অভিমত

কোমল পানীয় শিল্প খাতের যৌক্তিক কর-কাঠামো প্রয়োজন

সাম্প্রতিক কালে তীব্র দাবদাহ এবং মানুষের চাহিদা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে কোমল পানীয় খাত নানা ধরনের বৈচিত্র্যময় পণ্য উৎপাদন করে সাধারণের চাহিদা মিটিয়ে আসছে। এ পণ্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বোতলকৃত পানি, কোমল পানীয় বা কার্বোনেটেড বেভারেজ, এনার্জি ড্রিংক, দুগ্ধজাত পণ্য, কফি, চা, পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাদ্যপণ্য ইত্যাদি। উষ্ণ আবহাওয়া অঞ্চলের দেশ হওয়ার কারণে এ দেশে শহরাঞ্চলসহ

সাম্প্রতিক কালে তীব্র দাবদাহ এবং মানুষের চাহিদা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে কোমল পানীয় খাত নানা ধরনের বৈচিত্র্যময় পণ্য উৎপাদন করে সাধারণের চাহিদা মিটিয়ে আসছে। এ পণ্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বোতলকৃত পানি, কোমল পানীয় বা কার্বোনেটেড বেভারেজ, এনার্জি ড্রিংক, দুগ্ধজাত পণ্য, কফি, চা, পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাদ্যপণ্য ইত্যাদি। উষ্ণ আবহাওয়া অঞ্চলের দেশ হওয়ার কারণে এ দেশে শহরাঞ্চলসহ গ্রামাঞ্চলেও পানীয়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ বেভারেজ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সূত্রমতে, এ খাতে বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ২০ শতাংশ। মানুষের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আসায় এ খাতে প্রবৃদ্ধি বেড়েই চলছে। ভবিষ্যতেও বাড়বে বলে আশা করা হয়। 

বিশ্বজুড়েও এ পরিবর্তন লক্ষণীয় অর্থাৎ কার্বনেটেড বেভারেজ খাতের আকার বাড়ছে এবং এর চাহিদা দিনদিন বাড়ছে। ২০২৩ সালে বিশ্বে এ শিল্পের বাজার ছিল প্রায় ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ও বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। স্ট্যাটিস্টার তথ্যমতে, বাংলাদেশে ২০২৪ সালে এ শিল্পের বাজার শূন্য দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা মোট বৈশ্বিক বাজারের মাত্র শূন্য দশমিক ২৭ শতাংশ বাংলাদেশের। ২০২৪ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত বিশ্বে এ খাতে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। এ খাতের ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি ও সাফল্য নির্ভর করবে সহায়ক পরিবেশের মাধ্যমে নীতিগত বিধান পরিপালনের মাধ্যমে উদীয়মান বিভিন্ন পরিবেশগত, সামাজিক ও পরিচালনা পদ্ধতির নানা ইস্যুর উন্নয়নের মাধ্যমে। এ শিল্পে দেশী ও বিদেশী প্রায় ১০ বিলিয়ন টাকার বিনিয়োগ রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশন মনে করে এবং কয়েক বছর ধরে তা বাড়ছে। গ্রামে ও শহরে প্রচুর রিটেইল আউটলেট নির্মিত হয়েছে, যা নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে। নতুন নতুন উৎকর্ষ নিয়ে আসতে পারলে এ খাতে আরো বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ সম্ভব এবং একটি রফতানি বহুমুখী পণ্য হিসেবেও আবির্ভূত হতে পারে। 

কমপ্লায়েন্স ও গুণগত মান নিশ্চিত করে এ খাতকে প্রবৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হতে দিলে বিপুল পরিমাণের রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনাও তৈরি হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বেভারেজ পণ্যের চাহিদা বাড়ার আশা করা হচ্ছে। এ খাতের স্থায়িত্বের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি কর নীতি প্রয়োজন, যাতে প্রয়োজনীয় মানদণ্ড মেনে এ শিল্পের বিকাশ ঘটে। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি যৌথ প্রতিবেদন মতে, ২০০৪ সালে বাংলাদেশে বছরে মাথাপিছু কোমল পানীয় পানের হার মাত্র ২ দশমিক ৪ লিটার ছিল, যা ২০১৮ সালে ৫ দশমিক ৬ লিটারে এসে দাঁড়ায়। এ ভোগের মাত্রা বাড়ার পূর্বাভাস দেয়া হচ্ছে এবং ২০২৩ সালে এর মাত্রা ৬ দশমিক ৪ লিটারে এসে দাঁড়াবে বলে মনে করা হয়। এ থেকে পণ্যটির বিশাল চাহিদা প্রতীয়মান হয়। কিন্তু পাশাপাশি মান ও কমপ্লায়েন্স মেনে ভোক্তার সুস্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিত করাও আবশ্যক। কোমল পানীয় যে আমাদের যুব সমাজের স্বাস্থ্যহানির কারণ নয় সেটা প্রমাণ পূর্বক এর ইউটিলিটির ব্যাপারে উদ্যোক্তাদের জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। 

