আমেরিকার
প্রেসিডেন্ট জো
বাইডেন চাইছেন
মহামারীর ধকল
কাটিয়ে সবকিছুকে
নতুন করে
পুনর্গঠিত করতে।
‘বিল্ড
ব্যাক বেটার’
স্লোগান নিয়ে
ট্রাম্প-পরবর্তী
আমেরিকার শোভন
ও শ্রেষ্ঠতর
পুনর্নির্মাণে মনোযোগী
তিনি। বাইডেনের
লক্ষ্যটি ব্যাপক
ও বিস্তৃত।
তবে এর
আক্ষরিক অর্থ
কী? কিংবা
ঠিক কীভাবে
আমাদের এ
পুনর্নির্মাণের পথে
অগ্রসর হওয়া
উচিত?
স্পষ্টতই, আমাদের
অনেক বেশি
সুযোগের সমতা
নিয়ে অগ্রসর
হওয়া উচিত।
তাহলে যুক্তরাষ্ট্র
কিংবা উন্নত
দেশে বসবাসরত
দরিদ্র কোনো
দেশ থেকে
আসা সম্প্রদায়গুলো
নিজেদের আর
বহিরাগত হিসেবে
মনে করবে
না। জীর্ণ
স্কুল ভবন,
ভেঙে পড়া
অবকাঠামো ও
সামাজিক নিগ্রহ
নিয়ে তাদের
বেকারত্বের মাত্রা
দিনের পর
দিন বেড়েই
চলেছে। এর
মধ্য থেকে
যারা ভালো
কিছু করার
সুযোগ পেয়েছেন,
তারা অন্য
কোথাও চলে
যাওয়ায় আরো
বেশ সংকুচিত
হয়ে গেছে
অবশিষ্ট মানুষগুলোর
বের হওয়ার
রাস্তাও। বসবাসের
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ
আর সীমিত
সুযোগ-সুবিধা
নিয়ে তাদের
মধ্যে কেবলই
হতাশা ঘনীভূত
হচ্ছে। এর
মধ্যে কয়েকটি
সম্প্রদায় দীর্ঘকাল
ধরেই সুবিধাবঞ্চিত।
তারা ক্ষতিগ্রস্ত
হয়েছে বাণিজ্য
বা প্রযুক্তি
প্ররোচিত বেকারত্বের
মাধ্যমে। সম্প্রতি
অন্যরাও পিছিয়ে
পড়েছে। একই
কারণ অনুঘটক
হিসেবে কাজ
করেছে তাদের
ক্ষেত্রেও।
তবে বাণিজ্য
ও প্রযুক্তি
পিছিয়ে পড়া
এ সম্প্রদায়গুলোর
জন্য অর্থনৈতিক
কর্মকাণ্ডের নতুন
সুযোগ তৈরি
করায় সম্ভাবনা
রয়েছে অর্থনৈতিক
পুনর্জাগরণের। কভিড-১৯
মহামারী একদিকে
যেমন অনেককেই
ঘর থেকে
কাজ করতে
বাধ্য করছে,
তেমনি সহকর্মীরা
পরস্পরের সঙ্গে
ইন্টারনেটের মাধ্যমে
সংযুক্ত হচ্ছেন,
যা বাড়িতে
বসে কাজ
করা বা
এ সম্পর্কিত
আগের প্রচলিত
ধ্যানধারণাগুলোকেও ভেঙে
দেয়। মহামারী
থেমে গেলে
অনেক সংস্থাই
তাদের সহকর্মীদের
বাড়িতে বসে
কাজের বিষয়টিকে
প্রাধান্য দেবে।
জরুরি কোনো
প্রয়োজন না
হলে অফিসে
এসে কাজের
বিষয়টি স্রেফ
কর্মীদের ইচ্ছার
ওপর নির্ভর
করবে।
সেক্ষেত্রে অফিসের
আশপাশে বা
একই শহরে,
কিংবা একই
দেশে কর্মীদের
বসবাস করার
বিষয়টি আর
জরুরি থাকছে
না। দক্ষ
শ্রমিক হিসেবে
যিনি কর্মরত
তাকে আর
অচেনা শহরে
সস্তায় থাকার
জায়গা খুঁজে
ফিরতে হবে
না বা
ঘিঞ্জি পরিবেশে
পরিবার-পরিজন
নিয়ে থাকতে
বাধ্য হতে
হবে না।
তিনি বরং
