অভিমত

প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে কাস্টমস ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে অগ্রাধিকার চাই

একটি দেশের কাস্টমস ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বেসরকারি খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে বিশেষভাবে সহায়তা করে। এতে ব্যবসায় বিনিয়োগের জন্য পণ্য আনা-নেয়ায় সময় হ্রাসের ফলে ব্যয়ও হ্রাস পায়। বাংলাদেশ শিগগিরই একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। বিশ্বের প্রায় ১৫২টি উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে একই কাতারে টিকে থাকতে এরই মধ্যে সরকারি নীতিমালায় বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে,

একটি দেশের কাস্টমস ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বেসরকারি খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে বিশেষভাবে সহায়তা করে। এতে ব্যবসায় বিনিয়োগের জন্য পণ্য আনা-নেয়ায় সময় হ্রাসের ফলে ব্যয়ও হ্রাস পায়। বাংলাদেশ শিগগিরই একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। বিশ্বের প্রায় ১৫২টি উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে একই কাতারে টিকে থাকতে এরই মধ্যে সরকারি নীতিমালায় বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে, নতুন নতুন আইন ও পলিসি প্রণীত হচ্ছে। এগুলো বাস্তব অর্থে যাতে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে সঠিকভাবে সহায়তা করতে পারে, সে বিষয়ে যত্নবান হতে হবে। তাহলে বাংলাদেশ এলডিসির রোল মডেল হিসেবে যেভাবে আখ্যায়িত হয়েছিল, তেমনি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবেও তার ইমেজ তুলে ধরতে পারবে।

বাংলাদেশের ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে রফতানি ও বিনিয়োগ বিপুলভাবে বাড়ানোর পরিকল্পনা ররেছে। উল্লেখ্য, বিগত ২০২১ সালে বাংলাদেশের রফতানি ছিল ৪০ বিলিয়ন ইউএস ডলার, যা ২০২২-এ দাঁড়ায় ৫২ বিলিয়ন ইউএস ডলারে। ২০২৪-২৫-এ তা প্রায় ৭০ বিলিয়ন ডলার এবং ২০৪১-এ তা ৩০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এ বিপুল পরিমাণ রফতানির জন্য দরকার হবে প্রায় সমপরিমাণ বা তার অধিক আমদানির। অর্থাৎ বর্ডার পয়েন্টে পণ্য আনা-নেয়ার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ও কার্যক্রম অনেক বেড়ে যাবে। কাস্টম অথরিটি বা এজেন্সি ট্যারিফ আদায়, দেশের অভ্যন্তরে পণ্য ও সেবার প্রবেশ এবং বের হওয়ার বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তাই কাস্টমস কর্তৃপক্ষের দেশের এ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কাজটি আরো সুচারুভাবে সম্পাদন করতে হবে।

বর্তমানে মোট রাজস্ব আয়ের প্রায় ৩৬ শতাংশ বা এক-তৃতীয়াংশ এ খাত থেকে আসছে। তবে ক্রমান্বয়ে পরোক্ষ খাত থেকে আদায় হ্রাস করে রাজস্ব আয়ে প্রত্যক্ষ করের ওপর বেশি মনোযোগী হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। অর্থাৎ পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে আমাদের বাণিজ্য নীতি প্রণয়ন করতে হবে। কারণ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব অনেক বেড়ে যাবে, সেখানে এমএফএন নীতি প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ দেশী-বিদেশী ব্যবসায় এবং বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বৈষম্য রাখা যাবে না। এক্ষেত্রে ট্রেড ফ্যাসিলিটেশনের প্রয়োজন অনেক বেশি হবে। বর্তমানের প্রায় ২৫০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য যখন প্রায় ৫০০-৬০০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে তখন পোর্ট ও কাস্টমস ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে অনেক বেশি দক্ষতা, অটোমেশন, এআই ও ডিজিটাল টেকনোলজি ব্যবহার করতে হবে। আমরা সেভাবে প্রস্তুত আছি কিনা বা না হলে আর কী কী দরকার সে বিষয়ে কার্যকর অ্যাকশন প্ল্যান প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরি। 