দেশে এ খাতে মোট বিনিয়োগের ১০ শতাংশ বিদেশী বিনিয়োগ যা স্থানীয় কোম্পানিগুলোর প্রযুক্তি স্থানান্তরে সহায়তা করেছে। এ খাতে কোকা-কোলা অগ্রগামী যাদের হাত ধরেই বাংলাদেশে কোমল পানীয়ের প্রচলন হয়। বাংলাদেশে কোকা-কোলা তিনটি ভিন্ন ইউনিটের মাধ্যমে কাজ করে। এগুলো হলো—কোকা-কোলা বাংলাদেশ লিমিটেড, ইন্টারন্যাশনাল বেভারেজেস প্রাইভেট লিমিটেড ও আব্দুল মোনেম প্রাইভেট গ্রুপ। কোমল পানীয়তে ৪২-৪৫ শতাংশ বাজার হিস্যা নিয়ে কোকা-কোলা এ খাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। কোকা-কোলার বোতলজাত বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজের, যেমন প্রাণ ডেইরি (৫ শতাংশ) এবং আব্দুল মোনেমের (৪৫ শতাংশ) মাধ্যমে করা হয়। চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা এবং বরিশাল অঞ্চলে এদের আউটলেট রয়েছে যেখানে বোতলজাত করা হচ্ছে। অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে রয়েছে ট্রান্সকম গ্রুপের পেপসিকো, তার পরই তৃতীয় স্থানে আছে আকিজ গ্রুপ যাদের মার্কেট শেয়ার ৯ শতাংশ। 

কোকা-কোলা বাংলাদেশে প্রায় ২২ হাজারের মতো কর্মসংস্থান তৈরি করেছে বলে জানা যায়। সব মিলিয়ে তাদের অবদান দেশের শূন্য শতাংশ ১১ শতাংশ জিডিপির সমতুল্য। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের বাজারে আরো বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে, তবে সেজন্য যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত অন্তত ১০ বছরের একটি করনীতি দরকার। 

অতীতে কার্বোনেটেড বেভারেজ কোম্পানিগুলোকে তাদের মোট আয়ের ওপর শূন্য শতাংশ ৬০ শতাংশ কর আরোপ করা হতো, যা অন্যান্য শিল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। বর্তমানে এ শিল্পের জন্য কর জটিল হয়েছে। ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়া আয়কর আইন ২০২৩-এর ১৬৩ নম্বর ধারায় এ খাতে মোট আয়ের ওপর ন্যূনতম ৫ শতাংশ করারোপ করা হয়। পরবর্তী সময়ে আয়কর আইন-০৮/২০২৩ এসআরও-২৫৯-এর মাধ্যমে এ হার ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। এ হার প্রায় ৪০০ শতাংশ বৃদ্ধির সমান। ফলে কার্বোনেটেড বেভারেজ কোম্পানিগুলোর পণ্যের দাম বেড়ে ভোক্তার ওপর প্রভাব ফেলেছে। পাশাপাশি বিক্রয় ও মুনাফা হ্রাস পাওয়ায় সরকারের রাজস্বের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলেছে। 

এ অবস্থা পণ্যের মান হ্রাসের কারণ হতে পারে, ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। আরোপিত ন্যূনতম করের হার বিবেচনায় নিলে নীতির বৈষম্যের চিত্র ফুটে ওঠে। ন্যূনতম কর বেভারেজ খাতের ওপরই কেবল ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল। অন্যদিকে সিগারেট, তামাকজাত পণ্য এবং এ ধরনের অন্যান্য পণ্যের ন্যূনতম কর তুলনামূলকভাবে অনেক কম। সর্বোপরি কোমল পানীয়ের ওপর নিট করহার বর্তমানে প্রায় ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ (এসডি ২৫ শতাংশ + ৩ শতাংশ টার্নওভার ট্যাক্স + সিডি ১০ শতাংশ + এটি ৫ শতাংশ + এআইটি ৫ শতাংশ) হারে আরোপিত, যা আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর তুলনায় বেশি, যেমন ভারতে এ খাতে করের আপাতন ৪০ শতাংশ, নেপালে ৩৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ ও শ্রীলংকায় ২৯ দশমিক ২ শতাংশ। অতিরিক্ত কর বিনিয়োগ পরিবেশের ওপর প্রভাব বিশেষ করে বৈদেশিক বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে পারে। 

