ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ সিপিডির

সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত নোয়াখালীতে জনপ্রতি ত্রাণ পেয়েছে ৯২ টাকার, সিলেটে ১৫ হাজার

দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রতিক বন্যায় ১৪ হাজার ৪২১ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। তবে সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে ছিল বেশ সমন্বয়হীনতা। সিপিডি বলছে, এ বন্যায় নোয়াখালী এলাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হলেও বেশি বরাদ্দ পেয়েছে সিলেটের মানুষ। রাজধানীর ধানমন্ডিতে গতকাল নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়হীনতার বিষয়টি তুলে ধরে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘কিছু এলাকায় অতিরিক্ত ত্রাণ দেয়া হয়েছে, আবার কোনো কোনো এলাকায় কিছুই দেয়া হয়নি। সিলেটে ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ক্ষতিগ্রস্তরা প্রতিজন গড়ে পেয়েছে ১৫ হাজার ৩২০ টাকার ত্রাণ। অথচ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত নোয়াখালী এলাকার মানুষ ত্রাণ পেয়েছে গড়ে মাত্র ৯২ টাকা করে। লক্ষ্মীপুরে জনপ্রতি ত্রাণ পেয়েছে ৬২ টাকার।’

সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষক মুনতাসির কামাল। তাতে বলা হয়, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ জিডিপির দশমিক ২৬ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষি ও বন খাতে, ৫ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। এছাড়া অবকাঠামো খাতে ৪ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ঘরবাড়িতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ২ হাজার ৪০৭ কোটি টাকার।

সিপিডির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বন্যায় জেলা হিসেবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে নোয়াখালীতে, ৪ হাজার ১৯১ কোটি টাকার। এরপর আছে কুমিল্লা, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকার। নোয়াখালীতে ১৬ লাখ ৪৩ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ এ জেলায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ১৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। সে হিসাবে প্রতিজন পেয়েছে গড়ে ৯৩ টাকা। সিলেটে সাড়ে নয় হাজার মানুষ বন্যা আক্রান্ত হয়েছে। এ জেলায় ক্ষতির পরিমাণ ২০ কোটি ৫০ লাখ টাকার। ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্রতিজন ত্রাণ পেয়েছে ১৫ হাজার ৩২০ টাকার।’

২০২৪ সাল প্রাকৃতিক দুর্যোগের বছর উল্লেখ করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘এর আগে রেমালের আঘাতে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এবারের বন্যাও ছিল দীর্ঘস্থায়ী। তাই এর প্রভাব ও গভীরতা বোঝার জন্য গবেষণাটি করা হয়েছে।’ ভবিষ্যতে বন্যার সময় সংযোগ ঠিক রাখতে রেডিও যোগাযোগ ব্যবস্থা শক্তিশালী করার পরামর্শ দেন তিনি।

সাম্প্রতিক বন্যা খাদ্যনিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি তৈরি করতে পারে জানিয়ে মুনতাসির কামাল বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি হ্রাসের ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধক হতে পারে এ বন্যা। তাই সরকারকে প্রয়োজনীয় খাদ্য আমদানি নিশ্চিত করার আহ্বান জানাই।’

মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন ও সরকারি তথ্যের সমন্বয়ে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছে সিপিডি। এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতির পরিমাণ বলা হয়েছিল ১৪ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। সংবাদ সম্মেলনে আরো কথা বলেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এবারের বন্যায় সরকারির চেয়ে ব্যক্তি খাতের ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে বলে তিনি জানান।

আরও