সৌরশক্তির বাজার সম্প্রসারণে সবচেয়ে বড় বাধা আমদানি শুল্ক

অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সংগৃহীত বাংলাদেশের একমাত্র খনিজ সম্পদ হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস। গ্যাস ছাড়া আমাদের দেশে জ্বালানি উৎপাদনের আর কোনো উৎস সেভাবে নেই।

আতিকুর রহমান সরকার সোহেল, প্রকৌশলী এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, মুসপানা। দেশের শীর্ষস্থানীয় নবায়নযোগ্য জ্বালানি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার আগে কাজ করেছেন টেলিকম খাতে। পড়াশোনা করেছেন বুয়েটের ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেন বণিক বার্তায়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাবিদিন ইব্রাহিম

আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার একটি বড় অংশ এলএনজির মতো অন্যান্য জ্বালানি আমদানিতে ব্যয় হয়ে যায়। আমদানিনির্ভর জ্বালানির জন্য রিজার্ভ নিয়ে ভবিষ্যতে আমরা আরো বেশি ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারি। কীভাবে এ সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটতে পারে?

অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সংগৃহীত বাংলাদেশের একমাত্র খনিজ সম্পদ হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস। গ্যাস ছাড়া আমাদের দেশে জ্বালানি উৎপাদনের আর কোনো উৎস সেভাবে নেই। গত ১৫-২০ বছরে বিশ্বে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে একটা বিপ্লব ঘটেছে, সেখানে বাংলাদেশও আছে। কিন্তু অন্যান্য দেশ যেভাবে এ খাতে এগিয়েছে আমরা সেভাবে এগোতে পারিনি। অথচ নবায়নযোগ্য জ্বালানিই মানবজাতির চূড়ান্ত ভবিষ্যৎ বলে মনে হয়। আমাদের দেশের ভবিষ্যতের জন্যও এটা চূড়ান্ত উৎস, কারণ আমাদের সৌরশক্তির প্রাচুর্যও রয়েছে। আমরা সূর্যের কিরণ ৮ ঘণ্টা খুব ভালোভাবে পাই। সুতরাং এ ভৌগোলিক সুবিধার সদ্ব্যবহার করে জ্বালানির জোগান বাড়ানো যায়। জ্বালানির আমদানিনির্ভরতা কমানোর জন্য এটি একটি মৌলিক সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। অর্থাৎ সৌরশক্তি বা নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারই পারে আমাদের দেশকে আমদানিনির্ভর জ্বালানি শক্তির বিকল্প দিতে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি তৈরিতে আমাদের সক্ষমতা ৪ শতাংশ, সেখানে উন্নত অনেক দেশের ৩০-৫০ শতাংশ, অনেকের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ। আমাদের উৎপাদনক্ষমতা এত কম কেন? গত ১০-১৫ বছরে আমাদের নীতিগত দুর্বলতা কোথায় ছিল?

আমাদের নীতিগত দুর্বলতা হলো আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকার জন্য ব্যবহারসীমার নির্দিষ্টতা থাকলেও সেটাকে বাস্তবায়ন করা হয়নি। বিশেষ করে বলতে গেলে পর্যবেক্ষণ, নিরীক্ষা ও নীতি বাস্তবায়নের জন্য যথাযথ পদক্ষেপের অনেক ঘাটতি ছিল। সেজন্য এর সুবিধা মানুষ সেভাবে নিতে পারেনি। ধরা যাক, একজনের বাড়ির ছাদে ৩ শতাংশ সোলার প্যানেল লাগানোর কথা, যেটি খুব সম্ভবত কাজ করেনি বা কাজ করলেও সেটাকে যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি; সোজা কথায় সচেতনতা সৃষ্টি করা যায়নি। সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের ফলে তাদের কী লাভ হচ্ছে সেটার জন্য তাদের যথাযথ জ্ঞান ও সচেতনতা কোনোটিই ছিল না। তাই শুরুতেই প্রয়োজন সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করা। অনেকের বাসার ছাদে সোলার প্যানেল আছে কিন্তু তারা এটাকে ব্যবহার করছে না। সুতরাং অসচেতনতা একটি বড় অনুঘটক।

