মৎস্য খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও খরায় কমেছে সরবরাহ

দীর্ঘদিন স্থির থাকা রুই-কাতলার দাম বেড়েছে ৩০-৪০%

অন্যান্য মাছের দাম বাড়লেও দেশের বাজারে দীর্ঘদিন অনেকটাই স্থির ছিল রুই-কাতলার দাম। মূলত উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ভারত ও মিয়ানমার থেকে কম দামে আমদানির কারণে এ দুই প্রজাতির মাছের দাম তেমন একটা বাড়তে দেখা যায়নি। কিন্তু কয়েক মাস ধরে অন্য সব ধরনের মাছের মতো রুই-কাতলার দামও বাড়তে দেখা যাচ্ছে। আট মাসের ব্যবধানে এ দুই প্রজাতির মাছের দাম বেড়েছে প্রায় ৩০-৪০

অন্যান্য মাছের দাম বাড়লেও দেশের বাজারে দীর্ঘদিন অনেকটাই স্থির ছিল রুই-কাতলার দাম। মূলত উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ভারত ও মিয়ানমার থেকে কম দামে আমদানির কারণে এ দুই প্রজাতির মাছের দাম তেমন একটা বাড়তে দেখা যায়নি। কিন্তু কয়েক মাস ধরে অন্য সব ধরনের মাছের মতো রুই-কাতলার দামও বাড়তে দেখা যাচ্ছে। আট মাসের ব্যবধানে এ দুই প্রজাতির মাছের দাম বেড়েছে প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ। এমনকি দরিদ্রের সুলভ আমিষের উৎস হিসেবে পরিচিত তেলাপিয়া ও পাঙাশের দামও এখন বাড়তির দিকে। 

খামারিরা জানিয়েছেন, গত দুই বছরে মৎস্য খাদ্যের দাম প্রায় ‍দ্বিগুণ বেড়েছে। আবার বর্ষার ভরা মৌসুমেও প্রায় খরার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বৃষ্টিপাত হচ্ছে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম। ফলে এখন মাছের উৎসগুলোয় পর্যাপ্ত পানি নেই, যার কারণে মাছের বৃদ্ধি ও উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এদিকে পানি না থাকায় প্রাকৃতিক জলাধারেও মাছের দেখা মিলছে না। পরিস্থিতি প্রতিকূল হওয়ায় মৎস্য উদ্যোক্তাদের অনেকেই এখন খামার বন্ধ বা ছোট করে ফেলছেন। সার্বিকভাবে মাছের সরবরাহ কমেছে। আবার পরিবহন খরচও বেড়েছে। ফলে মাছের দাম বাড়ছে। 

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে মাঝারি আকৃতি অর্থাৎ এক-দেড় কেজি ওজনের রুই মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪৫০ টাকা। দেড় কেজি ওজনের কাতলা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩৫০-৪৩০ টাকায়। তেলাপিয়া ও পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২২০-২৫০ টাকায়। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মূল্য তালিকা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রুই মাছের দাম গত আট মাসের ব্যবধানে ৩৩ শতাংশ বেড়েছে। তবে ভোক্তারা বলছেন, গত কয়েক মাসে প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে শুধু রুই ও কাতলার দাম। 

কারওয়ান বাজারের মৎস্য আড়তদার মো. হাফিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌মাছের সরবরাহ তুলনামূলকভাবে কম। চাষীরা খামার থেকেই কম আনছেন। কিছুদিন পর থেকে মাছের সরবরাহ বাড়বে। এক কেজি ওজনের রুই-কাতলার পাইকারি দাম ২৮০-৩০০ টাকা। এর বড়গুলো ৩৫০ টাকার বেশি। আমরাই বেশি দামে কিনছি।’

