অভিমত

পরিবেশ বিপর্যয় রোধে সার্কুলার ইকোনমি

সমগ্র পৃথিবীতে ২০২২ সালে মোট পণ্য বাণিজ্য প্রায় ১২ শতাংশ বেড়ে ২৫ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে একই বছর বাণিজ্যিক সেবা বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ অর্থাৎ ৬ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলার, যখন একই বছর প্রতিদিনের সার্ভিস ডেলিভারি বেড়েছে ৩ দশমিক ৮২ ট্রিলিয়ন ডলার (গুগল)। এমন অধিক পরিমাণে পণ্য ও সেবা তৈরিতে বিপুল পরিমাণ সম্পদ নিষ্কাশন বা ব্যবহারের প্রয়োজন

সমগ্র পৃথিবীতে ২০২২ সালে মোট পণ্য বাণিজ্য প্রায় ১২ শতাংশ বেড়ে ২৫ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে একই বছর বাণিজ্যিক সেবা বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ অর্থাৎ ৬ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলার, যখন একই বছর প্রতিদিনের সার্ভিস ডেলিভারি বেড়েছে ৩ দশমিক ৮২ ট্রিলিয়ন ডলার (গুগল)। এমন অধিক পরিমাণে পণ্য ও সেবা তৈরিতে বিপুল পরিমাণ সম্পদ নিষ্কাশন বা ব্যবহারের প্রয়োজন হচ্ছে। এসব সম্পদ ধরিত্রী থেকেই কোনো না কোনোভাবে আহরণ হয়েছে। এটা প্রাইমারি পণ্য বা সেকেন্ডারি পণ্য দুভাবেই হতে পারে অর্থাৎ কিছুটা প্রক্রিয়াজাত এবং কিছুটা অপ্রক্রিয়াজাত বা কাঁচামাল। এ ধরনের ধারাবাহিকতায় সম্পদ ব্যবহারের প্রয়োজন ক্রমাগত বাড়তেই থাকবে, যা আমাদের এ ধরিত্রীতে বসবাসযোগ্যতা কমিয়ে আনবে যদি না আমরা সার্কুলার ইকোনমির মাধ্যমে সেগুলো আবার পুনঃস্থাপনের ব্যবস্থা করতে পারি। 

এছাড়া ডিজিটাল ট্রেডের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের পণ্য চাহিদা ও পরিমাণ ক্রমাগত বাড়ছে। জীবন মানের উন্নয়ন, ধরনের পরিবর্তন, মোবিলিটি বেড়েছে যার ফলে নতুন নতুন পণ্য বাজারে আসছে এবং চাহিদাও বাড়ছে। অতীতে যা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি এমন ধরনের আধুনিক পণ্য বাজারে ক্রমাগত সরবরাহ হচ্ছে। এসব পণ্যে এমন কিছু উপাদান ব্যবহার হচ্ছে যা মানুষ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। সার্কেল ইকোনমি (সিই) কর্তৃক প্রকাশিত সার্কুলারিটি গ্যাপ রিপোর্ট ২০২৩-এ বলা হয়েছে যে ২০২৩ সালে সার্কুলারিটি হ্রাস পেয়েছে প্রায় ৭ দশমিক ২ শতাংশ যা ২০২০ সালে ছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ ও ২০১৮ সালে ৯ দশমিক ১ শতাংশ। এর পেছনে অন্যতম কারণ হলো অতিরিক্ত হারে পণ্যের উপাদান (মেটেরিয়াল) আহরণ ও এর ব্যবহার। এ বিপর্যয় থেকে উত্তরণে আমাদের পণ্য উপাদান আহরণে সাশ্রয়ী হতে হবে এবং লিনিয়ার ইকোনমি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। 

আমাদের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে এমন দেশগুলোর মধ্য ইইউ অন্যতম। ইইউতে টেক্সটাইল ব্যবহার তাদের ভোগের একটি ব্যাপক অংশ দখল করে আছে। তারা বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যাপক পরিমাণে আমদানিও করে থাকে। গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৫ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে বিশ্বের টেক্সটাইল উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে (ইলেন ম্যাক আরথার ফাউন্ডেশন ২০১৭) এবং ২০৩০ সালের মধ্য ক্লদিং ও ফুটওয়্যারের চাহিদা প্রায় ৬৩ শতাংশ বাড়বে। অর্থাৎ বর্তমানের ৬২ মিলিয়ন থেকে বেড়ে প্রায় ১০২ মিলিয়ন টনে দাঁড়াবে। 