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার এ প্রাক্কলন অনুযায়ী দেখা যায়, ২০৪১-এ বাংলাদেশের প্রাক্কলিত ফ্রেইট ট্রাফিক দাঁড়াবে ২৯৫ বিলিয়ন টন কিলোমিটারে, যা ২০২১ সালের (৪১ বিলিয়ন টন কিলোমিটার) চেয়ে সাত গুণ বেশি। অন্যদিকে সমুদ্রপথে কার্গো ট্রাফিক দাঁড়াবে ৪৮.২ মিলিয়ন কনটেইনার অর্থাৎ ২০২১ সালের ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন কনটেইনারের চেয়ে ১৩ গুণ বেশি। সমুদ্রপথে পণ্য চলাচল ২০২১-এ ছিল ১২২ মিলিয়ন টন, যা ২০৪১ সালে দাঁড়াবে ১ হাজার ৬১২ মিলিয়ন টনে। কাস্টমসের দক্ষতা উন্নয়নের এবং প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধমেই আমরা কেবল এসব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হব। 

বাংলাদেশ এরই মধ্যে ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন চুক্তির স্বাক্ষরকারী। কিন্তু আমরা এ চুক্তি বাস্তবায়নের দিকে তুলনীয় দেশগুলোর থেকে অনেকটাই পিছিয়ে। আমরা ক্যাটাগরি ‘এ’-এর ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করেছি ৩৪.৫ শতাংশ, ক্যাটাগরি ‘বি’-এর ক্ষেত্রে ৩৬.৬ ও ক্যাটাগরি ‘সি’-এর ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করেছি ২৯ শতাংশ। ট্রান্সপারেন্সি নোটিফিকেশন ক্ষেত্রে অ্যাকশন প্ল্যান অনুযায়ী নোটিফিকেশন দরকার হবে। এক্ষেত্রে সিঙ্গেল উইন্ডো বাস্তবায়ন, ট্রানজিট ফোকাল পয়েন্ট, ইনকোয়ারি পয়েন্ট নোটিফিকেশন প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আর্লি ওয়ার্নিংয়ের (আর্টিকেল-১৭) বিষয়টি মাথায় রেখে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। কারণ তখন আমাদের এক ক্যাটাগরি থেকে অন্য ক্যাটাগরিতে পরিবর্তনের ফ্লেক্সিবিলিটি কমে যাবে। 

এরই মধ্যে কাস্টমস আইন ১৯৬৯ কে যুগোপযোগী করে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে সমন্বয় করে নতুনভাবে কাস্টমস আইন ২০২৩ প্রণয়ন করা হয়েছে। যাতে দেশের শিল্প, রফতানি ও বিনিয়োগের প্রসার সম্ভব হয়। এছাড়া বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নীতিমালার সঙ্গে সমন্বয় রেখে আমদানি পর্যায়ে আমদানি শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক, অগ্রিম আয়কর, অগ্রিম কর ইত্যাদির ক্ষেত্রেও বেশ কিছু পরিবর্তন আনয়ন প্রয়োজন হবে। 

উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ডব্লিউটিওর বিধিমালা মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ডব্লিউসিও ও রিভাইজড কিয়োট প্রটোকলের সঙ্গে কাস্টমস আইন সামঞ্জস্যপূর্ণ করার প্রয়োজনে আইনে অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে। যা আগামী জুনে প্রস্তাবিত বাজেটের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। নতুন আইনে মোট ৪৯টি নতুন সেকশন অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইলেকট্রনিক ঘোষণা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, নন-ইনট্রুসিভ ইন্সপেকশন (এনআইআই), পোস্ট-ক্লিয়ারেন্স অডিট, অগ্রিম রুলিং, ন্যাশনাল ইনকোয়ারি পয়েন্ট এবং অ্যাডভান্সড প্যাসেঞ্জের ইনফরমেশন ইলেকট্রনিক পেমেন্ট, ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে রেকর্ড স্টোরেজ, কাস্টমস গ্যারান্টি, অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর, ইত্যাদি। অন্যদিকে বেশকিছু বিষয়কে বাদ দেয়া হয়েছে, যেমন প্রিশিপমেন্ট ইন্সপেকশন-সংক্রান্ত বিধান, শুল্ক পরিশোধ ব্যতিরেকে পণ্য খালাসের বিধান; যানবাহনে আরোহণের জন্য নিযুক্ত কাস্টমস কর্মকর্তার জন্য থাকার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। 

অর্থাৎ নতুন আইনটি যথেষ্ট আধুনিক এবং এখানে অটোমেশনকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ রকম একটি আপডেটেড আইন প্রণয়নের জন্য এনবিআর নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। তবে আইনটিতে বেশকিছু বিষয়ের দ্বিমতও রয়েছে।

