পর্যালোচনা

ট্রেড লাইসেন্সের জটিলতা হ্রাস বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ বাড়াবে

শিল্পনীতির সংজ্ঞা অনুযায়ী দেশের বিশেষ আইন দিয়ে বিধিবদ্ধ নয় বা কর ও রাজস্ব আদায় খাতে অন্তর্ভুক্ত নয় কিংবা যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিবন্ধিত নয় এমন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও উদ্যোগ অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্প হিসেবে আখ্যায়িত হয়। উল্লেখ্য, দেশে এ ধরনের উদ্যোগের সংখ্যাই বেশি এবং এগুলোর মধ্যে ক্ষুদ্র উদ্যোগ সর্বাধিক। আইন দিয়ে বিধিবদ্ধ না থাকার কারণে এগুলো সরকার কর্তৃক ঘোষিত নীতিমালার

শিল্পনীতির সংজ্ঞা অনুযায়ী দেশের বিশেষ আইন দিয়ে বিধিবদ্ধ নয় বা কর ও রাজস্ব আদায় খাতে অন্তর্ভুক্ত নয় কিংবা যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিবন্ধিত নয় এমন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও উদ্যোগ অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্প হিসেবে আখ্যায়িত হয়। উল্লেখ্য, দেশে এ ধরনের উদ্যোগের সংখ্যাই বেশি এবং এগুলোর মধ্যে ক্ষুদ্র উদ্যোগ সর্বাধিক। আইন দিয়ে বিধিবদ্ধ না থাকার কারণে এগুলো সরকার কর্তৃক ঘোষিত নীতিমালার সুবিধাও গ্রহণ করতে পারে না, যে কারণে ক্ষুদ্র শিল্পের গ্র্যাজুয়েশনও সেভাবে হয়নি, যা অর্থনীতির জন্য সুখবর নয়।

একটি ব্যবসায় উদ্যোগ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করার প্রথম শর্ত হলো ট্রেড লাইসেন্স নেয়া। বলা যায়, ট্রেড লাইসেন্স একটি প্রাথমিক ও মৌলিক লাইসেন্স। কীভাবে এ লাইসেন্স পাওয়া যাবে এ নিয়ে অসংখ্য ভিডিও অনলাইনে পাওয়া যায়, দেখে মনে হবে এটি খুবই সহজ বিষয়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা নয়। উদ্যোক্তা বিশেষ করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হন। 

এ লাইসেন্স আবার ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ পাওয়ার সর্বপ্রথম ডকুমেন্ট। বাংলাদেশে কত সংখ্যক ট্রেড লাইসেন্সধারী উদ্যোক্তা রয়েছে বা ২০১৩ সালের সেনসাস অনুযায়ী ৭৮ লাখ উদ্যোক্তার কতজন ট্রেড লাইসেন্সধারী সে ব্যাপারে তেমন কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। অর্থাৎ এ ব্যাপারে কোনো ডাটাবেজ বা মনিটরিংও নেই বলা চলে। এ লাইসেন্স থেকে কত রাজস্ব আয় হয় সে ব্যাপারে হালনাগাদ তথ্যও পাওয়া যায় না। তবে এটি বলা যায়, স্থানীয় সরকারের যেসব প্রতিষ্ঠান এ সেবা দিয়ে থাকেন, তাদের আয়কারী খাতের মধ্য এটি খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ স্থানীয় সরকারের অসংখ্য কার্যক্রম রয়েছে যার মাধ্যমে তারা রাজস্ব আদায় করতে পারেন বা করে থাকেন। এ কথা অবশ্যই বলা যায় যে বর্তমানে শিল্পোদ্যোগ অনেক বেড়েছে ২০২৩ সালের সেনসাস প্রকাশ হলে আমরা জানতে পারব যে এ সংখ্যা প্রায় দুই কোটিরও ওপরে, যে কারণে এ প্রাথমিক লাইসেন্সের গুরুত্বও বেড়েছে। তবে এ ব্যাপারে সহজীকরণ হলে একদিকে স্থানীয় সরকারের আয় বাড়তে পারে, অন্যদিকে উদ্যোক্তা নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণে আগ্রহী হবেন।

সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থানীয় সরকার এটি জারি করেন যা একটি এলাকা বা অঞ্চলভিত্তিক লাইসেন্স, অর্থাৎ আপনি যে এলাকায় ব্যবসাটি শুরু করবেন সে এলাকায় আপনার লাইসেন্সটি নিতে হবে। যেমন আপনার অফিস ঢাকায় কিন্তু ফ্যাক্টরি পাবনায়, তবে সেখানে অবশ্যই লাইসেন্স নিতে হবে। একই ব্যক্তির একাধিক ব্যবসা থাকলে অবশ্যই প্রতিটি এলাকার স্থানীয় সরকার বিভাগ হতে ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ বাধ্যতামূলক। এ কারণে একাধিক লাইসেন্স গ্রহণ একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। বাস্তবে দেখা যায়, এ লাইসেন্স নেয়ার যে জটিলতা তা কাটানো সম্ভব হয়নি বলে বেশির ভাগ উদ্যোক্তা বরং লাইসেন্স গ্রহণ করলেও নবায়নের সমস্যার কারণে এটি ছাড়াই ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন বছরের পর বছর। একদিকে খরচ, অন্যদিকে সময়—দুই দিক থেকেই একজন ক্ষুদ্র উদোক্তার জন্য নিয়ম মেনে উদ্যোগ পরিচালনা কষ্টদায়ক।

সিটি করপোরেশন আইডিয়াল ট্যাক্স শিডিউল ২০১৬ অনুযায়ী, প্রায় ২৯৫টি প্রধান ব্যবসার অধীনে ৪৯১ ধরনের ব্যবসায় এতে তালিকা ভুক্ত করা হয়েছে। একক মালিকানা, অংশীদারত্ব বা কোম্পানির দেশে বৈধভাবে কাজের জন্য একটি ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন। 

আগেই বলেছি, একদিকে যেমন লাইসেন্স ফি ও নবায়ন একটি সমস্যা তেমনি অফিশিয়াল ফি ধার্যের ক্ষেত্রেও রয়েছে জটিলতা। যেমন সিটি করপোরেশন আদর্শ কর তফসিল ২০১৬ অনুসারে, বিভিন্ন ছোট প্রতিষ্ঠান/দোকান বিভাগের অধীনে, যেমন সুপারি/সুপারি দোকানদারের ট্রেড লাইসেন্স ফি ৫০০ টাকা যেখানে যান্ত্রিক যানবাহন/পরিবহন উৎপাদক, ট্রাক/ট্যাংকার/বাস (শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত) (কোম্পানি ব্যতীত অন্য)-এর ট্রেড লাইসেন্স ফিও ৫০০ টাকা। অন্যদিকে বেবি ট্যাক্সি/মিশুক উৎপাদকের ট্রেড লাইসেন্স ফি ১০০ টাকা, যা কোনো ক্রমেই যৌক্তিক নয়। ব্যবসায় ধরন বিবেচনাপূর্বক বিশেষ করে ক্ষুদ্র উদ্যোগের জন্য প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স ফি যৌক্তিক বা পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন, যাতে এসব উদ্যোক্তা আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে উদ্যোগ চালাতে পারে এবং সরকারি সব সুযোগ গ্রহণ করতে পারে।

আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচের ব্যাপারটিও বেশ বড়, অর্থাৎ লাইসেন্স প্রদান/নবায়ন-সংশ্লিষ্ট ফি একমাত্র খরচ নয়। যেমন ট্রেড লাইসেন্স আবেদনপত্রের মূল্য ২০ টাকা। আবার লাইসেন্স ফি সিটি কপোরেশনভেদে ভিন্ন। যেমন ১০০ টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা (ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন), ১০০ টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা (অন্যান্য সিটি করপোরেশন) এবং ৫০ টাকা থেকে ১২ হাজার টাকা (সাতক্ষীরা পৌরসভা) ইত্যাদি। ব্যবসার ধরন ও প্রকৃতির ওপর নির্ভর করেও ফির প্রকারভেদ হয়ে থাকে। 

এছাড়া সাইনবোর্ডের জন্য প্রতি বর্গফুট ৮০ টাকা হারে ট্রেড লাইসেন্সের ফির সঙ্গে যোগ করা হয়। আরো আছে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের ওপর প্রযোজ্য ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট, যা বেসরকারি খাত বিশেষ করে ক্ষুদ্র উদ্যোগের জন্য উদ্বেগের বিষয়। অন্যদিকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এলাকাভিত্তিক অবস্থানের ওপর নির্ভর করে ট্রেড লাইসেন্সের নবায়ন ফির ওপর আয়কর ধার্য হয়, যা ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে (রেফারেন্স: আয়কর অধ্যাদেশ ২০২৩-এর ধারা: ১৩১)। 

প্রতি বছর ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ট্রেড লাইসেন্সের নবায়ন সম্পন্ন না হলে সেক্ষেত্রে সারচার্জ আরোপ করার বিধান রয়েছে যা, মাসিক ১০০ টাকা অথবা ট্রেড লাইসেন্স ফির ১০ শতাংশ দুটির মধ্যে যেটি বেশি। এর মানে দাঁড়ায়, কেউ যদি জুলাইয়ে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে থাকে তাকে দু মাস পরই নবায়ন করতে হবে। অন্য যেকোনো লাইসেন্সের মেয়াদ এক বছর, অর্থাৎ যে সময়ই লাইসেন্স নেয়া হোক না কেন এক বছর পর নবায়ন করলেই হলো, একমাত্র ট্রেড লাইসেন্স এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।

