উচ্চ শিক্ষাকে যখন উচ্চ শিক্ষা বলছি তখন সেই উচ্চ শিক্ষা বলার মধ্য দিয়ে আমাদের শিক্ষার পরিমণ্ডল যে কতটা জটিল সেই জটিলতাকেই আমরা আসলে বিবেচনা করছি না। উচ্চ শিক্ষা বলার মধ্য দিয়ে যে সমস্যাটা তৈরি হয় সেখানে উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষাকে অন্যান্য পর্যায়ের শিক্ষা থেকে আলাদা করে দেখি। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে মনে হয়, উচ্চ শিক্ষার উন্নয়নেই বোধহয় সব সমাধান সম্ভব, অন্যকিছু গুরুত্বপূর্ণ নয়—এ ধারণাই জনপ্রিয়। কিন্তু আমার কাছে যেটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, উচ্চ শিক্ষার যে ভিত্তিটা সেই দিকে যদি আমরা মনোযোগটা না দিই, সেখানের মানোন্নয়নের জন্য যদি মনোযোগ না দিই তাহলে আসলে শুধু উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য আমরা যে চেষ্টাই করি না কেন, বিশেষ করে মানবসম্পদের দক্ষতার উন্নয়নের প্রাথমিক পর্যায় যদি আমরা নিশ্চিত না করতে পারি তাহলে উচ্চ পর্যায়ে আমরা যেই ধরনেরই ব্যবস্থা নিই না কেন সেটা আসলে আসলে খুব একটা মানোত্তীর্ণ হয় না। সেজন্য উচ্চ শিক্ষাকে আমি আলাদা কোনো একক বা অন্য পর্যায়ের হিসেবে মনে করি না। সেজন্য এটাকে আমি প্রাথমিক শিক্ষা বা মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার থেকে আলাদা করে দেখতে চাই না। কেননা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কী ধরনের শিক্ষার্থী আসবে এবং শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কী ধরনের শিক্ষার্থী শিক্ষক হবে সেটা আসলে নির্ভর করে তার পূর্ববর্তী বুনিয়াদ কতটুকু শক্তিশালী সেটার তার ওপর। আর সেটা নির্ভর করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার ওপর।
আমাদের শিক্ষার সমস্যাটা বুঝতে দুটো পরিসংখ্যান দিই, একটা হলো গ্লোবাল নলেজ ইনডেক্স অনুসারে বিশ্বের ১৪১টি দেশের মধ্যে আমাদের অবস্থান হচ্ছে ১১৩, ঠিক একইভাবে গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সের দিকে চোখ ফেরালে দেখা যাচ্ছে আমাদের অবস্থান ১২৯। তার মানে, আমরা যদি ওভাবে চিন্তা করি তাহলে আমরা হলাম পিছিয়ে থাকা একটি রাষ্ট্র। তার কারণটা কী? কারণটা হচ্ছে, আমাদের উন্নয়নের যে দর্শন সেটার সঙ্গে আমার শিক্ষার দর্শনের সঙ্গে কখনো সমন্বয় করতে পারি না। এবং আমরা যে উপায়ে আগের সময়ে উন্নয়নকে দেখে এসেছি, সেটা হলো দৃশ্যমান উন্নয়ন বা অবকাঠামোগত উন্নয়ন—সেটা খুবই ত্রুটিপূর্ণ ছিল, সেই ত্রুটিপূর্ণতার একটা প্রকাশ আমরা দেখেছি শিক্ষা খাতে বছরের পর বছর ক্রমান্বয়ে বাজেট কমেছে। ২০১৫-১৬ সালের মোট জিডিপির ২ দশমিক ৪৯ শতাংশ বাজেট বরাদ্দ ছিল শিক্ষা খাতে, যেটা গত বছরগুলোয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ ছিল এ খাতে এবং ২০২৪ সালে সেই বরাদ্দ নেমেছে ১ দশমিক ৭৬ শতাংশে। অন্যদিকে আপনি যদি অবকাঠামোগত উন্নয়ন বাজেট দেখেন তাহলে দেখা যায়, সেটা প্রতি বছরই ভয়ানকভাবে বেড়েছে। তার মানে দেখাই যাচ্ছে, উন্নয়ন দর্শনের সঙ্গে শিক্ষার দর্শনের সমন্বয়টা আমরা ঘটাতে পারিনি। যারা সমন্বয় ঘটিয়েছে তারাই হচ্ছে গ্লোবাল নলেজ ইনডেক্স এবং হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সের একদম ওপরের সারিতে। সেজন্য মানবসম্পদ উন্নয়নের আলোচনায় আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা। সেই জায়গাটা শক্তিশালী না করে শুধু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আমরা শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল হয়েছে, বর্তমানে ইউজিসিকে আমি প্রতিনিধিত্ব করছি, ইউজিসিকে সংস্কারের কথাও উঠছে কিংবা সংস্কার হতেও পারে। কিন্তু দিনের শেষে আমার