তরুণ ছাত্র-ছাত্রীরা অনেকেই এখন আর গতানুগতিক বিষয়ে পড়াশোনার পেছনে না ছুটে সৃজনশীল বিষয়ে আগ্রহী হচ্ছেন। বাঁধাধরা চাকরি বাদ দিয়ে পেশা হিসেবেও সৃজনশীল বিষয়গুলো তাদের পছন্দের শীর্ষে। সৃজনশীল বিষয়গুলোয় আগ্রহের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান থাকা অপরিহার্য। শৈল্পিক ও প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান আপনার দক্ষতাকে বাড়িয়ে তুলবে। এমনই একটা সৃজনশীল বিষয় হলো ফটোগ্রাফি।
তথ্য-প্রযুক্তির বিকাশের যুগে বিশ্বের বহু দেশে ফটোগ্রাফি প্রতিষ্ঠিত পড়াশোনার বিষয় ও পেশা হলেও বাংলাদেশে এখনো সেভাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। ১৯৬০ সালের দিকে দেশে বেগআর্ট ইনস্টিটিউট অব ফটোগ্রাফির মাধ্যমে ফটোগ্রাফি বিষয়ে প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয়। এরপর ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ ফটোগ্রাফি সোসাইটি যাত্রা করে। ফটোগ্রাফি বিষয়ে এ প্রতিষ্ঠানগুলো স্বল্পমেয়াদি কোর্স ও প্রশিক্ষণের মতো শিক্ষা প্রদান করে এলেও দেশে দীর্ঘমেয়াদি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ ছিল না।
এমন পরিস্থিতিতে দেশে প্রথমবারের মতো শুধু ফটোগ্রাফি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রোগ্রাম চালু করেছে সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউট পাঠশালা। এ বছরের শুরু থেকে চালু হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চার বছর মেয়াদি এ স্নাতক প্রোগ্রামে ৩২টি কোর্স পড়ানো হচ্ছে। প্রথম ব্যাচে ভর্তি হওয়া ১০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন এবং এখন বিভাগটির দ্বিতীয় ব্যাচের ভর্তি প্রক্রিয়া চলছে। বিভাগটিতে ৬০ শতাংশ পড়াশোনা ব্যবহারিক ও ৪০ শতাংশ তত্ত্বীয়। স্নাতক প্রোগ্রাম ছাড়াও পাঠশালায় বিভিন্ন মেয়াদি শর্ট কোর্স চালু রয়েছে।
চলতি বছর স্নাতক প্রোগ্রাম চালু করলেও পাঠশালার যাত্রা কিন্তু অনেক আগে, ১৯৯৮ সালে। পাঠশালার শুরুর গল্পটাও ছিল ভিন্ন রকমের। পাঠশালার ফটোগ্রাফি বিভাগের প্রধান খন্দকার তানভীর মুরাদ জানালেন পাঠশালা শুরুর গল্প। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের হাত ধরে ১৯৮৯ সালে দৃক যাত্রা করে। সেখানে আরো কয়েকজন নামকরা আলোকচিত্রী যোগ দেন। তখন তাদের মাথায় একটা বিষয় খুব ঘুরপাক খাচ্ছিল, বাইরের দেশ থেকে ফটোগ্রাফাররা বাংলাদেশে ছবি তুলতে আসেন, এখানে আমরা কেন আমাদের ছবি তুলতে পারি না? কেন বিদেশ থেকে এসে আমাদের গল্প বলতে হয়? আমাদের গল্প আমরা বলতে পারি না? সে ভাবনা থেকে দৃক কাজ শুরু করে এবং একটা পর্যায় গিয়ে দেখে আমরা তো গল্প বলতে চাই, কিন্তু সে দক্ষতা আমাদের নেই। সে গল্প বলার দক্ষতা তৈরি করতেই প্রতিষ্ঠা করা হয় পাঠশালা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ফটোগ্রাফাররা যেন শিখতে পারেন কীভাবে ছবি দিয়ে গল্প বলতে হয়। আমরা শুধু আমাদের গল্প বলব না, আমরাও বিদেশ যাব বা আমাদের গল্পগুলো বিশ্বব্যাপী তুলে ধরব। সে জায়গা থেকে যাত্রা করে পাঠশালা।