স্বেচ্ছাসেবী

ক্যাম্পাসে পরিবেশ রক্ষায় তৎপর পরিবেশ সংসদের স্বেচ্ছাসেবীরা

করোনা সংক্রমণের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ওয়ান টাইম কাপে চা খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে।

করোনা সংক্রমণের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ওয়ান টাইম কাপে চা খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। তবে এ চিত্র পুরো দেশেরই। এতে বেড়ে যায় প্লাস্টিকের ব্যবহার। ২০২১ সালের শেষে মহামারীর প্রকোপ কমলেও এ ট্রেন্ড থেকে যায়। ঢাবির টিএসসি এলাকায় যেখানে সেখানে পড়ে থাকতে দেখা যায় পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এসব প্লাস্টিক বর্জ্য। পরে ওই বছরই প্লাস্টিকের চায়ের কাপ ব্যবহার বন্ধ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ বেশকিছু বিষয় নিয়ে টিএসসির দোকান মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ সংসদ। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্লাস্টিকের কাপ ব্যবহার বন্ধ করেন তারা। এছাড়া ভাসমান ঝালমুড়ি ও ফুচকার দোকানিরা ডাস্টবিন ব্যবহার শুরু করেন।

প্লাস্টিকের কাপ ব্যবহার করেন না জানিয়ে টিএসসির চায়ের দোকানদার জালালুদ্দিন বলেন, ‘‌মামারা (পরিবেশ সংসদের সদস্যরা) বলার পর আমি আর প্লাস্টিকের কাপ আনি না। তবে কেউ কেউ লুকিয়ে প্লাস্টিকের কাপ ব্যবহার করে। আবার অনেক শিক্ষার্থী প্লাস্টিকের কাপে চা চায়। তারা ওয়ান টাইম কাপ ছাড়া চা খেতে চায় না।’

পরিবেশ সংসদের দপ্তর সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী শেখ রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘‌মতবিনিময় সভার পর একটা ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। ঝালমুড়ি ও ফুচকাওয়ালারা টিএসসি নোংরা করা বন্ধ করেন। দীর্ঘদিন প্লাস্টিকের কাপের ব্যবহার বন্ধ ছিল। কয়েকদিন ধরে আবারো এর ব্যবহার লক্ষ করা যাচ্ছে। দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ প্লাস্টিকের কাপে চা দিতে জোর করেন। এমতাবস্থায় অচিরেই আরেকটি মতবিনিময় সভা করার কথা জানান এ স্বেচ্ছাসেবী।

‘‌সুস্থ পরিবেশ, শান্তিময় পৃথিবী’ স্লোগানকে সামনে রেখে ২০১১ সালের ৫ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ সংসদ। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিবেশ বিষয়ে সচেতন করা এবং পরিবেশ রক্ষা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় দক্ষ ও নিষ্ঠাবান করে গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। এছাড়া পরিবেশবিষয়ক সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে দেশব্যাপী কাজ করছেন স্বেচ্ছাসেবী এ সংগঠনের সদস্যরা।

পরিবেশবিষয়ক এ সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সারা বছর বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নিয়মিত পাঠচক্র, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশসংক্রান্ত বিষয়ে কর্মশালা, পরিবেশবিষয়ক সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী। এছাড়া পরিবেশ সংসদ পরিবেশের ক্ষতি করে এমন গাছ কেটে ফেলার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং ফায়ার সেফটি ওয়ার্কশপ ও বিভিন্ন পরিবেশসংক্রান্ত দিবস উপলক্ষে সেমিনার বা ওয়েবিনারের আয়োজন করে। 

সম্প্রতি স্বেচ্ছাসেবী তরুণ-তরুণীদের সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসজুড়ে ১০০টি বৃক্ষ রোপণ করেছে পরিবেশ সংসদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন এবং টিএসসিতে শোভা পাচ্ছে এসব গাছ। এছাড়া নিয়মিত ক্লিন ক্যাম্পাস প্রোগ্রামের আয়োজন করেন এ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকা স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থীরা। প্রতি বছর পরিবেশ সংসদের পক্ষ থেকে ক্লাইমেট ওয়াচ নামে পরিবেশসংক্রান্ত গবেষণা, লেখা, পরিবেশবিদদের সাক্ষাৎকার ও মতামত সংবলিত সাময়িকী বের করা হয়। সংগঠনটি পরিবেশ দূষণসংক্রান্ত ছবির প্রতিযোগিতার আয়োজন করে, যা এনভায়রনমেন্ট ফটো ফেস্ট নামে পরিচিত। এছাড়া সম্প্রতি ঢাবি ক্যাম্পাসের দুর্লভ এবং পুরনো গাছগুলোর নামকরণ করেছে। ফলে গাছগুলোর গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষ সচেতন হচ্ছে।

সংগঠনের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী আরাফাত আরেফিন উৎস বলেন, ‘‌আমরা আগামীতে এনভায়রনমেন্ট ফেস্ট আয়োজন করব। বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্কুল পর্যায়ে পরিবেশ অলিম্পিয়ড আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণ, দূষণসংক্রান্ত পোস্টার কম্পিটিশনও আয়োজন করা হবে। শিক্ষার্থীদের বেসিক এনভায়রনমেন্ট ওয়ার্কশপ আয়োজন করাও সময়ের দাবি।’

আরও