বিমানবন্দরে আটকে পড়া প্রবাসী

‘‌না পারছি বিদেশ যেতে না পারছি বাড়ি ফিরতে’

দেশের চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন ও কারফিউর কারণে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় বিমানবন্দরে ভিড় করছেন শত শত প্রবাসী। দুদিন ধরেই ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাদের ফ্লাইট শিডিউল পেতে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। গত শুক্র, শনি ও রোববার তিনটি এয়ারলাইনসের আন্তর্জাতিক রুটে ১৭টি ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। গত তিনদিনে যাদের ফ্লাইট বাতিল হয়ে

দেশের চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন ও কারফিউর কারণে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় বিমানবন্দরে ভিড় করছেন শত শত প্রবাসী। দুদিন ধরেই ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাদের ফ্লাইট শিডিউল পেতে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। গত শুক্র, শনি ও রোববার তিনটি এয়ারলাইনসের আন্তর্জাতিক রুটে ১৭টি ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। গত তিনদিনে যাদের ফ্লাইট বাতিল হয়েছে তাদের অনেকেই বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছেন। এয়ারলাইনস থেকে নিশ্চিত কোনো তথ্য না দেয়ায় তারা যেতে পারছেন না প্রবাসে, আবার চলমান কারফিউর জন্য ফিরতে পারছেন না বাড়িতেও।

অনেকে ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ করে বিমানবন্দর পৌঁছেন। এরপর বিমানবন্দরের আশপাশেই ঘোরাফেরা করে সময় পার করছেন। অনেকে রাস্তায় ঝামেলা হওয়ার ভয়ে একদিন আগেই বিমানবন্দরে এসেছেন। এসে আটকে গেছেন। এছাড়া দেশে চলমান অস্থিরতার জন্য দু-একদিন পর ফ্লাইট থাকার পরও অনেকে গতকাল দুপুরে হাজি ক্যাম্প সংলগ্ন বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে উঠেছেন। সেখানেও গুনতে হচ্ছে দু-তিন গুণ বেশি ভাড়া। 

ময়মনসিংহ থেকে ৪ হাজার টাকা সিএনজি ভাড়া দিয়ে বিমানবন্দরে এসেছেন শাহজাহান। আজ সকাল ১০টায় ফ্লাইট থাকলেও তিনি এসেছেন একদিন আগে গতকাল দুপুরে। বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌ˆদশের এ অবস্থায় কোনো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। তাই একদিন আগে চলে এসেছি। ভাড়া তিন গুণ হলেও আমার হাতে বিকল্প কোনো উপায় নেই। পথে পথে ভোগান্তির শেষ নেই।’

জানা যায়, ১৯ ও ২০ জুলাই সৌদিয়া এয়ার লাইনসের সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়। এতে চারটি ফ্লাইটে যাত্রী ছিলেন ১ হাজার ২০০। এসব ফ্লাইটে যেসব যাত্রীর সৌদি যাওয়ার কথা ছিল সবাই ফ্লাইট শিডিউলের জন্য বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছেন। তবে কারো ভিসার মেয়াদ দুদিন, কারো সাতদিন এমন যাত্রীদের সৌদি প্রবেশ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। যাদের ভিসার মেয়াদ দুই থেকে সাতদিন তাদের সৌদি প্রবেশের জন্য ফ্লাইট শিডিউলের অপেক্ষা করতে বলে এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ। তবে ঠিক কখন ফ্লাইট ছেড়ে যাবে সে ব্যাপারে এয়ারলাইনস থেকে যাত্রীদের নিশ্চিত কিছু বলেনি। শুধু অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। আর যেসব যাত্রীর ভিসার মেয়াদ ১৫ দিন বা তার বেশি সেসব যাত্রীকে বাড়ি ফিরে যেতে বলেছে কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মোবাইলে খুদেবার্তার মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা আগে ফ্লাইটের পুনঃশিডিউল জানানো হবে বলে জানিয়েছে প্রবাসীরা।

গত শুক্রবার মালয়েশিয়াগামী একটি ফ্লাইট বাতিল হয়। ওই ফ্লাইটের যাত্রী ময়মনসিংহের ফয়সাল জানান, রাত ১২টায় ফ্লাইট ছিল, কিন্তু বাতিল হওয়ার কথা জানানো হয়নি। বিমানবন্দরের ভেতরে ঢুকে রাতে জানতে পারেন ফ্লাইট বাতিল। হঠাৎ রোববার আবার ফোন করে জানায় সোমবার (গতকাল) রাত ১২টার পর ফ্লাইট, তবে কখন তা নিশ্চিত করে জানানো হয়নি। এ যাত্রী গতকাল সকাল থেকে বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলেন। 

২০ জুলাই রাত ৩টায় সৌদিয়া এয়ারলাইনসে ফ্লাইট ছিল কুমিল্লার আরিফুল ইসলামের। তার ভিসার মেয়াদ শেষ হবে ২৩ জুলাই। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘দেশের চলমান এ অনিশ্চয়তার মধ্যে শুক্রবার ঢাকায় আসি। ফ্লাইট ছিল শনিবার রাত ৩টায়। পরে এটি বাতিল করা হয়। সারা দিন এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করি। সবশেষ এয়ারপোর্ট থেকে রোববার সকালে প্যান প্যাসিফিক সোঁনারগাঁও হোটেলে এয়ারলাইনসের অফিসে পাঠানো হয়। সেখান থেকে আবার কাগজপত্র চেক করে এয়ারপোর্টে পাঠানো হয়েছে। তারা বলেছে যাওয়ার ব্যবস্থা করবে, তবে ফ্লাইট কখন তা নিশ্চিত করে বলেনি।’ 

২৪ বছর ধরে সৌদি প্রবাসী কুমিল্লার চান্দিনার আক্তার হোসেন। তিনিও আটকে গেছেন। তার ভিসার মেয়াদ আছে ২৫ জুলাই পর্যন্ত। কক্সবাজার থেকে আসা জসিম উদ্দিনও একই ধরনের সমস্যায় পড়েছেন। 

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৮ জুলাইয়ের পর যেসব কর্মীর ভিসার মেয়াদ শেষ হবে তাদের ভিসার মেয়াদ ১৫ দিন বাড়ানোর জন্য সৌদি দূতাবাসের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তাদের চিঠি দেয়া হবে। বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের ইনচার্জ দেবব্রত বণিক বার্তা বলেন, ‘কী কারণে ফ্লাইট বাতিল করেছে সে ব্যাপারে আমরা এখনো কিছু জানি না। তবে ইন্টারনেট না থাকায় কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে।’

আরও