তাছাড়া ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু এবং নবায়নের ক্ষেত্রে একই হার বিদ্যমান, বরং নবায়নের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ব্যয় সংযোজন হয় আয়কর যোগ হওয়ার কারণে। আয়কর অধ্যাদেশ ২০২৩-এর ধারা: ১৩১ অনুযায়ী ট্রেড লাইসেন্সের নবায়নের সময় প্রতিটি ট্রেড লাইসেন্সের ক্ষেত্রে বিভিন্ন হারে আয় কর সংগ্রহ করা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হয়তো মনে করতে পারেন যে এক বছরে তো আয় হয়েছে, কাজেই সেখান থেকে আয়কর দেয়া প্রয়োজন। প্রকৃতপক্ষে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মধ্য ট্রেড লাইসেন্স নিলেও তারা নবায়ন করতে উৎসাহী হন না অতিরিক্ত খরচ এবং জটিল নিয়ম-কানুনের কারণে, তার ওপর রয়েছে সঠিক তথ্যের অভাব এবং আন-ডকুমেন্টেড রিকোয়্যারমেন্ট। কেউ কেউ বলেছেন, একটি ট্রেড লাইসেন্সের জন্য ৫-৬ লাখ টাকাও খরচ হয়।

স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯, মিউনিসিপ্যাল ​​ট্যাক্সেশন রুলস-১৯৮৬ ইত্যাদি নিয়ম মেনে দেশের ১২টি সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্ট এলাকার পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ ইত্যাদি নিজ নিজ এলাকার জন্য ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করে। বাণিজ্যিক এবং উৎপাদন খাতে ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করা হয় এবং ব্যবসায়ের ধরনের ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, আবেদনপত্রের ধরন এবং ট্রেড লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়া নির্ভর করে। এরপর আছে সময়ের ব্যাপার, সাধারণত ট্রেড লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে তিন থেকে সাতদিন এবং নবায়নের ক্ষেত্রে এক-দুইদিন সময় প্রয়োজন হয়। কোনো কোনো জায়গায় অনেক বেশি সময় দরকার পড়ে, অন্যদিকে কিছু সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা দ্রুততার সঙ্গে লাইসেন্স দিতে পারছেন। সময় কমিয়ে আনার ব্যাপারে সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে মনোযোগী হওয়া দরকার। একই সঙ্গে উদ্যোক্তাকেও হালনাগাদ কাগজপত্র নিয়ে তৈরি থাকতে হবে যাতে ইন্সপেকশনের প্রয়োজন না পড়ে। কারণ এক্ষেত্রেই বেশি সময়ের দরকার হয়। 

সম্প্রতি স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ ট্রেড লাইসেন্স ডিজিটালাইজড করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু কারিগরি প্রক্রিয়াজনিত কারণ ও আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজনে এটি এখনো সর্বস্তরে চালু করা হয়নি। এছাড়া ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করার প্রক্রিয়া বেশির ভাগই ম্যানুয়াল ও সময়সাপেক্ষ। কিছু কিছু সিটি করপোরেশনে স্বল্প পরিসরে ই-ট্রেড লাইসেন্স প্রদান চালু করেছে। দেশব্যাপী অনলাইন পেমেন্ট পদ্ধতিসহ ই-ট্রেড লাইসেন্স প্রদান/নবায়ন প্রক্রিয়া অবিলম্বে কার্যকর করা দরকার। পৃথিবীর সব দেশে এ বিজনেস রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াটি তাৎক্ষণিক, বাংলাদেশে এগুলোকে এখনো সে পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।

বিভিন্ন চেম্বার, অ্যাসোসিয়েশনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি লাইসেন্স দেয়ার বিধান ও নবায়নের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ২০২২ সালের ১২ অক্টোবর জারীকৃত একটি পত্রের মাধ্যমে সব সিটি করপোরেশনে এবং ২০২৩ সালের ৩০ মার্চ জারীকৃত পত্রের মাধ্যমে সব পৌরসভায়, ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল জারীকৃত পত্রের মাধ্যমে সব ইউনিয়ন পরিষদে এ নিয়ম কার্যকর হয়েছে। এছাড়া একটি সমন্বিত আবেদনপত্র এবং চেক লিস্ট অনুসরণ করে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। 