এরই মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও অনুবিভাগ, বাংলাদেশ ট্রেড ও ট্যারিফ কমিশনের সহায়তায় ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসি ২০২৩ প্রণয়ন করে কিছু গাইডলাইন দিয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের বিদ্যমান ট্যারিফ ব্যবস্থায় দরকারি পরিবর্তন নিয়ে আসা যায়। ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসি ২০২৩-এ ১৮টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন এমএফএন শুল্ক প্রবর্তন, অন্যান্য শুল্ক যেমন এসডি, আরডি ইত্যাদি এবং মিনিমাম ভ্যালু ক্রমান্বয়ে তুলে দেয়া, ব্যবহারকারীভিত্তিক শুল্ক পরিহার করা, সম্পূরক শুল্ক এবং মূল্য সংযোজন করকে বাণিজ্য নিরপেক্ষ কর-এ পরিণত করা, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক কেবল জরুরি পরিস্থিতিতে আরোপ করা, রফতানিমুখী শিল্পের জন্য বন্ড ব্যবস্থার উন্নয়ন ইত্যাদি। নতুন এ আইন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো এবং তাদের কাছ থেকে সুপারিশগুলোও জানা দরকার যেন সে অনুযায়ী বিধি, ম্যানুয়াল, এসওপি ইত্যাদি তৈরি করে বেসরকারি খাতকে নতুন বিষয়গুলো সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিতে পারে। 

আন্তর্জাতিক চুক্তি ও কনভেনশন অনুযায়ী স্বীকৃত আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার ভিত্তিতে নতুন কাস্টমস আইনের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং টিএফ আর্টিকেল ৪-এ কাস্টমস কন্ট্রোলের জন্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কথা বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রতিটি সদস্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা করবেন, যাতে অযৌক্তিক বৈষম্য এবং কোনো ধরনের ডিসগাইসড (ছদ্মবেশী) সীমাবদ্ধতা না থাকে। বাংলাদেশে এরই মধ্যে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ইউনিট দ্বারা একটি কমিশনারেট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কিন্তু এটি এখনো চালু হয়নি। এক্ষেত্রে হাই-রিস্ক ও লো-রিস্ক কনসাইনমেন্ট চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে সঠিক ক্রাইটেরিয়া থাকতে হবে। এ বিষয়ে আইনে পরিষ্কার ধারণা এবং বিধান থাকা দরকার। 

টাইম রিলিজ স্টাডি (টিআরএস) ২০২২ অনুযায়ী, পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর (এইও) এবং অন্যান্য আমদানিকারকের পণ্য খালাসের সময় একই রয়েছে। এইওর পণ্য খালাসের আলাদা ব্যবস্থা না থাকায় এ সুবিধা ব্যবহারকারীরা স্বল্প সময়ে কাঁচামাল খালাস করতে পারছে না। এ ব্যপারে আইনে উল্লেখ রয়েছে, তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এইও হিসেবে যারা সুবিধা নিতে চান, তাদেরও তথ্য প্রদানে যথেষ্ট স্বচ্ছতা মেনে চলতে হবে। 

আইনের ধারা ২৭(৫)-এ উল্লেখিত ন্যূনতম মূল্য তথা ট্যারিফ ভ্যালু/ মিনিমাম ভ্যালু বিষয়টি WCO Revised Kyoto Convention-এর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হওয়া দরকার। এ ব্যাপারে কার্যক্রম শুরুও হয়েছে। অর্থাৎ ন্যূনতম মূল্য তথা ট্যারিফ ভ্যালু/ মিনিমাম ভ্যালু আগামী ২০২৬-এর মধ্যে পর্যায়ক্রমে তুলে নেয়া হবে। Asycuda সিস্টেম আপগ্রেড করা, ডব্লিউ কাস্টম ভ্যালুয়েশন মডিউল বাস্তবায়ন, বিরোধ নিষ্পত্তি মডিউল অন্তর্ভুক্তকরণের বিষয়গুলোও বাস্তবায়ন করা দরকার হবে। বর্তমানে ৩৫টি পণ্যের জন্য একটি কাস্টমস ভ্যালুয়েশন মডিউল চালু আছে। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কাস্টমসের বিভিন্ন ইউনিট এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে রিয়েল টাইম ইন্টিগ্রেশন প্রয়োজন। যেখানে Asycuda world-এর নিয়মিত আপগ্রেডেশনের দরকার হবে। 

