বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

নিজের শরীরে ৪৯টা স্প্লিন্টার, চোখের সামনে লাশ, বুঝলাম কীসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি

কোটা আন্দোলনে আমার সম্পৃক্ততা অনেকটা হুট করেই শুরু হয়েছিল। হোমটাউন চট্টগ্রাম থেকে আন্দোলনে যোগ দিতে ঢাকায় আসি।

কোটা আন্দোলনে আমার সম্পৃক্ততা অনেকটা হুট করেই শুরু হয়েছিল। হোমটাউন চট্টগ্রাম থেকে আন্দোলনে যোগ দিতে ঢাকায় আসি। ১৮ জুলাই সকাল ৯টায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সামনে নেমেই দেখি কিছু শিক্ষার্থী আর পুলিশের জটলা, সবাই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে আর পুলিশ বাধা দিচ্ছে। পুলিশ মারমুখী হয়ে টিয়ারশেল ছুড়ে মারল। সবাই ক্যাম্পাসের ভেতর আশ্রয় নিলাম, কিন্তু পুলিশ মেইন গেইটের ফাঁক দিয়ে আমাদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে থাকল। পুলিশ সমানতালে রাবার বুলেট আর স্প্লিন্টার নিক্ষেপ করতে থাকে। এ অবস্থা চলল প্রায় দুপুর ১২টা পর্যন্ত। একসময় পুলিশ ভার্সিটির সামনে প্রধান সড়কের পাশেই কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটিতে অবস্থান নেয় এবং সেখান থেকেই গুলিবর্ষণ করতে থাকে। আমি ভাবলাম সামনে এগোই, তাহলে বাকিরা সামনে আসার সাহস পাবে। ঠিক তখনই আমার দিকে এক পুলিশ সদস্য গুলি করে। গালে হাত বুলিয়ে দেখি রক্ত ঝরছে, শার্ট পুরোটা রক্তাক্ত হয়ে আছে। রক্ত দেখে আরো জিদ চেপে গেল, তখন আমি ওই রক্তাক্ত অবস্থায়ই সামনে এগিয়ে গেলাম, আমার দেখাদেখি আরো অনেকে এলো। 

পরিস্থিতি শান্ত হলে গুনে দেখি ৪৯টা স্প্লিন্টার গেঁথেছে পুরো শরীরে। পুলিশের পাশবিক হামলা চলতেই থাকে বিকাল পর্যন্ত। এর মাঝে মাথার ওপর দিয়ে মাছির মতো র‍্যাবের হেলিকপ্টার উড়ছে। চোখের সামনে একজনের লাশ নিয়ে আসা হলো ব্র্যাকের মেডিকেলে। ওর মাথায় গুলি লেগেছিল। ছেলেটার লাশের দিকে তাকিয়ে প্রথমবার আমি অনুভব করলাম, আমরা কীসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। শরীরে এতগুলো স্প্লিন্টার নিয়েও যুদ্ধ করে গেছি, অ্যাড্রিনালিন রাশের জন্য কিছু টের পাইনি, কিন্তু এই প্রথমবার আমি ভেঙে পড়লাম। হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে আরেক সহযোদ্ধাকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদলাম। যে ভাইকে জড়িয়ে কাঁদলাম, আমরা কেউ কাউকে চিনি না, কিন্তু দুজনই কাঁদছি অঝোরে।

এম তকী মাহমুদ ঐতিহ্য 

শিক্ষার্থী, বিবিএ, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি

আরও