তার নিজ
এলাকা বা
নিজ শহর
থেকেই কাজ
করতে পারবেন,
কিংবা ফিরতে
পারবেন তার
শিকড়ের কাছে—বহু
বছর আগে
জীবন-জীবিকার
তাগিদে যিনি
সবকিছু ছেড়ে
যেতে বাধ্য
হয়েছিলেন।
অচিরেই হয়তো
ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক
বৈঠকগুলো রীতিমতো
অপ্রয়োজনীয় বিষয়
হয়ে উঠবে।
এমনকি পরিবর্তিত
হতে পারে
কোম্পানির অফিসের
ঠিকানাও। এ
প্রবণতাগুলো স্থানীয়
পণ্য ও
সেবার চাহিদা
বৃদ্ধির পাশাপাশি
স্থানীয় কর্মসংস্থানের
সুযোগ তৈরি
করবে বলে
আমি মনে
করি।
প্রযুক্তি ভৌগোলিকভাবেই
কেবল অর্থনৈতিক
ক্রিয়াকলাপকে ছড়িয়ে
দিতে সহায়তা
করে না,
প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোকেও
বৈশ্বিক বাজারের
সঙ্গে সম্পৃক্ত
করে। ‘দ্য
প্যাশন ইকোনমি:
দ্য নিউ
রুলস ফর
থ্রাইভিং ইন
দ্য টোয়েন্টি-ফার্স্ট
সেঞ্চুরি’ গ্রন্থে
অ্যাডাম ডেভিডসন
যেমনটা উল্লেখ
করেছেন যে
অনলাইন প্লাটফর্মগুলো
ক্ষুদ্র ব্যবসা
বা ছোট
উদ্যোগগুলোকে বিশ্বব্যাপী
পণ্যের বিজ্ঞাপন
দেয়ার অনুমতি
দেয় এবং
বিশেষায়িত পণ্যের
সম্ভাব্য ক্রেতাদের
খুঁজে বের
করতে সাহায্য
করে। উদাহরণস্বরূপ,
ওয়েঙ্গার্ডদের কথা
আসতে পারে।
ওহাইওতে বসবাসরত
এ আ্যমিশ পরিবারটি (সনাতনপন্থী খ্রিস্টান)
অনলাইনের মাধ্যমে
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন
অঞ্চলে বসবাসরত
অন্যান্য আ্যমিশ
পরিবারের কাছে
খামারের কাজে
ব্যবহূত ঘোড়ায়
টানা গাড়ির
আধুনিক সরঞ্জাম
বিক্রির দারুণ
এক ব্যবসা
শুরু করেছে।
সব গোষ্ঠী
বা সম্প্রদায়গুলো
কিন্তু পরিবর্তিত
অবস্থার সঙ্গে
খাপ খাওয়াতে
পারে না।
ব্রডব্যান্ড, পার্ক,
স্কুলসহ বিভিন্ন
অবকাঠামো উন্নয়নে
বছরের পর
বছর ধরে
কম বিনিয়োগ
বিভিন্ন সম্প্রদায়,
গোষ্ঠী বা
পরিবারগুলোকে ভালো
বেতনভুক্ত পেশা
বেছে নেয়া
থেকেও দূরে
ঠেলে দিতে
পারে। উচ্চ
পর্যায়ের অপরাধ
ও নিগ্রহের
ফলে বন্ধ
হয়ে যেতে
পারে ব্যবসায়িক
কর্মকাণ্ডগুলোও। তাছাড়া
স্থানীয় শ্রমিকদের
নতুন দক্ষ
কাজের জন্য
পুনরায় প্রশিক্ষণের
প্রয়োজন হতে
পারে। অর্থনৈতিক
ক্রিয়াকলাপ আকৃষ্ট
করতে সম্প্রদায়গুলোরও
পরিবর্তনের মধ্য
দিয়ে যাওয়া
জরুরি।
কিন্তু প্রশ্নটা
হচ্ছে, প্রয়োজনীয়
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের
অভাবে তারা
তা কীভাবে
করবে? বিশেষ
করে প্রাথমিক
অবস্থায়। লোভনীয়
কিন্তু ভুল