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে ভিয়েতনামে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ বা এফডিআই আকর্ষিত হয়েছে প্রায় ৩৬ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ তাদের বার্ষিক বৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় ৩২ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশে এফডিআই বার্ষিক ১৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের জিডিপির আকার যথাক্রমে ৪৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ও ৪৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, অর্থাৎ প্রায় কাছাকাছি হওয়া সত্ত্বেও ভিয়েতনামে ২০২৩ সালে এফডিআই ক্রমাগত বেড়েছে। বিনিয়োগ বাস্তবায়ন একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ফসল, অন্যান্য নীতির সঙ্গে করনীতির ধারাবাহিকতা একটি বিশেষ প্রয়োজনীয় অংশ, বিশেষ করে বিদেশী বিনিয়োগ ধরে রাখার জন্য। 

বেভারেজ শিল্প কাঁচামাল আমদানির ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। সে কারণে কার্বোনেটেড ড্রিংকসের জন্য নানা স্তরে কর প্রদান করা দরকার হয়, যেমন আমদানি স্তরে, সরবরাহ স্তরে এবং সর্বশেষে লাভ হোক বা না হোক, বিক্রির ওপরও কর প্রদান করতে হয়। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে কার্বোনেটেড কোমল পানীয় একটি অতিমাত্রায় চিনিযুক্ত পণ্য বলে ধরে নেয়া হয়। তবে তুলনায় দেখা যায়, যুব জনগোষ্ঠী এমন অনেক অধিক চিনিযুক্ত পণ্য ভোগ করে যা আমরা তেমন খেয়াল করছি না। যেমন প্রতি ১০০ মিলি জুসে গড়ে ১৩ গ্রাম এবং প্রতি ১০০ গ্রাম বিস্কুটে প্রায় ১১ গ্রাম, মধু, চকোলেট, জেলিতে ৩০ শতাংশের বেশি চিনি আছে। অন্যদিকে কোমল পানীয়তে চিনির মাত্রা ১১ শতাংশ। অন্যান্য চিনিযুক্ত পণ্যের সঙ্গে তুলনা করলে স্থানীয় সম্পূরক শুল্ক কার্বোনেটেড বেভারেজের জন্য বেশি। যেমন জুস ও ফ্রুট ড্রিংকসে এ শুল্কের হার ১০ শতাংশ। অন্যদিকে কার্বোনেটেড বেভারেজ খাতে এ হার ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ ভোক্তাদের অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার থাকে বিরত রাখা বাড়তি করারোপের উল্লেখযোগ্য কারণ নয়। 

তবে বাস্তবে যা হয়েছে, কার্বোনেটেড বেভারেজ শিল্প করের আপাতন খুচরা বিক্রেতাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে, ফলে এ পণ্যের খুচরা মূল্য বেড়ে গেছে এবং মূল্য অনেক ক্ষেত্রে তা ভোক্তাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। ফলে চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে এবং সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে। মূল্য সংবেদনশীল (ইলাস্টিক) পণ্যে তাৎক্ষণিক কর বৃদ্ধি করলে ভোক্তার চাহিদা কমে যায়। এর ফলে পণ্যের বিক্রয় হ্রাস পায় এবং সরকার তার কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়। 

কার্বোনেটেড বেভারেজকে বিলাসপণ্য মনে হলেও মানুষের খাদ্যাভ্যাসের জন্য এটি একটি প্রয়োজনীয় পণ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে মূল্যবৃদ্ধির কারণে রাজস্ব আয় হ্রাস পেয়েছে। সরকার যখন কর-জিডিপি রেশিও বৃদ্ধির প্রচেষ্টা করছে তখন এ খাত থেকে ব্যাপক হারে তা হ্রাস পেয়েছে। হিসাবে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বরে চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে ছয় মাসে রাজস্ব আয় ১০০ কোটি টাকার বেশি হ্রাস পেয়েছে। কর কাঠামো যৌক্তিকীকরণের মাধ্যমে এ খাত থেকে বার্ষিক হারে অতিরিক্ত ১৪০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করা সম্ভব বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করে। 

