নতুন বছরে স্থিতি ফিরছে ভোগ্যপণ্যের বাজারে

রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত শুরুর পর বাংলাদেশে ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে।

রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত শুরুর পর বাংলাদেশে ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। বছরের মাঝামাঝিতে দেশে ডলার সংকট, ঋণপত্র (এলসি) খোলার প্রবণতা কমে যাওয়ায় আমদানিও কমে যায় উল্লেখযোগ্য হারে। এতে করে অস্থিরতা আরো প্রকট আকার ধারণ করে। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় এসব সংকট কিছুটা শিথিল হতে শুরু করেছে। ডলার সংকট, ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা চলমান থাকলেও পণ্য আমদানির ধারা অব্যাহত আছে। ফলে নতুন বছরের শুরুতেই প্রধান প্রধান ভোগ্যপণ্যের বাজারে স্থিতিশীলতা পরিলক্ষিত হয়েছে।

সদ্য সমাপ্ত বছরে চাল, গম, ভোজ্যতেল, চিনি, ডালসহ বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ কম থাকায় দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী। এক বছরের ব্যবধানে ভোগ্যপণ্যের দাম অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় ৫০-১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায় প্রধান প্রধান পাইকারি বাজারগুলোয়। তবে এক মাস ধরে অতি নিত্যপণ্যের আমদানিতে অগ্রাধিকার বিশ্ববাজারে নিম্নমুখিতার কারণে দেশের বাজারে স্থিতি ফিরতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে প্রায় সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম মণপ্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) ৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।

দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ। আমদানিকৃত উৎপাদিত ভোগ্যপণ্যের ৪০-৫০ শতাংশই লেনদেন হয় বাজারে। গত কয়েক সপ্তাহে খাতুনগঞ্জে ভোগ্যপণ্যের দামে অস্থিরতা তুলনামূলকভাবে কমেছে। দাম বৃদ্ধি কিংবা কমার ক্ষেত্রে পার্থক্য কমে এসেছে মণপ্রতি ২০-৩০ টাকার মধ্যে।

বিষয়ে জানতে চাইলে দ্য চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, বৈশ্বিক সংকটের কারণে ২০২২ সালে অস্থিতিশীল ছিল ভোগ্যপণ্যের বাজার। কিন্তু সম্প্রতি বাজারে স্থিতি ফিরছে। ডলার সংকট, ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা চলমান থাকলেও পণ্য আমদানির ধারা অব্যাহত আছে। সবাই আমদানিতে সুযোগ না পেলেও ব্যাংক-ব্যবসায়ী সুসম্পর্ক বিশ্বাসের অবস্থান থেকে চাহিদা অনুপাতে আমদানি হচ্ছে।

খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানের দেয়া তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে মণপ্রতি পাম অয়েল লেনদেন হচ্ছে হাজার ৭০০ থেকে হাজার ৮০০ টাকায়, যা কয়েক মাস আগেও হাজার টাকার কাছাকাছি ছিল। বিদায়ী বছর পাম অয়েলের দাম দেশের ইতিহাসে রেকর্ড হাজার টাকায় উঠেছিল। তাছাড়া বর্তমানে সুপার পাম অয়েল লেনদেন হচ্ছে হাজার থেকে হাজার ১০০ টাকায়। সয়াবিন লেনদেন হচ্ছে হাজার ৭০০ থেকে হাজার ৮০০ টাকায়। গত বছরের মাঝামাঝিতে মণপ্রতি দাম হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।

এদিকে নিত্য ভোগ্যপণ্যের মধ্যে চিনির দাম ২০২২ সালের শেষ প্রান্তে মণপ্রতি হাজার ৪০০ থেকে হাজার ৫০০ টাকায় উঠলেও বর্তমানে তা কমে হাজার ৮০০ থেকে হাজার ৮৫০ টাকায় নেমেছে। অন্যদিকে গমের দাম রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে হাজার ৩০০ হাজার টাকায় উঠলেও বর্তমানে মণপ্রতি কমেছে ১০০-১৫০ টাকা। সব ধরনের ডালের দাম মণপ্রতি ১৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। নতুন মৌসুমের চাল ওঠায় চালের দামও কিছুটা কমতির দিকে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

খাতুনগঞ্জের চাক্তাই চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম বণিক বার্তাকে বলেন, চালের বাজার নির্ভর করে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদন সরবরাহের ওপর। নতুন মৌসুমের চালের উত্তোলন শুরু হওয়ায় বাজারে দাম কিছুটা কমেছে। তবে কৃষকের কাছ থেকে সরকারিভাবে চাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে ন্যায্য দাম না দিলে এবং করপোরেট দৌরাত্ম্য না কমালে চালের বাজারে অস্থিরতা কমানো সম্ভব নয়।

আরও