জনসম্পদ যদি দক্ষ না হয়ে ওঠে, অন্তত বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা পর্যন্ত, সেই দক্ষতা যদি তৈরি না হয় তাহলে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক কিছু পরিবর্তন এনে সেটা পাল্টানো সম্ভব নয়। দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন আনাও সম্ভব নয়। ফলে আমার কাছে মনে হয় আমরা যখন উচ্চ শিক্ষা নিয়ে আলাপ করি তখন এর থেকে সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে আলাদা না করাই ভালো। কেননা দিনশেষে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমাদের দর্শনগত অবস্থান। ফলে উচ্চ শিক্ষার মান কী হবে সেটা নির্ধারণের আগে রাষ্ট্রের তরফ থেকে শিক্ষার দর্শন পরিষ্কার করা খুব জরুরি।
এখন যদি শিক্ষার দর্শনগত আলোচনায় আসি এবং জ্ঞানকে বোঝার চেষ্টা করি তাহলে দুই ধরনের জ্ঞান আমরা দেখি। একটি হচ্ছে ক্রিটিক্যাল নলেজ বা তাত্ত্বিক জ্ঞান, আরেকটি হচ্ছে প্রবলেম সলভিং বা সমস্যা সমাধানের জ্ঞান। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কি তাহলে সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেই আমরা শুধু তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জনের জন্য তৈরি করব? নাকি সব বিশ্ববিদ্যালয়কেই আমরা প্রবলেম সলভিংয়ের জন্য তৈরি করব? এটা নিশ্চিত করতে হলে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একটা দর্শনগত অবস্থান নিশ্চিত থাকা লাগবে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, বিশেষ করে যারা শিক্ষাসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত প্রণয়নের দায়িত্বে থাকেন, সেখানে তাদের চিন্তার এ স্বচ্ছতা নেই। এ দর্শনগত স্বচ্ছতা আসলে বর্তমানে খুবই জরুরি। এছাড়া আমি মনে করি, আমাদের তাত্ত্বিক শিক্ষার পাশাপাশি প্রায়োগিক শিক্ষারও সমান দরকার আছে, সেখান থেকে স্কুল-কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে অনুসন্ধিৎসু শিক্ষার্থী তৈরি করাটা খুবই জরুরি। কেননা আমরা গবেষণা বলি, পাঠদান বলি কিংবা যেকোনো কিছুই বলি না কেন, যদি প্রশ্ন করার ক্ষমতা তৈরি না হয় তাহলে শিক্ষার্থীরা ভালো গবেষক বা শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে না। ভালো সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীও হতে পারবে না। সেজন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্রের একটা বড় বাজেট থাকা উচিত, সমন্বয় থাকা উচিত। অর্থাৎ উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের আগেই এ দুই পর্যায়ে প্রদান করা খুবই জরুরি।
আলোচনার পরের ধাপে যদি আসি, আমাদের বিরাজমান উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থায় দুই ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে প্রাইভেট (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) এবং পাবলিক (সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়)। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যেও ভিন্নতা রয়েছে, আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অস্থিরতা বা সংকট রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংকটের একটা মূল কারণ হচ্ছে, আমাদের দেশে এগুলো মূলত প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে লাভজনক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে মুনাফা লাভের জন্য। মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে তৈরি হওয়ার কারণে এগুলোর সঙ্গে অপরাজনীতির একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। আমরা এ পরিবর্তনের মাধ্যমে খুব ভালোই বুঝতে