তবে ২০১৭ থেকে ২০২১ সালে দেশের বাজারে রুই-কাতলার দাম পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এ দুই মাছের দামে বিগত বছরগুলোয় খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। দেশের বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদনকারী, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে মূল্যের মাসভিত্তিক তথ্য সংরক্ষণ করে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে দেয়া পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে খুচরা পর্যায়ে মাঝারি আকারের (দেড়-দুই কেজি) রুই মাছ বিক্রি হয়েছে ৩৩২ টাকা কেজিতে। এর পরের চার বছরে দাম ছিল যথাক্রমে ৩০০ টাকা, ৩১০, ৩০০ ও ২৯৭ টাকা। মাঝারি আকারের কাতলা মাছের দাম ছিল ২০১৭ সালে প্রতি কেজি ৩২২ টাকা। এর পরের চার বছরে প্রতি কেজির দাম ছিল যথাক্রমে ৩০২ টাকা, ৩১১, ২৯২ ও ২৭৬ টাকা। এ চার বছরের ব্যবধানে তেলাপিয়া ও পাঙাশ মাছের দাম কেজিতে বেড়েছিল প্রায় ৫০-৫৫ টাকা।

দেশে এখন বর্ষার ভরা মৌসুমেও বৃষ্টি হচ্ছে না। বাংলাদেশে সাধারণত সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় জুলাইয়ে। কিন্তু মাসের প্রথম ২২ দিনে দেশে বৃষ্টিপাত হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৫৯ শতাংশ কম। এর প্রভাব পড়ছে মাছের প্রজনন ও দৈহিক বৃদ্ধিতে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জুলাই শেষে মাসভিত্তিক হিসাবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৪৫-৫০ শতাংশ কম। গত বছরের জুলাইয়েও স্বাভাবিকের চেয়ে ৫৮ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছিল। এছাড়া গত জুনে প্রায় ১৭ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। 

মাছের চারণভূমি হিসেবে খ্যাত পাবনা জেলায়ও মাছের সরবরাহ কম। মূলত পানির স্বল্পতা, জলাভূমি ভরাট ও মৎস্য খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে জেলাটিতে মাছের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা জানিয়েছেন, চাষের মাছ ছাড়াও জেলাটির প্রাকৃতিক জলাধারগুলোয় বর্ষায় প্রচুর মিঠাপানির মাছ পাওয়া যায়। কিন্তু পর্যাপ্ত পানি না থাকায় এসব জলাধার থেকে মৎস্য আহরণ ব্যাপক মাত্রায় কমেছে। প্রাকৃতিক উৎস থেকে সরবরাহ কমায় চাহিদার পুরো চাপ পড়ছে চাষের মাছে। আবার মিঠা পানিতে মা-মাছ নিধন বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না থাকায় প্রজনন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

পাবনায় বর্তমানে এক-দেড় কেজির রুই ও কাতলা পাইকারিতে প্রতি কেজি ৩০০-৪০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর দুই কেজি ও এর বেশি ওজনের মাছ প্রতি কেজি ৫০০ টাকার বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকৃতির পাঙাশ ও তেলাপিয়া প্রতি কেজি ১৭০-২২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে দাম রুই-কাতলার ক্ষেত্রে পাইকারি দরের চেয়ে ৫০-৮০ টাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে। আর তেলাপিয়া ও পাঙাশের ক্ষেত্রে ৩০-৫০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। জেলাটির খেতুপাড়ার মৎস্যচাষী মো. মজিবুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ফিড কোম্পানি থেকে খাবার কিনে এখন খাওয়াই না। কারণ দাম অনেক বেড়েছে। নিজেই খাবার তৈরি করলে খরচ কিছুটা কম পড়ে।’

পাবনা জেলার কোলাদী গ্রামের মৎস্যজীবী রফিকুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌ইলিশ ও খাল-বিলে মাছের স্বল্পতার কারণে চাষের মাছের চাহিদা বেড়েছে। পানির স্বল্পতা ও খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে মাছের দাম বাড়ছে। আগে যে ফিড ২৮ টাকা কেজি ছিল, সেটা বর্তমানে ৪২ টাকায় কিনতে হচ্ছে। খালে-বিলে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় এখন সেচের পানি দিয়ে মাছ চাষ করতে হচ্ছে।’ 

সিরাজগঞ্জেও রুই-কাতলা মাঝারি আকৃতির প্রতি কেজি ৩২০ টাকা এবং বড় আকৃতির ৪৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা ছয় মাস আগেও ২২০ টাকা ও ৩২০-৩৫০ টাকা ছিল। দুই কেজি ওজনের পাঙাশের দাম এ সময়ে কেজিপ্রতি ১২০ টাকা থেকে বেড়ে ২৩০ টাকা হয়েছে। জেলাটির মৎস্যজীবীরা জানিয়েছেন, খাদ্যের দাম, রেণু ও পোনার উৎপাদন খরচসহ সার্বিক উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাজারে মাছের দাম বেড়েছে। 

