়ে গেছে। বাজেট বাস্তবায়নে সব মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা একরকম নয়। সক্ষমতা বাড়াতে সময় লাগবে। সব মন্ত্রণালয় এগিয়ে যাচ্ছে। আরো কিছু সংস্কারের মধ্য দিয়ে তারা এগিয়ে যাবে।
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) গ্রামীণ ও প্রান্তিক পর্যায়ে কর্মসংস্থান তৈরি ও কৃষিতে সহায়তাসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। গ্রামীণ ও প্রান্তিক পর্যায়ে অর্থনীতির গতিশীলতা বাড়াতে এবারের বাজেটে আপনাদের প্রত্যাশা কী?
কৃষি খাতের কোন কোন প্রকল্পে বরাদ্দ যাচ্ছে সেটি আমরা জানি না। শিক্ষা খাতে কী বরাদ্দ করা হয়েছে তা জানি না। বাজেট হওয়ার পর হয়তো আমরা সবকিছু জানতে পারব। বাজেট প্রণয়নের কাজ যাদের হাতে এখন তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই। তারা সবাই পেশাদার। যখন পেশাদার ব্যক্তিরা কোনো রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব ছাড়াই কাজ করেন, তখন তারা যা সঠিক মনে করেন তা করেন এবং তা নির্দিষ্ট নীতির ভিত্তিতে। আমি মনে করছি, বর্তমানে তা নির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতেই হচ্ছে। ভবিষ্যতেও হবে। গ্রামীণ খাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামীণ খাত শুধু কৃষি নয় কৃষি খাতবহির্ভূত কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মৎস্য অন্তর্ভুক্ত। তবে কোনো ক্ষেত্রে বেশি হতে পারে। যেহেতু অর্থনীতির জন্য গ্রামীণ খাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই সরকারের এ খাতের প্রতি গুরুত্ব থাকবেই। আগে যা ছিল তার চেয়ে বেশিই থাকবে বলে আমি আশা করি।
আমাদের আয়বৈষম্য অনেক বাড়ছে। গিনি সূচক আগে দশমিক ৫ শতাংশের নিচে ছিল, সেটি এখন দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে। অসমতা বাড়ছে। প্রবৃদ্ধি কমছে। তাই টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য বৈষম্য দূর করতে হবে। এবারের বাজেটে শুধু প্রবৃদ্ধি নয়, আয়বৈষম্য কমানোর জন্যও পদক্ষেপ থাকবে বলে জেনেছি। কেননা প্রবৃদ্ধিই সবকিছু নয়। বেশি প্রবৃদ্ধি হলো কিন্তু ন্যায্য বণ্টন হলো না। এতে একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। তাই আয়বৈষম্য কমানোর দিকে বেশি নজর দেয়া হয়েছে। আর এটি করতে গেলেই গ্রামীণ অর্থনীতিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। গ্রামীণ খাতে যতটা সম্ভব বরাদ্দ যাবে। তবে এবার বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে। এ খাতে অনেকগুলো প্রোগ্রাম আছে। সামাজিক নিরাপত্তা খাত পুনর্বিন্যাস হচ্ছে। এতে দুই-একটা বাতিল হতে পারে। তবে আমি মনে করি, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে অনেক প্রোগ্রাম হয়ে গেছে এবং অনেক মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে গেছে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের প্রভাব কতটুকু পড়ছে সেটি দেখে সমন্বতিভাবে এর বাস্তবায়ন ও তদারকি সরকার করবে। বর্তমানে যে বরাদ্দ রয়েছে তার চেয়ে আরো বাড়াতে হবে।
দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে। স্নাতক পাস করে লাভ নেই, সমাজে যে দক্ষতা প্রয়োজন বা কাজ করা দরকার সেটি করতে না পারলে। এক্ষেত্রে খাতভিত্তিক দক্ষতা বাড়াতে নজর দিতে হবে। সেক্ষেত্রে সরকারের প্রোগ্রাম আছে। সেখানে যথেষ্ট বরাদ্দও আছে। বাজেটে বেসরকারি খাতের জন্য কী থাকছে তা আমার জানা নেই। বেসরকারি খাত প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকাশক্তি। তবে বেসরকারি খাতকে গতিশীল করতে হলে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অনুদান, কর কাঠামো ও অবকাঠামো সুবিধা দিতে হবে সরকারকে।
আমাদের মাথাপিছু আয় জিডিপির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। জিডিপির আকার নিয়েও প্রশ্ন আছে। সরকারের বিভিন্ন পরিসংখ্যান নিয়ে অনাস্থা আছে। সরকারের ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো কিংবা ভুল তথ্য-উপাত্তের কারণে আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া কীভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে?
