স্বর্ণের দাম চলতি বছরের শেষ নাগাদ আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ১০০ ডলারে পৌঁছার পূর্বাভাস দিয়েছে বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ ক্রয় এবং মূল্যবান ধাতুটির এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) প্রবাহ বেড়েছে। বছরজুড়ে এ প্রবণতা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনায় স্বর্ণের দাম বাড়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। খবর মাইনিং ডটকম।
গোল্ডম্যান স্যাকসের বিশ্লেষক লিনা থমাস ও দান স্ট্রাইভেন এক নোটে জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ ক্রয় প্রতি মাসে গড়ে ৫০ টনে পৌঁছতে পারে, যা আগের পূর্বাভাসের তুলনায় বেশি। তারা আরো বলেন, বৈশ্বিক শুল্কযুদ্ধসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক নীতির কারণে অনিশ্চয়তা বজায় থাকলে ধাতুটির দাম বেড়ে আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৩০০ ডলারেও পৌঁছতে পারে। ব্লুমবার্গের হিসাব বলছে, এতে স্বর্ণের দাম বার্ষিক ২৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
২০২৪ সালের মতো চলতি বছরও স্বর্ণের দাম ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় রয়েছে। সাত সপ্তাহের টানা উত্থানের মধ্য দিয়ে একের পর এক রেকর্ড তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ ক্রয় ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। গত মাসগুলোয় দফায় দফায় সুদহার কমিয়েছে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড)। সম্প্রতি দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্কারোপের ঘোষণা দিয়েছেন। এসব কারণে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ বেড়েছে, যা আপৎকালীন নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণের মূল্যবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।
নোটে স্বর্ণ ক্রয়ের জন্য বিনিয়োগকারীদের ইতিবাচক ইঙ্গিত দেন থমাস ও স্ট্রাইভেন বন। তারা বলেন, ‘সামনের দিনে বাণিজ্য উত্তেজনা আরো বাড়তে পারে। এতে দীর্ঘমেয়াদে স্বর্ণের মজুদ বিনিয়োগে ভালো সুরক্ষা প্রদান করতে পারে।’
নোটে আরো বলা হয়, মুল্যস্ফীতি ও রাজস্বসংক্রান্ত ঝুঁকির কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো স্বর্ণের মজুদ বাড়াতে পারে, বিশেষ করে যেসব কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিপুল পরিমাণে মার্কিন ট্রেজারি বন্ড ক্রয় করে।
বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, গত ডিসেম্বরে সরকারি পর্যায়ে স্বর্ণ ক্রয় ১০৮ টনে পৌঁছেছিল। তাছাড়া এরই মধ্যে ফেড দুই দফায় সুদহার কমিয়েছে। এতে ইটিএফ প্রবাহও বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে আগের পূর্বাভাস সংশোধন করে স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ১০০ ডলারে পৌঁছার পূর্বাভাস দিয়েছে গোল্ডম্যান স্যাকস। গত মাসে ৩ হাজার ডলারে পৌঁছার পূর্বাভাস দিয়েছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি।
অন্য শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকগুলোর মতো গোল্ডম্যান স্যাকসও স্বর্ণের প্রতি আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে। সিটি গ্রুপ চলতি মাসের শুরুতে জানিয়েছিল, তিন মাসের মধ্যে স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ডলারে পৌঁছতে পারে। তাদের মতে, ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা ও ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ স্বর্ণের মতো নিরাপদ পরিসম্পদের চাহিদা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
গত তিন মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ ক্রয়ে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। চীনের পিপলস ব্যাংক অব চায়না জানুয়ারিতে টানা তৃতীয় মাসের মতো স্বর্ণের মজুদ বাড়িয়েছে। এছাড়া পোল্যান্ড ও ভারতও সরকারি পর্যায়ে স্বর্ণ ক্রয় করেছে বলে জানিয়েছে ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল।
একই সময়ে স্বর্ণের ইটিএফে বিনিয়োগও বেড়েছে। তবে তা ২০২০ সালের কভিড-১৯ মহামারীর সময়কার সর্বোচ্চ স্তরের তুলনায় এখনো অনেক কম। ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত এ ধরনের তহবিলের পরিমাণ প্রায় ১ শতাংশ বেড়েছে বলে ব্লুমবার্গের পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে।
মার্কিন স্পট মার্কেটে গতকাল স্বর্ণের দাম ১ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি আউন্স ২ হাজার ৯৩৫ ডলার ৯৬ সেন্টে লেনদেন হয়েছে। এর আগে গত সপ্তাহে এটি রেকর্ড ২ হাজার ৯৪২ ডলারে পৌঁছেছিল। গত ১২ মাসে স্বর্ণের দাম ৪৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে, যা একই সময়ে বৈশ্বিক শেয়ারবাজারের ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির তুলনায় অনেক বেশি।