লালমনিরহাটে কোটি টাকার চাল আত্মসাতের অভিযোগে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা গ্রেফতার

লালমনিরহাটে সরকারি গুদামের চাল লোপাটের অভিযোগে গুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা ও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রোববার (৬ অক্টোবর) সকালে ওই খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাকে লালমনিরহাট জুডিসিয়াল আমলী আদালতে সোপর্দ করার জন্য পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কালীগঞ্জ থানার ওসি মো. ইমতিয়াজ কবীর।

এর আগে শুক্রবার (৪ অক্টোবর) লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী সরকারি খাদ্য গুদাম(সংরক্ষিত গুদাম) থেকে বিপুল পরিমাণ চাল লোপাটের অভিযোগে গুদাম কর্মকর্তা মো. ফেরদৌস আলমের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মো. এনামুল হক এ মামলা দায়ের করেন। পরে শুক্রবার (৪ অক্টোবর) কথা বলার ছল করে ওই গুদাম কর্মকর্তাকে ডেকে আনার পর তাকে কালীগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে খাদ্য বিভাগ।

এর আগে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহির ইমাম ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এনামুল হক ভোটমারী খাদ্য গুদাম পরিদর্শনে গিয়ে চালের বস্তার হিসাবে গরমিল দেখতে পান এবং গুদাম কর্মকর্তাকে উপস্থিত না পেয়ে গোডাউনটি সিলগালা করে দেন।

পুলিশের কাছে সোপর্দ করা ভোটমারী খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মো. ফেরদৌস আলমকে (৫০) শনিবার (৫ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮টায় ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। রোববার সকালে তাকে লালমনিরহাট আদালতে সোপর্দ করা হবে বলে জানান কালীগঞ্জ থানার ওসি মো. ইমতিয়াজ কবির।

এদিকে এ ঘটনা তদন্তের জন্য লালমনিরহাটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মোছা. আফরোজা খাতুনকে আহ্বায়ক করে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে জেলা প্রশাসক বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কমিটিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন, আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. আফরোজা খাতুন, কালীগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার(ভূমি), দিতি রায়, লালমনিরহাট সহকারী পুলিশ সুপার (বি-সার্কেল) জয়ন্ত কুমার ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) স্বপন কুমার।

জানতে চাইলে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহির ইমাম বণিক বার্তাকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাতেই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এনামুল হকসহ কয়েকজন কর্মকর্তা সরজমিনে ভোটমারী খাদ্য গুদাম পরিদর্শন করে চালের বস্তার হিসাবের গরমিল পায়। গুদাম কর্মকর্তা ফেরদৌস আলমের অনুপস্থিতি ও চালের বস্তার গরমিলের বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক ওই খাদ্য গুদামটি সিলগালা করা হয়। এরপর গোপন সংবাদ অনুযায়ী শুক্রবার উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের সুকানদিঘী এলাকার চালকল মালিক একরামুল হকের গুদাম থেকে সরকারি খাদ্যবিভাগের সিলযুক্ত ৩০ মেট্রিকটন ওজনের ৬শ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়। যার আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ৬৯ লক্ষ ১৫ হাজার ৭৮৫ টাকা মামলার এজাহারে উল্লেখিত তথ্যমতে ৩শ মেট্রিকটন যার মূল্য ১ কোটি ৬৯ লাখ ১৫ হাজার ৭৮৫ টাকা।

তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোছা. আফরোজা খাতুন বণিক বার্তার কাছে তদন্ত কার্যক্রম শুরুর কথা নিশ্চিত করে এখনই বিস্তারিত কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দার বণিক বার্তাকে বলেন, এ ব্যাপারে ভোটমারী খাদ্য গুদাম সরজমিনে পরিদর্শন করেছি এবং স্থানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেছি। ঘটনা তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে (এডিএম) প্রধান করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময়সীমা দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, ভোটমারী খাদ্য গুদামের খাদ্য কর্মকর্তা ফেরদৌস আলম এককভাবে এতো বড় একটি অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন না। এখানে বড় ধরনের কোনো সিন্ডিকেট জড়িত থাকতে পারে। তবে যে চালকল কারখানা থেকে চালগুলো উদ্ধার করা হয়েছে, বর্তমানে তিনি পলাতক থাকায় কথা বলা যায়নি। এছাড়া গ্রেফতারকৃত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা ফেরদৌস আলমকেও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে দেয়া হয়নি। ফলে গুদাম থেকে ২৫/২৬টি ট্রাক্টরের মাধ্যমে কিভাবে সরকারি গুদাম থেকে চাল পাচার হলো, এ সংক্রান্ত রহস্য নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে নানান আলোচনা চলছে।

আরও