জ্বালানি তেলের চাহিদায় মন্দার শঙ্কা

বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র-চীন। বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে দুই দেশ। বিশ্বের শীর্ষ দুই দেশের এ বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। হুমকির মুখে পড়েছে জ্বালানি তেলের বাজার। বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে সৃষ্ট অনিশ্চিত অর্থনীতিতে বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের চাহিদার প্রবৃদ্ধি কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ)। শুক্রবার সংস্থাটি ২০১৯ ও ২০২০ সালে জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। খবর এএফপি।

প্যারিসভিত্তিক সংস্থাটি তাদের মাসিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগের মধ্য রয়েছে তারা। যার প্রভাবে বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের চাহিদা কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ অবস্থায় সংস্থাটি নতুন করে জ্বালানি তেলের চাহিদার প্রাক্কলন করেছে। প্রাক্কলন অনুযায়ী, চলতি বছর জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা দৈনিক ১১ লাখ ব্যারেল কমে যাবে। যেখানে এর আগের প্রাক্কলনে ১ লাখ ব্যারেল কমে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিল সংস্থাটি।

২০২০ সালে বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের চাহিদা দিনে ৫০ হাজার ব্যারেল কমে যাওয়ার প্রাক্কলন করেছিল আইইএ। যেখান থেকে এখন সরে এসে তারা বলছে, এ সময় জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা দৈনিক ১৩ লাখ ব্যারেল কমে যাবে।

বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দা নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে আইইএ বলছে, চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধের সমাধানের কোনো লক্ষণ নেই। এ অবস্থায় চীনা পণ্যের ওপর আরো শুল্ক আরোপের ঘোষণায় বাণিজ্যযুদ্ধ সহসাই কাটছে না। যার ফলে বৈশ্বিক অর্থ ব্যবস্থা আরো অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে।

সম্প্রতি চীনের ৩০ হাজার কোটি ডলারের পণ্যের ওপর আরো ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এছাড়া চীনকে মুদ্রা কারসাজিকার হিসেবেও চিহ্নিত করেছে মার্কিন প্রশাসন। যার প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে। বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যে নতুন করে দুই দেশ মুদ্রাযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যার প্রভাব পড়েছে জ্বালানি তেলের বাজারে।

আইইএ তাদের প্রতিবেদনে বলছে, সংশোধিত প্রাক্কলনে জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধির পরিবর্তে পতনের মুখে যাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক বাজারের ভঙ্গুর অবস্থার চিত্র তুলে ধরছে। এমনকি বছরের প্রথমার্ধে জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা শ্লথগতি তৈরি হয়েছে।

এছাড়া জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক উত্তোলন কমিয়ে এনেছে। যার ফলে জ্বালানি পণ্যটির বাজার ভারসাম্য এখন কিছুটা সংকোচনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

সংস্থাটি বলছে, উপসাগরীয় অঞ্চলে জ্বালানি তেলের ট্যাংকার আটকের বিষয়টিও নজর রাখছে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ধারাবাহিক উত্তেজনার মধ্য গত সপ্তাহে আরো একটি বিদেশী তেলবাহী ট্যাংকার আটক করেছে ওপেকের সদস্য দেশ ইরান। এ নিয়ে এক মাসেরও কম সময়ের মধ্য তৃতীয় কোনো বিদেশী জ্বালানি তেলবাহী ট্যাংকার আটক করল ইরান। এ নিয়ে উপসাগরীয় এলাকা এখন রীতিমতো ট্যাংকার যুদ্ধের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থিত হরমুজ প্রণালি। ইরানের সীমানাসংলগ্ন হরমুজ প্রণালি পারস্য ও ওমান উপসাগরকে সংযুক্ত করেছে। জ্বালানি তেলের এক-পঞ্চমাংশ হরমুজ প্রণালি দিয়ে পরিবহন করা হয়। আর তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) বৈশ্বিক রফতানি বাণিজ্যের অর্ধেকের বেশি এ রুট দিয়ে পরিবহন করা হয়।

কিন্তু পরমাণুবিষয়ক বিরোধের জের ধরে ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। যার ফলে জ্বালানি তেল পরিবহনের এ রুটে উত্তেজনা চরমে ওঠে। ইরান এ রুট দিয়ে জ্বালানি তেল পরিবহন বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেয়। এরই মধ্য হরমুজ প্রণালির কাছে দুটি বিদেশী জ্বালানি তেলবাহী ট্যাংকারে হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর জ্বালানি তেলের এ রুটে ছড়িয়ে পড়া উত্তেজনা ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। যার প্রভাব পড়েছে এখন জ্বালানি তেলের বাজারে।

আইইএ তাদের প্রতিবেদনে বলছে, ইরানের কর্মকর্তাদের ওপর এবং জ্বালানি তেল আমদানিকারক একটি চীনা প্রতিষ্ঠানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া উপসাগরীয় অঞ্চলে তেলবাহী জাহাজ আটক হচ্ছে। এর ফলে এ অঞ্চলে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা আরো বাড়ছে।

একদিকে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ। অন্যদিকে ইরান-মার্কিন উত্তেজনায় অস্থিতিশীল হরমুজ প্রণালি জ্বালানি তেলের বাজারকে যে হুমকির মুখোমুখি করেছে, সেটি সহসাই কাটছে না। এ আশঙ্কায় জ্বালানি তেলের নিরাপত্তার বিষয়ে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে আইইএ।

আরও