নির্বাচনের আগে জোটসঙ্গীদের কাছে টানছে আওয়ামী লীগ

সরকারবিরোধী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোটের আত্মপ্রকাশ। নবম, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনেও জোটবদ্ধভাবে অংশ নিয়ে টানা তিন মেয়াদে সরকার গঠন করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দলটি। তবে নানা কারণে এক সময় শরিক দলগুলোর মধ্যে দেখা দেয় টানাপড়েন। জমা হয় মান-

সরকারবিরোধী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোটের আত্মপ্রকাশ। নবম, দশম একাদশ সংসদ নির্বাচনেও জোটবদ্ধভাবে অংশ নিয়ে টানা তিন মেয়াদে সরকার গঠন করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দলটি। তবে নানা কারণে এক সময় শরিক দলগুলোর মধ্যে দেখা দেয় টানাপড়েন। জমা হয় মান-অভিমান। এবার দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সেই দূরত্ব ঘুচিয়ে আনতে চায় ক্ষমতাসীনরা। শরিকদের সঙ্গে নিয়েই মোকাবেলা করতে চায় সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতারই দাবি, আসন্ন নির্বাচন নিয়ে দেশীয় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে। এসব মোকাবেলায় ১৪ দলীয় জোট ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে। একই সঙ্গে সামনের নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে জোটের কার্যকর ভূমিকাও জরুরি। আর জোটভিত্তিক নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে হিসাব-নিকাশ, আলোচনার ভিত্তিতেই সেগুলো সমাধান করা হবে।

ক্ষমতাসীন জোটটির বেশ কয়েকটি শরিক দলের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর আওয়ামী লীগ তার সরকারে শরিকদের কোনো প্রতিনিধিত্বই রাখেনি। এর ফলে জোটের ভেতর মান-অভিমানের পাশাপাশি কিছুটা অসন্তোষ দেখা দেয়। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচন এবং জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনগুলোতেও প্রধান দলের পক্ষ থেকে ছাড় না পাওয়ায় হতাশ হতে হয় শরিক দলগুলোকে। তবে সম্প্রতি বিএনপির ছেড়ে দেয়া ছয় আসনের দুটি জোটসঙ্গীদের এবং আরেকটি আসন উন্মুক্ত রাখার মাধ্যমে দূরত্ব কমানোর চেষ্টা চালায় আওয়ামী লীগ। তাতে কিছুটা সফলতাও এসেছে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক অঙ্গন ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক নানা কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের এককভাবে মাঠে থাকা, শরিক দলগুলোর পাশে না থাকা নিয়েও নানা আলাপ-আলোচনা ভেসে বেড়াচ্ছে। এমনও অভিযোগ রয়েছে, সর্বশেষ ছয় উপনির্বাচনে দুটি আসন শরিক দলকে ছেড়ে দিলেও প্রার্থীদের পাশে দেখা যায়নি আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের। শরিক দলগুলোর ভাষ্য, টানা তিনবারের ক্ষমতায় থাকা এবং তৃতীয় মেয়াদে শরিকদের কাউকে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই না দিয়েও আওয়ামী লীগ দেখেছে জোটে খুব একটা প্রতিক্রিয়া হয়নি। বাস্তবতায় জোটের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেছে কিনা তা নিয়েও ওঠে আলোচনার সুর। আছে ক্ষোভ, অভিমান শঙ্কা। তবে নির্বাচন সামনে আসায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আবারো শরিক দলগুলোকে কাছে টানার চেষ্টা চলছে।

ভবিষ্যতে রাজনৈতিক আন্দোলনে শরিকদের পাশে পাওয়া প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম বণিক বার্তাকে বলেন, আদর্শগত দিক দিয়ে আমরা জোট গঠন করেছি। সেটির কার্যকারিতা কখনো হারায়নি। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তিগুলোকে একসঙ্গে মোকাবেলা করতে আমরা জোটবদ্ধ। সাম্প্রদায়িক শক্তি, মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি এখনো সক্রিয়। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের জোটবদ্ধ লড়াই শেষ হয়নি। তাই আমি মনে করি আওয়ামী লীগ যদি এসব অপশক্তির বিরুদ্ধে মাঠে থাকে তাহলে শরিকরাও আমাদের সঙ্গে নামবে।

সরকারে না থাকলেও দিবসভিত্তিক আলোচনা সভাগুলো একসঙ্গেই করে আসছে ১৪ দলীয় জোট। সামনের বিভিন্ন কর্মসূচিতেও সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকবে বলে মনে করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আক্তার। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ১৪ দল একটি আদর্শিক জোট। যতদিন সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদের অশনিসংকেত রয়েছে, ততদিন জোটের কার্যকারিতার ব্যত্যয় ঘটবে না। সেই দিক থেকে আমরা কাজ করছি। ঈদের পর আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামব।

জোটবদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগ প্রথম দফায় ক্ষমতায় এলে শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পান বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দীলিপ বড়ুয়া। পরে সরকারে ঠাঁই না পেলেও ১৪ দলীয় জোটেই রয়েছে তার দল। ভবিষ্যতের বিষয়ে জানতে চাইলে দীলিপ বড়ুয়া বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের আদর্শিক লড়াই চলছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা আমাদের লড়াই চালিয়ে যাব।

ঐক্যবদ্ধভাবে জোট পরিচালিত হলেও এখনো অনেক অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, আমরা যে নীতি-আদর্শ নিয়ে ১৪ দলীয় জোট গঠন করেছি, সে কার্যক্রম এখনো চলছে। অসাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদমুক্ত দেশ বিনির্মাণের লড়াইয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে শামিল হয়েছি। তবে অভ্যন্তরীণ বেশকিছু বিষয় এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে। নির্বাচনে কোন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করা হবে বা আসন ভাগাভাগির বিষয়গুলো এখনো ঠিক হয়নি। সেগুলো ঠিক হওয়ার সময় যদিও এখন না। আগামীতে বিষয়গুলো স্পষ্ট হবে।

এদিকে নির্বাচনের আগে জোটের পরিধি আরো বাড়ার আভাস মিলছে। প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বণিক বার্তাকে বলেন, নির্বাচনের আগে জোট হয়। আমাদের জোট আছে। আগামী নির্বাচনেও জোট থাকবে, পরিধি আরো বাড়তে পারে। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি, সমমনা দল যারা আছেন তাদের নিয়ে পরিধি বাড়বে। তবে মুহূর্তে সব বলা যাবে না।

তিনি আরো বলেন, গতবারের মতো জোটভিত্তিক নির্বাচন করব, তাতে আরো কিছু দল আসতে পারে। আর যদি জোট শরিকরা মনে করে তারা আলাদা নির্বাচন করবে, তাহলে করতে পারে।

জোটের সার্বিক বিষয় নিয়ে ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, ১৪ দল আদর্শিক জোট। আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি, থাকব।

আরও