ব্যাগের দামে ব্যাগভর্তি ইফতার

রমজান মাসে ঘিরে ইফতার সামগ্রীর দামে যখন ঊর্ধ্বগতি, তখন নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য দ্বিতীয়বারের মতো ১০ টাকায় ইফতার সামগ্রী দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিক্রমপুর মানব সেবা ফাউন্ডেশন। এর আগে ১০ টাকায় গরুর মাংস ও ইফতার বাজার দিয়ে দেশব্যাপী আলোচনায় আসে সংগঠনটি।

‘‌রমজানের আগেরদিন এক বাড়ি থেকে কিছু ইফতার সামগ্রী পেয়েছিলাম। তারপর থেকে প্রতিটি রোজায় শুধু পানি আর মুড়ি দিয়ে ইফতার করেছি। এখানে ১০ টাকায় ইফতার পেয়ে বাকি রমজানগুলো ভালো কাটবে— ব্যাগের দামে ব্যাগভর্তি সাত প্রকার ইফতার সামগ্রী পেয়ে বলছিলেন পূর্বরাখি গ্রামের আয়শা বেগম (৪৫)। শুধু আয়শা নন, ইফতার পেয়ে তার মতো খুশি লুৎফা বেগম, লাবনি আক্তার, রোকসনা বেগম, খোদেজা বেগমসহ অনেকে।

রমজান মাসে ঘিরে ইফতার সামগ্রীর দামে যখন ঊর্ধ্বগতি, তখন নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য দ্বিতীয়বারের মতো ১০ টাকায় ইফতার সামগ্রী দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিক্রমপুর মানব সেবা ফাউন্ডেশন। এর আগে ১০ টাকায় গরুর মাংস ও ইফতার বাজার দিয়ে দেশব্যাপী আলোচনায় আসে সংগঠনটি।

শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার কামারখাড়া বাজারে ‘‌১০ টাকায় ইফতার বাজার নামক এক ব্যতিক্রমী কর্মসূচি পালন করা হয়। অস্থায়ী এই বাজার থেকে ১০ টাকায় এক কেজি তেল, খেজুর, পেঁয়াজ, ছোলা, চিনি, চিড়া ও মুড়িসহ ইফতারে ৭টি পণ্য কিনে নেন নিম্ন আয়ের ২১০টি পরিবার। এমন আয়োজনে নিম্ন আয়ের মানুষের মুখে তৃপ্তির হাঁসি ফোটে।

সরেজমিনে বাজারটি ঘুরে দেখা যায়, ভিন্ন ভিন্ন স্টলে সাজিয়ে রাখা হয়েছে তেল, খেজুর, পেঁয়াজ, ছোলা, চিনি, চিড়া ও মুড়ি। অন্য সব বাজারের মতো নিম্ন আয়ের মানুষ পছন্দমতো পণ্য সংগ্রহ করছেন। তবে সেগুলোর দাম রাখা হচ্ছে মাত্র ১০ টাকা।

রাউৎভোগ এলাকার রোকসানা বেগম (৬০) বলেন, পাশের বাড়ির একজন ছোলা-মুড়ি দিয়েছিল। পাঁচ রোজায়ই সব শেষ হয়ে গেছে। পরে আর কিনতে পারেননি তিনি। তবে ১০ টাকায় ইফতারের বাজার করায় বাকি রোজাগুলো নিশ্চিন্তে কাটানোর আশা করছেন তিনি।

দিঘীরপাড় গ্রামের নাছিমা বেগম (৩৫) বলেন, বাজারে যেখানে ১ লিটার তেলের দাম ১৯০ টাকা, সেখানে ৭টি পণ্য মাত্র ১০ টাকায় পেয়েছি। রোজার বাকি দিনগুলো ভালোভাবে কাটবে।

সংগঠনে সদস্য রিয়া মনি বলেন, গত বছরের মতো এ বছরও আমরা ১০ টাকায় ইফতার বাজারের আয়োজন করেছি। এ বাজার থেকে নিম্নবিত্ত ২১০টি পরিবার বাজার করেছে। আমরা চাইলে বিনামূল্যেও তাদের দিতে পারতাম। তবে আমাদের সংগঠনের সদস্যরা চান, তারা সামান্য মূল্যে ক্রয় করুক। এতে তাদের আত্মসম্মান অক্ষুণ্ন থাকবে। পাশাপাশি বাজার থেকে ক্রয় করার মতো অনুভূতি লাভ করবেন।

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রিয়াদ হোসাইন বলেন, বর্তমান বাজারের অবস্থা বিবেচনা করে আমরা এই অস্থায়ী বাজারের আয়োজন করেছি। সংগঠনের সদস্যদের দান ও মাসিক চাঁদা দিয়ে বাজার পরিচালনা করা হচ্ছে। আমাদের পরিকল্পনা আরো বড় ছিল। তবে আর্থিক সংকটের কারণে কিছুটা সীমিত পরিসরে করা হচ্ছে। এই কাজটি দেখে যাতে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হয় ও এগিয়ে আসে, সেটিই আমাদের এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য।

সংগঠনের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক হিরা বলেন, দ্বিতীয়বারের মতো এই বাজার থেকে দুই শতাধিক মানুষ সহায়তা পেয়েছেন। আমরা অসহায় মানুষের আগ্রহ ও তৃপ্তির হাসি দেখে আনন্দিত।

আরও