আরেকটি জায়গা হলো প্রণোদনা-ভর্তুকির অভাব। এটি বাড়াতে হবে। যেমন অস্ট্রেলিয়ায় বা যুক্তরাষ্ট্রে কিংবা ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশে সৌরশক্তি প্রসারের মূল কারণ হলো এক্ষেত্রে নানা ধরনের ভর্তুকি প্রদান করা হয়েছে। আমাদের দেশে অনেক খাতেই ভর্তুকি দিতে হয়। ভর্তুকি অন্যান্য জায়গায় দেয়ার চেয়ে সৌরবিদ্যুৎ খাতে দেয়া অধিক প্রয়োজন বলে মনে করি। কারণ এখানে দিলে আমাদের আর প্রাথমিক জ্বালানি লাগছে না। প্রথমে কিছু বিনিয়োগ করলেই এটা ২০-৩০ বছর চলছে।

আর এখন সোলারের যে মূল্য নির্ধারণ হয়েছে, আমার মনে হয় এর চেয়ে কম মূল্য আর হতে পারে না। এটি যেকোনো জীবাশ্ম জ্বালানির চেয়ে অনেক সস্তা। সুতরাং কেন আমরা এটা ব্যবহার করব না? আমরা যদি চীনের দিকে তাকাই, তাহলেই দেখতে পাব তারা সৌরবিদ্যুতের কতটা সুযোগ নিচ্ছে। তারা শিল্পোৎপাদনে ব্যবহার্য উন্নত যন্ত্রপাতিও সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে চালাচ্ছে। এমনকি আবাসনে সৌরশক্তিতে এসি, ফ্রিজ থেকে শুরু কী না চলতে পারে, সবই চালানো সম্ভব।

এছাড়া দেশের প্রান্তিক বা একটু বিচ্ছিন্ন যে জায়গাগুলো, সেখানে দেখা যায় আমাদের বিদ্যুতের লাইন টেনে নিতে অনেক খরচ হয়; বৈদ্যুতিক তার, খুঁটি, জনবলসহ এখানে সরকারের প্রচুর বিনিয়োগ লাগে। সেই জায়গাগুলোয় আমাদের বড় ধরনের সমাধান হতে পারে সৌরবিদ্যুৎ। এখন সোলারে হাইব্রিড সলিউশন, সোলার এনার্জি স্টোরেজ সলিউশনও বাজারে চলে এসেছে এবং এসবই কিন্তু কার্যকরী। এখন আমাদের দেশে কী হয়েছে? সৌরবিদ্যুতের শক্তি সঞ্চয় করে রাখার জন্য এখনো ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়। ব্যাটারির আবার আমদানি শুল্ক বেশি। সেটা যদি কমিয়ে আনা হয় তাহলে ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে, একই সঙ্গে সে মনে করবে যে সে সুবিধাভোগী হচ্ছে। তখন আমাদের জাতীয় গ্রিডে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহের লাগাতার চাপ কমবে।

উদ্যোক্তা হিসেবে মাঠপর্যায়ে সৌরশক্তির বাজার সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে আপনাদের কী কী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে?

আমাদের জন্য আমদানি কর একটি বিশাল বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে আমি মনে করি। এটা ছাড়া বাকি সবকিছু ঠিক আছে। এই করছাড় বা কর হ্রাস করা প্রয়োজন। সোলার প্যানেল আমদানিতে ১১ থেকে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ কর পড়ে, ইনভার্টারে প্রায় ৪০ শতাংশ পড়ে যায়, যেটা আমাদের জন্য অনেক বড় বাধা। আমি মনে করি, আগামী তিন-চার বছরের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সরকারের একটা পরিকল্পনা করা উচিত, যেখানে আগামী বছরগুলোর একটা কর্মপন্থা নির্দিষ্ট থাকবে এবং সোলারের আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতিতে বিদ্যমান ট্যাক্স উঠিয়ে দেয়া হবে। এ জায়গায় যে খুব বেশি তারা ট্যাক্স পায় তা নয়, তবুও এটা আছে। এটা তুলে নিলে আমরা একটা বড় ধরনের নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগে শামিল হতে হতে পারি। সুতরাং আমার মনে হয় এটা তুলে নেয়াটাও আমাদের পক্ষে ভালো কাজে দেবে।

অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস তিন শূন্যের পৃথিবীর কথা বলেন। তার মধ্যে একটা হলো জিরো কার্বন নিঃসরণ। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে বর্তমান বাংলাদেশে আপনারা কী সম্ভাবনা দেখছেন?

আমরা এক্ষেত্রে খুবই আশাবাদী, বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ শক্তি দিয়েই বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুতের যাত্রা শুরু হয়। সেদিক দিয়ে তিনিই বাংলাদেশে এ খাতের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। মানে এর আগে কেউ করেছেন কিনা সেটা আমার জানামতে নেই। যে সময়ে তিনি ব্যবসাটি শুরু করেছিলেন, আমি নিজে বা আমার প্রতিষ্ঠানও গ্রামীণ শক্তির একজন সরবরাহক হিসেবে সেখানে কাজ করেছি। আমরা সোলারের কন্ট্রোলার উৎপাদন করতাম। এ পর্যন্ত আমরা ৩ লাখ ২০ হাজার সোলার কন্ট্রোলার বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করেছি।

প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ এবং গ্রামীণ শক্তিও নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে। সে জায়গা থেকে মনে করি, তিনি যদি এক্ষেত্রে নজর দেন তাহলে এ খাতে আরো ভালো করার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ খাতে বিদেশী বিনিয়োগ বা প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) কেমন আসছে বা কেমন আসার সুযোগ রয়েছে বলে আপনি মনে করেন?

বাংলাদেশে এ সুযোগ অনেক বড়। কেননা বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলোয় বা যুক্তরাষ্ট্রে এ খাতের অনেক যন্ত্রপাতি চীন থেকে আমদানি করা হয়, সেক্ষেত্রে দেখা যায় যে এসব দেশকে বেশি করও দিতে হয় না। বাংলাদেশ এই সুযোগটা নিতে পারে। বাংলাদেশ থেকে এই একই ধরনের মালামাল যদি ওরা আমদানি করতে পারে তাহলে আমার জানামতে ওদের করের মাত্রা হবে শূন্য। অর্থাৎ আমরা রফতানি করলে সেটা ওদের জন্যও সুবিধাজনক। বিভিন্ন বিনিয়োগকারীদের যদি আমরা আমন্ত্রণ জানাতে পারি যে আপনারা এসে এখানে বিনিয়োগ করুন তাহলে তারা আসবে। কারণ এটা তাদের জন্য অনেক লাভজনক হবে এবং বেশকিছু কোম্পানি কিন্তু চাচ্ছে এ দেশে আসতে এবং এখানে কারখানা খুলে উৎপাদনে যেতে।

আপনি ব্যবসায়িক প্রয়োজনেই যুক্তরাষ্ট্র, চীন, শ্রীলংকাসহ বিভিন্ন দেশ ঘুরেছেন। আমাদের দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ আসার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো কোথায় বলে আপনার অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে?

