অর্থনীতির সংকোচনে যুক্তরাজ্যে মন্দার আশঙ্কা বাড়ছে

চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাজ্যের জিডিপি কমেছে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। ২০১২ সালের চতুর্থ প্রান্তিকের পর এবারই প্রথম দেশটির অর্থনীতি সংকুচিত হলো। যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান অফিস (ওএনএস) জিডিপির তথ্য প্রকাশ করার পর পূর্বাভাসকারীরা বড় ধাক্কা খেয়েছেন, কেননা তারা ধারণা করেছিলেন অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। জিডিপি কমার ফলে দেশটিতে মন্দার আশঙ্কা আরো জোরদার হলো। খবর গার্ডিয়ান।

ব্রেক্সিট অনিশ্চয়তা, গাড়ির কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া, ইইউ থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার পূর্বের মার্চের ডেডলাইনের আগে মজুদকৃত পণ্য শেষ হয়ে আসায় জুনে শেষ হওয়া তিন মাসে ব্রিটেনের জিডিপি কমেছে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ।

ওএনএসের প্রতিনিধিরা বলছেন, আগে মার্চ ছিল ইইউ থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার প্রকৃত শেষ সময়। এটি ঘিরে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তার ফলে দ্বিতীয় প্রান্তিকে জিডিপি কমেছে। ব্রিটেনের উৎপাদন কমেছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি বছরে প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি বেড়েছিল শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ।

ওএনএসের জিডিপি বিভাগের প্রধান রব কেন্ট-স্মিথ জানান, দ্বিতীয় প্রান্তিকে ম্যানুফ্যাকচারিং আউটপুট কমেছে এবং নির্মাণ খাত দুর্বল হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, প্রতিবার ভালো করা সেবা খাতে এবার প্রবৃদ্ধি হয়নি বললেই চলে।

ব্রিটেনের অর্থনীতির প্রায় ৮০ শতাংশ সেবা খাত। দ্বিতীয় প্রান্তিকে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ, অথচ চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ।

ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার নতুন তারিখ ৩১ অক্টোবর। এরই মধ্যে চুক্তি নাকি চুক্তিহীন ব্রেক্সিট হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এ অনিশ্চয়তার কারণে পরবর্তী প্রান্তিকেও সংকুচিত হতে পারে দেশটির অর্থনীতি। আর এটি হলে তা হবে পরপর দুবার সংকোচন, যাকে আক্ষরিক অর্থে বলে মন্দা। একটি অর্থনীতি পরপর দুই প্রান্তিক সংকোচন হলে মন্দায় পড়েছে বলে ধরা হয়। 

ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ বলেন, এটা পুরো বিশ্বের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং সময়। অনেক দেশের প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে গেছে। তবে ব্রিটেনের অর্থনীতির মৌলিক ভিত্তিগুলো শক্তিশালীই রয়েছে। মজুরি বেড়েছে, রেকর্ড কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এবং পূর্বাভাস করছি যে চলতি বছর আমরা জার্মানি, ইতালি ও জাপানের চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করব।

তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য যে ৩১ অক্টোবর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে আসছে, তা নিয়ে আমরা কেন নিশ্চিত, সে বিষয়ে বিস্তারিত ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে নাগরিক ও ব্যবসায়ীদের জানানো হবে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, ৩১ অক্টোবরেই ইইউ থেকে যুক্তরাজ্য বেরিয়ে যাবে, প্রয়োজন হলে কোনো চুক্তি ছাড়াই। বৃহস্পতিবার এ জিডিপি তথ্য প্রকাশের পর ডলারের বিপরীতে ৩১ মাসের নিম্নে নেমে আসে পাউন্ডের মান।

জাভিদ বলেন, আমি একেবারেই মন্দার আশঙ্কা করছি না। কোনো শীর্ষ পূর্বাভাসকারী মন্দার কথা বলেনি। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডও কোনো মন্দার আশঙ্কা করছে না। কারণ তারা জানে ব্রিটেনের অর্থনীতির মৌলিক ভিত্তিগুলো এখনো শক্তিশালী রয়েছে।

চলতি মাসের শুরুতে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড জানিয়েছে, তারা ধারণা করছে চলতি বছর ব্রিটেনের প্রবৃদ্ধি হবে ১ দশমিক ৩ শতাংশ। অথচ মে মাসে ব্যাংকটি ১ দশমিক ৫ শতাংশের পূর্বাভাস দিয়েছিল। 

অনলাইন ট্রেডিং ফার্ম এক্সটিবির প্রধান বাজার বিশ্লেষক ডেভিড চিতাম বলেন, চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের হুমকি বাড়ার সঙ্গে অনিশ্চয়তাও বাড়ছে। বছরের তৃতীয় প্রান্তিকেও যদি অর্থনীতির সংকোচন ঘটে, তবে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।

আরও