স্ক্যানার সঠিকভাবে কাজ করার জন্য স্কেল ও স্ক্যানার ম্যাচিংয়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পণ্যের মান বজায় রাখার বিষয়ে আমদানিকারক দেশগুলোর সার্টিফিকেশনের চাহিদার ওপর গুরুত্বারোপ করা দরকার। স্থলবন্দরে নৌবাহিনীর মোতায়েন না থাকায় তারা এখানে মানসংক্রান্ত বিষয়ে উদ্যোক্তারা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। সফল দেশগুলোর উদাহরণ অনুসরণ করে সঠিক ও সময়োপযোগী ডেটা স্থানান্তর ব্যবস্থার প্রবর্তন দরকার। বিল অব এন্ট্রি জমাদানের সময় জিরো পয়েন্ট এন্ট্রির বিষয়টিরও দরকার রয়েছে। বিভিন্ন দেশের কাস্টমস কর্তৃপক্ষের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় তথ্য আদান-প্রদানের সুযোগ থাকতে হবে। 

উদ্যোক্তাদের মতে, সাপ্টা চুক্তির আওতায় রফতানি করতে সক্ষম হলেও প্রতিবেশী দেশ থেকে কাঁচামাল আমদানিতে তারা নানাবিধ জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছেন। ব্যবসা সহজীকরণের জন্য ওয়্যার হাউজিং দরকার। ইপিসি কোম্পানিগুলো বৈদেশিক মুদ্রা আয় করলেও তাদের অন্য বিদেশী ইপিসিগুলোর মতো সুবিধা প্রদান করা হয় না। স্থানীয় কোম্পানির মাধ্যমে আমাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে আইনের মধ্যে প্রাধান্য দেয়া প্রয়োজন। সর্বোপরি করদাতা ও সংগ্রাহকের মধ্যে ব্যবধান কমানোর জন্য শুল্ক কর কাঠামো মার্কেট ফ্রেন্ডলি করা এবং একই কাস্টমস স্টেশনের অধীন ওয়্যারহাউজ থেকে পণ্য স্থানান্তরের প্রক্রিয়া সহজীকরণ দরকার। জিআই তথা ভৌগোলিক নির্দেশনা সংবলিত পণ্যগুলোর ক্ষেত্রে নতুন আইনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে, যা জিআই পণ্যের আমদানি ও রফতানি প্রক্রিয়া সহজতর করবে। স্মার্ট আইনের সঙ্গে সঙ্গে স্মার্ট ব্যবস্থাপনারও গুরুত্ব রয়েছে। 

লজিস্টিকস নীতি প্রণীত হতে যাচ্ছে, যেখানে কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজীকরণের গুরুত্ব অপরিসীম। শিপিং লাইনগুলো আমদানি কনটেইনারের প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদানে ব্যর্থ হলে মাঝে মাঝে হয়রানির শিকার হতে হয়।৷হ্যান্ডলিং প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত সবার দক্ষতা বৃদ্ধি এবং রাসায়নিক দ্রব্য আমদানির ক্ষেত্রে এর মান নির্ধারণের সময় নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। সেলস কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে রফতানির বিষয়ে রফতানি এবং সরাসরি রফতানিকারক ও প্রচ্ছন্ন রফতানিকারক উভয়েরই পণ্য আমদানির সময় সিঙ্গেল স্যাম্পলে কোনো ত্রুটি থাকলে পুরো চালানের ওপর জরিমানার বিধান রয়েছে, যা উদ্যোক্তার জন্য হয়রানির বিষয়। সমস্যাগুলো কাটানোর জন্য ধাপে ধাপে আইনে সংস্কার করতে হবে। কাস্টমস কর্মকর্তাদের দক্ষতা উন্নয়ন, স্বয়ংক্রিয় কাস্টমস ব্যবস্থা চালু বাংলাদেশেও অচিরেই প্রবর্তিত হবে বলে আশা করা যায়। 

এসব দিক বিবেচনায় বিধিমালা তৈরির ব্যাপারে অচিরেই ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে আইনটির সঠিক বাস্তবায়ন করা যায়। বিভিন্ন ম্যানুয়াল এবং বিশেষ করে অডিট ম্যানুয়াল তৈরি এবং তা সর্বসমক্ষে প্রকাশ করা দরকার। এছাড়া আইনে যেসব অসামঞ্জস্য রয়েছে সেগুলো পরিবর্তন এবং কাস্টমস ভ্যালুয়েশন মডিউল গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কাস্টমস টু কাস্টমস সহযোগিতা, কাস্টমসের সঙ্গে অন্যান্য এজেন্সির সম্পর্ক সর্বোপরি ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো বাস্তবায়ন কাস্টমসের ম্যানেজমেন্টের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।

ফেরদাউস আরা বেগম: সিইও, বিল্ড—একটি পাবলিক প্রাইভেট ডায়ালগ প্লাটফর্ম 

আরও