সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো দুর্বলভাবে পরিচালিত হওয়ায় মানুষ সেবা পাচ্ছে না

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো আছে। আগে ইউনিয়নে যে তিনটি ওয়ার্ড ছিল সেগুলোকে ভেঙে বর্তমানে নয়টি ওয়ার্ডে পরিণত করা হয়েছে।

ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক। এছাড়া তিনি ‘অ্যালায়েন্স ফর হেলথ রিফর্মস বাংলাদেশ’-এর আহ্বায়ক। তিনি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাসহ স্বাস্থ্য খাতের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তায়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দিদারুল হক

বাংলাদেশের গ্রামীণ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কী পর্যায়ে আছে?

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো আছে। আগে ইউনিয়নে যে তিনটি ওয়ার্ড ছিল সেগুলোকে ভেঙে বর্তমানে নয়টি ওয়ার্ডে পরিণত করা হয়েছে। সাবেক তিনটি ওয়ার্ডে একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক আছে, যা কমিউনিটি ক্লিনিক ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত হয়। এ ট্রাস্টের একটি কাঠামো আছে। সেখানে একজন চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক রয়েছেন। তবে ট্রাস্টের স্থানীয় পর্যায়ে কোনো কার্যালয় নেই। স্থানীয় পর্যায়ে উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সের ম্যানেজারের মাধ্যমে এটি পরিচালিত হয়।

বলা যায়, মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য একটি প্রতিষ্ঠান আছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের সব ইউনিয়নে একটি করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার সেন্টার আছে। পরিকল্পনা অধিদপ্তর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মেডিকেল এডুকেশন এবং ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার ডিভিশনের অধীনে। দেশের ১২ শতাধিক ইউনিয়নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে একটি করে ইউনিয়ন সাব-সেন্টার আছে। অর্থাৎ দেশের মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানের জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে তিন ধরনের সেন্টার আছে। তিন ধরনের প্রতিষ্ঠান আলাদা আলাদা প্রশাসন দ্বারা পরিচালিত। ফলে ডুপ্লিকেশন হচ্ছে। এসব সেবাকেন্দ্র সরকার ব্যয় করছে, কিন্তু মানুষ সেবা পাচ্ছে না। কারণ এ সেবাকেন্দ্রগুলো দুর্বলভাবে পরিচালিত হচ্ছে।

উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে এত স্বাস্থ্যসেবা সেন্টার থাকার পরও জনগণ সেবা পাচ্ছে না কেন? জনগণের কাছে কীভাবে সহজলভ্য ও মানসম্মত সেবা পৌঁছানো যায়?

এতগুলো সেন্টার থাকার কারণে কোনোটির প্রতি কোনো গুরুত্ব নেই। এসব সেন্টারে জনবল সংকট প্রকট। কারণ এসব সেন্টারে যেসব পদ রয়েছে সেগুলো দীর্ঘদিন ধরেই শূন্য রয়েছে। ফলে এসব সেন্টারের আশপাশে যেসব পরিবার রয়েছে তারাই এগুলো ব্যবহার করে। উপযুক্ত জনবল এবং গুণগত মানের সেবা না থাকায় সেখানে দূর থেকে কোনো মানুষ চিকিৎসা নিতে আসে না।