ইইউতে বছরে প্রায় ৫ দশমিক ৮ মিলিয়ন টন টেক্সটাইল বাতিল করা হয় যার পরিমাণ মাথাপ্রতি প্রায় ১১ কেজি এবং প্রতি সেকেন্ডে পৃথিবীতে অন্তত একটি করে ট্রাক ভর্তি টেক্সটাইল ফেলা হয় মাটিতে (ল্যান্ডফিল) বা পুড়িয়ে (ইন্সিনারেশন) ফেলা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, ইইউতে টেক্সটাইল তাদের ভোগের প্রায় ৮১ শতাংশ দখল করে আছে। এসব কাপড় খুবই সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ব্যবহার করা হয় যার ফলে অতিরিক্ত উৎপাদন এবং ভোগের ক্ষেত্রে এগুলো বিশেষভাবে অবদান রাখছে। এগুলো ফাস্ট ফ্যাশন নামে বহুল পরিচিত। এসব বিবেচনায় ইইউ গ্রিন ডিল নামক একটি পদ্ধতিগত নিরাময়ের দিকে যাচ্ছে যাতে টেক্সটাইল উন্নয়ন জলবায়ু নিরপেক্ষ, জ্বালানি ও সম্পদের দক্ষ ব্যবহার এবং প্রকৃতির প্রতি অবিচার করে উৎপাদন করা না হয়। তাই তারা এ রকম একটা সার্কুলার অর্থনীতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে যাতে একই পণ্য রিসাইকেলের মাধ্যমে পুনরায় ব্যবহার করা যায়। এ ব্যাপারে ইইউ বেশকিছু রেগুলেশনে পরিবর্তন এনেছে এবং নতুন রেগুলেশন প্রবর্তন করতে যাচ্ছে। তাদের সার্কুলার ইকোনমি অ্যাকশন প্ল্যান (২০২০), ইইউ শিল্পনীতি কৌশল (২০২১) ইত্যাদির মাধ্যমে টেক্সটাইলের ভ্যালু চেইন বিশ্লেষণ করে একটি টেকসই সার্কুলার ইকোনমির পথে তারা রয়েছে। 

বাংলাদেশ ইইউর একটি বড় বাণিজ্য অংশীদার, বাংলাদেশের রফতানির প্রায় ৬০ ভাগেরও বেশি ইউতে যায়, কাজেই সে দেশের নীতিমালার পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্যও খুবই গুরুত্ব বহন করে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক অ্যাসোসিয়েশন এ ব্যাপারে অবগত রয়েছে এবং সে লক্ষ্যে কাজ করছে। বিল্ড সার্কুলার ইকোনমির (সিই) সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে অনেক দূর যেতে হবে। তাই এখনই কাজ শুরু করা দরকার। 

এটা বলাই বাহুল্য যে বৈশ্বিকভাবে পণ্যদ্রব্য উৎপাদন ও বাণিজ্যিক পরিষেবায় বিনিয়োগ এবং ব্যবসা বাড়ছে, যার কারণে প্রকৃতি থেকে অতিরিক্ত সম্পদ আহরণ ঘটছে। পণ্যদ্রব্যের এ অতিরিক্ত উৎপাদন ও বাণিজ্য বৃদ্ধির কারণে উপাদান আহরণও অব্যাহতভাবে বাড়ছে এবং পেতে থাকবে, ফলে যে পরিমাণ সম্পদ প্রকৃতিতে ফিরছে তা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে, এতে সম্পদের পরিমাণ হ্রাস এবং উপাদান আহরণে ক্ষয় নিঃসন্দেহে বাড়বে। বৈশ্বিক চক্রাকার অর্থনীতিতে বা সার্কেল ইকোনমি (সিই) চক্রে উপাদান ফিরে আসার পরিমাণ তাই প্রতি বছর কমছে, যার ফলে পরিবেশের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