উত্তরটি হলো
সমস্যাগুলোর কেন্দ্রীকরণ।
কেননা জাতীয়
বা রাষ্ট্রীয়
পর্যায়ে গৃহীত
সব সমস্যার
এক সমাধান—এ
ধরনের বিশাল
কর্মসূচিগুলো কিন্তু
স্থানীয় কোনো
একটি সম্প্রদায়ের
বিশেষ কিছু
সমস্যার সুরাহা
করতে পারবে
না। কোনো
নির্দিষ্ট একটি
সম্প্রদায়ের জন্য
সবচেয়ে বড়
সমস্যাটি হলো
দ্রুত ও
সাশ্রয়ী পরিবহন
ব্যবস্থার অভাব।
অন্যটি হচ্ছে
ঘরের বাইরে
জমায়েত বা
আড্ডার জন্য
নিরাপদ পরিবেশের
অনুপস্থিতি। সম্প্রদায়ের
বাসিন্দারাই মূলত
তাদের জরুরি
এ প্রয়োজনগুলো
খুব ভালোভাবে
বুঝতে সক্ষম।
এক্ষেত্রে বহিরাগত
অর্থায়ন প্রয়োজন।
বিশেষ করে
কর ভর্তুকির
মাধ্যমে পিছিয়ে
পড়া অঞ্চলগুলোতে
বিনিয়োগ উৎসাহিতকরণের
মাধ্যমে তা
করা যেতে
পারে। তবে
এটিও কিন্তু
যথেষ্ট নয়।
স্থানীয় চ্যালেঞ্জ
মোকাবেলার জন্য
স্থানীয় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ
নেতৃত্বের অংশগ্রহণে
তৈরি পরিকল্পনা,
গোষ্ঠীগত সম্পৃক্ততা
ও তদারকি
ব্যতীত অর্থায়ন
স্রেফ অপচয়
ছাড়া আর
কিছুই নয়।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বছরের
পর বছর
ধরে হতাশায়
নিমজ্জিত থাকার
ফলে সম্প্রদায়গুলোর
মধ্য থেকে
নেতৃত্ব বিকাশের
সম্ভাবনাগুলো নষ্ট
হয়ে যায়,
যা তাদের
নিস্পৃহ করে
তোলে।
সেক্ষেত্রে কীভাবে
এমন অবস্থার
পরিবর্তন আনা
যেতে পারে?
একটি হতে
পারে—কেন্দ্রীয়
কিংবা রাজ্য
সরকারের (কিংবা
জনহিতকর প্রতিষ্ঠান)
পক্ষ থেকে
সম্প্রদায়ভিত্তিক প্রকল্পগুলোর
জন্য উদ্ভাবনী
প্রস্তাবসহ আগ্রহী
প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে
অনুদান প্রতিযোগিতা
সৃষ্টি করা।
আদর্শগতভাবে, প্রকল্পগুলোতে
অবশ্যই প্রশাসনিক
নেতৃত্বের উপস্থিতি
থাকবে (যেমন
মেয়র অফিসের
সম্পৃক্ততা)।
তবে প্রশাসনের
সহযোগিতা ব্যতীত
যদি কাজগুলো
করা সম্ভব
হয়, তাহলে
তা কিন্তু
জরুরি নয়।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের
সঙ্গে গোষ্ঠীগুলোর
ব্যাপক সম্পৃক্ততা
তহবিলের গুরুত্বপূর্ণ
মানদণ্ড হিসেবে
চিহ্নিত হতে
পারে। সুতরাং,
উদাহরণস্বরূপ, ঠিকাদার
দিয়ে পার্ক
নির্মাণের বদলে
গুরুত্ব পাবে
গোষ্ঠী কর্তৃক
বাগান তৈরির
বিষয়টি। শক্তিশালী
গোষ্ঠীকেন্দ্রিক নেতৃত্ব
এবং স্থানীয়দের
ব্যাপক সম্পৃক্ততা
অর্থায়িত প্রস্তাবগুলোর
গুরুত্বপূর্ণ উত্তরাধিকার
হওয়া উচিত।
এখানে প্রকল্প
