ময়মনসিংহে তুলা চাষে আগ্রহ বেড়েছে

৭০ হেক্টর জমিতে ৬ হাজার ৮৮০ মণ তুলা উৎপাদনের প্রত্যাশা

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তুলা চাষ। উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলে তুলা চাষ করে ব্যাপক ফলন পাচ্ছেন কৃষক।

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তুলা চাষ। উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলে তুলা চাষ করে ব্যাপক ফলন পাচ্ছেন কৃষক। চলতি মৌসুমে প্রায় ৭০ হেক্টর জমি তুলা চাষের আওতায় এসেছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এ বছর উৎপাদন দাঁড়াতে পারে ৬ হাজার ৮৮০ মণে। 

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে চাহিদা থাকায় দামও ভালো পাচ্ছেন চাষীরা। এতে নিষ্ফলা চরাঞ্চলের জমিতে ক্রমেই তুলা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন স্থানীয়রা।

জানা যায়, গ্রীষ্মকালীন ফসল তুলা চাষের উৎকৃষ্ট সময় ১৫ আষাঢ় থেকে ৩০ শ্রাবণ (১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট) পর্যন্ত। এ সময় জমিতে তুলাবীজ বপন করতে হয়। তুলা চাষের জন্য উৎকৃষ্ট জমি হিসেবে বিবেচনা করা হয় দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটিকে। পর্যাপ্ত জৈব পর্দাথসমৃদ্ধ যেকোনো মাটিতেই তুলার চাষ করা যায়। তবে খুব বেশি বেলে বা কর্দমাক্ত জমিতে তুলা চাষ করা যায় না। 

কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যেসব জমিতে বৃষ্টির পানি জমে থাকে না বা বন্যার পানি ওঠে না এমন উঁচু জমি তুলা চাষরে জন্য উপযুক্ত। স্যাঁতসেঁতে ছায়াযুক্ত এবং যেখানে বৃষ্টির পানি ২-৬ ঘণ্টার মধ্যে নেমে যায় না এমন জমিতে তুলা চাষ করা উচিত নয়। ৩তিন-চারটি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে জমি প্রস্তুতের পর জাতভেদে হেক্টরপ্রতি সাড়ে চার থেকে পাঁচ কেজি বীজ বুনতে হয়। বীজ বপনের ছয় মাস পর তুলা সংগ্রহ করা যায়। 

তুলা উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গফরগাঁও উপজেলায় সরকারি সহযোগিতায় ২০১৩-১৪ সালের দিকে তুলা চাষ সম্প্রসারণ কার্যক্রম শুরু হয়। অনুর্বর জমিতে সরকারি সহযোগিতা পাওয়ায় উপজেলার চরআলগী ইউনিয়নের তুলাচাষীরা লাভবান হচ্ছেন। তাদের উৎপাদিত তুলা সরাসরি তুলা উন্নয়ন বোর্ড ন্যায্যমূল্যে কিনে নেয়। এতে কৃষক অন্য ফসলের তুলনায় তুলায় অধিক লাভবান হচ্ছেন। ফলে সচ্ছলতা ফিরেছে তাদের সংসারে। এ সম্ভাবনার খবরে অন্যান্য ইউনিয়নের চাষীও এখন তুলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এতে উপজেলায় তুলা চাষের পরিমাণ ও চাষীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। 

সাব কটন ইউনিট অফিস সূত্রে জানা গেছে, তুলা উন্নয়ন বোর্ড ময়মনসিংহ জোনে গফরগাঁও উপজেলার ১৮০ জন কৃষক এ বছর তুলা চাষ করেছেন। চলতি ২০২৩-২৪ মৌসুমে মোট ৭০ হেক্টর জমি তুলা চাষের আওতায় এসেছে। সাধারণত প্রতি একরে ৪০-৪৫ মণ তুলা উৎপাদন হয়। এ হিসেবে এ বছর ৬ হাজার ৮৮০ মণ তুলা উৎপাদনের প্রত্যাশা করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি মণ তুলার বাজারদর ৩ হাজার ৮০০ টাকা। ভালো দাম পাওয়ায় অনুর্বর জমিতে তুলা চাষ করে লাখপতি হচ্ছেন এখানকার কৃষক।

তুলা উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, এখানে উফশী সিবি-১২, ১৪ ও ১৯, হাইব্রিড জাতের মধ্যে হোয়াইট গোল্ড ১, ডিএম ৪, মিউটেশন ১ ও সদ্য অবমুক্ত বিটি তুলা জিকেসিএইচ-১৯৪৭ ও বিটি তুলা জিকেসিএইচ-১০৫০ জাতের তুলা চাষ হচ্ছে। তুলা চাষের পাশাপাশি একই জমিতে সহায়ক শাকসবজি চাষ করে বাড়তি আয় করেও উপকৃত হচ্ছেন কৃষক। তুলা আবাদ থেকে আঁশ ছাড়াও ভোজ্যতেল, খৈল ও জ্বালানি উপজাত হিসেবে পাওয়া যায়।

চর মছলন্দ পশ্চিম পাড়া গ্রামের তুলাচাষী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় চরের পতিত ও অনাবাদি জমিতে তুলা চাষ করে আমার মতো আরো অনেকের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। তুলা বিক্রির টাকা ঘরে বসেই পাই। বিক্রি করতে কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না।‘’

সফল তুলাচাষীদের মধ্যে চর আলগী ইউনিয়নের জয়ার চরের জালাল উদ্দিন বলেন, ‘সরকারি সহায়তায় তিন বছর ধরে তুলা চাষ করেছি। আমার অনাবাদি জমি আবাদি হয়েছে। তুলার সঙ্গে বাদাম, লাউ ও শাকসবজি চাষ করা যায়। অনেকেই এখন অন্য ফলস চাষের পরিবর্তে তুলা চাষে আগ্রহী হচ্ছে।’

তুলা উন্নয়ন বোর্ডের মাইজহাটি কটন ইউনিটের কর্মকর্তা সরকার নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী তুলা সাদা সোনা‌ হিসেবে পরিচিত। অর্থকরী ফসলটি উৎপাদনে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। আমাদের দেশে বছরে চাহিদার মাত্র ৫ শতাংশ উৎপাদন হয়। এ কারণে চাহিদার সিংহভাগই বিদেশ থেকে কিনে আনতে হয়। কিন্তু দেশে চাষ বাড়ালে তুলার আমদানিনির্ভরতা কমে আসবে। এতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।’

আরও