পরিসংখ্যানে কিছু স্বল্পতা আছে। আর এর সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। কিছু কিছু আছে টেকনিক্যাল সেগুলোয় নজর দিলে ঠিক হয়ে যাবে। আবার কিছু কিছু তথ্য-উপাত্ত ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করা হয়েছে। এর সত্যতাও আছে। এগুলো নিয়ে বিতর্ক আছে। দেশের পরিসংখ্যানকে অনেকেই বিশ্বাস করে না। পরিসংখ্যানকে রাজনৈতিকীকরণ থেকে মুক্ত রাখতে হবে। যেহেতু পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তাই পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা ও সত্যতা নিশ্চিত করতে হবে। সঠিক পরিসংখ্যান অর্থনীতির জন্য খুবই গুরত্বপূর্ণ। এখন এটি নিয়ে সবাই সচেতন। সঠিক পরিসংখ্যান নিশ্চিত করা গেলে দেশের জন্য ভালো হবে। এমনকি সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে। সম্পদের অপচয় কম হবে। সম্পদ বণ্টনে কোনো ভুল হবে না। অনেক কিছু বিধিসম্মতভাবে মোকাবেলা করা যাবে।
অনেকেই বলছেন, কৃষির ওপর ৮০ শতাংশ মানুষ নির্ভরশীল। গ্রামীণ অঞ্চলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। ফলে সেখানে অলস ভোক্তা তৈরি হচ্ছে। কৃষির জন্য শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। আবার কৃষি লাভজনকও না। এ বিষয়গুলোকে আপনি কীভাবে দেখছেন? কোনো পরিবর্তন দেখছেন কিনা। গ্রামাঞ্চলে কীভাবে অর্থনৈতিক গতিশীলতা বাড়ানো যায়?
কৃষি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ খাত। এখন আমাদের কৃষিনির্ভরতা কমে গেছে। সেই অনুপাতে কৃষি-বহির্ভূত কর্মকাণ্ড তেমন বাড়েনি। সেজন্য সেবা খাত ও কৃষি-বহির্ভূত কর্মকাণ্ড বাড়াতে হবে। এগুলো না বাড়ালে ছদ্ম বেকারত্ব তৈরি হবে। দেশে ছদ্ম বেকারত্ব অনেক আছে। কৃষি খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিভিন্ন খাত জড়িত, যা একে শক্তিশালী ও বহুমুখী করে তোলে। এ খাতগুলোর মধ্যে সমন্বিত প্রয়োগ ও পরিকল্পনা গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। এ খাতের উন্নয়নের জন্য আমাদের আরো গবেষণা করতে হবে। বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রতি বছরই দেশে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশে ইচ্ছুক জনগোষ্ঠী আসছে। প্রয়োজনীয় কর্ম সৃজনের অভাবে বেকারত্বের হার বাড়ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এ বাজেটে কোন পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে মনে করছেন?
সরকারি খাতের চেয়ে বেসরকারি খাতেই বেশি কর্মসংস্থান হয়। এজন্য বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত ও গতিশীল করতে হবে, যাতে আরো অধিক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় নানা সমস্যা আছে। বিদ্যমান জনগোষ্ঠীকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে কর্মসংস্থানের জন্য। দক্ষ জনগোষ্ঠী গঠনে সরকারের কিছু প্রোগ্রাম আছে। এছাড়া খাতভিত্তিক বিভিন্ন প্রোগ্রাম আছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দক্ষতা উন্নয়নের জন্য একটি প্রকল্প আছে। এবারো এটি বড় আকারে হচ্ছে। এ প্রকল্পে আমরাও কাজ করছি। গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে আমরা টেকসই ও লাভজনক মাইক্রোএন্টারপ্রাইজ খাত গঠনে বেশি গুরুত্ব দিই। আমরা দরিদ্রদের ঋণ দিই। দারিদ্র্য কমাতে হলে আমাদের লক্ষ্য হবে এমন একটি গ্রুপ তৈরি করা যারা শুধু আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত নয়, বরং কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে এবং যারা উচ্চশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে তাদের ব্যবসাকে বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণ করবে। এজন্য আমাদের কয়েকটি বড় প্রকল্প আছে। এসব প্রকল্পের কিছু কিছু আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে হচ্ছে এবং কিছু প্রকল্পে বৈদেশিক সংস্থার অর্থায়নেও হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে মাইক্রোএন্টারপ্রাইজ খাতকে উন্নত করা এবং একই সঙ্গে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, অর্থায়ন ও প্রণোদনার মাধ্যমে বেকারত্ব কমানো। সার্বিকভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উন্নয়নে প্রয়োজন সব ধরনের সহযোগিতা আরো সম্প্রসারণ করা।
দারিদ্র্য নিরসনে ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে পিকেএসএফ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে সূচনালগ্ন থেকে যথেষ্ট অবদান রেখে আসছে। পিকেএসএফ আগামী পাঁচ বছর মেয়াদি (২০২৫-২০৩০) একটি স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান প্রণয়ন করছে। যার উদ্দেশ্য হবে গ্রামীণ অর্থনীতিতে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন বৃদ্ধি করা, যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মানোন্নয়ন করা।