চক্রাকার অর্থনীতি এবং রিসাইক্লিংয়ের সমাধানের মাধ্যমে পরিবেশের ওপর প্রভাব কমানো সম্ভব এবং এর মাধ্যমে ধরিত্রিক পরিসীমা কাঠামোর (প্ল্যানেটরি বাউন্ডারি ফ্রেমওয়ার্ক) সঠিক সীমার মধ্য অবস্থান সম্ভব হতে পারে যাতে সমৃদ্ধ বাস্তুতন্ত্র (ইকো সিস্টেম), পানি, ভূমি, বাতাস এবং সর্বোপরি বৈশ্বিক উষ্ণতা ২ ডিগ্রির মধ্যে সীমিত রাখতে সাহায্য করবে। সিইর গবেষণার ফল অনুযায়ী, ১৬টি রূপান্তরমূলক চক্রাকার সমাধান ধরিত্রিক পরিসীমায় ধনাত্মক প্রভাব সৃষ্টি করতে সক্ষম, যার ফলে পরিবেশ ব্যবস্থাপনার অগ্রগতি সাধন করা যেতে পারে। এগুলোর মধ্যে খাদ্য ব্যবস্থাপনায় উন্নতি, নির্মিত পরিবেশ (The built environment) ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন; উৎপাদিত পণ্য এবং ভোগপণ্য এবং যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে মনোযোগী হওয়া ইত্যাদি বিশেষভাবে দরকার।

নয়টি ধরিত্রিক পরিসীমা কাঠামো, যেমন ক্লাইমেট চেঞ্জ, জীবজগতের অখণ্ডতা রক্ষা, ভূমি ব্যবস্থার পরিবর্তন, বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার, জৈব রাসায়নিক প্রবাহ, মহাসাগরের অম্লকরণ, ওজোনস্তর ক্ষয়, ভারী মেটালসহ নভেল কেমিক্যালসের নিঃসরণ, তেজস্ক্রিয় পদার্থ ও প্লাস্টিকস এবং অন্যান্য পদার্থের ব্যবহারে প্রত্যেকটির দিকে বিশেষভাবে নজর দেয়া ধরিত্রিক পরিসীমা কাঠামোকে সঠিক রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ এবং ধরিত্রীকে বসবাসযোগ্য রাখার জন্য টেকসই উৎপাদন পদ্ধতি ও ভোগের কার্যক্রমে পরিবর্তন আনয়নে নীতিমালা গ্রহণ প্রয়োজন। 

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চক্রাকার টেক্সটাইল নীতিমালার ফারাক শনাক্ত করাও জরুরি। টেক্সটাইল বিষয়ক বাণিজ্য চুক্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন আর্থসামাজিক প্রভাব, চ্যালেঞ্জ, সুযোগ ও বাধা গবেষণার মাধ্যমে নির্ণয় করা প্রয়োজন। ইইউর নীতি পরিবর্তনের সম্ভাব্য প্রভাবের উচ্চমাত্রার প্রাক্কলন করা আবশ্যক। দেখা যায়, এরই মধ্যে ইইউ এ ব্যাপারে তাদের নীতিমালা প্রণয়নে ব্যবস্থা নিয়েছে। বাংলাদেশ ইইউর সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে সম্পর্ক বজায় রেখে আসছে। তাই তাদের সার্কেল ইকোনমি (সিই) সংশ্লিষ্ট নীতিমালা বাংলাদেশের জন্য যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে এবং এ সম্পর্কিত তথ্য আমাদের রফতানিকারকদের জানা দরকার যাতে তারা সেভাবে তৈরি হতে পারেন। 

সিইর গবেষণাপত্র মতে, চক্রাকার অর্থনীতি প্রণয়ন করলে বৈশ্বিক সম্পদ আহরণ এক-তৃতীয়াংশ হ্রাস পাবে যা পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। এ গবেষণায় চক্রাকার অর্থনীতির চার মূলনীতি শনাক্ত করা হয়েছে। যথা স্বল্প ব্যবহার, দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহার, পুনর্ব্যবহার ও পরিচ্ছন্ন রাখা। সার্কুলারিটি গ্যাপ প্রতিবেদন ২০২৩-এ যে ১৬টি সমাধান দেয়া হয়েছে তা মূলত চারটি মূল নীতির ওপর নির্ভরশীল। এগুলো হলো—স্বল্প ব্যবহার, বেশি দিন ব্যবহার, পরিষ্কার করা, পুনর্ব্যবহার। পাশাপাশি সচেতনতা তৈরিও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। 