প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য আমাদের তিন ধারার প্রতিষ্ঠান রাখার দরকার নেই। এ তিন ধারার প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি ছাতার নিচে নিয়ে এসে এ তিন প্রতিষ্ঠানের জনবলকে পুনর্গঠন করে একটি প্রশাসন দ্বারা ভালোভাবে পরিচালনা করা যায়। একীভূত সেবাকেন্দ্রকে “প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র” নামে অভিহিত করা যেতে পারে। মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে মানবসম্পদ কাঠামো পুনর্বিবেচনা করতে হবে। তিন ধারার যে মানবসম্পদ রয়েছে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কার্যাবলি পুনর্বিন্যাস করে কাজে লাগাতে হবে। আর বর্তমান প্রেক্ষাপটে যে ধরনের বাড়তি মানবসম্পদ দরকার তা নিয়োগ দিতে হবে। এক্ষেত্রে যেসব ইউনিয়নে ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার সেন্টার এবং ইউনিয়ন সাব-সেন্টার দুটিই বিদ্যমান আছে, সেখানে যেটির ভৌত অবকাঠামো ভালো কন্ডিশন আছে সেটিকে ‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র’-এর মূল সেন্টার হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে যেখানে শুধু ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার সেন্টার বিদ্যমান আছে সেখানে ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার সেন্টারের অবকাঠামোকে ‘‌প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র’-এর মূল সেন্টার হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। আর প্রতিটি পুরনো ওয়ার্ডে যে কমিউনিটি ক্লিনিক আছে সেগুলোকে ‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র’-এর সাব-সেন্টার হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

সরকারি লোকবল দিয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে সম্পূর্ণ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পরিচালনা করা বেশ কঠিন হতে পারে। এক্ষেত্রে বিকল্প মডেলগুলো বিবেচনায় আনা যেতে পারে, যেমন পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) অথবা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ব্যবস্থা। পাশাপাশি একটি জেনারেল প্র্যাকটিশনার (জিপি) সিস্টেম গড়ে তোলার কথাও ভাবা যেতে পারে। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সফল মডেল রয়েছে, সরকার তার উপযোগী একটি মডেল গ্রহণ করতে পারে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে এ সমন্বিত মডেল কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে স্বাস্থ্যসেবা জনগণের কাছে সহজলভ্য ও মানসম্মত হবে।

এক্ষেত্রে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার প্রশাসনিক কাঠামো কেমন হবে?

এ সমন্বিত মডেল কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনিক কাঠামো পুনর্গঠনের প্রয়োজন রয়েছে। যেহেতু এটি স্বাস্থ্যের বিষয়, তাই ইউনিয়ন পর্যায়ে যিনি ম্যানেজার হবেন তাকে অবশ্যই একজন চিকিৎসক হতে হবে। তিনিই এটি পরিচালনা করবেন। তবে উপজেলা পর্যায়ে কে প্রশাসন হবে তা ভাবনার বিষয়। উপজেলায় এখন দুটি কার্যালয় আছে—উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়। দুটি ধারারই ইউনিয়ন পর্যায়ে কাজ আছে। দুটো ধারারই লোকবল আছে। যদি একীভূত করা হয় তাহলে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে? উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসকে পুনর্গঠন করে এবং নাম পরিবর্তন করে ‘প্রাইমারি হেলথ কেয়ার অফিস’ বা ‘পাবলিক হেলথ অফিস’ করা যেতে পারে। ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার তদারকির দায়িত্ব এ অফিসের ওপর ন্যস্ত করা যেতে পারে। অন্যদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ক্লিনিক্যাল সেবা নিশ্চিত করবে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপকের বর্তমানে দুটি পোর্টফোলিও আছে—উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি তিনি ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য কার্যক্রম দেখভাল করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে। ইউনিয়ন নিয়ে তার চিন্তা করার দরকার নেই। ইউনিয়নকে ‘প্রাইমারি হেলথ কেয়ার অফিস’ বা ‘পাবলিক হেলথ অফিস’ অধীনের ন্যস্ত করা যেতে পারে। অন্যদিকে ‘‌প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা’ যদি একক প্রতিষ্ঠানের আওতায় আনা হয় তাহলে জেলা, অধিদপ্তর ও সচিবালয়ের কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন বেশ কয়েকটি উপজেলায় পরিবার পরিকল্পনার ‘‌মেটারনাল অ্যান্ড চাইল্ড ওয়েলফেয়ার সেন্টার’ (এমসিডব্লিউসি) নামে একটি করে সেন্টার আছে। আবার প্রতিটি জেলাতে ‘জেলা হাসপাতাল’-এর পাশাপাশি এমসিডব্লিউসি আছে। অনেক জেলায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আছে। মেটারনাল অ্যান্ড চাইল্ড ওয়েলফেয়ার সেন্টার’ আলাদা থাকার দরকার নেই। উপজেলা পর্যায়ে এমসিডব্লিউসির লোকবলকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ন্যস্ত করা যেতে পারে। একইভাবে জেলা পর্যায়ে এমসিডব্লিউসির লোকবলকে জেলা হাসপাতালের লোকবলের সঙ্গে সংযুক্ত করা যেতে পারে। তাহলে ডুপ্লিকেটেড জার্নিটা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এখানে দক্ষতা আসতে পারে। আবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীনে পরিবার পরিকল্পনার দুটি হাসপাতাল—মোহাম্মদপুর মেটারনিটি সেন্টার এবং আজিমপুর ফার্টিলিটি সেন্টার রয়েছে। এ দুই হাসপাতাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে একত্রিত করা যেতে পারে। অর্থাৎ ক্লিনিক্যাল যত প্রতিষ্ঠান রয়েছে সব স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেখবে। বাংলাদেশের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার আওতা অনেক বড়। তাই প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য নিবেদিত একটি অধিদপ্তর করে ফেলা দরকার। বর্তমানে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে।

