দেশের বাজারে কিছুদিন আগেও গমের দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী। তবে সম্প্রতি বৈশ্বিক সরবরাহ সংকট কমে আসায় গমের দাম নিম্নমুখী হয়েছে। এতে স্থিতিশীলতায় ফিরেছে আটা-ময়দার বাজার।

দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক মাসের ব্যবধানে গমের দাম কমেছে মণপ্রতি ১০০ টাকা। বৃহস্পতিবার প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) ভালো মানের কানাডিয়ান গম বেচাকেনা হয়েছে ১ হাজার ৪২০ থেকে ১ হাজার ৪৩০ টাকায়। অন্যদিকে রাশিয়া ও ভারত থেকে আমদানি হওয়া প্রতি মণ গম ১ হাজার ৩২০ টাকায় বেচাকেনা  হয়েছে।

গমের দাম কমায় আটা ও ময়দা কেজিপ্রতি অন্তত ৩ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। তবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, খোলা আটার দাম কমলেও প্যাকেটজাত আটা-ময়দার দাম আশানুরূপ কমেনি। বর্তমানে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। আর প্যাকেটজাত প্রতি কেজি আটা ৪৫ টাকায় ও  ময়দা ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা আরো জানান, খোলা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আটা-ময়দার দাম নিয়মিত ওঠানামা করলেও প্যাকেটজাত আটা-ময়দার দাম পরিবর্তন হতে সময় লাগে। তবে গমের বাজার ধারাবাহিকভাবে কমে এলে প্যাকেটজাত আটা-ময়দার বাজারও নিম্নমুখী হতে পারে।

গমের শীর্ষ রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম রাশিয়া ও ইউক্রেন। ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বের ২৮-৩০ শতাংশ গমের উৎস এ দুই দেশ। গমের বাজার গত বছরের পুরো সময় জুড়ে অস্থিতিশীল থাকার মূল কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধের কারণে কৃষ্ণ সাগর হয়ে এ দুই দেশে উৎপাদিত গমের সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছে। এ কারণে পণ্যটির ঘাটতিতে পড়েছে পূর্ব ইউরোপ। ঘাটতি ও সরবরাহে বিঘ্নের কারণে বাংলাদেশের মতো আমদানিকারক দেশে সেই সময় দাম বেড়ে যায়, যার প্রভাব পড়ে আটা-ময়দার দামে। তবে পরবর্তী সময়ে এ ঘাটতি এড়াতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা, আমেরিকা গম উৎপাদন বাড়ায়। সরবরাহ সংকট কমে যাওয়ায় বাংলাদেশেও গমের দাম কমে আটা-ময়দার বাজার নিম্নমুখী হয়েছে।

এ বিষয়ে খাতুনগঞ্জের এক ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে গমের বাজার কয়েক বছর ধরে ঊর্ধ্বমুখী ছিল। চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্ববাজারে গমের দাম কিছুটা কমেছে। আমদানি মূল্য কমে যাওয়ায় দেশের বাজারে আটা-ময়দার দাম স্থিতিশীলতায় ফিরছে। এমনকি কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন দামে বেচাকেনা হচ্ছে।

চট্টগ্রামের কালুরঘাট এলাকার মেসার্স মালতী এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক সঞ্জয় দে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘চালের বাজার নিয়মিত বাড়লেও এক মাস ধরে আটা-ময়দার দাম নিম্নমুখী। চালের বাজার বৃদ্ধির সময়ে আটা-ময়দার দাম স্থিতিশীল থাকায় খুচরা বিক্রেতা ও সাধারণ ভোক্তারা কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছেন।’