ইউরোপ

কাজ ও ঘুমের ভারসাম্যে শীর্ষে নেদারল্যান্ডস, সবচেয়ে পিছিয়ে তুরস্ক

সপ্তাহে চার কর্মদিবস নিয়ে কয়েক মাস ধরে ইউরোপে বেশ আলোচনা চলছে। তিনদিন সাপ্তাহিক ছুটির পেছনে একাধিক যুক্তি দিচ্ছে পক্ষগুলো।

সপ্তাহে চার কর্মদিবস নিয়ে কয়েক মাস ধরে ইউরোপে বেশ আলোচনা চলছে। তিনদিন সাপ্তাহিক ছুটির পেছনে একাধিক যুক্তি দিচ্ছে পক্ষগুলো। অনেকেই বলছেন, কর্মঘণ্টা কমে এলে উৎপাদনশীলতা বাড়ার পাশাপাশি ঘুমও বাড়বে, যা ওই অঞ্চলের জনস্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। খবর ইউরো নিউজ।

বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি গবেষণা করেছে ম্যাট্রেস নেক্সটডে নামের বিছানা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। তারা দেখেছে, যে কর্মীরা সপ্তাহে পাঁচদিনের পরিবর্তে চারদিন কাজ করেন, তারা গড়ে প্রতি রাতে ১ ঘণ্টা অতিরিক্ত ঘুমাতে পারেন।

ইউরোপীয়রা রাতে গড়ে প্রায় ৭ ঘণ্টা ঘুমান। কাজের সঙ্গে জীবনের ভারসাম্য, বাতাসের গুণমান ও দিনের আলোর ওপর নির্ভর করে তাদের ঘুমের পরিমাণ।

৩৬টি ইউরোপীয় দেশ থেকে সংগৃহীত ডাটা বিশ্লেষণ করা হয়েছে গবেষণায়। এতে দেখা যাচ্ছে, কাজ ও ঘুমের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষাকারী শীর্ষ দেশ নেদারল্যান্ডস। অন্যদিকে ভারসাম্য নেই এমন দেশের অন্যতম তুরস্ক।

এ বিষয়ে ম্যাট্রেস নেক্সটডের সিইও মার্টিন সিলি বলেন, ‘কাজ ও ঘুমের ভারসাম্য উৎপাদনশীল এবং সুস্থ থাকার চাবিকাঠি। ঘুম ত্যাগ করা কাজের জন্য লোভনীয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো পর্যাপ্ত বিশ্রাম ছাড়া আমাদের মনোযোগ, সৃজনশীলতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’

তার মতে, মানসম্মত ঘুম জীবনীশক্তি বাড়ায়। এর মাধ্যমে কোনো কাজে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা সহজ হয়। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদে সাফল্য ও সুস্থতার জন্য ভালো ঘুম হওয়া অপরিহার্য।

২০১৬ সালে সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালের করা গবেষণা অনুসারে, ডাচরা দিনে গড়ে ৮ ঘণ্টা ৫ মিনিট ঘুমান। ইউরোপের মধ্যে নেদারল্যান্ডসে কর্মঘণ্টা সবচেয়ে কম, সপ্তাহে গড়ে ৩২ ঘণ্টা ১২ মিনিট। পরামর্শক সংস্থা গ্যালাপের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, এ দুটি কারণে চাকরি সন্তুষ্টি ও আত্মবিশ্বাসের হারে বিশ্বের অন্যতম দেশ নেদারল্যান্ডস। এর আগে রয়েছে ওই অঞ্চলের তিন দেশ ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক ও আইসল্যান্ড। প্রতিবেদন অনুসারে, সন্তুষ্টির কারণে কোম্পানিগুলো কর্মীদের বেশিদিন ধরে রাখতে পারেন। ফলে পুনরায় নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের খরচ সাশ্রয় হয়।

গ্যালাপ বলছে, নেদারল্যান্ডসের কর্মীরা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম চাপে থাকেন। এর বিপরীতে গ্রিস, মাল্টা ও সাইপ্রাসে চাপ সবচেয়ে বেশি।

অবশ্য বাসার বাইরে গিয়ে সকালের কফি পান এবং যতটা সম্ভব দিনের আলোয় কাজের অভ্যাস ডাচদের জীবনযাপনে একটি ছন্দ এনে দিয়েছে বলে জানান বিশ্লেষকরা, যা ভালো ঘুম ও উৎপাদনশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।

অস্ট্রিয়ায়ও কাজের-ঘুমের ভারসাম্য উচ্চ মানের, যেখানে কর্মীরা সপ্তাহে গড়ে ৩৩ ঘণ্টা ৩৬ মিনিট কাজ করেন। মেডইউনি ভিয়েনের মতে, অস্ট্রিয়ানরা গড়ে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান। দেশটিতে শুধু কর্মসপ্তাহ অপেক্ষাকৃত কমই নয়, ওভারটাইমও যথেষ্ট সীমিত। দৃঢ় সরকারি নীতি ও শ্রম আইন এবং কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনা বা ভাগাভাগির সুযোগ রয়েছে এখানে।

নরওয়েতে একজন কর্মী সপ্তাহে গড়ে ৩৩ ঘণ্টা ৫৪ মিনিট কাজ করেন। দেশটির বাসিন্দারা খোলা আবহাওয়ায় সময় কাটানো, স্কিইং, হাইকিং ও কায়াকিংয়ের মতো বিনোদনকে প্রাধান্য দেন।

ইউরোপে কাজ ও ঘুমের মধ্যে ভারসাম্যহীনতার উদাহরণ তুরস্ক, সার্বিয়া ও মন্টেনিগ্রো। তুরস্কের কর্মীরা ইউরোপে সবচেয়ে বেশি ঘণ্টা কাজ করে, এর সাপ্তাহিক গড় ৪৪ ঘণ্টা ১২ মিনিট। এ কারণে যথেষ্ট বিশ্রাম ও শিথিল সময়ের অভাবে ভোগেন তারা। দ্বিতীয় দীর্ঘতম কর্মসপ্তাহ মন্টেনিগ্রোতে, এখানকার বাসিন্দাদের গড়ে ৪৩ ঘণ্টা ২৪ মিনিট কাজ করেন। এর পেছনে রয়েছে বলকান অঞ্চলের নিজস্ব কর্মসংস্কৃতি, যেখানে জ্যেষ্ঠতা ও শ্রেণীবদ্ধ কাঠামোকে গুরুত্ব দেয়া হয়। দেশটিতে ছুটির দিনেও কাজ অন্তর্ভুক্ত থাকে। এ কারণে কাজ ও ঘুমের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়।

আরও