এফডিআই আসার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো ক্ষমতাচর্চা। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের চাওয়া হলো উৎপাদনের ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন ক্ষমতা যেন পায় তারা। অর্থাৎ তাদের নিজেদের ফ্যাক্টরি পরিচালনার পূর্ণ ক্ষমতা দিতে হবে। রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলোয় (ইপিজেডগু) তারা বিনিয়োগ করছেন, সোলার খাতেও বেশকিছু কাজ হয়েছে, অনেকে বিনিয়োগ করেছে বা করতে চাচ্ছে। কিন্তু সোলার মডিউলের (সোলারের মূল অংশ) মতো বৃহৎ কলেবরের যন্ত্র উৎপাদন করার জন্য বড়সড় উৎপাদন ব্যবস্থা যদি না থাকে তবে বাংলাদেশের মতো ‘ইকোনমি অব স্কেল’ অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সেটা সম্ভব হয় না। কিন্তু অন্যান্য যন্ত্রাংশ যেমন ইনভার্টার উৎপাদন বা আরো বিভিন্ন যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারী ফার্ম আমাদের দেশে আসতে পারে।

বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে মুসপানা (muspana) কী অবদান রাখছে? সামনের দিনগুলোয় আপনাদের পরিকল্পনা কী?

আমরা শুরুই করেছি নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বড় ধরনের উদ্যোগ হাতে রেখে। বিভিন্ন সরকারি প্রজেক্টগুলোয় কাজ করি এবং প্রান্তিক পর্যায়ের গ্রামগঞ্জে বিভিন্ন এনজিওদের আমরা সোলার মডিউলগুলো সরবরাহ করি। এছাড়া আনুষঙ্গিক যে যন্ত্রাংশগুলো লাগে, যেমন ইনভার্টার, কনভার্টার, কন্ট্রোলার ইত্যাদির জোগান দিই। সব মিলিয়ে আমরা এ জায়গায় খুবই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা অনেকগুলো প্রজেক্ট করছি এবং চেষ্টা করি যেন প্রত্যেকটা প্রজেক্টই কার্যকর হয়।

আর এখন পৃথিবী যেদিকে যাচ্ছে আমরা সেদিকেই আমাদের কর্মক্ষমতা বাড়াতে চাচ্ছি। আমাদের দেশ ও দেশের দায়িত্বশীল জায়গায় যে নীতিনির্ধারকরা আছেন, তারাও যাতে এসব জায়গায় সক্রিয় হতে পারেন সেই চেষ্টাও চালাচ্ছি। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় এনার্জি সলিউশন দেয়া সম্ভব হচ্ছে, অনেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে, যেমন টেসলা। তারা এ জায়গাটিতে প্রচণ্ড পরিমাণে এগোচ্ছে তাদের সৃজনশীল কাজ নিয়ে। এছাড়া চীনের অনেক প্রতিষ্ঠানে আগে গেলে আমরা কোনো এনার্জি স্টোরেজ সলিউশন দেখতাম না, কিন্তু এখন সেখানকার বাণিজ্য মেলায় গিয়ে দেখি এনার্জি স্টোরেজ সলিউশন আছে। এনার্জি স্টোরেজ যখন থাকবে তখন স্বাধীনতা চলে আসে গ্রিডের ওপর। আর এ জায়গাটিতে বড় কাজ হলো আমাদের, যেমন আজকেই আমরা অফিসে আলোচনা করছিলাম যে পিক আওয়ার যেমন বিকালের দিকে বিদ্যুতের সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে। ওই সময় যদি কোনোভাবে আমরা এ চাহিদা কমাতে পারি তাহলে কিন্তু রাষ্ট্রের একটা বড় ধরনের বিদ্যুৎ শক্তি সঞ্চয় হয়। এটা একমাত্র নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের ব্যবহার দ্বারা সম্ভব যদি আমাদের এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম থাকে। ধরা যাক, আমরা এনার্জি মজুদ করে জমিয়ে রাখলাম। ওই পিক টাইমে স্টোরেজ থেকে সোলার বিদ্যুৎ নিলাম, তাহলে পুরো গ্রিডকেই চাপমুক্ত করা গেল। যদি আমাদের পিক আওয়ারে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বা এর চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ লাগে এবং সেখানে আমরা এ আলোচিত সোলার এনার্জির ম্যানেজমেন্টটা আমরা করতে পারি এনার্জি স্টোরেজ দিয়ে, তাহলে রাষ্ট্রের পুরো বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাতেই বড় ধরনের সাশ্রয় হবে। এভাবে আমাদের রাষ্ট্রের বা দেশের অনেক টাকা বাঁচানো সম্ভব। কেননা অনেকগুলো পাওয়ার প্লান্ট/বিদ্যুৎ কেন্দ্র শুধু পিক আওয়ারে চলে, ফলে তাদের ক্যাপাসিটি চার্জ প্রদান করতে হয় (তাদের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী টাকা দিতে হয়)। এসব খরচের সঙ্গে অন্যান্য খরচ মিলিয়ে সরকারের ওপর একটা বড়সড় বোঝার সৃষ্টি হয়।