তবে এটাও ঠিক যে সব দেশ সমান পরিমাণে ভোগ বা আয় করে না। আয় ও ভোগের ভিন্নতার জন্য বিভিন্ন দেশে কার্যক্রম প্রণয়নের ধরন ও গতি ভিন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা জানি, বিভিন্ন দেশের চাহিদা, অর্থনৈতিক অবস্থান ভিন্ন। সে ভিত্তিতে এগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়, যেমন বিল্ড, গ্রো এবং শিফট। বিল্ড ক্যাটাগরিতে যারা ধরিত্রিক পরিসীমার মধ্যে রয়েছে তারা মূলত তাদের সমাজের বেসিক প্রয়োজন মেটানোর ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক অবস্থান তৈরির প্রয়োজনে কাজ করছে। এ রকম ক্যাটাগরির লোক বিশ্বের প্রায় ৪৬ শতাংশ। তারা বর্তমানে কিছু ধরিত্রিক পরিসীমার লঙ্ঘন করছে। তারা তাদের মৌলিক চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করছে। 

অন্যদিকে ‘গ্রো’ ক্যাটাগরির দেশগুলো মধ্যম আয়ের দেশ; তারা তাদের সামাজিক চাহিদাগুলো মেটানোর জন্য কাজ করছে। এরা বিশ্বের প্রায় ৩৭ শতাংশ জনগোষ্ঠী। এ গ্রুপ দ্রুত শিল্পায়িত হওয়ার পথে, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং তাদের গ্রোয়িং মধ্যবিত্ত শ্রেণী রয়েছে। এছাড়া ‘শিফট’ দেশগুলোর দরকার হবে অনেক বেশি কাজ করার, কারণ তাদের অতিমাত্রায় পৃথিবীর সম্পদ ভোগ করার উদাহরণ রয়েছে। এদের রয়েছে বিলাসবহুল এবং খুবই আরামপ্রদ লাইফ স্টাইল। এরা ধরিত্রীর সবচেয়ে কম সংখ্যক জনগোষ্ঠী, কিন্তু ভোগ করে প্রায় ৩১ শতাংশ সম্পদ এবং ৪৩ শতাংশ এমিসন উৎপন্ন করে। এদের ধরিত্রীর সম্পদ আহরণ কমাতে হবে। ‘বিল্ড’ দেশগুলোর সংখ্যা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি, কিন্তু তারা ‘শিফট’ দেশগুলো থেকে এক-দশমাংশ কম ভোগ করে। এ তথ্য থেকে বোঝা যায়, কীভাবে ভারসাম্য রক্ষা থেকে আমরা দূরে সরে যাচ্ছি। বোঝাই যায়, উচ্চ আয়ের দেশগুলো অর্থাৎ ‘শিফট’ দেশগুলোকে তাদের উচ্চ ভোগ, উচ্চ আয় ও ভোগের কারণে দূষণের দায় নিম্ন আয়ের দেশগুলোর চেয়ে বেশি নিতে হবে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে সহযোগিতা, তথ্যের আদান-প্রদান এবং সচেতনতা প্রয়োজন।

চক্রাকার বা সার্কুলার অর্থনীতির মাধ্যমে উপাদানের ব্যবহার কমানো, পুনর্জাত ও পুনর্বণ্টন করার ফলে পৃথিবী ও সব জীবের কল্যাণ সাধন সম্ভব। বিশ্বের বিভিন্ন করপোরেশন অভিযোজন (এডাপ্টেশন) নীতির মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বাংলাদেশের করপোরেশনগুলো, বিশেষ করে যারা টেক্সটাইল ও ফ্যাশন শিল্পে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে, তাদের এখান থেকে অভিজ্ঞতা নেয়া দরকার। 

