সামরিক কর্মকর্তা হতে চেয়েছিল সিহাব

ছোটবেলা থেকে সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিল শহীদ মো. সিহাব আহমেদ। যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে থাকত সরব। ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবিতে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হচ্ছিল সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরেও। কর্মসূচিতে যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদের একজন ছিল সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সিহাব আহমেদ। আন্দোলন শেষে তার

ছোটবেলা থেকে সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিল শহীদ মো. সিহাব আহমেদ। যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে থাকত সরব। ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবিতে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হচ্ছিল সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরেও। কর্মসূচিতে যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদের একজন ছিল সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সিহাব আহমেদ। আন্দোলন শেষে তার আবারো এইচএসসি পরীক্ষায় বসার কথা ছিল। স্বপ্ন ছিল উচ্চ মাধ্যমিক শেষে সামরিক বাহিনীর একজন কর্মকর্তা হবে। তবে শেষ পর্যন্ত সে স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি। ফিরতেও পারেনি এইচএসসি পরীক্ষার হলে। পুলিশের গুলিতে সেদিন সিহাবের রক্তে ভিজেছে রাজপথ।

তিন ভাইয়ের মধ্যে সিহাব ছিল সবার বড়। বাবা শফি মিয়া মালয়েশিয়া প্রবাসী। মা মোছা. শাহনাজ খাতুন গৃহিণী। সিহাবের পরিবারের সদস্যরা জানান, ছোটবেলা থেকেই সে মানবিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিল। অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত অবস্থায় সে সর্বপ্রথম ‘আপন আলো মানবকল্যাণ ফাউন্ডেশন’ নামে রক্তদাতা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়। এর পর থেকে হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় কোনো রোগীর রক্তের প্রয়োজন হলেই ব্যবস্থা করে দিতে ছুটত সিহাব। নবম শ্রেণী থেকে সে নিজেও নিয়মিত রক্ত দিত।

আপন আলো মানবকল্যাণ ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, সিহাব চার বছরের সাংগঠনিক জীবনে ৩৫০ জনেরও বেশি রোগীকে রক্তদানে সহযোগিতা করেছে। সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় সে বিএনসিসির সেরা ট্রেইনি ক্যাডেট হওয়ার গৌরব অর্জন করে। বিএনসিসির সঙ্গে নিয়মিতই গাছ লাগানো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ সামাজিক কল্যাণমূলক কাজে অংশ নিত।

আন্দোলনের সময়ের কথা উল্লেখ করে সিহাবের চাচা আহমেদ জাকারিয়া বলেন, ‘সিহাব সব সময়ই ন্যায়ের পক্ষে ছিল এবং যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব ছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সে শুরুতেই আন্দোলনে যুক্ত হয়। প্রথম পর্যায়ে সে নিজ বিদ্যাপীঠ সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলন করছিল। বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালনে প্রত্যক্ষ ভূমিকাও পালন করে। একপর্যায়ে দেশের সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করলে সে নিজ গ্রাম এনায়েতপুরের মাধবপুরে চলে আসে। এনায়েতপুর থানায় অবস্থিত খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তাদের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেয়।’

৪ আগস্টের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘৪ আগস্ট খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কদের ডাকে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী এনায়েতপুর থানার সামনে বিক্ষোভ করছিল। সকাল ৯টায় আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য সিহাব বাড়ি থেকে বের হয়। এনায়েতপুরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিক্ষোভে অংশ নেয়ার একপর্যায়ে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। শিক্ষার্থীরা এসব উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়ে গেলে পুলিশ তাদের ওপর কয়েক রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে। একটি গুলি এসে সিহাবের কোমর বরাবর আঘাত করলে সে সেখানেই লুটিয়ে পড়ে। বেশকিছু শিক্ষার্থী তাকে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায়। পরে সেখানকার চিকিৎসকরা সিহাবকে মৃত ঘোষণা করেন।’

আরও