আন্দোলনে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা

জাবিতে সাংবাদিকদের দিকে অস্ত্র তাক করেছিল কেউ কেউ

আন্দোলনের শুরু থেকেই জীবনের ঝুঁকি আর মামলার ভয় নিশ্চিত জেনেও সর্বোচ্চ দিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে গেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকরা।

আন্দোলনের শুরু থেকেই জীবনের ঝুঁকি আর মামলার ভয় নিশ্চিত জেনেও সর্বোচ্চ দিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে গেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকরা। আন্দোলন ৫ জুলাই থেকে শুরু হলেও সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলার ঘটনা ঘটে ১৫ জুলাই রাত থেকে। এর আগে প্রতিবেদন প্রকাশের জের ধরে ফেসবুকে বুলিং ও ট্যাগিং করা হয়েছে। ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলসংলগ্ন এলাকায় তাদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী নেতাকর্মীরা। এ হামলার জের ধরে সংঘর্ষ ও পাল্টা সংঘর্ষ চলে। রাত ১০টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা হামলার ঘটনায় বিচার ও নিরাপত্তার দাবিতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়। এদিকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসসংলগ্ন এলাকা থেকে বহিরাগত সন্ত্রাসী ভাড়া করে ট্রাকসহ অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করে। তাদের কাছে দেশীয় ধারালো অস্ত্র, পিস্তল ও পেট্রল বোমা ছিল। বিষয়টি প্রশাসনকে জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। 

এরপর রাত ১২টার দিকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হামলা করে। আন্দোলনকারীরা ভিসির বাসভবনের আঙিনায় প্রবেশ করে। সাংবাদিকরা নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে হামলার ছবি-ভিডিও ধারণ করতে প্রথমে ভিসির বাসভবন লাগোয়া প্রো-ভিসির বাসায় স্থান নেয়। এরপর অবস্থার অবনতি হলে ট্রেজারারের বাসভবন ডিঙিয়ে পার্শ্ববর্তী পুকুরসংলগ্ন স্থানে অবস্থান নেন সাংবাদিকরা। অবজারভারের প্রতিনিধি মাহ আলম ও প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার রাহাত চৌধুরী আহত বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে আশ্রয় নিতে গেলেও ক্লাবে থাকা অধ্যাপক ইস্রাফিল ও সহযোগী অধ্যাপক কানন সরকার সেখানে প্রবেশ করতে দেয়নি। এ সময় নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে ফোনে কাউকে জানানোর মতো অবস্থাও ছিল না। তার পরও কয়েকজন সাংবাদিক শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিষয়টি গণমাধ্যম অফিসে জানায় যাতে সবাইকে জানানো যায়। কেউ কেউ ফেসবুকে তা প্রকাশ করে। কিছুক্ষণ পর কয়েকজন সাংবাদিক এগিয়ে এলে এ সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিষয়টি জানাজানি হলে সাবেক-বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনে ক্ষোভ সঞ্চারিত হয়। এ সময় পুকুরপাড়ে অবস্থান নেয়া কয়েকজন সাংবাদিক প্রো-ভিসির বাসার গেটে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলে। সেই সময় পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে হামলাকারীরা ভিসির বাসভবনের ভেতরে যাওয়া-আসা করছিল। সাংবাদিকদের দিকে অস্ত্র তাক করেছিল কেউ কেউ। ছবি তোলার সুযোগ ছিল না। এরই মধ্যে কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা পুকুরপাড়ে থাকা বাকি সাংবাদিকদের অস্ত্র নিয়ে মারতে গেলে পুলিশের সহায়তা চাওয়া হয়। তারা তখনো অসহযোগিতা করে। পরে দুয়েকজন শিক্ষক এবং কয়েকজন সহকর্মী মিলে নেতাদের পিছু নিয়ে তাদের থামানো হয়। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আন্দোলনকারীদের মধ্যে থেকে একজন নারী শিক্ষার্থী ফেসবুক লাইভে আসেন। পুলিশ তখনো শিক্ষার্থীদের বের করে দিতে চেয়েছিল। পরে সাংবাদিকরা সেখানে থাকায় পুলিশ খুব জোর দেখায়নি। এরই মধ্যে হলে থাকা অন্য সাধারণ শিক্ষার্থীরা এলে ছাত্রলীগ পিছু হটে। সাংবাদিকরা নিরাপত্তার স্বার্থে পুনরায় প্রো-ভিসির বাসভবনে প্রবেশ করে। কিছু পুলিশ সদস্যও তাদের সঙ্গে আশ্রয় নেয়। পুলিশ সময় না দিয়ে অতি দ্রুত শটগান থেকে ছররা গুলি করে। সবার কাছে তখন সাংবাদিকতার পরিচিতি পত্র ছিল। ১-২ মিনিটের মধ্যে চারজন গণমাধ্যমকর্মী গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় বাকিরা এসে উদ্ধার করতে চাইলে তাদের দিকেও বন্দুক তাক করা হয়। সবাই তখন হাত উঁচিয়ে সাংবাদিক সাংবাদিক বলে চিৎকার করে। এর পরও না থামলে একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা এসে পুলিশকে বলে। এরপর পুলিশ গুলি করা বন্ধ করে। গুলিবিদ্ধদের মধ্যে ছিলেন খবরের কাগজের প্রতিনিধি আব্দুর রহমান সার্জিল, দৈনিক জনকণ্ঠের প্রতিনিধি ওয়াজহাতুল ইসলাম, বাংলাদেশ টুডের জোবায়ের আহমেদ ও বণিক বার্তার মেহেদী মামুন। পরে একজন শিক্ষকের গাড়িতে করে সবাইকে হাসপাতালে নেয়া হয়। সে রাতেই শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাসছাড়া করে।

আরও