পারছি। বিশেষ করে বর্তমান পরিবর্তিত সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে বোর্ড অব ট্রাস্টিজকে ঘিরে যে লড়াই চলছে, এক দল আরেক দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে, বোর্ডের সদস্যদের সরিয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টিজে আসার চেষ্টা সেই প্রবণতাগুলো দেখে খুব ভালোভাবেই বোঝা যাচ্ছে, এ চেষ্টা বা অপচেষ্টা চলছে মূলত মুনাফায় ভাগ বসানোর জন্য। ঠিক একইভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে আমি যে কথাটা বলি সেটা হলো, এখানে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সমান্তরালচিত্র হিসেবে বোর্ড অব পলিটিক্যাল লয়ালিটির ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে উপাচার্য নিয়োগ থেকে শুরু করে শিক্ষক নিয়োগ সবটাই হচ্ছে এই বোর্ড অব পলিটিক্যাল লয়ালিটির প্রকাশ। এবং এ দুই ধরনের সংকট যদি দূর করা না যায়, সমাধান করা না যায়, তাহলে উচ্চ শিক্ষার মান বা বিরাজমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কাঙ্ক্ষিত মানে পৌঁছানো সম্ভব নয়। বর্তমানে দেশে ৬১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, ৫৫টি বিশ্ববিদ্যালয় সক্রিয় আছে আর ছয়টি এখনো কার্যক্রম শুরু করেনি, সেখানেও কিন্তু ভিন্নতা আছে। এখানে চারটি বিশ্ববিদ্যালয় দেখি স্বায়ত্তশাসিত, কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো হয়ে গেছে। তারা এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে, ভালো কাজ করছে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়, কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আবার মাত্র অনুমোদন পেয়েছে। তারা কোনো অবকাঠামো পায়নি কিন্তু শিক্ষা কার্যক্রম তৈরি শুরু করেছে, আবার কিছু বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পেয়েছে কিন্তু এখনো শিক্ষা কার্যক্রম তৈরি করেনি। এ রকম জটিল একটি পরিস্থিতি বিরাজ করছে আমার উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে। ফলে যে রকম সহজভাবে উচ্চ শিক্ষাকে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে কিংবা উদ্যোক্তা-দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হচ্ছে, তার থেকে বাংলাদেশের শিক্ষা ক্ষেত্র একেবারেই ভিন্ন এবং ভয়ানক জটিলতাও বিদ্যমান। সুতরাং এ জটিলতাকে যদি আমরা সঠিকভাবে নির্ণয় করতে না পারি তাহলে আসলে আমরা যে কথায় বলি না কেন দিনশেষে সেটা খুব একটা বাস্তবসম্মত হয় না। ফলে আইনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দেখি যেখানে তারা একেক সময় একেক ধরনের আইন দিয়ে তৈরি হয়েছে বা একেক রকম আইনগুলোর সৃষ্টি করা হয়েছে, ফলে এখানে কোনো আইনের সামঞ্জস্য নেই। এমনকি একাডেমিক স্বাধীনতা পর্যন্ত হরণ করা হয়েছে এ আইনগুলোর মধ্য দিয়ে। সরকারের সঙ্গে এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম্পর্ক কী হবে সেটা প্রাইভেট হোক কিংবা পাবলিক হোক, তা যদি আমরা নির্ধারণ করতে না পারি এই একাডেমিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে তাহলে দিনের শেষে মানোন্নয়নের যে কথাটা বলা হচ্ছে সেটা আসলে সম্ভব হয় না। সেজন্য উচ্চ শিক্ষার ল্যান্ডস্কেপ/ক্ষেত্রকে বোঝার কোনো সহজ উপায় নেই। এ জায়গাটা ঠিক করতে হলে আমার মনে হয়, একটা গবেষণা কার্যক্রম চালানো খুবই জরুরি। কেননা কী ধরনের পরিবর্তন আসলে প্রয়োজন সেটার জন্য এ জটিলতা বোঝাকে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। জটিলতার প্রকৃতি না বুঝলে সমাধানের উপায় কী হতে পারে সেটার বাস্তবসম্মত পদ্ধতি আমরা বের করতে পারব না। সেজন্য আমি এখন আর বিস্তৃত আলাপে যাচ্ছি না, এরই মধ্যে অনেক আলাপ হয়েছে।
