পাম অয়েল

শুল্ক কমানোর সংবাদে দাম কমেছে মণপ্রতি ১৫০ টাকা

আগামীতে উৎপাদিত পাম অয়েলের বাড়তি ৫ শতাংশ বায়ো ডিজেল উৎপাদনে ব্যবহার করবে ইন্দোনেশিয়া। এ খবরে দুই মাসের ব্যবধানে বিশ্বব্যাপী পাম অয়েলের বুকিং দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। দেশের বাজারে টানা দাম বাড়ার পর নিত্য এ ভোজ্যতেলের দাম কমতে শুরু করেছে। দুদিনের ব্যবধানে পাম অয়েলের দাম কমেছে মণে ১৫০ টাকা। সরবরাহ সংকটের মধ্যেও শুল্ক কমানোর খবরে দাম কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশীয় রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পাম অয়েলের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছিল। ৫-১০ অক্টোবর পাইকারি পর্যায়ে মণপ্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) পাম অয়েলের (সরবরাহ আদেশ বা এসও পর্যায়ে) দাম ছিল ৪ হাজার ৮০০ টাকার আশপাশে। প্রায় দুই মাসের ব্যবধানে পাম অয়েলের বাজার বেড়ে মণপ্রতি ৫ হাজার ৯০০ টাকায় উঠে যায়। অর্থাৎ এ সময় পাম অয়েলের দাম বেড়েছে মণে ১ হাজার ১০০ বা কেজিপ্রতি ২৯ টাকা। তবে গত দুইদিন সরবরাহ চাপের কারণে পাম অয়েলের দাম মণপ্রতি ১৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।

বাজার সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববাজারে বুকিং দর কেজিপ্রতি ১৮ টাকার মতো বাড়লেও দেশের বাজারে বেড়েছে প্রায় ২৯ টাকা। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি ভোজ্যতেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক সংকটের কারণে বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। দেশের ভোজ্যতেলের বাজার মুষ্টিমেয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকায় এক বা দুটি প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। এমনকি চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় একটি ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় নিত্যপণ্যটির দামে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

পাইকারি বাজারটির ট্রেডিং প্রতিষ্ঠান ও ব্রোকারদের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, গতকাল বিকাল পর্যন্ত মণপ্রতি পাম অয়েল লেনদেন হয়েছে ৫ হাজার ৭৫০ টাকায়। বৃহস্পতিবার পাম অয়েলের বুকিং সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৯০০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। যদিও দাম নিয়ন্ত্রণে ভোজ্যতেল ও চিনির শুল্ক কমানোর পরিকল্পনা করছে সরকার, এমন খবরে দাম কমতে থাকে। শনিবার দামের ওঠানামার পর শেষ পর্যন্ত ৫ হাজার ৮০০ টাকায় বাজার শেষ হয়। গতকাল সকালে পাম অয়েলের ক্রেতা কমে যাওয়ায় বাড়তি সরবরাহ চাপে পাইকারি বাজারে দাম আরো ৫০ টাকা কমে যায়। সরবরাহ স্বাভাবিক হলে পাম অয়েলের বাজার স্থিতিশীলতায় ফিরবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের মেসার্স আরএসডি ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিশ্ববাজারে পাম অয়েলের বুকিং বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারে দাম বেড়েছে। তবে বিশ্ববাজারে যে হারে দাম বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি বেড়েছে দেশের পাইকারি বাজারগুলোয়। চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ মিল থেকে পাম অয়েল ও সয়াবিনের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাজারে কৃত্রিম সংকট দেখা দেয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দেশের শীর্ষ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সরবরাহ বাড়ানো উচিত।’ এক্ষেত্রে সরকারি পর্যায়ে শুল্ক কমানোর পাশাপাশি আমদানি প্রক্রিয়া স্বাভাবিক করতে উদ্যোগ নেয়া দরকার বলে মনে করছেন তিনি।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে ভোজ্যতেলের মোট চাহিদা ২৫-২৮ লাখ টন। এর ৯০ শতাংশ আমদানি হয় বিশ্ববাজার থেকে। আবার ভোজ্যতেলের মধ্যে ৭০ শতাংশ পাম অয়েলের ব্যবহার হয়। পাম অয়েল আমদানি হয় মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে। অন্যদিকে ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনা থেকে সয়াবিন আমদানি হয়। দেশে নিত্য ভোগ্যপণ্যের মধ্যে প্রভাব বিস্তারকারী ভোজ্যতেলের দাম অন্যান্য পণ্যের ওপরও প্রভাব ফেলে। কয়েক মাস স্থিতিশীলতায় থাকলেও বৈশ্বিক মূল্যবৃদ্ধি ও দেশীয় পরিস্থিতির কারণে ভোজ্যতেলের বাজার নতুন করে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। প্রতি বছর রমজান ও কোরবানির আগে বাজারে বাড়তি চাহিদার কারণে দাম বাড়লেও এবার ভিন্ন সময়ে পণ্যটির দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

ট্রেডিংইকোনমিকসডটকমের তথ্যমতে, চলতি বছরের ৫ আগস্ট বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত পাম অয়েলের বুকিং ছিল ৩ হাজার ৬৮০ দশমিক ৬০ রিঙ্গিত। ১১ সেপ্টেম্বর বুকিং বেড়ে উঠে যায় ৩ হাজার ৭২৫ দশমিক ৯০ রিঙ্গিতে। ৩০ সেপ্টেম্বর বুকিং দর আরো বেড়ে ৪ হাজার রিঙ্গিত ছাড়িয়ে যায়। যদিও সর্বশেষ ৬ অক্টোবর পাম অয়েলের বুকিং দর রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে ৪ হাজার ৩১০ দশমিক ৩ রিঙ্গিত হয়ে গেছে। অর্থাৎ দুই মাসের ব্যবধানে অপরিশোধিত পাম অয়েলের আন্তর্জাতিক দাম বেড়েছে প্রায় ৬৩০ রিঙ্গিত। পাশাপাশি বৈশ্বিক সংকটে টনপ্রতি শিপিং চার্জ ১০-১৫ ডলার পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ায় দেশে ভোজ্যতেলের দামে প্রভাব ফেলেছে। পাম অয়েলের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারে পাইকারিতে সয়াবিনের দামও মণপ্রতি ২০০-২৫০ টাকা বেড়ে ৬ হাজার ৩০০ টাকায় উঠে গেছে।

আরও