সিই তাদের এ গবেষণায় পাতাগোনিয়ার উদাহরণ দিয়েছে, সেখানে দেখানো হয়েছে যে যারা খুব ক্ষুদ্র অবস্থান থেকে পৃথিবীতে এখন একটি নামকরা ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত তারা বিভিন্ন ধরনের আউটডোর ক্লদিং তৈরি করে যা বিশেষভাবে ইকোবান্ধব। এর মধ্যে ইকোবান্ধব জ্যাকেট তৈরিতে তারা দক্ষ। ট্যাগ ইট স্মার্ট পুনর্বণ্টন ও ডিজিটাল প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও তারা অগ্রগামী। তরুণ বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের মধ্যে অনেক উদ্ভাবনী শক্তি আছে। এগুলো কাজে লাগিয়ে এমন দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে হবে যাতে বাংলাদেশকে নিয়েও এ ধরনের গল্প তৈরি হয়। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের পোশাক এবং টেক্সটাইল শিল্পের দক্ষতা ধরে রাখতে তরুণদের বিশেষভাবে উৎসাহিত করা দরকার।

এ বিষয়গুলো সামনে রেখে আমাদের বাণিজ্যপ্রবাহ পর্যালোচনা এবং কর্মসংস্থানের বেজলাইন বিশ্লেষণ করা দরকার। বাণিজ্যপ্রবাহের স্থানীয় সংশ্লিষ্টতা বোঝাও খুবই জরুরি। বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সহায়ক দেশগুলো, যেমন ইইউর সার্কুলার টেক্সটাইল ডিজাইন, নীতিমালা তাই আমাদের বিশেষভাবে জানা দরকার, যাতে আমাদের আইন-কানুন নীতিমালার মাঝে পার্থক্যগুলো আমরা সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারি। 

এ ব্যাপারে সম্ভাব্য কী কী ধরনের সামাজিক প্রভাব ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি আমাদের হতে হবে এবং এর মাধ্যমে কী ধরনের সুযোগ তৈরি হতে পারে তা আমাদের সঠিকভাবে বুঝতে হবে এবং সেভাবে প্রতিকারগুলো বেছে নিতে হবে। সিইর স্টাডিতে পার্থক্য বোঝার এবং প্রকৃতির ওপর কম প্রেসার দিয়ে কীভাবে উপাদান সংগ্রহ এবং ধরিত্রীর লাইফ সাপোর্ট পদ্ধতি রক্ষা করা যায় সে ব্যাপারে অনেক তথ্য রয়েছে। সিইর মাধ্যমে মেটেরিয়াল সংগ্রহ এবং ব্যবহার কীভাবে কমিয়ে আনা সম্ভব এবং স্থানীয় সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে আমাদের কী ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে সে বিষয়ে গবেষণা দরকার। একই সঙ্গে আমদানিকৃত কাঁচামালের ক্ষেত্রে সমানভাবে সজাগ থাকতে হবে এবং সেগুলো সংশ্লিষ্ট নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। 

সর্বোপরি ভার্জিন উপাদান সংগ্রহ এবং ব্যবহার, এমন উপাদান ব্যবহার যা বেশি দিন স্থায়ী হয়, ক্লিন পণ্য ব্যবহার, টক্সিক উপাদান ব্যবহারে সজাগ এবং একই সঙ্গে ফসিল ফুয়েল ব্যবহারের পরিবর্তে অন্য জ্বালানি ব্যবহারে সজাগ হতে হবে। এছাড়া একই পণ্য বা উপাদান যাতে বারবার ব্যবহার করা যায় সে ব্যাপারে এখন থেকেই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এসব আলোচনায় এটাই মনে হয় যে টেকসই টেক্সটাইল এবং পোশাক শিল্পের জন্য সার্কুলার ইকোনমির বাস্তবায়নে আমাদের যেমন আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে তেমনি স্থানীয় অর্থনীতির উন্নয়নে সম্পদ ব্যবহারে কোন কোন জায়গায় কীভাবে পরিবর্তনের সূচনা করতে হবে তা জেনে এবং অভিজ্ঞতা নিয়ে ভবিষ্যৎ শিল্পায়নের দিকে অগ্রসর হতে হবে।

ফেরদাউস আরা বেগম: প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও), বিল্ড

আরও