নড়াইলে নৌপথ সংকুচিত করছে কম উচ্চতার ২৩ সেতু

নড়াইলে চিত্রা, নবগঙ্গা, কাজলা ও আফরা নদীতে ২১টি সেতু নির্মাণ করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। আরো দুটি সেতুর নির্মাণকাজ চলছে।

নড়াইলে চিত্রা, নবগঙ্গা, কাজলা ও আফরা নদীতে ২১টি সেতু নির্মাণ করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। আরো দুটি সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। সেতুগুলো নির্মাণের সময় বিবেচনায় রাখা হয়নি নদীর উচ্চতার বিষয়টি।  নদীর তুলনায় সেতুর উচ্চতা কম হওয়ায় সংকুচিত হচ্ছে এ অঞ্চলের নদীপথ। বাধ্যবাধকতা থাকলেও সেতু নির্মাণের সময় বিআইডব্লিউটিএর অনুমোদন নেয়নি এলজিইডি। কম উচ্চতার এসব সেতুর কারণে নৌযান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে বলে দাবি নদীপথ ব্যবহারকারীদের। 

নদীপথ ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীদের দাবি, সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে বিআইডব্লিউটিএর অনুমোদন নেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এলজিইডি সেটি মানছে না। সেতু নির্মাণের সময় জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকেও কোনো তদারকি করা হচ্ছে না। নৌযান চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি সেতুর কিছু অংশ ভেঙে উঁচু করার পরিকল্পনা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘যেসব সেতুর নিচ দিয়ে নৌযান চলাচলে সমস্যা হচ্ছে সেগুলো পর্যায়ক্রমে উঁচু করার পরিকল্পনা রয়েছে। তাছাড়া বিআইডব্লিউটিএর ছাড়পত্র নিয়ে সেতু নির্মাণ করতে গেলে দৈর্ঘ্য প্রায় চার-পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। এতে সরকারের অর্থেরও অপচয় হয়। নতুন করে সেতু নির্মাণ করলে সেখানে বিআইডব্লিউটিএর ছাড়পত্র নেয়া হবে।’

২০০৮ সাল পর্যন্ত খুলনা, মোংলা, বরিশাল ও যশোরের নওয়াপাড়াসহ বিভিন্ন জেলা থেকে নড়াইলের ব্যবসায়ীরা নদীপথে পণ্য আনা-নেয়া করতেন। নড়াইলের সীমান্তবর্তী এলাকায় আফরা নদীতে ২০০৮ সালে প্রায় ৪০০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণ করে নড়াইল এলজিইডি বিভাগ। নিচু করে সেতুটি নির্মাণের ফলে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের ক্ষতির কথা চিন্তা করে সেতুটির একটি অংশ ভেঙে উঁচু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এলজিইডি বিভাগ। এতে ব্যয় হবে ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।

নড়াইল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মো. হাসানউজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘একসময় পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে নড়াইলের নদীপথ ব্যবহার করতেন ব্যবসায়ীরা। নদীপথে কলকাতা থেকে পণ্য নিয়ে নড়াইলে আসতেন ভারতের ব্যবসায়ীরাও। বিভিন্ন স্থানে নিচু করে সেতু নির্মাণের ফলে বড় নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে পরিবহন খরচ বাড়িয়ে সড়ক পথে পণ্য আনা-নেয়া করছেন।’

এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সাল থেকে নড়াইলের চিত্রা, নবগঙ্গা, কাজলা এবং আফরা নদীতে ছোট-বড় ২১টি সেতু নির্মাণ করেছে এলজিইডি বিভাগ। আর দুটি সেতুর কাজ চলমান। সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে ছাড়পত্র নেয়নি এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। নিচু করে নির্মাণ করা এসব সেতুর কারণে নৌপথ সংকুচিত হয়ে আসছে।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ নৌপথ ও তীরভূমিতে স্থাপনা নির্মাণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুযায়ী, নৌপথে খুঁটিসহ বৈদ্যুতিক লাইন ও সেতু নির্মাণ করতে হলে বিআইডব্লিউটিএর ছাড়পত্র নেয়া বাধ্যতামূলক। এ বিধিমালায় নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী, নদীগুলোকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। দেশে প্রথম শ্রেণীর নৌপথের ক্ষেত্রে সেতুর উচ্চতা হবে কমপক্ষে ৬০ ফুট, দ্বিতীয় শ্রেণীতে ৪০, তৃতীয় শ্রেণীতে ২৫ ও চতুর্থ শ্রেণীর নৌপথে অন্তত ১৬ ফুট উচ্চতায় সেতু নির্মাণ করতে হবে।

এ বিষয়ে খুলনা অঞ্চলের বন্দর কর্মকর্তা (বিআইডব্লিউটিএ) মুহা. মাসুদ পারভেজ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে এবং সেতুর নকশা করার আগে বিআইডব্লিউটিএর কাছ থেকে হরি জেন্টাল ও ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়। এর জন্য সুনির্দিষ্ট আইনও রয়েছে। তবে নড়াইলে বেশ কয়েকটি সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে এলজিইডি বিভাগ বিআইডব্লিউটিএর কাছ থেকে ছাড়পত্র নেয়নি। আগে নৌপথ চালু রেখে সেতু নির্মাণ করতে হবে। নৌপথ বন্ধ করে সড়কপথ উন্নয়ন করতে হবে এমন কোনো আইন নেই। যেসব স্থানে ছাড়পত্র ছাড়া সেতু নির্মাণ করা হয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আমরা পদক্ষেপ নেয়ার জন্য চিঠি দেব।’

নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সম্প্রতি বিষয়টি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। সেতু নির্মাণকারী সংস্থাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আগামীতে নতুন সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে বিআইডব্লিউটিএর ছাড়পত্র নেয়ার জন্য।’

আরও