সৌরবিদ্যুৎকে যদি কার্যকরী উপায়ে প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত ব্যাটারি বা ব্যাকআপসহ আমরা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি, সেটা আমাদের পক্ষে দ্রুতই করা সম্ভব এবং এরই মধ্যে এ জায়গাগুলোয় অনেকগুলো রাষ্ট্র এগিয়ে গেছে, বিশেষ করে যাদের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় লোডশেডিংয়ের সমস্যা রয়েছে।

উদ্যোক্তা হিসেবে আপনারা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে কী প্রত্যাশা করেন?

যেহেতু বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তি বলতে আমরা সৌরশক্তিকে/সৌরবিদ্যুৎকেই বুঝি, সেজন্য সোলারের ক্ষেত্রে আমরা চাই যে এখানে যেসব করারোপ করা হয় তা কমিয়ে আনা হোক। আমি এটা চাই না যে একেবারেই না থাকুক, কিন্তু চাই যে আমদানি খরচ কমিয়ে আনা হোক। বিশেষ করে সোলার খাতে আমাদের যন্ত্রপাতির বেশির ভাগই বিদেশ থেকে আনতে হচ্ছে। আমদানি শুল্কে একটা বড় ধরনের ছাড় বা ভর্তুকি দেয়া হলে আরো মানুষ অনুপ্রাণিত হবে এ খাতের উদ্যোক্তা হতে। আমার মতে, এটা বড় ধরনের একটি সমাধান হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের সংকট নিরসনে। যেমন গ্রীষ্মকালে কিছু কিছু এলাকায় সরকার লোডশেডিং না দিয়ে পারে না, কারণ এখানে ঘাটতি রয়েছে। আবার সবখানে ট্রান্সমিশন/সরবরাহ লাইন একই রকমের করাও যায় না, আবার এটা সম্ভবও নয়। বাংলাদেশের অনেক স্থান বিস্তৃত আকারে রয়েছে। এর সমাধানকল্পে যদিও কিছু ব্যাপারে প্রণোদনা আছে, কিন্তু যদি আরো সংহতভাবে, গঠনমূলক পদ্ধতিতে কাজ করা যেত তাহলে দেশের মানুষ বেশি উপকৃত হতো।

পাশাপাশি দেশে বিদ্যুতের চাহিদার জোগানে অনেক বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। কারণ যখন একটি সোলার আনা হবে, তখন তেল কম কিনতে হবে। যখন একটা পানি সেচের মেশিন সোলারে চলবে বা কৃষিকাজ শুরু হবে তখন ডিজেলে বিশাল ভর্তুকি দিতে হয় এবং ডিজেল আমদানিও করতে হয়। ডিজেল আমদানি করতে হয় ডলারে আবার ভর্তুকি দিতে হয় টাকায়। সেখানে বাংলাদেশের সব পানির পাম্পকে যদি আমরা ডিজেল থেকে সোলারে নিয়ে যেতে পারি তাহলে খরচটা একবার হবে কিন্তু আগামী ২০ বছরে সেটার ফলস্বরূপ আমাদের ডিজেলের ওপর নির্ভরতা কমে যাবে। এতে খরচ কমানো সম্ভব, একই সঙ্গে রিজার্ভেও চাপ পড়বে না। সুতরাং এ ধরনের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া গেলে সেটার ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাবে বলে মনে করি।

আরও