ডুয়েট রোবোটিকস ক্লাব

রোবট নিয়েই যাদের স্বপ্ন

প্রাত্যহিক জীবন থেকে শুরু করে কলকারখানাসহ নানা কাজে রোবট ব্যবহারের চেষ্টা চলছে জোরেশোরে। রোবট এখন শিল্প-কারখানা, সামরিক, মহাকাশ অনুসন্ধান, সমুদ্রের নিচে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন এবং ব্যক্তিগত কাজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে। মঙ্গল গ্রহ কিংবা চাঁদে অভিযান, শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা খাবারের দোকান পরিচালনা—প্রতিটি ক্ষেত্রে চলছে রোবটের জয়জয়কার।

প্রাত্যহিক জীবন থেকে শুরু করে কলকারখানাসহ নানা কাজে রোবট ব্যবহারের চেষ্টা চলছে জোরেশোরে। রোবট এখন শিল্প-কারখানা, সামরিক, মহাকাশ অনুসন্ধান, সমুদ্রের নিচে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন এবং ব্যক্তিগত কাজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে। মঙ্গল গ্রহ কিংবা চাঁদে অভিযান, শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা খাবারের দোকান পরিচালনাপ্রতিটি ক্ষেত্রে চলছে রোবটের জয়জয়কার। আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়ন ব্যবহারে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রোবট তৈরিতে প্রতিনিয়ত সফলতা দেখাচ্ছেন। এক্ষেত্রে ঢাকা ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির (ডুয়েট) শিক্ষার্থীদের সংগঠন ডুয়েট রোবোটিকস ক্লাব দেশ দেশের বাইরে প্রতিনিয়ত সাফল্য বয়ে আনছে। তাদের ধ্যান-জ্ঞান স্বপ্ন রোবট নিয়ে।

ডুয়েট রোবোটিকস ক্লাবের অগ্রযাত্রার ইতিহাস খুব বেশি পুরনো নয়। রোবোটিকস নিয়ে কিছু করার ভাবনা থেকে ২০১৪ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি ডুয়েট শিক্ষার্থী রূপায়ন হালদারের নেতৃত্বে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা করে ডুয়েট রোবোটিকস ক্লাব। মেধা দক্ষতা দিয়ে অল্প সময়েই রোবোটিকসে নিজেদের ভালো অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন ডুয়েট পরিবারের সদস্যরা। তাদের অর্জন কেবল দেশেই নয়, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ছড়িয়ে গেছে। বর্তমানে ডুয়েট রোবোটিকস ক্লাবে ২৫০ জন সদস্য থাকলেও ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী সক্রিয়ভাবে রোবোটিকস নিয়ে কাজ করছেন। ক্লাবের একই বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে বিভিন্ন নামে একেকটি দল গঠন করে থাকেন। ডুয়েট টাইম আউট, ডুয়েট রোবো এক্সপ্রেস, ডুয়েট নিউট্রিনো, ডুয়েট জিব্যাক, ডুয়েট পজিট্রনএমন বিভিন্ন নামের দল নিয়ে তারা জাতীয় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন।


শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর ক্লাবটিতে নতুন সদস্য সংগ্রহ করা হয়। সামান্য রেজিস্ট্রেশন ফি কিছু ব্যক্তিগত তথ্য দেয়ার মাধ্যমে সদস্য হতে পারেন ডুয়েটের যেকোনো শিক্ষার্থী। ক্লাবটি ডুয়েটের সব শিক্ষার্থীর জন্য একটি আধুনিক প্রযুক্তিগত প্লাটফর্ম, যেখান থেকে শিক্ষার্থীরা বিভিন্নভাবে দক্ষতা বৃদ্ধিসহ নিজের প্রতিভার প্রকাশ করতে পারেন। শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তির সঠিক মূল্যায়ন বাস্তবায়নের জন্য কাজের পরিবেশ তৈরি করা, দেশ-বিদেশে বিভিন্ন রোবোটিকস প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা, প্রজেক্ট ফেয়ার গবেষণামূলক কাজের জন্য উৎসাহিত করা, নতুনদের জন্য লার্নিং ক্লাস, আইডিয়া শেয়ারিং ক্লাস, বিভিন্ন সেমিনার, ওয়ার্কশপ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্যুরের মাধ্যমে বিজ্ঞান চর্চা প্রযুক্তিমূলক কাজের প্রতি আগ্রহী করে তোলাসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে ক্লাবটি।