জেলাটির সদর উপজেলার কান্দাপাড়া গ্রামের মৎস্যচাষী আব্দুর রহিম দীর্ঘদিন থেকে ৪০ বিঘা আয়তনের জলাশয়ে মাছ চাষ করছেন। তিনি বলেন, ‘‌ছয় মাছ আগে যে মাছের খাবার ২৮-৩০ কেজি দরে কিনেছি এখন তা ৪২ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে। এছাড়া হ্যাচারিতে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজির রেণুর দাম বেড়ে হয়েছে প্রায় ৫ হাজার টাকা। বৃদ্ধি পেয়েছে শ্রমিক, সেচ ও পরিবহন খরচ। ফলে মাছের দাম বেড়েছে।’

সিরাজগঞ্জ বড় বাজারের পাইকারি মাছ ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‌বেশি দামে কেনার কারণে আমাদের এখন ক্রেতার কাছ থেকে মাছের দামও রাখতে হচ্ছে বেশি। ছয় মাস আগে এক কেজি ওজনের পাঙাশ ৬০-৭০ টাকা, আড়াই কেজি ওজনের পাঙাশ ১১০-১২০ টাকা এবং দুই-আড়াই কেজি ওজনের রুই ও কাতলা পাইকারিভাবে বিক্রি হয়েছে ২১০-২২৫ টাকা কেজি দরে। এখন বিক্রি হচ্ছে এক কেজি ওজনের পাঙাশ ১২৫ টাকা, আড়াই কেজি ওজনের পাঙাশ ১৭৫ টাকা (কেজিপ্রতি) এবং দুই-আড়াই কেজি ওজনের রুই ও কাতলা ৩০০-৩২৫ টাকা কেজি দরে। খুচরায় এসব মাছ প্রকারভেদে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ১২৫ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে।’

ফিশ ফিডের মূল্যবৃদ্ধি মাছের বাজারে প্রভাব ফেলছে জানিয়ে ফিশারিজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মো. শামসুর রহমান মোল্লা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌মৎস্যখাদ্যের দাম করোনার পর থেকে অনেক বেড়ে গেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে, যার কারণে মাছের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে মৎস্যচাষীরা যে দামে বিক্রি করছেন কয়েক হাত বদলে অনেক বেড়ে যায়। বিষয়টি তদারকিতে রাখতে হবে।’

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিকস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী আহসান হাবীব বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেক চাষীই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। মাছের উৎপাদনের সঙ্গে আবহাওয়ার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মার্চ-এপ্রিল থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখন বৃষ্টি নেই, যার কারণে মাছের প্রজনন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আবার জলাশয়ে পানিস্বল্পতা থাকায়ও মাছের দৈহিক বৃদ্ধি স্বাভাবিকভাবে হচ্ছে। সংকট সার্বিকভাবে। উপকূলীয় এলাকার অনেক মিঠাপানির জলাশয়ে লবণাক্ততা ঢুকেছে। আবার প্রাকৃতিক জলাধারগুলো দূষণ ও দখলের কারণে মাছের উৎপাদন কমে গেছে। ৭০ ভাগ মাছই এখন চাষের। নদী, খাল ও বিলে দূষণ ও দখল ঠেকাতে হবে।’ 

খুলনা বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাছ উৎপাদন হয় যশোরে। জেলাটিতেও মাছের দাম ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বর্তমানে এক কেজি আকারের রুই-কাতলা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪০০ টাকা কেজিতে। মাছ উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি মৌসুমে ঘের ও পুকুরে কোনো পানি নেই। সেচ দিয়ে মাছ চাষ করতে হচ্ছে। আবার খাবারের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। যে কারণে পাইকারিতে মাছের দাম বেশি নেয়া হচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে।

