জাতিসংঘ কনভেনশনে ভোট দিলেও আইনের পক্ষে আজও অনুস্বাক্ষর করেনি বাংলাদেশ

৫৪ আন্তঃনদী থাকলেও চুক্তি হয়েছে কেবল একটির গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২৬ সালে

গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা (জিবিএম) অববাহিকার পাঁচটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবচেয়ে ভাটিতে। পৃথিবীর তৃতীয় বৃহৎ এ নদী অববাহিকার বাকি চারটি দেশ হলো—চীন, ভারত, ভুটান ও নেপাল। গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র হিমালয় থেকে এবং মেঘনা বরাক থেকে উৎপন্ন হয়ে ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ হয়ে মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। বাংলাদেশের কৃষি খাত মূলত এসব নদীর ওপরই নির্ভরশীল। এ কারণে ১৯৭১ সালে

গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা (জিবিএম) অববাহিকার পাঁচটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবচেয়ে ভাটিতে। পৃথিবীর তৃতীয় বৃহৎ এ নদী অববাহিকার বাকি চারটি দেশ হলো—চীন, ভারত, ভুটান ও নেপাল। গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র হিমালয় থেকে এবং মেঘনা বরাক থেকে উৎপন্ন হয়ে ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ হয়ে মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। বাংলাদেশের কৃষি খাত মূলত এসব নদীর ওপরই নির্ভরশীল। এ কারণে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরই ভারতের সঙ্গে আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর ব্যবস্থাপনা ও পানি বণ্টনের ইস্যুটি গুরুত্ব পায়। এজন্য ১৯৭২ সালে দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে গঠিত হয় জাতীয় নদী কমিশন। কিন্তু গত ৫২ বছরে গঙ্গা ছাড়া আর কোনো নদীর পানি বণ্টন নিয়েই দুই দেশ একমত হতে পারেনি। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘ যখন ‘আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহ কনভেনশন’ অনুমোদন করে, তখন বাংলাদেশও এর পক্ষে ভোট দেয়। তবে এ কনভেনশনে বাংলাদেশ আজও অনুস্বাক্ষর করেনি। ফলে যেকোনো বিরোধ মীমাংসার জন্য বাংলাদেশ এ আইনের আশ্রয় নিতে পারছে না। যদি অনুস্বাক্ষর করত, তাহলে ভারত উজানের দেশ হিসেবে চাইলেই ইচ্ছামতো পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করতে পারত না। আর এমন কিছু করলে তারা ক্ষতিপূরণ দিতেও বাধ্য থাকত।

ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে আন্তঃসীমান্ত নদী নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত ফারাক্কা বাঁধ ঘিরে। ১৯৬১ সালে গঙ্গা নদীর ওপর এ বাঁধ নির্মাণ শুরু হয়। কাজ শুরুর আগে ১৯৫১ সালে প্রথমবার এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছিল তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। এরপর উভয় দেশের বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে সরকারপ্রধান পর্যন্ত গঙ্গার প্রবাহ বণ্টনের বিষয়ে বহু আলোচনা করেন, তবে সমাধান হয়নি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারত-বাংলাদেশের আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর ব্যবস্থাপনা ও পানি বণ্টনের জন্য গঠিত হয় যৌথ নদী কমিশন। এরপর থেকে এ নদী কমিশনের মাধ্যমেই বিষয়গুলো সমাধানের কথা ছিল। তবে কার্যত রাজনৈতিক পটপরিবর্তনসহ নানা কারণে বেশির ভাগ সময়ই এ কমিশন ছিল নিষ্ক্রিয়। 

বাংলাদেশ-ভারত আন্তঃসীমান্ত নদীর সংখ্যা ৫৪। এর মধ্যে শুধু গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে চুক্তি হয়েছে। এর বাইরে আরো নয়টি নদীর পানি বণ্টন নিয়ে নদী কমিশন কাজ করেছে। এ তালিকায় রয়েছে—তিস্তা, ফেনী, ধরলা, দুধকুমার, মনু, মুহুরী, খোয়াই, গোমতী ও কুশিয়ারা। সব মিলিয়ে নদী কমিশন গত ৫২ বছরে ১০টি নদীর পানি বণ্টন নিয়ে কাজ করেছে। বাকি ৪৪টি নদীর পানি বণ্টন নিয়ে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেই। 

নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক প্রকৌশলী ম ইনামুল হক বলেন, ‘আমাদের দেশে নদী কমিশনের ভূমিকা অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনসহ নানা কারণে তারা স্বাধীনভাবে কাজের সুযোগ পায়নি। তাছাড়া এ ধরনের বিষয় সমাধানে দুই দেশের পক্ষ থেকেই আন্তরিকতা ও পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। কিন্তু ভারতের দিক থেকে তেমনটা পাওয়া যায়নি। তারা বাংলাদেশের সমস্যাগুলোকে এবং বাংলাদেশের বক্তব্যকে গুরুত্ব দিয়ে এগোয়নি। ফলে গঙ্গা চুক্তির পর আমরা আর কোনো নদীর সফল পানি বণ্টন চুক্তি করতে পারিনি।’

তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইনে সুরক্ষার কথা বলা আছে, কিন্তু বাংলাদেশ জাতিসংঘ পানি প্রবাহ কনভেনশন ১৯৯৭-এ অনুস্বাক্ষর না করায় কোনো আইনি পদক্ষেপ নিতে পারছে না। বাংলাদেশ যদি এখানে স্বাক্ষর করত তাহলে ভারত উজানের দেশ হিসেবে চাইলেই ইচ্ছামতো পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করতে পারত না। আর এমন কিছু করলে ভারত ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হতো।’

১৯৯৭ সালের ২১ মে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভায় গৃহীত হয় জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহ কনভেনশন। কনভেনশনের পক্ষে ভোট দেয় ১০৩টি দেশ। ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে পাকিস্তান ও ভারত। চীন, তুরস্ক ও বুরুন্ডি এ কনভেনশনের বিরোধিতা করে। বাংলাদেশ অজ্ঞাত কারণে আজ পর্যন্ত এ কনভেনশনে অনুস্বাক্ষর করতে সম্মতি জানায়নি। অথচ বাংলাদেশের জন্য তা অত্যন্ত জরুরি ছিল বলে মনে করেন নদী গবেষকরা। 

কনভেনশনটি আইনে পরিণত করার জন্য ৩৫টি দেশের অনুস্বাক্ষর প্রয়োজন ছিল। শেষ দেশ হিসেবে ২০১৪ সালে অনুস্বাক্ষর করে ভিয়েতনাম। এরপর কনভেনশনটি আইনে পরিণত হয়। 

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নদী নিয়ে যেসব বিরোধ ছিল, তার মধ্যে বাংলাদেশ তার অবস্থান নিয়ে সবচেয়ে সক্রিয় ছিল গঙ্গার পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে। ১৯৭৪ সালে বাঁধটির নির্মাণ যখন প্রায় শেষ পর্যায়ে, তখন উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, গঙ্গার পানি ভাগাভাগির প্রশ্নে উভয় দেশের ঐকমত্য ও চুক্তির আগে ফারাক্কা বাঁধ চালু হবে না। 

এরপর ১৯৭৫ সালে ফারাক্কা বাঁধের ফিডার ক্যানাল পরীক্ষার জন্য ভারতের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাময়িকভাবে বাঁধ চালুতে সম্মত হয় বাংলাদেশ। তবে এরপর পানির বণ্টন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। বাংলাদেশে পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কায় ১৯৭৬ সালে বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘের শরণাপন্ন হয় বাংলাদেশ। জাতিসংঘ বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের নির্দেশনা দিলে ১৯৭৭ সালে প্রথমবার একটি পাঁচ বছর মেয়াদি সমঝোতা স্মারকে সই করে দুই দেশ। এরপর অনেক বছর এ চুক্তি আর এগোয়নি। ১৯৯৬ সালে আওয়মী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর বিষয়টি আবার সামনে আসে। ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী দিল্লিতে ৩০ বছরের এক চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এ চুক্তি অনুযায়ী ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ফারাক্কা থেকে দুই দেশের মধ্যে পানি বণ্টন হতে থাকে। পূর্ববর্তী ৪০ বছরের গড় অনুযায়ী ভারত গঙ্গার পানির ভাগ পেতে থাকে। যেকোনো সংকটে বাংলাদেশকে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি সরবরাহ করার নিশ্চয়তাও দেয়া হয় চুক্তিতে। এছাড়া চুক্তির ৯ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার অন্য আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর পানি বণ্টনের বিষয়েও দুই দেশ চুক্তি করবে। 