ট্রেড লাইসেন্স ফির সঙ্গে জড়িত ভ্যাট ও ট্যাক্স নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, স্থানীয় সরকার বিভাগের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে পাঁচ বছরের ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু এবং নবায়নে ভ্যাট ও ট্যাক্স আদায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আপত্তি নেই, যা অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। তবে পাঁচ বছরের লাইসেন্স এখনো কেউ নিতে পারেননি বলে জানা যায়। এটা অবশ্য সঠিক যে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কেউই একসঙ্গে পাঁচ বছরের ফিস জমা দিতে পারবে না তবে যিনি পারবেন তার জন্য অনেকটাই প্রশাসনিক জটিলতা হ্রাস পাবে। এরই মধ্যে রফতানি এবং আমদানি লাইসেন্স পাঁচ বছরের জন্য দেয়া শুরু হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ হতে গৃহীত এ পদক্ষেপ (পরিপত্র/গেজেট) স্থানীয় সরকার বিভাগ/সিটি করপোরেশন/পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ এবং এর ব্যাপক প্রচারণামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা দরকার। 

অতিরিক্ত খরচের ব্যাপারে এরই মধ্যে বলা হলেও সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখা দেয় ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদনের পূর্বে স্থানীয় নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমতির প্রয়োজনীয়তা যা উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে জন্য বাধাস্বরূপ। উদাহরণস্বরূপ, গাজীপুর সিটি করপোরেশনে (সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুর এলাকা) আবেদনের পূর্বে উদ্যোক্তাদের স্থানীয় নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে একটি অনুমতিপত্র নিতে হয়। এর পরিমাণ ক্ষেত্র বিশেষে প্রায় ২০ হাজার টাকা বা তার অধিক বলে জানা যায়। উল্লেখ্য, এ অতিরিক্ত অনুমতিপত্রের প্রয়োজনীয়তা আইন/বিধিতে অন্তর্ভুক্ত নেই। এটি উদাহরণ হিসেবে একটি এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হলে অন্যান্য এলাকায়ও শুরু হবে, যা বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টিতে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। নতুন ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণের ক্ষেত্রে অন্যান্য নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অতিরিক্ত অনুমতির বিষয়টির আশু সমাধান প্রয়োজন, যাতে বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যবসায় স্থাপনের খরচ হ্রাস পায়। 

কভিড-পরবর্তী সময়ে ই-কমার্স বিজনেস বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যায়। ই-কমার্স প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তরের মাধ্যমে সব ডিজিটাল কমার্সকে (ই-কমার্স ও এফ-কমার্স ইত্যাদি) বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার বা ডিবিআইইডি প্রদান করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় সাতশত নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ সংখ্যা আরো দ্রুত বাড়ানো দরকার, কারণ বাংলাদেশে যেভাবে ই-কমার্স ও এফ-কমার্স ক্ষুদ্র উদ্যোগ বাড়ছে সে তুলনায় ডিবিআইইডি গ্রহণ বাড়ছে না। এ নিবন্ধনপত্র অবশ্য এখনো ব্যাংক লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়। সব ডিজিটাল কমার্স উদ্যোগের ক্ষেত্রে ডিবিআইইডিকে স্বীকৃতি প্রদান করে ব্যাংক লোনপ্রাপ্তির সহায়ক নথি/সার্টিফিকেট হিসাবে কার্যকর করা দরকার, তা না হলে এক্ষেত্রেও রেজিস্ট্রেশন বাড়বে না। 

এটি অবশ্য সত্যি যে ডিবিআইইডি প্রদানের ফলে এ খাত একটি শৃঙ্খলার মধ্যে আসবে। এ লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের সু্যোগ-সুবিধাও বাড়াতে হবে। ই-কমার্স উদ্যোগ আরো ছড়িয়ে দিতে এর সফল বাস্তবায়ন দরকার। সম্প্রতি পিএমওতে অনুষ্ঠিত প্রাইভেট সেক্টর ডেভেলপমেন্ট পলিসি কো-অরডিনেসন কমিটির সভায় এ বিষয়ে আলোকপাত করা হয়, যাতে ডকুমেন্টটি ব্যাংক লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য হতে পারে।

বিস্তারিত আলোচনায় দেখা যায়, নীতিমালা সহজীকরণে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তবে এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন এখনও দেখা যাচ্ছে না। প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ সরকারের এবং বেসরকারি খাতের উভয়ের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। ট্রেড লাইসেন্স এবং ডিবিআইডি আইন দিয়ে বিধিবদ্ধ উপায়ে উদ্যোগ গ্রহণের একটি প্রাথমিক উপায়, এটি যতটা সম্ভব সহজলভ্য করা যাবে ততই প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ গ্রহণের নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং কর রাজস্ব আদায় বাড়বে।

ফেরদাউস আরা বেগম: সিইও, বিল্ড-একটি পাবলিক প্রাইভেট ডায়ালগ প্লাটফর্ম

আরও