বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে ১৭টি আগামপত্রের (বিল অব এন্ট্রি) বিপরীতে আমদানি করা ৬০ হাজার ৫০০ টন অপরিশোধিত চিনি খোলাবাজারে বিক্রি করেছে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রি। আইন অনুযায়ী, শুল্ক পরিশোধ ছাড়া পণ্য বাজারজাত করা সম্পূর্ণ অবৈধ। যদিও চলতি বছরের শুরুর দিকে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রি শুল্ককর পরিশোধ না করেই পণ্য বাজারে ছেড়ে মুনাফা তুলে নেয়। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ২৪৬ কোটি ২৬ লাখ টাকার দাবিনামা চূড়ান্ত করেছে চট্টগ্রামের কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। পাশাপাশি তিন লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।
জানা গেছে, আমদানি করা অপরিশোধিত চিনির চালানের বন্ডিং মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও এস আলম সুগার ইন্ডাস্ট্রি প্রযোজ্য শুল্ককরাদি পরিশোধ না করার অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে আদেশ দিয়েছে চট্টগ্রামের কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। সংস্থাটির পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রি ২০২৩-এর ধারা ১১৯-এর অধীন প্রণীত ওয়্যারহাউজে পণ্য সংরক্ষণের মেয়াদ নির্ধারণ বিধিমালা অনুযায়ী ১৭টি বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে আমদানি করা ৬০ হাজার ৫০০ টন র সুগারের বন্ডিং মেয়াদ পূর্তির আগে মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করেনি। তাই কাস্টমস আইন ২০২৩-এর ধারা ১২৬ (গ) অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কাঁচামালের ওপর প্রযোজ্য শুল্ককরাদি বাবদ এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিকে ২৪৬ কোটি ২৬ লাখ টাকার দাবিনামা চূড়ান্ত করা হলো। একই সঙ্গে কাস্টমস আইন ২০২৩-এর ধারা ১৭১-এর উপধারা অনুযায়ী ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট, চট্টগ্রামের কমিশনার মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, আরোপিত জরিমানা ও প্রযোজ্য শুল্ককর বাবদ মোট ২৪৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা এবং রাজস্বের ওপর শুল্ককর প্রদেয় তারিখের মধ্যে পরিশোধিত না হলে পরিশোধযোগ্য বা প্রদেয় হওয়ার সর্বশেষ তারিখ থেকে আরম্ভ করে পরিশোধিত হওয়ার তারিখ পর্যন্ত মেয়াদের জন্য বার্ষিক ১০ শতাংশ সাধারণ হারে সুদ পরিশোধ করতে হবে।
বন্ড কমিশনারেটের তথ্য অনুযায়ী, তেল ও চিনি পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো বন্ড সুবিধার (হোম কনজাম্পশন) অধীনে আমদানি শুল্ক পরিশোধ না করেই বন্দর থেকে পণ্য বা কাঁচামাল ছাড় করে নিজস্ব গুদাম বা সংরক্ষণাগারে রাখতে পারে। তবে শর্ত থাকে পণ্য বাজারজাত করার আগেই সব শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। যদিও এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রি আমদানি করা ৬০ হাজার ৫০০ টন অপরিশোধিত চিনির বিপরীতে কোনো ধরনের শুল্ককর পরিশোধ না করেই তা বাজারজাত করেছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার মোহাম্মদ শফি উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কাস্টমস বিধিমালা অনুযায়ী ওয়্যারহাউজে পণ্য সংরক্ষণের মেয়াদ নির্ধারণ করা আছে। এ বন্ডিং মেয়াদ পূর্তির আগে মেয়াদ বৃদ্ধির আবশ্যকতাও রয়েছে। এর ব্যত্যয় ঘটলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।’ এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে এস আলম গ্রুপের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটের তথ্যানুযায়ী, এস আলম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ মিলেছে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের বিরুদ্ধে। ২০০৪ সালে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার ইছানগরে প্রতিষ্ঠিত দেশের সর্ববৃহৎ চিনি আমদানিকারক ও পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানটি সরকারের প্রাপ্য ৭৫৫ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। ২০২১ সালের শুরু থেকে পাঁচ বছরের ক্রয়-বিক্রয় ও উৎপাদনের ওপর নিরীক্ষা শেষে ভ্যাট কমিশনারেটের তদন্তে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এস আলম শিল্প গ্রুপের মালিকানাধীন এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিলটি ব্রাজিলসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে শোধন করে। এর দৈনিক পরিশোধনক্ষমতা চার হাজার টন।
কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের সাবেক কমিশনার সৈয়দ মুসফিকুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরীক্ষা চলমান কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই পরিচালনা করা হয়েছে। বেচাকেনা ও উৎপাদনের ওপর করা এ নিরীক্ষার একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করা হয়েছে।’