এসডিজি সেমিনারে উদ্যোক্তারা

এসডিজি বাস্তবায়নে কার্যকর বিনিয়োগের প্রয়োজন, তুলে আনতে হবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের

সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় এ সময় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আগের তুলনায় দেশে টেকসই উন্নয়ন ধারণার প্রসার ঘটেছে। নানাভাবে নানা কাজে এটির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। আমি মনে করি, এটি প্রাইভেট খাতের অর্জন।

টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে কার্যকর বিনিয়োগের প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন উদ্যোক্তারা। এছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদেরও তুলে আনতে হবে। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় এসডিজি রিপোর্ট (ভিএনআর) ২০২৫: ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে এ মত দেন তারা। ‘এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম, বাংলাদেশ’ সেমিনারটি আয়োজন করেছে।

‘এসডিজি অর্জনে অর্থায়ন’- প্যানেল প্রেজেন্টেশনে নিউএজ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে প্রয়োজন কার্যকর বিনিয়োগ। এটি এমন বিনিয়োগ, যা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জন্য সাশ্রয়ী হবে এবং পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এর পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি কাজের সমন্বয়ও করতে হবে।

তিনি বলেন, ক্ষুদ্র অর্থায়নও এসডিজির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামীণ ছোট ছোট উদ্যোক্তাদের তুলে আনতে হবে। বেসরকারিভাবে ব্রাক ও গ্রামীণ ব্যাংক প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে বেশ কাজ করেছে। এর বাইরে আরো অনেক বেসরকারি সংস্থা কাজ করেছে এবং এখনো করছে। তার সুফল মিললেও এসব জায়গায় আরো বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি।

এ সময় প্যানেল প্রেজেন্টেশনে আরো অংশ নেন বাংলাদেশ নিট পোশাক উৎপাদক ও রফতানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সাবেক সভাপতি ফজলুল হক ও গ্লোবাল কম্প্যাক্ট নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক শাহামিন জামান।

মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে এ সময় এক নারী উদ্যোক্তা বলেন, টেকসই উন্নয়নে পরিবেশ রক্ষা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি হস্তশিল্প নিয়ে কাজ করি। বিদেশী ক্রেতারা আমাদের বড় বড় ক্রয়াদেশ দেয় কিন্তু দেশের ব্যাংক বড় ঋণ দেয় না। এটা আমার জন্য কষ্টের। বিদেশী ক্রেতারা আমাকে বিশ্বাস করলেও ব্যাংক করে না। তাহলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা কীভাবে টিকে থাকবে।

তিনি বলেন, এ সমস্যা থেকে উত্তরণে ক্রেতাদের বলেছি, তোমরা ছোট ছোট ক্রয়াদেশ দাও, আমরা ধীরে ধীরে পণ্য বুঝিয়ে দেব। কেননা, ব্যাংক ঋণ দেয় না। বিষয়টি বেশ হাস্যকর।

পোল্ট্রি শিল্পের এক উদ্যোক্তা অভিযোগ করে বলেন, পোল্ট্রি শিল্পকে বাদ দিয়ে এসডিজি অর্জন করা সম্ভব নয়। এ খাতের সঙ্গে লাখ লাখ কর্মজীবী যুক্ত। অথচ এই খাতকে গুরুত্বই দেয়া হয় না। উৎপাদন খরচের সঙ্গে বিক্রয়মূল্যের বিস্তর ব্যবধান থাকায় ধীরে ধীরে খাতটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এ খাতকে রক্ষায় নীতিনির্ধারণীদের উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় এ সময় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আগের তুলনায় দেশে টেকসই উন্নয়ন ধারণার প্রসার ঘটেছে। নানাভাবে নানা কাজে এটির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। আমি মনে করি, এটি প্রাইভেট খাতের অর্জন।

তিনি বলেন, এ আলোচনায় এসডিজি বাস্তবায়নে উদ্যোক্তাদের ভূমিকা, অর্থায়ন, লজিস্টিক সহায়তা এবং সরকারের করণীয় উঠে এসেছে। কিন্তু উদ্যোক্তাদের জবাবদিহিতার বিষয়টি উঠে আসেনি। উদ্যোক্তারা স্বাধীন এবং স্বীয় প্রতিষ্ঠানের কর্তা। কিন্তু তাদেরও একটি জবাবদিহিতা থাকা দরকার। এছাড়া উদ্যোক্তাদের জন্য একটি ফেমওয়ার্ক বা প্লাটফর্ম দরকার, যেখানে তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করবে এবং তথ্য আদানপ্রদান করবেন।

চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচন না হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বিগত সময়গুলোতে ব্যবসায়িক সংগঠনগুলো কী ঠিকমতো কাজ করেছে? দেশে নির্বাচন হয়নি, একইভাবে চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচনও হয়নি। যেখানে নির্বাচন ও প্রতিযোগিতা নেই, সেখানে টেকসই উন্নয়ন করব এটা ভাবাও ঠিক না।

সেমিনারে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মহাপরিচালক (এসডিজি) শিহাব কাদের বলেন, গত ভিএনআর রিপোর্টে জানি না আপনাদের কতজনের মতামত নেয়া হয়েছিল। তবে এবারের প্রতিবেদন হবে ডায়নামিক। এমনভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হবে, যেটি পলিসি মেকার থেকে শুরু করে সরকার, সবাই ব্যবহার করতে পারবেন এবং এসডিজি বাস্তবায়নে কী কী করা উচিত তার রূপরেখা পাবেন।

বাংলাদেশে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক বলেন, এবারের ভিএনআর রিপোর্টে প্রাইভেট, পাবলিক সব সেক্টর এবং সব শ্রেণীর প্রতিনিধিকে যুক্ত করা হয়েছে। কেননা সবাই মিলে কাজ না করলে এসডিজি অর্জন করা সম্ভব নয়। তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশের অতি প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ এখনো এর বাইরে রয়ে গেছে। তাদেরকে এসডিজিতে যুক্ত করতে হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে সরকারি-বেসরকারি আরও নজর বাড়ানোর কথা বলেন তিনি।

আরও