তামায় বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে জ্বালানি কোম্পানিগুলো

চাহিদা বেড়ে আগামী বছরগুলোয় তামার দাম চার গুণ হতে পারে। এ খবরে তামা ব্যবসায় নামার চিন্তা করছে বৈশ্বিক জ্বালানি জায়ান্টরা। এর মধ্যে ফরাসি জ্বালানি খাতের প্রতিষ্ঠান টোটালএনার্জিস অন্যতম। প্রতিষ্ঠানটি এরই মধ্যে জ্বালানি তেলের ব্যবসাকে ধাতু খাতে বিস্তৃত করার বিষয়ে গবেষণা শুরু করেছে বলে জানা গেছে। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস।

২০১৪ সালে ধাতুর ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছিল ভিটোল। বিশ্বের বৃহত্তম স্বাধীন জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি আবার ধাতুর ব্যবসায় ফিরে এসেছে। শুরু করেছে জেনেভাভিত্তিক কমোডিটি ফার্ম মারকুরিয়াও। এজন্য তারা ধাতু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ট্রাফিগুরার সাবেক সহপ্রধান কোস্টাস বিনতাসের অধীনে ৬০ জনের একটি ইউনিটও গড়ে তুলেছে।

এছাড়া আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জ্বালানি খাতের পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলাতে অ্যালুমিনিয়ামের ব্যবসায় নজর দিয়েছে। এমনকি জ্বালানি খাতে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী হেজ ফান্ডের ম্যানেজার পিয়েরে আনডুরান্ডও ধাতুর ব্যবসায় নেমেছেন। চলতি বছরের শুরুতে এ ব্যবসায়ী ধাতুর বাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে বলেছিলেন, ‘আগামী বছরগুলোয় তামার দাম টনপ্রতি ৪০ হাজার ডলারে পৌঁছতে পারে। ভবিষ্যদ্বাণী করা এ মূল্য বর্তমান বাজারে তামার মূল্যের অন্তত চার গুণ।’

টোটালএনার্জিস এরই মধ্যে লন্ডনে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছে। ওই বৈঠকে উপস্থিতদের মধ্যে কয়েকজন বলেছেন, প্রতিষ্ঠানটি তামার ব্যবসায় নামার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে।

জ্বালানি খাতের রূপান্তরের কারণে ব্যবসা সম্প্রসারণ করে তামার দিকে ঝুঁকছে বলে মন্তব্য করেছেন টোটালএনার্জিসের ক্রুড, ফুয়েল অ্যান্ড ডেরিভেটিভস ট্রেডিং বিভাগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রহিম আজউনি। তিনি বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে বেশকিছু জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ধাতুর ব্যবসা শুরু করেছে। কারণ বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ায় বিশ্বজুড়ে তামা, অ্যালুমিনিয়াম ও নিকেলের চাহিদা বাড়ছে। এছাড়া জ্বালানি তেলচালিত গাড়ির জায়গায় বিশ্বে জনপ্রিয় হচ্ছে বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি। এ খাতেও ধাতুর চাহিদা রয়েছে।’ তবে টোটালএনার্জিস আসলেই তামার ব্যবসা শুরু করবে কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নয় বলেও জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস বলছে, আগামী দশকে বিশ্বব্যাপী তামার চাহিদা বাড়তে পারে। তাছাড়া সম্প্রতি বিভিন্ন কারণে জ্বালানি তেলের বাজারও দুর্বল। ২০২২ সালে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির ফলে জ্বালানি তেলের মূল্য অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। ওই সময় যে তেল বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো তুমুল লাভ করেছে, তারাও অনেকে তামার ব্যবসা শুরু করেছে। কেননা এ খাতের চাহিদা ক্রমবর্ধমান।

পানমুরে লিবেরামের সম্পদ বিশ্লেষক টম প্রাইস বলেছেন, ‘জ্বালানি তেলের বাজারে অস্থিতিশীলতা ও জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন ব্যবসায়ীদের ধাতুর দিকে আগ্রহী করছে। তবে জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের জন্য ধাতুর ব্যবসায় নামা যতটা সহজ অন্যান্য খাতসংশ্লিষ্টদের জন্য ততটা নয়। কারণ অন্য পণ্যের বাজার আর ধাতব পণ্যের বাজার ব্যবস্থা পুরোপুরি আলাদা।’

টোটালএনার্জিস বর্তমানে জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও নতুন জ্বালানি খাতের জায়ান্ট। জ্বালানি খাতের এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী প্যাট্রিক পওয়ানেও এর আগে ধাতুর ভবিষ্যৎ বাজারের ইতিবাচক দিক নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন। তবে তামা ব্যবসার পরিকল্পনা বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি প্রতিষ্ঠানটি।

আরও