জেলাটির মণিরামপুরের ঘের ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম মিলন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌আমরা জমি লিজ নিয়ে মাছের চাষ করে থাকি। আগে যে জমি ২০ হাজার টাকা লিজ মানি ছিল এখন সেখানে ৪০ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। তারপর এবার বৃষ্টিপাত না থাকায় ঘেরে সেচ দিতে হচ্ছে। এছাড়া মাছের সব ধরনের খাবারের দাম বেড়েছে। আগে এলসির খৈল ৭০ কেজির বস্তা কিনতাম ১ হাজার ৫০০ টাকায়। এখন সেই বস্তা কিনতে হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ টাকায়। ভুট্টার কেজি ছিল ১৫ টাকা, বর্তমানে যা ৩০ টাকা। ফিডের বস্তা ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে বেড়ে ১ হাজার ৮০০ টাকা হয়েছে। যে কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে ব্যাপক হারে।’

যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ বণিক বার্তাকে জানান, ‘‌গত তিন বছরে জেলায় চাহিদার তুলনায় ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৫ টন মাছ বেশি উৎপাদন হয়েছে। তবে মাছের উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। যে কারণে বাজারে বেশি দামে রুই-কাতলা বিক্রি হচ্ছে।’ 

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার হাটকালুপাড়া ইউনিয়নের পাহাড়পুর গ্রামের মৎস্যচাষী সাজেদুর রহমান টফি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌১৬ বছর ধরে মাছ চাষ করছি। দুই বছর আগেও ৬০০ বিঘায় মাছ চাষ করতাম। কিন্তু দফায় দফায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ৩৫০ বিঘায় মাছ চাষ বন্ধ করে দিয়েছি। আগে যে খাদ্য ৬০০-৬৫০ টাকায় পাওয়া যেত এখন তা ১ হাজার ৩০০ টাকায় কিনতে হয়। ১ হাজার ২০০ টাকায় যে খৈল কিনতাম, সেটা এখন ৩ হাজার ৩০০ টাকা বস্তা। এরই মধ্যে বৃষ্টিপাত না থাকায় পানির অভাবে অনেক মাছের আকার ছোট হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে মাছ চাষ থেকে সব চাষীই মুখ ফিরিয়ে নেবেন। মাছের দাম কিছুটা বাড়লেও আমাদের লাভ হচ্ছে না। মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় উৎপাদন খরচ অনেক বেশি পড়ছে।’

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার মৎস্যচাষী আলী আহমেদ মিয়াজী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌অধিকাংশ পুকুরেই পানি নেই। সেচ দিয়ে চাষ করতে হয়। রেণুর দাম বেড়েছে। এখন খামারে খুব বেশি মাছ নেই। পানি না থাকলে মাছ রেখে লাভ নেই। মাছ বড় হয় না।’

নেত্রকোনা জেলার মৎস্যচাষী মো. সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘‌বৃষ্টির ওপর মাছের প্রজনন ও বৃদ্ধি নির্ভর করে। বৃষ্টি না হলে মাছ বড় হবে না। যার কারণে খরচ বাড়ছে। খাদ্যের দাম দুই বছরে দেড়-দুই গুণ বেড়েছে।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌অন্যান্য আমিষের উৎসের দাম বেড়ে গেলে মাছের চাহিদা বেড়ে যায়। তবুও মাংসের দাম যে হারে বেড়েছে তার তুলনায় মাছের দাম সেভাবে বাড়েনি। মাছের সরবরাহে কোনো সংকট নেই। তবুও আমরা মাছের প্রক্রিয়াজাতে গুরুত্ব দিচ্ছি। মাছ শীতল রক্তবিশিষ্ট প্রাণী। ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তার দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে। কিন্তু সেক্ষেত্রেও একটা লিমিট আছে। আবার প্রজননের ক্ষেত্রে অনুকূল তাপমাত্রা প্রয়োজন। কারণ মাছ অনুকূল তাপমাত্রা না থাকলে ডিম ছাড়বে না। বিষয়টি কতটা প্রভাব ফেলছে তা গবেষণার বিষয়। প্রকৃতির সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার জন্য আমাদের গবেষণা চলমান রয়েছে। বন্যা থেকে বাঁচতে দ্রুত বর্ধনশীল জাত আবিষ্কার হয়েছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি ও জাত আসছে।’

(প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বণিক বার্তার পাবনা প্রতিনিধি শফিউল আলম দুলাল, যশোর প্রতিনিধি আব্দুল কাদের, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি অশোক ব্যানার্জী ও নওগাঁ প্রতিনিধি আরমান হোসেন রুমন)

আরও