এক্সপ্রেস ইউরসেলফ উইথ টেকনোলজিস্লোগানে যাত্রার পর থেকেই ক্লাবের সদস্যরা দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সফলতার মুখ দেখেছেন। যাত্রা শুরুর বছর ভারতের মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিতইন্টারন্যাশনাল রোবোটিকস চ্যালেঞ্জ (আইআরসি)-২০১৪প্রতিযোগিতায় চতুর্থ স্থান অর্জন করে ক্লাবের একটি দলডুয়েট টাইম আউট শুধু তাই নয়, মঙ্গল গ্রহের অভিযানের জন্য তাদের তৈরি করা রোবটবিডি মার্শিয়ান-ইউকে-উইআরসি-২০১৬ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য বাছাই হয়েছিল। ডুয়েট টাইম আউটের জাতীয় পর্যায়ের অর্জনের মধ্যে অন্যতম হলোম্যাক্সিলারেশন-২০১৪ (আইইউটি)’তে চ্যাম্পিয়ন এবং আরএমএ রোবো রেস-২০১৪ ইজনেন্স-২০১৪তে দ্বিতীয় রানার্সআপ। ক্লাবের অন্যতম সেরা দলডুয়েট রোবো এক্সপ্রেস২০১৫ সালে রুয়েটে অনুষ্ঠিতরোবোট্যুর প্রোগ্রামিং কন্টেস্ট’- দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়ে সাফল্যের সিঁড়িতে পা রাখে। এরপর একে একেরোবো ট্যুর অ্যান্ড প্রোগ্রামিং কনটেস্ট-২০১৫তে দ্বিতীয় রানার্সআপ, ‘ম্যাক্সিলারেশন- ২০১৫তে দ্বিতীয় রানার্সআপ, ‘রোবোলুশন-২০১৬তে চ্যাম্পিয়ন, ‘রোবোড্রোয়েড চ্যাম্পিয়নশিপ-২০১৬তে প্রথম রানার্সআপ এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিতসাইবারনট-২০১৬তে চ্যাম্পিয়ন হয় রোবো এক্সপ্রেস দলটি। এছাড়া ডুয়েট নিউট্রিনো দলরুয়েট রোবোফেস্ট-২০১৬তে প্রথম রানার্সআপ, ‘রোবোড্রোয়েড চ্যাম্পিয়নশিপ-২০১৬তে দ্বিতীয় রানার্সআপ এবংরোবোলুশন-২০১৭তে চ্যাম্পিয়ন দ্বিতীয় রানার্সআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ২০১৮ সালে ভারতের আইআইটি কানপুর আয়োজিতটেকক্রিতি-২০১৮তে দ্বিতীয় রানার্সআপ হয় ক্লাবের জিব্যাক দল। সদ্য শেষ হওয়া বছরে কুয়েটের দুটি রুয়েটের একটি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো ছয়টি প্রতিযোগিতায় রানার্সআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে রোবোটিকস ক্লাব।


বিশেষ করে লাইন ফলোয়ার রোবট প্রতিযোগিতায় ডুয়েট রোবোটিকস ক্লাবের বেশ সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। এমআইএসটি আয়োজিত প্রতিযোগিতায় ক্লাবের সদস্যরা পরপর তিনবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। সম্প্রতি কুয়েটেইইই ডে-১৯আয়োজিত লাইন ফলোয়ার রোবট প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় ক্লাবেরডুয়েট পজিট্রন এছাড়া একই ভেনুতে অন্য আরেকটি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় ডুয়েট রোবো জিব্যাক। গত সেপ্টেম্বরে রুয়েটে অনুষ্ঠিত রোবোট্রনিকস ১৯-এর লাইন ফলোয়ার রোবট ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয় পজিট্রন দল।

লাইন ফলোয়ার রোবটের বর্তমান প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে ডুয়েট রোবোটিকস ক্লাবের সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পাশাপাশি আমাদের দেশেও লাইন ফলোয়ার রোবটের চাহিদা বাড়ছে। হোটেল বা রেস্তোরাঁয় ওয়েটার হিসেবে গ্রাহকদের নির্দিষ্ট টেবিলে খাবার পৌঁছে দেয়া, কলকারখানাগুলোয় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পণ্য পরিবহনসহ নানা কাজে লাইন ফলোয়ার রোবট কাজ করছে। রোবটের মাধ্যমে ভুলভ্রান্তি ছাড়াই দ্রুত কাজ করা সম্ভব হচ্ছে।

লাইন ফলোয়ার ছাড়াও আমরা হিউম্যানয়েড রোবট নিয়ে কাজ করি। আমাদের হিউম্যানয়েড রোবট বাংলায় কথা বলা এবং কেউ প্রশ্ন করলে সেটার উত্তর করতে পারে। এছাড়া আমরা একটা স্বয়ংক্রিয় শপ তৈরি করেছিলাম। পুরো দোকানটায় ছিল রোবট, সেখানে কোনো দোকানদারের প্রয়োজন পড়বে না। কোনো ক্রেতা কিছু কিনতে চাইলে দোকান উত্তর দিতে পারবে সেই পণ্য আছে না নেই, ক্রেতার সঙ্গে দরদাম করবে এবং দোকান নিজেই সেই পণ্য সরবরাহ করবে। এটা আমাদের সংগ্রহে আছে। এছাড়া আমরা স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ সিস্টেম প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করি। কোথাও আগুন লাগলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফোনে মেসেজ চলে যাওয়া বা কারখানার কোনো যন্ত্র নষ্ট হলে বা বন্ধ হয়ে গেলে ফোনে জানিয়ে দেয়া এবং কলকারখানার যন্ত্রগুলো ঠিকমতো কাজ করছে কিনা, এটা যেকোনো স্থানে বসে অনলাইনে দেখতে পারার মতো প্রজেক্ট আমরা বাস্তবায়ন করছি’—বলছিলেন ডুয়েট রোবোটিকস ক্লাবের সভাপতি।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ডুয়েট রোবোটিকসের সদস্যরা দেশের রোবোটিকসকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন অ্যাডভান্সড রোবোটিকস নিয়ে কাজ করছেন। বিশ্বব্যাপী আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে অনেক কাজ হচ্ছে, আমরাও আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সাজাচ্ছি। আমাদের স্থায়ী কোনো ল্যাব ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ দপ্তর থেকে আমাদের একটা কক্ষ দিয়েছে এবং সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) থেকে আমরা একটা ফান্ড পেয়েছি। দিয়ে ল্যাব স্থাপনের কাজ চলছে। আশা করছি, ল্যাব হলে আমরা আরো ভালো কিছু তৈরি করতে পারব।

আরও