ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা

ঢাবিতে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার গোড়াপত্তন পাকিস্তান আমলে

দেশভাগের পর থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সময়কাল ছিল পূর্ববঙ্গের মানুষের জাতিসত্তা বিকাশের।

দেশভাগের পর থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সময়কাল ছিল পূর্ববঙ্গের মানুষের জাতিসত্তা বিকাশের। ১৯৪৭ সালের পর এ অঞ্চলের মানুষের অধিকার আদায়ে পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের কেন্দ্রে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস। ফলে ঢাবিতে কী ঘটছে তা জানতে অপেক্ষায় থাকত সারা দেশের মানুষ। এভাবে এ প্রতিষ্ঠানের সংবাদের চাহিদা তৈরি হওয়ায় দৈনিক পত্রিকাগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক নিয়োগ দেয়ার মাধ্যমে নতুন বিট সৃষ্টি করেন। এভাবেই গোড়াপত্তন হয় ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার।

বলছিলাম গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের কথা। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কে, কখন থেকে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে রিপোর্টিং শুরু করে তা জানা যায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুল কবির ‘‌ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার ছয় দশক ও ডুজার ৩৬ বছর’ শীর্ষক নিবন্ধে উল্লেখ করেন, ‘‌পঞ্চাশের দশকের শেষ সময় থেকে পত্রিকাগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা প্রতিবেদক নেয়ার প্রচলন শুরু হয়।’ সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ১৯৬০ সালে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার হিসেবে নিয়োগলাভের কথা জানান। এ কথার সত্যতা পাওয়া যায় তৎকালীন পাকিস্তান অবজারভারের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক ছাত্র মীজানূর রহমান শেলীর একটি লেখায়। তার ভাষায়, ‘‌পাকিস্তান আমলে মুষ্টিমেয় ঢাকাই পত্রিকাগুলোর মধ্যে আলাদা করে ক্যাম্পাস রিপোর্টার নিয়োগ দেয়ার সামর্থ্য ছিল হাতে গোনা কয়েকটি সংবাদপত্রের—পাকিস্তান অবজারভার,  মর্নিং নিউজ ও ইত্তেফাকের। মর্নিং নিউজের রিপোর্টার ছিলেন অর্থনীতির ছাত্র একেএম জালালুদ্দিন। যিনি পরবর্তী সময়ে নেপালের রাষ্ট্রদূত হয়েছিলেন।’

ষাটের শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা ও গণঅভ্যুত্থান থেকে শুরু করে সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন পালিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। ফলে ঐতিহাসিক এ সময়গুলোতে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন ক্যাম্পাস রিপোর্টাররা। ১৯৬৯ সালে ‘‌বিশ্ববিদ্যালয়ের চিঠি’ নামে ফিচার পাতা বের করত দৈনিক পাকিস্তান। সে সময় এ পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ছিলেন ভূইয়া ইকবাল। একাত্তরের মার্চ মাস, উত্তাল সেই দিনগুলোতে ঐতিহাসিক বটতলার বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, ধর্মঘট কিংবা কলা ভবনের পতাকা উত্তোলন—সব ঘটনার কাভারেজ দিয়েছেন নবীন প্রতিবেদকরা।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সাংবাদিক বই থেকে জানা যায়, ‘‌১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ২৫ মার্চ কালরাতে ইকবাল হলের (বর্তমান শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) জানালার কার্নিশ বেয়ে ওপরে উঠে যান দৈনিক আজাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী চিশতী হেলালুর রহমান। সেখান থেকে পাকিস্তানি সেনাদের গতিবিধি লক্ষ করতে গিয়ে নজরে পড়েন। পরে তাকে নিচে নামিয়ে এনে গুলি করে হত্যা করা হয়।’ মর্নিং নিউজ, ইত্তেফাক, অবজারভার, দৈনিক পাকিস্তান, বাসস, দৈনিক পয়গাম ও বাংলার বাণী পত্রিকায় বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ছিল বলে সাজ্জাদুল কবির তার লেখায় উল্লেখ করেছেন। 

ঢাবিতে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা পঞ্চাশের দশকে শুরু হলেও সাংবাদিক সমিতি প্রতিষ্ঠা হয় সত্তরের দশকে। যদিও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। এরপর  বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টার পর ১৯৮৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ডুজা)। ১৩ জন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক নিয়ে যাত্রা শুরু করা এ সংগঠন এখনো কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

আরও