কুষ্টিয়ায় দুটি হত্যা মামলা

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা হানিফসহ ১১৯ জন আসামি

কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আন্দোলনকারীদের হত্যায় প্ররোচনা দানের অভিযোগ এনে দুটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুটি মামলায় মোট আসামি করা হয়েছে ১১৯ জনকে। এর মধ্যে একটি মামলায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফকে এক নম্বর আসামি দেখানো হয়েছে।

কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আন্দোলনকারীদের হত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে দুটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুটি মামলায় মোট আসামি করা হয়েছে ১১৯ জনকে। এর মধ্যে একটি মামলায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফকে এক নম্বর আসামি দেখানো হয়েছে।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন, গতকাল শুক্রবার (১৬ আগস্ট) রাতে পৃথক পৃথক সময়ে দুটি মামলা রের্কড করা হয়েছে।

প্রথম মামলার বাদী লুকমান হোসেন কুষ্টিয়া শহরের চর থানাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি একজন চায়ের দোকানী। ৫ আগস্ট বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে লুকমানের ছেলে আবদুল্লাহ (১৩) নিহত হয়।

মামলায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীসহ মোট ১৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত পরিচয় আসামি করা হয়েছে আরো ১০ থেকে ২০ জনকে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, কুষ্টিয়া ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ের সামনে লুকমান হোসেনের চায়ের দোকান রয়েছে। সেখানে তাঁর ছেলে আবদুল্লাহ কাজ করত। তিনি অসুস্থ থাকায় ৫ আগস্ট কুষ্টিয়া শহরে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি ছিলেন। ওই দিন বেলা দুইটার দিকে আবদুল্লাহ ক্লিনিক থেকে বাড়ি যাচ্ছিল খাবার আনতে। তিনটার দিকে থানাপাড়া ছয়রাস্তা মোড়ে পৌঁছালে সে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের লোকজন এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। আবদুল্লাহ ঘটনাস্থল থেকে পালানোর সময় শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও হানিফের চাচাতো ভাই এবং সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান তার হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে গুলি করেন। এতে আবদুল্লাহর বুকে গুলি লাগলে সে পড়ে যায়। পরে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এই মামলায় মাহবুবুল আলম হানিফ ১ নম্বর আসামি। আতাউর রহমান এ হত্যা মামলার ২ নম্বর আসামি।

মামলার এজাহারে উল্লেখ্যযোগ্য অন্য আসামিরা হলেন— জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের নেতা ও কুষ্টিয়া পৌর কমিশনার ধীমান, কাটাইখানা মোড়ের বাসিন্দা সোহেল রানা, কালীশংকরপুর এলাকার আরিফ হোসেন, কোর্টপাড়ার বাসিন্দা রনি, সরকারি কলেজ এলাকার বাসিন্দা মিন্টু, আনোয়ার হোসেন, ঈদগাহপাড়ার বাসিন্দা এমাম হান্নান বিশ্বাস, কোর্টপাড়ার বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম, তরুণ ও নিপুণ।

এদিকে, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর গ্রামের শালদহ এলাকার মৃত নওশের আলীর ছেলে বাবু হত্যা মামলায় কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যানসহ মোট ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৪০/৫০ জন।

মামলার বাদী রাইসুল হক। তিনি কোটা আন্দোলনের একজন কর্মী ও কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। নিহত বাবু কুষ্টিয়া শহরের একটি স্বর্ণ দোকানের কর্মচারী।

বাবু হত্যা মামলায় হুকুমের আসামি করা হয়েছে—কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হাজী রবিউল ইসলাম, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলীকে।

এ ছাড়াও এ মামলার আসামি করা হয়েছে—কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া শহরের মাদক বিক্রেতা মানব চাকী, কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক ও কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ফেরদৌস, কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল ইসলাম বাবুসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীসহ মোট ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি জানান, এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।

আরও