আইসিটি খাত

রফতানিতে লক্ষ্য ৫০০ কোটি ডলার সর্বোচ্চ অর্জন ১৪০ কোটি

সপ্তম ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের পণ্য রফতানি ৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল সরকার।

সপ্তম অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের পণ্য রফতানি ৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল সরকার। রফতানি বৃদ্ধি এবং খাতকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তুলতে বিভিন্ন সময় নেয়া হয় নানা পদক্ষেপও। কিন্তু এর পরও রফতানিতে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি আসেনি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের পর সমাপ্ত অর্থবছর পর্যন্ত এক বছরে সর্বোচ্চ রফতানি হয়েছে ১৪০ কোটি ডলারের আইসিটি পণ্য সেবা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সফটওয়্যার সেবা খাতে দক্ষ জনবল তৈরি করা সম্ভব হয়নি। প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম হালনাগাদ করা হয় না। খাতসংশ্লিষ্টদের দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিলেও তা প্রাথমিক স্তরের। এজন্য ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়ার যৌথ উদ্যোগের প্রয়োজন। না হলে খাতের রফতানি বাড়ানো সম্ভব নয়।

সরকারের ২০১৬ সালে নেয়া সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০২১ সালের মধ্যে আইসিটি খাতের পণ্য রফতানি ৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নেয়া হয়। সময়ে ২০ লাখ আইসিটি পেশাজীবী তৈরির পরিকল্পনাও হাতে নেয় সরকার। এরপর ২০২০ সালে নেয়া অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়ও ২০২৫ সালের মধ্যে খাতে ৫০০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসের (বেসিস) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৮০ কোটি ডলারের আইসিটি পণ্য রফতানি করা হয়। এরপর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১০০ কোটি, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১২৫ কোটি এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৪০ কোটি, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৩০ কোটি এবং ২০২১-২২ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৪০ কোটি ডলার করে আইসিটি পণ্য রফতানি হয়।

বেসিসের সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, ‘লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণই শেষ কথা নয়। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পর এর জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া এবং কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও কর্মপরিকল্পনা করতে পারিনি। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সরকার, একাডেমিয়া এবং ইন্ডাস্ট্রির যথাযথ সহযোগিতা প্রয়োজন। সরকার নীতি নির্ধারণ করবে। একাডেমিয়া সেই নীতি নির্ধারণ এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে সহযোগিতা করবে এবং ইন্ডাস্ট্রি তার প্রতিফলন ঘটাবে। এর বাইরে কাজ করতে গেলে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হবে না।

খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, রফতানির বিপরীতে প্রণোদনা দেয়ার শর্ত রয়েছে। প্রণোদনা দেয়া হলেও তা পেতে উদ্যোক্তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। প্রণোদনার অর্থ পেতে কখনো কখনো এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয়। বড় বিনিয়োগকারী না হলে ততদিন পর্যন্ত একজন উদ্যোক্তার জন্য টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। রফতানি বাড়াতে হলে সফটওয়্যার খাতকে আরো বেশি সমৃদ্ধ করতে হবে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করতে হবে এবং সব বাধা দূর করতে হবে। এছাড়া সফটওয়্যার কাস্টমাইজেশন সেবার ওপর ভ্যাট আরোপও রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে জানান তারা।

জানতে চাইলে সদ্য সাবেক ডাক টেলিযোগাযোগমন্ত্রী . মোস্তাফা জব্বার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সফটওয়্যার সেবা খাতের রফতানি বৃদ্ধির জন্য ১৯৯৮-৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশীয় সফটওয়্যার সেবা খাতের ওপর থেকে সব ধরনের কর ভ্যাট প্রত্যাহার করেন। এতদিন কর-ভ্যাট না থাকলেও হঠাৎ করে এবার কেন খাতের ওপর শতাংশ কর ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে? সিদ্ধান্তের কারণে খাতটির বিকাশ রফতানি থমকে যাবে। এর জন্য আমি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত খাতের ওপর আরোপিত সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মতামত দেয়নি। এভাবে চলতে থাকলে খাতে ভালো কোনো উদ্যোক্তাও আসবে না, রফতানিও হবে না।

আরও