সিপিডির সেমিনারে বাণিজ্য উপদেষ্টা

অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প ও অর্থ পাচার অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি করেছে

বিগত সরকারের সময়ে দেশের সমগ্র অর্থনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন হয়েছিল। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প ও অর্থ পাচার দেশের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি করেছে।

বিগত সরকারের সময়ে দেশের সমগ্র অর্থনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন হয়েছিল। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প ও অর্থ পাচার দেশের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি করেছে। রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে গতকাল গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। ‘অর্থনীতির পুনর্বিন্যাস বিষয়ে টাস্কফোর্সের সুপারিশ’ শীর্ষক এই সম্মেলনে আরো বক্তব্য দেন সিপিডির চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টাস্কফোর্সের সদস্য সেলিম রায়হান এবং ড. মোহাম্মদ এ রাজ্জাক। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘‌বিগত সময়ে দেশের সমগ্র অর্থনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন হয়েছিল। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প ও অর্থ পাচার এ দেশের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি করেছে। ব্যাংক খাত ও নানা অবকাঠামো নির্মাণে দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে।’ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণ ও শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়াতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘‌আমাদের বেশির ভাগ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আসে। শ্রম উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, পণ্যের উৎপাদন ব্যয় হ্রাস এবং দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে রফতানি বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে।’

যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত ও ইউরোপ একে অন্যের বিরুদ্ধে নতুন নতুন শুল্কারোপ উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহান বলেন, ‘‌যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর হয়তো ৩০ শতাংশ শুল্ক দিচ্ছে। আবার কারো সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে এটা ১০ শতাংশ হতে পারে। তাই এখন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কোনো বিকল্প নেই।’

চীনে শিল্পায়ন শুরু হয়েছিল স্থানীয় বাজারকে কেন্দ্র করে, তাই দেশের স্থানীয় বাজারকে গুরুত্ব দেয়ার তাগিদ দেন তিনি। দেশের স্টিল, সিমেন্ট ও চামড়া খাত এখন বড় হচ্ছে। এসব খাতেও গুরুত্ব প্রদানের আহ্বান জানান এ অর্থনীতিবিদ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‌দেশের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণভাবে পুনর্বিন্যাস করতে হবে। বিগত সময়ে দেশে পেট্রোনাইজ ইকোনমি তৈরি করা হয়েছিল। বাজার অর্থনীতি থেকে আমরা অনেক দূরে সরে গিয়েছিলাম। মুক্ত অর্থনীতির কথা বলা হলেও অনেক ব্যারিয়ার তৈরি করা হয়েছিল। আমরা রেগুলেশন কমিয়ে এনে সরকারের ভূমিকা কমিয়ে আনব। সিরিয়াস ডি-রেগুলেশনের পথে হাঁটব আমরা। অর্থনীতিকে লিবারেল করা হবে। এতে ব্যবসা সহজ হবে এবং ব্যবসায়ীদের হেনস্তা কমে আসবে। এটা নিয়ে আমরা দলের মধ্যেও আলাপ করেছি।’

সেমিনারে সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘‌এখানে পোশাক খাত ছাড় অন্য কোনো খাতের লবিং পাওয়ার নেই। এ খাতের ব্যবসায়ীরা রাষ্ট্রকে কব্জা করে রেখেছিল। চমড়া খাতে এত বছরেও বর্জ্য শোধনাগার হলো না। এটা পোশাক খাতে হলে ঠিকই এক বছরের মধ্যে হয়ে যেত।’

শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা না গেলে কোনো অর্জনই টেকসই হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এর আগে মূল প্রবন্ধে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘‌দেশের ৭৩ শতাংশ রফতানি আয় এলডিসি হিসেবে প্রাপ্ত শুল্ক সুবিধার ওপর নির্ভরশীল। গ্র্যাজুয়েশনের পর ভারতে ২০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। যেখানে আমাদের ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি রফতানি রয়েছে। জাপানে তা ৮ শতাংশ, চীনে ৬ শতাংশ এবং ইউরোপে ১১ শতাংশ। তাই এসব দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়ভাবে সুবিধা পাওয়ার জন্য চুক্তি করতে হবে।’

রফতানিতে ভর্তুকিনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে সিপিডির ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘‌উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রতিযোগী সক্ষম হতে হবে। পুরোপুরি আমদানি লিবারেল হওয়া যাবে না। যুক্তরাষ্ট্র নিজেই এখন শুল্কারোপ করছে। কোথায় লিবারেল বিশ্ব? এলডিসির জন্য আমাদের দ্বিপক্ষীয় বণিজ্য চুক্তি বাড়াতে হবে। ভিয়েতনাম ৫২টি চুক্তি করেছে। আমাদের মাত্র একটি, ভুটানের সঙ্গে। জাপানের সঙ্গে আলোচনা চলছে, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কেএএস মুরশিদ বলেন, ‘একসময় দেশে প্রচুর বিদেশী ওষুধ কোম্পানি ছিল। তারা এ খাত কুক্ষিগত করে রেখেছিল। পরবর্তী সময়ে আইনের মাধ্যমে দেশীয় কোম্পানির জন্য স্পেস তৈরি করা হয়। এর পর থেকে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো করা শুরু করেছে। তাই সবসময় দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা একটি বড় ফ্যাক্টর ছিল। আর রফতানি খাত সবসময় বাজার সুবিধার ওপর নির্ভরশীল ছিল, এটা নিয়ে ভাবতে হবে।’

আরও