নেতাদের অবশ্যই
পেশাদার পরামর্শকদের
প্রবেশাধিকার দিতে
হবে। কেননা
তারা প্রস্তাবগুলোর
দুর্বলতা খুঁজে
বের করতে
সাহায্য করবে।
একই সঙ্গে
অন্য প্রকল্প
নেতাদের থেকে
পরামর্শ গ্রহণ
করাটাও গুরুত্বপূর্ণ।
কেননা এতে
বিশেষ (অ্যাডহক)
গোষ্ঠীর উত্থান
ঘটে।
তবে সব
প্রস্তাব যে
অর্থায়নপ্রাপ্ত হবে
তা নয়।
সাধারণ নাগরিকরা
একত্র হয়ে
প্রকল্প তৈরির
প্রক্রিয়ার মাধ্যমে
নতুন একঝাঁক
নেতৃত্বের জন্ম
হতে পারে।
তাছাড়া অনুদান
সৃষ্টির প্রতিযোগিতার
মাধ্যমে ব্যাপকভাবে
স্থানীয় কর্মশক্তির
পুনর্জাগরণ ঘটলে
বা সক্রিয়
কর্মীবাহিনী তৈরি
হলে সার্বিক
প্রক্রিয়াটি কার্যকর
হয়।
উপরন্তু, ব্যর্থ
আবেদনকারীরা আগের
দুর্বলতাগুলো চিহ্নিতপূর্বক
তা সমাধান
করে পরবর্তী
প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
হওয়ার সময়
পুনরায় তাদের
প্রকল্প প্রস্তাবগুলো
জমা দিতে
পারবেন। সর্বোপরি,
সফল উদ্যোগগুলোর
অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি
করে নেয়া
যেতে পারে
অন্যান্য সম্প্রদায়ের
সঙ্গেও। এভাবে
একটি লার্নিং
নেটওয়ার্ক তৈরি
করা যেতে
পারে। যেখানে
গোষ্ঠীগুলো তাদের
ধারণা, অভিজ্ঞতা,
অনুশীলন ও
সমস্যাগুলো নিয়ে
আলোচনা চালাতে
পারবে।
আলোচিত বিষয়গুলো
কিন্তু মোটেও
অহেতুক কোনো
তাত্ত্বিক বিষয়
নয়। কানাডার
মতো উন্নত
রাষ্ট্রগুলো এমন
ধরনের নেটওয়ার্ক
তৈরির মাধ্যমে
এ জাতীয়
স্থানীয় সমস্যার
সমাধান করেছে,
যা এখন
পর্যন্ত অস্বীকৃত
সমাধান হিসেবেই
বিবেচিত।
উন্নত দেশগুলো
মহামারী-পরবর্তী
পুনরুদ্ধার কর্মসূচিতে
ব্যাপক পরিমাণ
অর্থ ঢালছে।
অকেজো ও
পুরনো প্রক্রিয়ায়
অগ্রসর হওয়ার
কারণে আমরা
যদি এ
অর্থের সঠিক
ব্যবহার করতে
না পারি,
সেক্ষেত্রে তা
বড় ধরনের
লজ্জার বিষয়
হবে। যদিও
প্রচলিত পদ্ধতিগুলো
খুব কমই
কার্যকর হয়েছে।
যারা চরমাবস্থার
মধ্য দিয়ে
যাচ্ছে, যাদের
নতুন সুযোগের
যারপরনাই প্রয়োজন
এবং যারা
সুযোগ তৈরি
করতে সক্ষম
বরাদ্দকৃত অর্থগুলো
তাদের কাছেই
পৌঁছা উচিত।
শ্রেষ্ঠতর পুনর্গঠনের
জন্য এটিই
আমাদের একমাত্র
সর্বোত্তম আশা
হতে পারে।
[স্বত্ব:
প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
]
রঘুরাম জি
রাজন: রিজার্ভ ব্যাংক
অব ইন্ডিয়ার
(আরবিআই) সাবেক
গভর্নর ও
শিকাগোর বুথ
স্কুল অব
বিজনেসের অধ্যাপক।
ভাষান্তর: রুহিনা ফেরদৌস