শহর এলাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার মডেল কেমন হওয়া উচিত?

ঢাকার মতো বড় শহরের পাশাপাশি দেশে অনেক ছোট শহরও রয়েছে, যেগুলো মূলত উপজেলা ও জেলাভিত্তিক মিউনিসিপালিটি দ্বারা গঠিত। এসব এলাকায় ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবার মতোই একটি সুসংগঠিত পরিকল্পনা প্রয়োজন। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের মিউনিসিপালিটিগুলোয় এ স্বাস্থ্যসেবা মডেল বাস্তবায়ন করা যেতে পারে, যেখানে সেবা কাঠামো ইউনিয়ন পর্যায়ের মতোই গড়ে তুলতে হবে। অন্যদিকে ঢাকার মতো বড় মিউনিসিপালিটিগুলোয় এরই মধ্যে সরকারি, বেসরকারি ও এনজিও পরিচালিত বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র রয়েছে। এসব এলাকায় জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যাচমেন্ট এরিয়া নির্ধারণ করে নির্দিষ্ট বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) অনুসরণ করে স্বাস্থ্যসেবা কেনার মাধ্যমে জনগণের জন্য মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা যেতে পারে।

প্রিভেন্টিভ ও প্রমোটিভ কেয়ার সরাসরি স্থানীয় সরকারের অধীনে পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে, যা স্থানীয় সরকার কর্তৃক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কার্যকরভাবে পরিচালিত হতে পারে। তবে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার পুরোপুরি অর্থায়ন সরকারকেই বহন করতে হবে, যাতে জনগণের জন্য সহজলভ্য ও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।

আমাদের দেশে আউট অব পকেট পেমেন্ট এত বেশি কেন?

আমাদের দেশে জনগণের সার্বিক চিকিৎসা ব্যয়ের সিংহভাগ বহন করতে হয় জনগণকে। জনগণের জন্য নিজেদের চিকিৎসা বহন করার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে তাদের চিকিৎসার জন্য যে অর্থ প্রয়োজন সেটা তাদের কাছে থাকে না। বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর লোকেরা এ সমস্যার সম্মুখীন সবচেয়ে বেশি হন। সেক্ষেত্রে সরকারি পরিসংখ্যান বলে, মোট চিকিৎসা সেবাপ্রার্থীদের মধ্যে ২০ শতাংশ মানুষ নিজেদের ব্যয় নিজেরা মেটাতে পারে না বলেই তারা স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারে না। যারা এ ব্যয় নির্বাহ করতে পারছে তাদের মধ্যে ৫-৬ শতাংশ পরিবার চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যায়। অন্যদিকে প্রায় ২৫ শতাংশ পরিবার অর্থাৎ প্রতি চারটির মধ্যে একটি পরিবার এ চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হন। এ হচ্ছে দেশের চিকিৎসা সেবাপ্রার্থী প্রত্যাশীদের সার্বিক পরিস্থিতির পরিসংখ্যান।

এখন প্রশ্ন উঠছে কেন আমাদের এমন পরিস্থিতি?

