চীনের আমদানি বন্ধ: বিপর্যয়ে পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি খাত

বিশ্ব অর্থনীতির শীর্ষ দুই দেশের বাণিজ্যযুদ্ধ আরো বিধ্বংসী হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হিসেবে হাজির হয়েছে।

চীন আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য ক্রয় বন্ধ ঘোষণা করেছে। ফলে মার্কিন কৃষকদের হাতছাড়া হলো তাদের অন্যতম বৃহৎ এক ক্রেতা। শস্য ও পণ্যের দাম নিয়ে এমনিতেই চলতি বছর সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল দেশটি। তদুপরি চীনের সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রের এ খাত বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চীনের এ সিদ্ধান্তে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) এবং জন ডিয়ারের মতো কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ কোম্পানিটি দেশটির কৃষি ব্যবসায় সরাসরি জড়িত।

বিরাজমান শুল্কের কারণে দেশটির চলতি শস্য মৌসুম এমনিতেই শ্লথ হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে দেশটি চীনে কোনো ধরনের কৃষিপণ্য রফতানিতে ব্যর্থ হলে সেটি দেশটির কৃষিবাজার ও দামের ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে জানিয়েছেন মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও কৃষিনীতি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্যাট ওয়েস্টহফ। নিজেদের কৃষিবাজার থেকে চীনের সম্পূর্ণ সরে দাঁড়ানো যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি খাতের বড় ক্ষতি করবে বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।

২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীন ৫৯০ কোটি ডলার সমমূল্যের কৃষিপণ্য কিনেছে বলে জানিয়েছে দেশটির পরিসংখ্যান। চীন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ সয়াবিন ক্রয়কারী দেশ। গত বছর চীন দেশটির রফতানীকৃত পণ্যের প্রায় ৬০ শতাংশ সয়াবিন কিনেছে। গত বছরের জুলাইয়ে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর পর এরই মধ্যে সয়াবিনের দাম ৯ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছেন ওয়েস্টহফ।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের মে মাস পর্যন্ত চীন মোট সয়াবিন আমদানি করেছে ২ কোটি ৭৭ লাখ টন। ২০১৮-১৯ সালের একই সময়ে দেশটির সয়াবিন আমদানি প্রায় ৭০ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৭০ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবেদন। চীন সয়াবিন আমদানি সম্পূর্ণ বন্ধ করার আগে যুক্তরাষ্ট্রের আরো ৪০০ কোটি ডলারের সয়াবিন রফতানি কমতে পারে বলে জানান ওয়েস্টহফ।

শুল্কারোপের ফলে দেশটির অন্যান্য শস্যের বাজারও সাধারণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা। এদিকে সয়াবিনের চাহিদা কমায় কৃষকরা ভুট্টার মতো অন্যান্য ফসল বেশি পরিমাণে চাষ করছেন। তবে ভুট্টার সরবরাহ বাড়ায় শস্যটির দামও কমেছে।

চীনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক অংশীদার হারানো দেশটির জন্য ভয়াবহ সংকট তৈরি করেছে বলে জানিয়েছেন আইওয়া রাজ্যের সাবেক লেফটেন্যান্ট গভর্নমেন্ট প্যাটি জাজ। চীনের এ সিদ্ধান্তের ফলে দেশটির কৃষকরাও হঠাৎ করে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যায় পড়বেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

কানাডা, মেক্সিকো ও জাপানের পর চীন যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্থ বৃহৎ কৃষিপণ্য আমদানিকারী দেশ। এদিকে কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে দেশটির একটি বাণিজ্য চুক্তির কথা থাকলেও তা সম্প্রতি ঝুলে পড়ার বিষয়টিও জোর দিয়ে উল্লেখ করেছেন প্যাটি জাজ। নতুন শুল্কারোপের ফলে দেশটির আর্থিক সংকট আরো ঘনীভূত হবে বলে জানিয়েছেন আইওয়া রাজ্যের সাবেক কৃষি সচিব প্যাটি জাজ।

যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক জিডিপি ২০ ট্রিলিয়ন ডলার। জিডিপির ক্ষুদ্র একটি অংশ কৃষিজাত পণ্য রফতানি থেকে এলেও দেশটির কৃষকরা চীনের সিদ্ধান্তে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে জানিয়েছেন জাজ। তাছাড়া দেশটির কৃষকরা আরো যে সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, সেগুলো আরো তীব্র হবে বলেও জানান তিনি।

            সূত্র: সিএনবিসি

আরও