অনিষ্পন্ন বীমা দাবির তালিকা প্রকাশ করে না অধিকাংশ কোম্পানি

গ্রাহকের অনিষ্পন্ন বীমা দাবির তালিকা প্রকাশে বাধ্যবাধকতা রয়েছে দেশের বীমা কোম্পানিগুলোর।

গ্রাহকের অনিষ্পন্ন বীমা দাবির তালিকা প্রকাশে বাধ্যবাধকতা রয়েছে দেশের বীমা কোম্পানিগুলোর। কোম্পানিগুলোর নিজস্ব ওয়েবসাইটে তালিকা প্রকাশের জন্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) নির্দেশনা থাকলেও তা মানে না অধিকাংশ কোম্পানি। দেশে সাধারণ বীমা এবং জীবন বীমা নামে দুই ধরনের বীমা কোম্পানির মধ্যে জীবন বীমা কোম্পানির মধ্যে এ প্রবণতা বেশি। তালিকা প্রকাশ না করায় কঠিন কোনো পদক্ষেপও নেয় না আইডিআরএ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তালিকা প্রকাশ করা হলে একদিকে যেমন কোম্পানিগুলো জবাবদিহিতার আওতায় আসত। অন্যদিকে গ্রাহকরাও পলিসি খোলার আগে কোম্পানিগুলো সম্পর্কে জানতে পারতেন। এতে কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছতা নিশ্চিত হতো। 

আইডিআরএ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে অনিষ্পন্ন বীমা দাবির তালিকা সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ওয়েবসাইটে প্রকাশের নির্দেশনা দেয় আইডিআরএ। সে সময় ঘটা করে কোম্পানিগুলো অনিষ্পন্ন বীমা দাবির তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। আইডিআরএ কর্তৃপক্ষও ওয়েবসাইটগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে পরিদর্শন করে। কিন্তু তিন বছরের ব্যবধানে তথ্য উন্মুক্তকরণের এ পদ্ধতি বন্ধ হয়ে গেছে। এখন হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানি এ তথ্য নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। অন্যদের প্রকাশ করতে দেখা যায় না। বিশেষ করে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোকে এ তালিকা প্রকাশ করতে দেখা গেছে খুব কম। 

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে আইডিআরএর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘‌কোম্পানিগুলোর প্রতি তিন মাস অন্তর রিপোর্ট দেয়ার কথা। তারা নিয়ম অনুযায়ী প্রতি তিন মাস অন্তর আমাদের বীমা দাবির রিপোর্ট জমা দেয়। কিন্তু তারা ওয়েবসাইটে গ্রাহকের জন্য উন্মুক্ত করে কিনা তা আমাদের জানা নেই।’

জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যায়, হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানির ওয়েবসাইটে অনিষ্পন্ন ও নিষ্পন্ন বীমা দাবির তথ্য রয়েছে। কিছু কোম্পানির ওয়েবসাইটে পুরনো বীমা দাবির তথ্য রয়েছে। অধিকাংশ কোম্পানির ওয়েবসাইটে বীমা দাবির কোনো তথ্যই নেই। আলফা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ওয়েবসাইটে নিষ্পন্ন বীমা দাবির তথ্য দেখা যায়। তবে অনিষ্পন্ন বীমা দাবি সম্পর্কিত কোনো তথ্য নেই। ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ওয়েবসাইটে বীমা দাবির বিষয়ে জানতে হলে শুধু সংশ্লিষ্ট গ্রাহক নিজস্ব রেজিস্ট্রেশন ব্যবহার করে নিজস্ব বীমা দাবি দেখতে পারবেন। কোম্পানির পুরো চিত্র দেখার সুযোগ নেই। পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডেও অনিষ্পন্ন বীমা দাবির সাইট দেয়া থাকলেও তা খালি দেখা যায়। বেঙ্গল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বীমা দাবি সর্বশেষ আপডেট করা হয়েছে ২০২২ সালে। এরপর আর কোনো বীমা দাবির তথ্য কোম্পানিটির ওয়েবসাইটে নেই। রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ওয়েবসাইটে সর্বশেষ ২০১৯ সালের বীমা দাবির তথ্য দেয়া আছে। তারপরের তিন বছরের কোনো তথ্য নেই। সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ওয়েবসাইটে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সময়ের তথ্য রয়েছে। ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি সর্বশেষ ২০১৭ সালের তথ্য আপডেট করেছে, বেস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড সর্বশেষ ২০১৯ সালের তথ্য আপডেট করেছে। হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ২০২০ সাল পর্যন্ত আপডেট দিয়েছে। এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স নিষ্পত্তিকৃত বীমা দাবির তথ্য দিলেও অনিষ্পত্তিকৃত বীমা দাবির কোনো তথ্য দেয়নি। 

অন্যদিকে মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ওয়েবসাইটে সর্বশেষ বীমা দাবির তথ্য রয়েছে। 

সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোতে দেখা যায় কিছুটা ভিন্ন চিত্র। অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডসহ আরো বেশকিছু কোম্পানির ওয়েবসাইটে নিষ্পন্ন ও অনিষ্পন্ন বীমা দাবির তথ্য দেয়া হয়েছে। আবার সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ওয়েবসাইটে ২০১৯ পর্যন্ত, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের ২০২০ সাল পর্যন্ত তথ্য আপডেট করা হয়েছে।

ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক উত্তম কুমার সাধু বলেন, ‘প্রতি তিন মাস পর পর আমাদের তথ্য দেয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। আমরা তথ্য দিই। একই সঙ্গে ওয়েবসাইটেও আমাদের তথ্য প্রকাশ করি। অনেকেই সেটি করেন না।’

না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‌কোনো কোম্পানির কাছে এক মাসে ১০০ ফাইল পেন্ডিং হওয়ার কথা। কিন্তু তার বিপরীতে একই সময়ে ২৫০-৩০০ ফাইল পেন্ডিং হওয়া কোম্পানির জন্য নেতিবাচক। এতগুলো ফাইল পেন্ডিং হলে কোম্পানিগুলো আর বীমা দাবির তথ্য প্রকাশ করে না।’

আরও