এর প্রধান কারণ হলো, মানুষ চিকিৎসার জন্য সঞ্চয় করে রাখে না বা এর জন্য আলাদা কোনো প্রস্তুতি থাকে না। চিকিৎসাসেবার জন্য বীমা বা ইন্স্যুরেন্স ব্যবস্থা থাকলে প্রিমিয়াম জমা রেখে প্রয়োজনের সময় চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব, এমন সিস্টেম আমাদের দেশে নেই। বিশ্বের অনেক দেশে এ রকম ব্যবস্থা চালু আছে। যেমন সিঙ্গাপুরে স্বাস্থ্যসেবার জন্য বাধ্যতামূলকভাবে আলাদা অ্যাকাউন্ট থাকে যেখানে মানুষ টাকা জমা রাখে। কিন্তু আমাদের দেশে এমন কোনো সিস্টেম নেই, ফলে যখন কেউ অসুস্থ হয়, তাকে পুরো চিকিৎসা ব্যয় নিজের থেকেই বহন করতে হয়। কারণ আমাদের দেশে এমন কোনো ব্যবস্থা নেই যেখান থেকে রোগীরা আর্থিক সুবিধা পাবে। এজন্য তারা তাদের আয়ের বেশির ভাগ টাকা খরচ করে, যা জমিয়ে রাখা ছিল তা দিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়। যদি এ টাকা না থাকে, তবে সম্পদ বিক্রি, ধারদেনা বা অন্য কোনো উপায়ে অর্থ সংগ্রহ করতে হয়।

স্বাস্থ্যে জনগণের এত ব্যয়ের মূল কারণ কী?

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, আউট অব পকেট পেমেন্ট ৬৯ শতাংশ এবং বিশ্বব্যাংক বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এটি ৭৪ শতাংশ। বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, চিকিৎসা খাতে বাংলাদেশে আউট অব পকেট পেমেন্টের বেশির ভাগই ওষুধের খরচে চলে যায়। ১০০ টাকার মধ্যে ৬৪ টাকা ওষুধে ব্যয় হয়। তাহলে কেন আমরা এত বেশি ওষুধ খরচ করছি? এর উত্তর হলো, আমরা প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি ওষুধ ব্যবহার করছি। অনেক সময় এমন ওষুধও কিনছি যা প্রয়োজন নেই বা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কিনে ফেলছি। আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থারও এখানে কিছু দায় রয়েছে। অসুস্থ হলে আমরা সরাসরি ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনি, ফার্মেসির বিক্রেতাদের পরামর্শে ওষুধ গ্রহণ করি, এমনকি কিছু সময় চিকিৎসকরা প্রয়োজনের তুলনায় অধিক ওষুধ প্রেসক্রাইব করেন। এ কারণে আমাদের ওষুধের ভোগের পরিমাণ অত্যধিক যা নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন। বাংলাদেশে যেহেতু নিজেদের অনেক ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা দেশের প্রয়োজনীয় সব ওষুধ৷ তৈরি করে এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে সক্ষম। এটার সুবাদে আমাদের দেশে ব্যাপক সংখ্যক ড্রাগ স্টোর বা ফার্মেসি গড়ে উঠেছে। লাইসেন্সও নির্বিচারে দেয়া হয়। এখানে দরকার ছিল একটি হিসাবমাফিক পরিকল্পনা যে আমাদের কয়টি ফার্মেসি দরকার। যেহেতু লাইসেন্সের ব্যাপার আছে, এখানে একটা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

আরও