কার্বোনেটেড বেভারেজ শিল্প খাত বাংলাদেশে আরো ভালো অবস্থানে যেতে পারে যা বর্তমান সময়ে অধিক শুল্ক এবং করের কারণে স্তিমিত হয়ে আসছে। ফলে কর্মসংস্থান হ্রাস পেতে পারে যা মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে এবং এ খাতসংশ্লিষ্ট নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারগুলোর জন্য দুর্ভোগ নেমে আসবে। প্রতিকূল করনীতি এ শিল্পের বিনিয়োগ, প্রসার ও উন্নয়নে বিরূপ প্রভাব ফেলে এ খাতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শ্লথ করে দিচ্ছে যা এর সাপ্লাই চেনের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য খাতকেও প্রভাবিত করবে। 

এ শিল্প অন্যান্য অনেক খাতের সঙ্গে পারস্পরিকভাবে সম্পর্কিত যেমন কৃষি খাত। চিনি শিল্পে কোনো একসময় বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছিল, কিন্তু বর্তমানে আমদানিনির্ভরতা ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। বোতলজাত করার ক্ষেত্রে কোমল পানীয় স্থানীয় প্লাস্টিক, মিনারেল ওয়াটার খাতকে সহায়তা করছে। এ খাতের স্থবিরতা ডমিনো প্রভাবের মাধ্যমে সংযুক্ত খাতগুলোয় নেতিবাচক প্রভাব বর্ধিত করবে। আনুষ্ঠানিক বাজার সংকুচিত করে, বরং অনৈতিকভাবে পণ্যপ্রবাহ বাড়বে ও নকল বেভারেজের বিক্রি বেড়ে যাবে। ফলে স্বাভাবিক ব্যবসায় শুধু ধসই নামবে না পাশাপাশি সরকারও রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে। আপাতদৃষ্টিতে শুল্ক বৃদ্ধি সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করবে মনে হলেও দীর্ঘমেয়াদে সরকারের রাজস্ব হ্রাস পাবে, যেহেতু উচ্চমূল্যের কারণে ভোগ কমে যাবে। উল্লেখ্য, এ খাতে উচ্চ করহার নির্ধারণের পর কর রাজস্বের আহরণ কমেছে, দেখা যায় ২০২২-২৩ সালে (জুলাই-জুন) এ খাত থেকে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা, যা ২০২৩-২৪ (জুলাই-মার্চ) সময়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬৪ কোটি টাকা। গড় রাজস্ব আয় হ্রাস প্রায় ৩৩ শতাংশের বেশি। এ অবস্থা চলমান থাকলে এর প্রভাব আরো বাড়বে। 

এ প্রেক্ষাপটে শিল্পটির জন্য একটি দীর্ঘমেয়দি কর কৌশল প্রণয়ন করা আবশ্যক। ফলে পূর্ণভাবে অবহিত হয়ে স্থানীয় ও বিদেশী বিনিয়োগকারীরা তাদের সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। বর্তমানে এ খাতের করপোরেট আয়কর ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ন্যূনতম করহার ৩ শতাংশের চেয়ে অত্যধিক বেশি। সম্পূরক শুল্ক ও আমদানি শুল্ক কর্তন ও ন্যূনতম কর ১ শতাংশে নামিয়ে আনলে কোম্পানিগুলোর বিক্রির পরিমাণ বাড়বে। এ লাভের মাধ্যমে তারা ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ করপোরেট আয়কর প্রদানে সক্ষম হবে। করের হার কমিয়ে বিক্রি বাড়লে সরকারের রাজস্বও বাড়বে। 

গত নয় মাসের তথ্যে দেখা যায়, এ খাতে বিক্রি কমে যাওয়ায় কোম্পানির আয় কমে গেছে, যা ৩ শতাংশ টার্নওভার কর ও ২৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির জন্য ঘটেছে। এ খাত থেকে তাই মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক সমজাতীয় পণ্যের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োগ করা প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্ট শিল্প খাত মনে করে। পাশাপাশি করহার যৌক্তিকীকরণ এ খাতের প্রবৃদ্ধির জন্য আবশ্যক। বর্তমানের তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে স্বস্তির একটি বড় উপায় কোমল পানীয়, যা সবার জন্য গ্রহণযোগ্য করে তুলতে একটি সঠিক কর কাঠামো সবার প্রত্যশা। 

ফেরদাউস আরা বেগম: সিইও, বিল্ড, একটি পাবলিক-প্রাইভেট ডায়ালগ প্লাটফর্ম

আরও