দিনের শেষে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আমাদের যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে তাদের পরিস্থিতি নিয়ে একটা সার্বিক গবেষণা হওয়া দরকার এবং এ মুনাফা অর্জনের নিমিত্তে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে একেবারে সরকারের তরফ থেকে ‘নট ফর প্রফিট’ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করা প্রয়োজন। যাতে কোনোভাবেই এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর যে আর্থিক লভ্যাংশ সেটা কেউ ভাগাভাগি করে নিতে না পারে, এটা শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ও গবেষণা কার্যক্রমে ব্যবহৃত হবে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। সেটা নিশ্চিত করতে পারলে এই বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে যে মারামারিটা সেটা বোধ হয় আর থাকবে না। ঠিক একইভাবে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যে সমস্যা ‘বোর্ড অব পলিটিক্যাল লয়ালিটি’, এটার কীভাবে সমাধান করা যায় সেজন্য সরকারের তরফ থেকে একটা অবস্থান খুব জরুরি এবং সরকারের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে কী ধরনের সম্পর্ক থাকবে, কী ধরনের জ্ঞানের প্রকাশ ও চর্চা তারা দেখতে চাইবে এবং একাডেমিক স্বাধীনতার প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য কেমন হবে—এ জায়গাগুলো সরকারের পক্ষ থেকে পরিষ্কার করা খুব জরুরি।
ইউজিসি সংস্কারের আলোচনাটা যদি আসে তাহলে বলতে হয়, ইউজিসি হলো দাঁত-নখহীন একটি প্রতিষ্ঠান, আমরা অনেক কিছু সুপারিশ করতে পারি, কিন্তু দিন শেষে মন্ত্রণালয়ের ওপর দায়িত্ব ও ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে। সেজন্য সংস্কারকাজে এ জায়গাটাও পরিষ্কার করা দরকার যে ইউজিসিকে অন্যভাবে চিন্তা করা যায় কিনা। এটা উচ্চ শিক্ষা কমিশন হতে পারে কিনা তা নিয়েও মনে হয় আমাদের ভাবার সময় এসেছে এ নতুন সময়ে।এবং দিনের শেষে আমরা যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণামুখী করতে চাই তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে একটা বিশাল পরিবর্তন আনাটা খুব জরুরি। কেননা আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন পড়াচ্ছি, একই সঙ্গে গবেষণা করছি, পাবলিকেশন করছি, কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চরিত্র কী সেটা খুব একটা স্পষ্ট নয়। যদি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে এটা পাঠ প্রদানভিত্তিক (টিচিং) বিশ্ববিদ্যালয় হয়, তার এক রকমের আদল থাকা উচিত। আর যদি এটা গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় হয় তাহলে সেটার অন্য ধরনের আদল থাকা উচিত, অর্থাৎ তার একাডেমিক/শিক্ষা কার্যক্রমে এমন একটা ব্যবস্থা থাকা উচিত, যার মধ্য দিয়ে একটা নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষকরা গবেষণাকাজের সুযোগ পাবেন, সেটাও নিশ্চিত করা উচিত।
সবশেষে বলব, আমাদের উচ্চ শিক্ষার যে দৃশ্যপটটি রয়েছে তা কোনো সহজ-সরল দৃশ্যপট নয়। এটা খুবই জটিল এবং এ জটিলতার অনেকগুলো পর্যায় রয়েছে। এগুলো আগে চিহ্নিত করতে হবে, তারপর আমাদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা সুপারিশ করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান: সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)
[‘উচ্চ শিক্ষায় বৈশ্বিক মান: বাংলাদেশের করণীয়’ শীর্ষক শিরোনামে বণিক বার্তা আয়োজিত প্রথম বাংলাদেশ উচ্চ শিক্ষা সম্মেলন ২০২৪ অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচকের বক্তব্য]