রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় নাগরিক কমিটির সমাবেশ অনুষ্ঠিত

সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা জুলাই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। একই সঙ্গে তারা থানায় মামলা করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হওয়ায় এবং এখনো পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে শহীদ পরিবারের যথাযথ পুনর্বাসন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার, শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে জাতীয় নাগরিক কমিটির নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল শনিবার (৫ অক্টোবর) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা জুলাই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। একই সঙ্গে তারা থানায় মামলা করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হওয়ায় এবং এখনো পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে শহীদ পরিবারের যথাযথ পুনর্বাসন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সমাবেশে উত্তরাঞ্চলের বন্যায় সরকারের তৎপরতার সমালোচনা করে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বন্যার্তদের দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্ধারকাজ ও ত্রাণ সরবরাহের দাবি জানান। একই সঙ্গে বিদ্যমান শ্রমিক আন্দোলনে গুলি চালানোর কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, শ্রমিকদের পেটে লাথি মারা হচ্ছে, সে কারণেই শ্রমিকরা আন্দোলনে নেমেছে। শ্রমিকদের বেতনের ব্যবস্থা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে শ্রমিক হত্যার বিচারের দাবি জানান।

তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে আহত হওয়া অনেকেই এখনো হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। কিন্তু অন্যদিকে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার প্রক্রিয়া মন্থর গতিতে এগুচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের গতি এখনো ঊর্ধ্বমুখী, ফলে সাধারণ মানুষ তার দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে সরকারকে এ গতিতে লাগাম টানার পরামর্শ দেন তিনি।

নাসীরুদ্দীন বলেন, পাহাড়ে ও সমতলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দেশী-বিদেশী সব ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে। তিনি দেশের আপামর জনগণকে বিভাজনের রাজনীতি ভেঙে দিয়ে তারুণ্যের পালস বুঝতে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, এ সংবিধান ফ্যাসিবাদ তৈরি করেছে, টিকিয়ে রেখেছে, মানুষের মানবিক ও রাজনৈতিক অধিকার হরণ করেছে। এই ফ্যাসিবাদী সংবিধান জুলাই অভ্যুত্থানে ১৫শ’র অধিক নিহত ও ৩০ হাজারের অধিক আহতদের পেছনে দায়ী উল্লেখ করে এ সংবিধান বাতিল করে গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার নতুন সংবিধান প্রণয়ন করার দাবি জানান। একই সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যতম পরাশক্তি হিসেবে ঢাকার আত্মপ্রকাশে সবাইকে সংঘবদ্ধ হবার আহ্বান জানান।

সীমান্তে হত্যা বন্ধে সরকারকে কঠোর অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সদস্য সচিব আখতার হোসেন। গণহত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচার কার্য শুরু করার তাগিদ দিয়েছেন। প্রয়োজনে শহীদ পরিবারকে আইনি সহায়তা দেয়া হবে বলে যোগ করেন তিনি।

সমাবেশে নাগরিক কমিটির সদস্য ও মায়ের ডাকের আহ্বায়ক সানজিদা ইসলাম তুলি গুমের রাজনীতি বন্ধ করার দাবি জানিয়ে বলেন, বিচার বহির্ভূত সব হত্যাকাণ্ডকে এ রাষ্ট্র থেকে চিরতরে বিদায় করতে হবে।

সমাবেশের পক্ষ থেকে পূজায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদানের তাগিদ দিয়ে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও দিল্লির মিথ্যাচার প্রতিহত করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানানো হয়েছে।

সমাবেশে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে মমিনুল ইসলামের বাবা, শাহরিয়ার হোসেন আলভীর বাবা, ফারহান ফাইয়াজের বাবা, নাহিদুল ইসলামের ভাই, খালিদ হাসানের বাবা কামরুল হাসান, আবু রায়হানের ভাই, নাহিদ হোসেনের বাবা বক্তব্য প্রদান করেন। এছাড়া অন্তরের বাবা-মা, মতিউর রহমানের ছেলে ইসমেইল হোসেন, আহতদের মধ্যে শ্রমিক মোশাররফ হোসেনের পরিবারের সদস্যসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য আরিফুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন মশিউর রহমান, মো. আতাউল্লাহ, আশরাফ মাহদি, ডা. আব্দুল আহাদ, প্রীতম দাশ প্রমুখ।

আরও