১৮ ইঞ্চি খুলে দেয়া হয়েছে কাপ্তাই বাঁধের জলকপাট

উজানের ঢলে পানির চাপ বাড়ায় আবারো খুলে দেয়া হয়েছে কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি জলকপাট।

উজানের ঢলে পানির চাপ বাড়ায় আবারো খুলে দেয়া হয়েছে কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি জলকপাট। হ্রদের পানি ধারণক্ষমতার সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছালে চাপ কমাতে গতকাল এক ফুট করে খুলে দেয়া হয়। এর আগে রোববার সকালে খোলা হয়েছিল ছয় ইঞ্চি। তবে তিনদিনেও হ্রদে পানির চাপ না কমে উল্টো বাড়ায় মোট ১৮ ইঞ্চি খোলা হয়েছে। বর্তমানে ৩০ হাজার কিউসেক পানি প্রতি সেকেন্ডে নিঃসরণ হচ্ছে কর্ণফুলী নদীতে। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের কারণে একই সঙ্গে আরো ৩২ হাজার কিউসেক পানি যাচ্ছে নদীতে। বাঁধ ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের টারবাইন দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ৬২ হাজার কিউসেক পানি নিঃসরণ করা হচ্ছে।

গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ প্রকল্প কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক (তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী) এটিএম আব্দুজ্জাহের। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘কাপ্তাই হ্রদে পানির প্রবাহ বাড়ায় গতকাল দুপুর থেকে দেড় ফুট অর্থাৎ ১৮ ইঞ্চি করে ১৬টি জলকপাট খুলে দেয়া হয়েছে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৩০ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলী নদীতে নির্গমন হচ্ছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটে গড়ে ২১৫-২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ফলে আরো ৩২ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলী নদীতে যাচ্ছে টারবাইন হয়ে। মোট ৬২ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলীতে ফেলা হচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় হ্রদের পানির উচ্চতা ছিল ১০৮ দশমিক ৮৮ মিনস সি লেভেল (এমএসএল)। হ্রদে ধারণ সক্ষমতা ১০৯ এমএসএল।

এর আগে গত রোববার সকাল ৮টায় বাঁধের ১৬টি জলকপাট ছয় ইঞ্চি করে খুলে দেয়ার পর বেলা ২টায় বন্ধ রাখা হয়। বিকালে হ্রদে পানিপ্রবাহ বাড়ায় ৫ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৭টা থেকে চার ইঞ্চি করে খুলে দেয়া হয়। সোমবার সকাল থেকে আবারো ছয় ইঞ্চি করে পানি ছাড়া হয়। এর মাঝেও হ্রদে পানি বাড়ায় গতকাল সকালে ১২ ইঞ্চি এবং সর্বশেষ দুপুরে ১৮ ইঞ্চি করে জলকপাট খুলে দেয়া হয়েছে। কর্ণফুলী অববাহিকায় কাপ্তাই হ্রদের এ পানির শেষ গন্তব্য বঙ্গোপসাগর।

এদিকে রাঙ্গামাটিতে রোববার থেকে বৃষ্টিপাত না হলেও পাহাড় ও উজানের ঢলে কাপ্তাই হ্রদের পানি বাড়ছে। জেলার নদ-নদীগুলোর পানিও বাড়ছে। এতে জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতি হচ্ছে ফসলি জমির। ডুবে যাচ্ছে রাস্তাঘাট ও বসতবাড়ি। এছাড়া বাঘাইছড়ি উপজেলায় ছয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় কেন্দ্র খোলায় ও লংগদুর দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী না আসায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

জুরাছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রপ্তদ্বীপ চাকমা বলেন, ‘জুরাছড়িতে পানি বেড়ে আটটি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাট ও বাড়িঘরে পানি উঠেছে। এখন চলাচলের একমাত্র উপায় হচ্ছে নৌকা।’

জেলা প্রশাসক মোশারফ হোসেন খান বলেন, ‘কাপ্তাই হ্রদে পানি বাড়ায় গতকাল দুপুর থেকে দেড় ফুট করে জলকপাট খুলে দেয়া হয়েছে। রাঙ্গামাটি শহরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রাঙ্গামাটিতে বৃষ্টিপাত থামলেও উজানের ঢলে পানি বাড়ছে।’

আরও