সংকট কাটিয়ে রফতানিমুখী খুলনাঞ্চলের কাঁকড়া

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও করোনাভাইরাসের প্রভাবসহ নানা সংকট কাটিয়ে আবারো রফতানিমুখী খুলনাঞ্চলের কাঁকড়া শিল্প। কাঁকড়া চাষ লাভজনক হওয়ায় অনেকে চিংড়ি চাষ ছেড়ে কাঁকড়া চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। কাঁকড়ার চাহিদাও বাড়ছে বিদেশের বাজারে। বাগেরহাটে খাঁচায়, ঘেরে চাষ ও প্রাকৃতিক উৎস থেকে আহরণকৃত কাঁকড়া বিদেশে রফতানি করা হয়। ফলে বৈদেশিক মুদ্রাও আয় হচ্ছে বেশি।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও করোনাভাইরাসের প্রভাবসহ নানা সংকট কাটিয়ে আবারো রফতানিমুখী খুলনাঞ্চলের কাঁকড়া শিল্প। কাঁকড়া চাষ লাভজনক হওয়ায় অনেকে চিংড়ি চাষ ছেড়ে কাঁকড়া চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। কাঁকড়ার চাহিদাও বাড়ছে বিদেশের বাজারে। বাগেরহাটে খাঁচায়, ঘেরে চাষ ও প্রাকৃতিক উৎস থেকে আহরণকৃত কাঁকড়া বিদেশে রফতানি করা হয়। ফলে বৈদেশিক মুদ্রাও আয় হচ্ছে বেশি। রোগবালাই কম ও দাম বেশি পাওয়ার কারণে সুন্দরবনসংলগ্ন ১৩ উপজেলায় কাঁকড়ার চাষও বেড়েছে।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) খুলনা অঞ্চল থেকে ৬২২ দশমিক শূন্য ৫ টন কাঁকড়া রফতানি হয়েছে। যার মূল্য ৭৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা। তবে সুন্দরবনের নদী ও খাল থেকে সংগ্রহ করা ১৯৮ টন কাঁকড়া আহরণ করা হয়। বাকি ৩৫৮ টন চাষকৃত কাঁকড়া।

এ কাঁকড়া চীন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়। বাগেরহাটের ৭ উপজেলায় ১ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে ৩ হাজার ৭৭৮টি কাঁকড়ার খামার রয়েছে। এ জেলার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৩ হাজার টন। ফিমেল (নারী) এক কেজি শিলা কাঁকড়া ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়। আর মেল (পুরুষ) ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় বাজারে বিক্রি করেন এখানকার চাষীরা।

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার কুমলাই গ্রামের কাঁকড়া চাষী আশিষ কুমার দাশ বলেন, ‘‌প্রায় ৩০ বছর ধরে কাঁকড়া চাষ করি। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ঘের ক্ষতিগ্রস্ত ও করোনার দুই বছর কাঁকড়া উৎপাদন বন্ধ থাকায় লোকসানে পড়তে হয়। এবার আবার সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি। আশা করি আগামী দিনগুলোতে আরো চাষযোগ্য জমির পরিধি বাড়ানো হবে।’

অন্য চাষী বাইনতলা গ্রামের দীলিপ বলেন, ‘‌আমাদের একসময় চিংড়ি চাষের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। তবে ভাইরাসের কারণে আমাদের ব্যাপক লোকসানে পড়তে হয়। এরপর কাঁকড়া চাষ শুরু করি। স্বল্প সময়ে চাষে রোগবালাই না হওয়ায় কাঁকড়া চাষে লাভ হয়। তাই প্রতি বছর আমাদের বেশ লভ্যাংশ থাকে। পাঁচ কাঠা থেকে শুরু করে এক বিঘা জমিতে চাষ করা হচ্ছে। কয়েকটি গ্রেডে কাঁকড়া বিক্রি করে ভালো আয় হয়।’

চাষী ও ব্যবসায়ীরা জানান, তিন মাস সময়ের মধ্যে পুরুষ ও মহিলা জাতের কাঁকড়া বিদেশে রফতানিযোগ্য হয়। শৈত্যপ্রবাহ ও গ্রীষ্মের দাবদাহে কাঁকড়া মারা যায় না। স্বল্প সময়ে বেশি মুনাফা হওয়ায় সুন্দরবন-সংলগ্ন বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলের দাকোপ, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া, পাইকগাছা, কয়রা, রামপাল, মোংলা, বাগেরহাট সদর, শরণখোলা, শ্যামনগর, আশাশুনি, কালীগঞ্জ ও দেবহাটা উপজেলায় কাঁকড়া চাষ সম্প্রসারণ হয়েছে। প্রতি মাসে গড়ে ৪ লাখ ডলার মূল্যের কাঁকড়া রফতানি হচ্ছে।

করোনার আগে খুলনাঞ্চলের উৎপাদিত কাঁকড়া ১৯টি দেশে রফতানি হতো। গত বছরের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাজ্য, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডসে প্রায় ৭ লাখ ডলার মূল্যের কাঁকড়া রফতানি হয়। এতে কিছুটা হলেও হিমায়িত খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোয় স্বস্তি ফিরে আসে।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম রাসেল বলেন, ‘‌কাঁকড়া উৎপাদনে বাগেরহাট জেলা অন্যতম। দেশের মোট রফতানির ৩০ ভাগেরও বেশি কাঁকড়া যায় এ জেলা থেকে।’ তিনি বলেন, ‘‌ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এই তিন মাসে চীনে নানা উৎসব থাকে। এ সময় বিপুল পরিমাণ কাঁকড়া তারা আমাদের দেশ থেকে নেয়। করোনার সময় চীনে কাঁকড়া রফতানি বন্ধ থাকায় চাষীরা লোকসানের মুখে পড়েন। আমরা চাষীদের প্রণোদনা এবং নানা পরামর্শ দিয়েছিলাম। এবার আবার চাষীরা কাঁকড়া চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘‌চাষীদের কাঁকড়া চাষে উদ্বুদ্ধ করতে প্রশিক্ষণসহ নানা পরামর্শ দিয়ে আসছি। যাতে রফতানিযোগ্য কাঁকড়া চাষে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি।’


লেখক: সাংবাদিক

আরও