যদিও অভিযোগ রয়েছে, এ চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি সঠিকভাবে পায় না। গত কয়েক দশকে দেশের উত্তরাঞ্চলে এ বাঁধকে কেন্দ্র করে তীব্র পানি সংকট তৈরি হয়েছে। এছাড়া এ চুক্তির মেয়াদও ২০২৬ সালে শেষ হতে যাচ্ছে। সম্প্রতি চুক্তি নবায়নের বিষয়ে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনা হলেও তীব্র আপত্তি জানান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে এ চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। 

তিস্তা নিয়েও বাংলাদেশ-ভারত আলোচনা অনেক পুরনো। ১৯৭২ সালে যৌথ নদী কমিশনের দ্বিতীয় সভায়ই তিস্তার পানি নিয়ে আলোচনা হয়। ১৯৮৩ সালে অন্তর্বর্তীকালীন একটি চুক্তিও হয়। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের ছিল ৩৬ শতাংশ, ভারত ৩৯ শতাংশ আর ২৫ শতাংশ পানি ছিল নদীর নাব্যতা বজায় রাখার জন্য। ১৯৮৫ সালে সেই অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। ১৯৮৭ সালে মেয়াদ আরো দুই বছর বাড়ানো হয়। এরপর আর কোনো চুক্তি হয়নি। গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির অনুচ্ছেদ ৯-এর আলোকে ১৯৯৭ সালে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের সভায় দুই দেশের পানি সম্পদ সচিবদের নেতৃত্বে যৌথ বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটির লক্ষ্য ছিল তিস্তা নদীর পানি বণ্টনকে অগ্রাধিকার দিয়ে তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, মনু, মুহুরী, খোয়াই ও গোমতী নদীর পানি বণ্টনে স্থায়ী বা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি প্রণয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কমিটি বেশকিছু কাজ করে এবং ২০১১ সালে চুক্তির একটি খসড়াও করা হয়। ওই বছরই চুক্তিটি সই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং রাজি থাকলেও আপত্তি জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এতেই আটকে যায় চুক্তি।

বাংলাদেশ ও ভারতের আরেকটি আলোচিত বিরোধ টিপাইমুখ বাঁধ। বাংলাদেশে প্রবাহিত সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর উজানের স্রোতধারা ভারতে বরাক নদী হিসেবে পরিচিত। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের অমলশীদ নামক স্থান থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার উজানে ভারত বরাক নদীতে টিপাইমুখ নামক স্থানে ড্যাম নির্মাণ করে বন্যার প্রকোপ প্রশমন ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ভারতের এ পরিকল্পনা প্রকাশের পর থেকেই দেশের পরিবেশবিদরা প্রতিবাদে সরব হন। ২০০৩ সালে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের নেতৃত্বে টিপাইমুখ প্রকল্পের বিরুদ্ধে পরিবেশবাদীরা সোচ্চার হন। এরপর ২০০৯ সালে আবারো এ প্রকল্প আলোচনায় আসে এবং এর প্রতিবাদে ঢাকা থেকে টিপাইমুখ অভিমুখে লংমার্চ অনুষ্ঠিত হয়। 

স্থায়ী পানি বণ্টন চুক্তি সই না হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদে দুই নদীর পানি নিয়ে দুটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এর মধ্যে ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাবরুম অঞ্চলে খাবার পানির সংকট দূর করতে ফেনী নদী থেকে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি উত্তোলনের বিষয়ে এবং ২০২২ সালে কুশিয়ারা নদী থেকে রহিমপুর খাল দিয়ে ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়। তবে গত বছর ফেনী নদীর পানি প্রত্যাহারের পদ্ধতি নিয়ে ভারতের দেয়া প্রস্তাবের বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়। ভারতের প্রস্তাব ছিল তারা নদীর মাঝখানে গভীরে কূপ খনন করে পাইপের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করবে। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রস্তাব ছিল নদীর পাড়ে কূপ খনন করে পানি প্রত্যাহার করা। দুই দেশের প্রকৌশল টিমের মধ্যে এ নিয়ে একাধিক সভাও হয়। তবে তখন তারা কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ ভারতের নদীগুলো নিয়ে স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশের জাতিসংঘ পানি প্রবাহ কনভেনশন ১৯৯৭-এ সই করা উচিত। কনভেনশনটি ২০১৪ সালের ১৭ আগস্ট থেকে আইনে পরিণত হয়েছে। সেখানে উজানের দেশ থেকে ভাটির দেশে প্রবাহিত নদীর পানি কীভাবে ব্যবহৃত হবে, তার দিকনির্দেশনা আছে। এর ‘আর্টিকেল-৫’-এ বলা হয়েছে, কোনো প্রবাহিত অভিন্ন বা আন্তর্জাতিক নদীর উপকূলবর্তী দেশগুলো ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে পানিসম্পদ ব্যবহার করবে। সীমান্ত নদী কিংবা জলাধার ব্যবহারের ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের জনসংখ্যা ও ভূমির পরিমাণ অনুযায়ী পানিসম্পদ ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক পানিসম্পদ আইনেও অভিন্ন নদী বা সীমান্তবর্তী জলাধারের যৌথ ব্যবস্থাপনা, ন্যায্য পানি বণ্টনের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। এছাড়া এর আর্টিকেল ৭-এ কোনো উজানের দেশ পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে ভাটির দেশের ক্ষতি করলে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা আছে। 

