আবাসিক হলে গণরুম

গণগল্পের গণরুম...

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ভর্তির সময় কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়া হল অ্যাটাস্টমেন্ট দেয়। পুরনো হল হওয়ায় খুব খারাপ লেগেছিল।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ভর্তির সময় কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়া হল অ্যাটাস্টমেন্ট দেয়। পুরনো হল হওয়ায় খুব খারাপ লেগেছিল। রুমে আসার পর তাৎক্ষণিক মনে হলো এটি কোনো শিক্ষার্থীর থাকার জায়গা নাকি হাসপাতাল। একটা রুমে এখানে একসঙ্গে এত মানুষ কীভাবে থাকে। গণরুমে প্রথমবার প্রায় সবার মনেই এমন অনুভূতি বিরাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতি বিজড়িত ও আবেগের জায়গা হলো এ গণরুম। বহু শিক্ষার্থীর এখান থেকে শুরু হয় জীবনের নতুন একটি অধ্যায়। কখনো কখনো কোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন শেষ হয় এ চার দেয়ালের সীমাবদ্ধ থেকেই। 

খালেদা জিয়া হলের সবচেয়ে বড় গণরুম ১১৩ নম্বর রুমে। এ এক রুমে ৭০ জন থাকে। এটা ছাড়াও আরো নয়টি গণরুম রয়েছে, যেগুলোয় অন্তত ১৪-১৬ জন করে থাকে। প্রথম দিকে মনে হতো এখানে কীভাবে থাকব? এখানে বেড ছাড়া আর কোনো জায়গা নেই। ধীরে ধীরে মানিয়ে নিতে হলো। মন্দের ভালোর বিবেচনায় একটা দিক রয়েছে এখানে। তা হলো রুমে প্রায় প্রত্যেকটি জেলার মানুষ রয়েছে। ফলে তাদের আঞ্চলিক ভাষা, সংস্কৃতি, জীবনযাপন সম্পর্কে জানা যায়। পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া ঘটে। মানুষ অনুভূতিশীল প্রাণী। একসময় রুমের সবার সঙ্গে সখ্যতা বাড়ে। সবাই মিলে একসঙ্গে খাওয়া, সিনিয়র-জুনিয়র বন্ডিং তৈরি, পরস্পরকে অতি কাছে থেকে জানা, পাশে থাকা দারুণ অনুভূতি তৈরি করে। এতে একসময় মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটানো সবচেয়ে মজার ও সুন্দর সময়টা এ গণরুম।

কিন্তু বাস্তবতা তো থাকেই। সাধারণত দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাজনীতির হাতিয়ার আর মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতীক হয়ে ওঠে এ গণরুম। ইবির অনেক হলেই এর প্রতিফলন রয়েছে। গণরুম জিইয়ে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও আবাসিক সমস্যার সমাধানে তেমন আন্তরিক হয় না। ফলে গণরুমকেন্দ্রিক র‍্যাগিংয়ের অনেক ঘটনা ঘটে। ইবির ফুলপরীর কথা সবাই জানি আমরা। ফুলপরীর ঘটনা প্রকাশ্যে এলেও অনেক ঘটনা চেপে থাকে চার দেয়ালের মধ্যেই। হলে শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে কোণঠাসা হয়ে গাদাগাদি করে থাকতে হয় বছরের পর বছর। নিজেদের টিকিয়ে রাখতে হয়। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি সমস্যাও বেশি দেখা যায়। এক রুমে ৭০ জন অবস্থান করায় রুমটি এতটাই গরম থাকে যে এখানে টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়ে।

সবচেয়ে ভয়াবহ হলো পড়ার মতো পরিবেশ থাকে না। নিজের রুমের লেখাপড়ার যে সুযোগ তা থেকে আমরা প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছি। যার জন্য অধিকাংশ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করতে ব্যর্থ হ়ন। দীর্ঘ সময় গণরুমে অবস্থানকালে হলের ডাইনিংয়ের নিম্ন মানের একই খাবার প্রতিদিন খাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। খাবার থেকে শুরু করে রিডিং রুমে, মোবাইল ফোন চার্জ দেয়া এমনকি বাথরুমে পর্যন্ত সিরিয়াল দিতে হয়। গণরুমে এখন ২০২০-২১, ২০২১-২২, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে অবস্থান করছেন। ক্লাস শুরু হলে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষকেও দেখা যাবে। ইবি শিক্ষার্থীদের যেন এ গণরুমেই শিক্ষাজীবন শেষ করতে হবে। দীর্ঘ সময় অবস্থানের ফলে একসময় মনে হয় যেন চার দেয়ালের আয়নাঘরে বন্দি সবাই। বিষয়টি শিক্ষার্থীদের জীবনমানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

এছাড়া প্রায়ই বিভিন্ন হলে নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ ওঠে। সম্প্রতি ইবি খালেদা জিয়া হলে বৈদ্যুতিক শট সার্কিটজনিত দুর্ঘটনা ঘটলেও এ ব্যাপারে তেমন কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না, যার মাধ্যমে স্থায়ী সমাধান আসবে। চিফ ইঞ্জিনিয়ার হলের একটি ব্লককে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছেন। অথচ এক সপ্তাহের মধ্যে কোনো সংস্কার ছাড়াই শিক্ষার্থীদের সে ব্লকে থাকার জন্য বলা হচ্ছে। মূলত আবাসিক সিট সংকটে গণরুমের ব্যবস্থা করা হলেও গণরুমের সমস্যা কোনো পদক্ষেপ কখনো নেয়া হয় না। তাই শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে গণরুমের সংখ্যা নয়, হল সংখ্যা বাড়িয়ে মানসম্মত সিটের ব্যবস্থা করা উচিত।

মোছা. ইসমা খাতুন, শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

আরও