বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আগামী এক দশকে দেশের পুঁজিবাজারকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের রূপরেখা তৈরিতে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।
আজ বুধবার (২৩ অক্টোবর) পুঁজিবাজারের শীর্ষস্থানীয় মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজারদের সঙ্গে বিএসইসির এক সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ কথা জানান তিনি।
সভায় বিএসইসি কমিশনার মু. মোহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর, ফারজানা লালারুখ, বিএসইসির কর্মকর্তা ও দেশের পুঁজিবাজারের শীর্ষস্থানীয় মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তথা শীর্ষ প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘সংস্কারের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ আমরা পেয়েছি এবং নতুন কমিশনের কাজের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে সংস্কার। দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও কল্যাণের স্বার্থে পুঁজিবাজারের অংশীজনদের সবাইকে নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পরিপালন করে প্রয়োজনীয় ও যথাযথ ভূমিকা রাখতে হবে।’
দেশের পুঁজিবাজারের সর্বাঙ্গীণ সংস্কারের জন্য বিএসইসি গঠিত টাস্কফোর্স পুঁজিবাজারে সব অংশীজনকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করবে বলে তিনি জানান। তিনি আরো জানান, টাস্কফোর্সের অধীনে বিভিন্ন থিমে ফোকাস গ্রুপ গঠিত হবে এবং সেসব ফোকাস গ্রুপে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তি ও অংশীজনরা অন্তর্ভুক্ত হবেন। পুঁজিবাজারের সংস্কার ও গঠিত টাস্কফোর্সের কার্যক্রম অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে। সংস্কারের পথে সাময়িক অনেক সমস্যা উদ্ভুত হলেও সংস্কারের পর পুঁজিবাজারের উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিশ্চিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সভার সমাপনী বক্তব্যে বিএসইসি কমিশনার ফারজানা লালারুখ বলেন, পুঁজিবাজারের অংশীজনদের সবার প্রচেষ্টার মাধ্যমেই এই বাজারের উন্নয়ন ও সংস্কার সম্ভব। আপনাদের সকলের পরামর্শ ও মতামত আমাদের জানান। বিএসইসি আপনাদের সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছে। সকলের অংশগ্রহণ ও প্রচেষ্টায় আগামীতে আমরা পুঁজিবাজারের সুদিন দেখতে পারবো বলে আশা করি। তিনি দেশের পুঁজিবাজারের ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের প্রচলনের বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সভায় মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজারদের শীর্ষ প্রতিনিধিরা দেশের পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ও সংস্কারসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন। সভায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি এবং সুশাসন নিশ্চিতের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে ভালো বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টির বিষয়ে আলোচনা হয়। পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধির বিষয়টি সভার আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।
সভায় অন্য বিষয়ের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি, বিনিয়োগ শিক্ষার প্রসার ও বিকাশের নিশ্চিতকরণ, পুঁজিবাজারের তারল্য বৃদ্ধি ও সংশ্লিষ্ট নীতিসহায়তার উদ্যোগ গ্রহণ, আইপিও সংক্রান্ত রুলস এর সংস্কার ও আইপিও অনুমোদনের প্রক্রিয়া সহজীকরণ, আইপিও’র ভ্যালুয়েশন সিস্টেমের সংস্কার, স্বনামধন্য বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তালিকাভুক্তির উদ্যোগ গ্রহণ, মার্জিন রুলের প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে বিভিন্ন ধরনের কর ছাড়সহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত সংস্কার, লভ্যাংশ ও মূলধনি আয়ের ওপর আরোপিত কর নীতিসহ বিভিন্ন নীতি সংক্রান্ত ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ, দেশে টেকসই ও পরিবেশ বান্ধব বন্ড প্রচলনের উদ্যোগ গ্রহণ ও বন্ড বাজারের উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ, বিদেশী বিনিয়োগকারী ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে উৎসাহিতকরণ এবং বিশ্বের অন্যান্য আধুনিক পুঁজিবাজারের অনুকরণে দেশের পুঁজিবাজারে বিভ্ন্নি আধুনিক ও যুগোপযোগী উপাদানের সংযোজনের প্রস্তাবনা উঠে এসেছে। সভায় মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজারদের প্রতিনিধিরা দেশের পুঁজিবাজারের বিদ্যমান সংকটগুলো নিরসনে ও সংস্কারের প্রক্রিয়ায় বিএসইসির সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ ও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।