২০১৬ সালের পর সবচেয়ে ভালো প্রান্তিকের পথে স্বর্ণের দাম

স্বর্ণের দাম গত সপ্তাহে ২ হাজার ৬০০ ডলারের মাইলফলক ছাড়িয়ে যায়। শুক্রবার নাগাদ দাম কিছুটা কমলেও ২০১৬ সালের পর সবচেয়ে ভালো প্রান্তিকের দেখা পেতে যাচ্ছে মূল্যবান ধাতুটি।

স্বর্ণের দাম গত সপ্তাহে ২ হাজার ৬০০ ডলারের মাইলফলক ছাড়িয়ে যায়। শুক্রবার নাগাদ দাম কিছুটা কমলেও ২০১৬ সালের পর সবচেয়ে ভালো প্রান্তিকের দেখা পেতে যাচ্ছে মূল্যবান ধাতুটি। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দামের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সবচেয়ে ভালো প্রান্তিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। খবর বিজনেস রেকর্ডার।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ গত সপ্তাহে ৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদহার কমিয়েছে। এছাড়া কিছুদিনের মধ্যে মূল্যস্ফীতিসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ হতে পারে। এসব নিয়ামককে সামনে রেখে ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে স্বর্ণের বাজার। এমন অবস্থায় মূল্যবান ধাতুটির দাম ২০১৬ সালের প্রথম তিন মাসের পর সবচেয়ে ভালো প্রান্তিকের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে শুক্রবার স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম দশমিক ১ শতাংশ কমেছে। এতে প্রতি আউন্সের দাম দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৬৬ ডলার ৫০ সেন্ট। আগের দিন সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬৮৫ ডলার ৪২ সেন্টে পৌঁছেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ফিউচার মার্কেটে দাম দশমিক ২ শতাংশ কমে ২ হাজার ৬৮৮ ডলার ৯০ সেন্টে পৌঁছেছে।

ড্যানিশ বিনিয়োগ ব্যাংক সাকসো ব্যাংকের কমোডিটি স্ট্র্যাটেজি বিভাগের প্রধান ওলে হ্যানসেন বলেন, ‘‌বিনিয়োগকারীরা এ মুহূর্তে সব ভালো খবরের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। এতে বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। তবে বর্তমান রেকর্ড দাম স্তরে বিনিয়োগ করতে নতুন ক্রেতাদের মধ্যে কিছুটা সংকোচ রয়েছে।’

চলতি বছর এখন পর্যন্ত স্বর্ণের দাম ২৯ শতাংশ বেড়েছে। গত সপ্তাহে ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার কমানোর পর অর্থনীতিকে গতিশীল করতে আর্থিক প্রণোদনার প্রতিশ্রুতি দেয় চীন। ফলে স্বর্ণের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে।

এদিকে স্বর্ণের ঊর্ধ্বমুখী দামের প্রভাবে রুপার দামও বাড়ছে। তবে কিছু বিশ্লেষক সতর্ক করে বলেছেন, এ ঊর্ধ্বমুখিতা স্থায়ী না-ও হতে পারে। এএনজেডের কমোডিটি স্ট্র্যাটেজিস্ট সোনি কুমারী বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে শিল্প খাতে চাহিদা বৃদ্ধি রুপার দামে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কিন্তু এটি ধরে রাখতে চীনসহ অন্যান্য উন্নত দেশের অর্থনীতি আরো গতিশীল হওয়া প্রয়োজন।’ 

সোনি কুমারী বলেন, ‘‌স্বর্ণের অনুকরণে রুপার দাম বাড়ছে। স্পট মার্কেটে গত বৃহস্পতিবার রুপার দাম সর্বোচ্চ ৩২ ডলার ৭১ সেন্টে পৌঁছায়। তবে শুক্রবার দশমিক ১ শতাংশ কমে প্রতি আউন্সে ৩১ ডলার ৯৮ সেন্টে পৌঁছেছে। টানা তৃতীয় সপ্তাহের মতো ঊর্ধ্বমুখী হতে যাচ্ছে ধাতুটির দাম।

স্যাকসো ব্যাংকের ওলে হ্যানসেন বলেন, ‘স্বর্ণের দাম বাড়তে থাকলে রুপার দাম বাড়তে থাকে। তাই আমার ধারণা, রুপার দাম বাড়ার হার স্বর্ণকে ছাড়িয়ে যেতে থাকবে।’

স্বর্ণ ও রুপা উভয়ই নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু শিল্প খাতে রুপার ব্যবহার বেশি হওয়ায় অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে ধাতুটির দাম নিম্নমুখী হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তবে অর্থনীতি সম্প্রসারণের সময়ে ঊর্ধ্বমুখী হয়।

আগামী মাসগুলোয় স্বর্ণের এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ডে (গোল্ড ইটিএফ) বিনিয়োগ বাড়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে পশ্চিমা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গোল্ড ইটিএফ নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে। ফলে এরই মধ্যে রেকর্ড উচ্চতায় থাকা স্বর্ণের দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কিছু ব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে।

এদিকে অন্যান্য ধাতুর মধ্যে প্লাটিনামের দাম দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ১২ ডলার ৪০ সেন্টে পৌঁছেছে। কিন্তু প্যালাডিয়ামের দাম প্রায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ কমে ১ হাজার ৩১ ডলারে ৭৫ সেন্টে নেমে গেছে।

আরও