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানিসম্পদ কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আতাউর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাংলাদেশে আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর পানি বণ্টনের জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি দুই দশের সুসম্পর্ক। যেখানে উভয় দেশই পরস্পরকে সম্মান করবে এবং ন্যায্য অধিকারের বিষয়ে সচেতন থাকবে। এছাড়া এক্ষেত্রে আমাদের একটি বড় সহায়ক শক্তি হতে পারে জাতিসংঘ পানিপ্রবাহ কনভেনশন। বাংলাদেশ যেহেতু ভাটির দেশ, আমরা এর মাধ্যমে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারব। সিন্ধু চুক্তির ক্ষেত্রে ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক যেমনই হোক, তারা কিন্তু সেই চুক্তি মেনে চলছে। এর অন্যতম কারণ আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এ কনভেনশন নদীবিষয়ক জটিলতা সমাধান করে দেবে। এর আগে আমাদের সমুদ্রসীমা নিয়েও কিন্তু জটিলতা ছিল। সেটিও আমরা আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে সমাধান পেয়েছিলাম। এ ক্ষেত্রেও তেমন। এখন যেমন তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে প্রায়ই জটিলতা হচ্ছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবার উদ্যোগ নিলেও চুক্তি হচ্ছে না। তখন এমন সুযোগ থাকবে না।’

অভিযোগ রয়েছে, যৌথ নদী কমিশনও সঠিকভাবে কাজ করছে না। গত ৫২ বছরে ২০৮টি সভা আয়োজনের কথা থাকলেও হয়েছে ৩৮টি। এছাড়া আন্তর্জাতিক নিয়মানুযায়ী আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোয় বাঁধ সম্পর্কিত তথ্য সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলোকে অবগত করার কথা থাকলেও ভারত বাংলাদেশকে এ ধরনের তথ্য আগে থেকে জানায় না। এ বিষয়ে যৌথ নদী কমিশন বাংলাদেশের সদস্য ড. মোহাম্মদ আবুল হোসেন বলেন, ‘আমাদের অবস্থান থেকে আমরা কাজের চেষ্টা করছি। দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের মিটিং নিয়মিত না হলেও আমাদের কমিশন পর্যায়ে নিয়মিত মিটিং হয়। আমাদের অনেক কাজে সফলতাও আছে। গত কয়েক বছরে আমরা ফেনী ও কুশিয়ারার বিষয়ে দুটি চুক্তি করেছি। আমরা মূলত নদীগুলোর পানি বণ্টন নিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করি। এখন আটটি নদীকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। আপাতত আমরা সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক আয়োজনের। গঙ্গা চুক্তি নবায়নসহ গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয় নিয়েই সেখানে আলোচনা হবে। এছাড়া আমরা চেষ্টা করছি ভারত যাতে বাঁধ সম্পর্কিত তথ্য, যেমন বাঁধে পানির উচ্চতা কেমন, সেটি খুলে দেয়া, এগুলো যাতে আমাদের আগেই জানায়। তবে সব বিষয় সামনে এগিয়ে নিতে ভারতের পক্ষ থেকে আরো সহযোগিতা প্রয়োজন। পাশাপাশি জাতিসংঘের কনভেনশনেও বাংলাদেশ স্বাক্ষর করলে বিষয়গুলো সমাধান আরো সহজ হবে।’

আরও