চলতি বছর ১০ কোটি কেজি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা

তিন মাসে সোয়া ৪ কোটি কেজি চা উৎপাদন

মৌসুমের শেষ দিকে অনুকূল আবহাওয়ায় দেশে চা উৎপাদনে বড় সাফল্য এসেছে।

মৌসুমের শেষ দিকে অনুকূল আবহাওয়ায় দেশে চা উৎপাদনে বড় সাফল্য এসেছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে উৎপাদন হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ চা। উৎপাদনের ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি মৌসুমে ১০ কোটি কেজিরও বেশি চা উৎপাদনের আশা করছেন বাগান মালিকরা।

চা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই, আগস্ট সেপ্টেম্বরে দেশের ১৬৮টি চা বাগানে কোটি ২৫ লাখ ৩২ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। ২০২২ সালের একই সময়ে উৎপাদন হয়েছিল কোটি ৬৭ লাখ ৬৯ হাজার কেজি এবং ২০২১ সালে কোটি ৯৩ লাখ ৩২ হাজার কেজি। উৎপাদনের ধারা অব্যাহত থাকলে বছর শেষে উৎপাদনের পরিমাণ ১০ কোটি ২০ লাখ কেজি ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন চা-সংশ্লিষ্টরা। তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশে চায়ের বার্ষিক চাহিদা প্রায় সাড়ে নয় কোটি কেজি। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে উদ্বৃত্ত চা দেশের রফতানি আয় বাড়াতে সহায়ক হবে বলে প্রত্যাশা।

চা বোর্ডের তথ্যমতে, ২০২২ সালে জনপ্রিয় পানীয় পণ্যটির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ কোটি কেজি। কিন্তু কাছাকাছি গিয়েও ওই লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি বাগানগুলো। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার কেজি চা। তবে ২০২১ সালে কোটি ৭৭ লাখ ৮০ হাজার কেজি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল বাগানগুলো। ওই বছর দেশে কোটি ৬৫ লাখ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। চলতি বছরের নয় মাসে পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে কোটি ৯০ লাখ ৮৪ হাজার কেজি। ফলে বাকি তিন মাসের উৎপাদন মিলিয়ে ১০ কোটি কেজি চা উৎপাদন সময়ের ব্যাপার বলে মনে করছেন চা বোর্ড কর্মকর্তারা।

এদিকে চাহিদার চেয়েও সরবরাহ বেশি হওয়ায় চায়ের নিলাম বাজারগুলোয় দাম নিম্নমুখী। সর্বশেষ নিলামে কেজিপ্রতি চায়ের গড় দাম ছিল ১৯০ টাকা। যদিও বাগান মালিকরা বলছেন, চা উৎপাদনে বাগানগুলোর কস্ট অব প্রডাক্টশন (সিওপি) ২০০ টাকারও বেশি। এতে বাড়তি চা উৎপাদনের ফলে দেশের সিংহভাগ বাগানই লোকসানে চা বিক্রি করছে। শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, জ্বালানিসহ উৎপাদনসংশ্লিষ্ট সবকিছুর উচ্চ ব্যয়ের কারণে অনেক বাগান মালিক উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারেন। পরিস্থিতিকে চা শিল্পের জন্য আশঙ্কাজনক হিসেবে বর্ণনা করেছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক নিলাম বাজারের তথ্যমতে, ১৩ নভেম্বর ২৯তম নিলামে বিক্রির জন্য চা প্রস্তাব করা হয়েছিল ৪১ লাখ ৮৪ হাজার কেজি। যদিও নিলামে ১৯০ টাকা গড় দামে চা বিক্রি হয়েছে মাত্র ৬১ শতাংশ। আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় ৩০তম নিলামে ৪৪ লাখ ৫৮ হাজার চা বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে, যা আগের বছরের একই নিলামের চেয়ে প্রায় ১০ লাখ কেজি বেশি। বিপুল পরিমাণ চা অবিক্রীত থাকায় বাড়তি উৎপাদনের সময়ে চায়ের দাম আরো কমে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন বাগান মালিকরা।

উদালিয়া চা বাগানের কো-অর্ডিনেটর জাহাঙ্গীর আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বছরের শেষ দিকে পর্যাপ্ত বৃষ্টির ফলে চা উৎপাদন বেড়েছে। আজও বিভিন্ন বাগান এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে। ফলে বছর রেকর্ড চা উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে চায়ের উৎপাদন বাড়লেও দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে না। কারণে বাগানগুলো লোকসানে পড়েছে। পরিস্থিতিতে জাহাঙ্গীর আলম মনে করেন, নিলামে চায়ের ভালো দাম পেতে ভালোমানের চা উৎপাদন জরুরি। এখন উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি চায়ের গুণগত মান বাড়ানোর দিকেই নজর দিতে হবে। তবে এখন নিলামে চায়ের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া গেলে অনেক বাগান মালিকই আগ্রহ হারাবেন।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিলামে প্রতি কেজি চায়ের গড় দাম ১৯০ টাকার মধ্যে হলেও কিছু বাগান মালিক বেশি দামেই চা বিক্রি করছেন। মূলত চাহিদাসম্পন্ন চা উৎপাদনের কারণে নিলামেও ভালো দাম পাচ্ছেন তারা। দেশের ১৬৮টি বাগানের মধ্যে মাত্র ৩০-৪০টি বাগান কেজিপ্রতি ২০০-৩৫০ টাকা কেজি দামেও চা বিক্রি করতে পারছে। পরিমাণের চেয়ে গুণগত মানের চা উৎপাদনের কারণে ভালো দাম পাচ্ছেন তারা। এক্ষেত্রে দেশের চা খাতকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি ভালো মান নিশ্চিত করা জরুরি বলে জানিয়েছেন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো।

চা-বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশন বা বাংলাদেশীয় চা সংসদের সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘নিয়মিত পরিমিত বৃষ্টিপাতে চা উৎপাদন ভালো হয়। কিন্তু বছরের শুরুতে খরা থাকায় উৎপাদন প্রত্যাশা নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল। তবে গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় বাগানগুলোয় আগের বছরের চেয়ে বেশি চা উৎপাদন হয়েছে। যদিও ফলন বেশি হওয়ায় নিলামে বাগান মালিকরা ভালো দাম পাননি। তবে গুণগত মানসম্পন্ন চা উৎপাদনকারী বাগানগুলো ন্যায্য দাম পেয়েছে। উৎপাদনের ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের চা খাত স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে।

আরও